সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

করোনা কেড়ে নিচ্ছে বেকারদের স্বপ্ন




মো.আবু রায়হানঃ চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের থাবায় ক্ষতবিক্ষত মানববতা। মানুষের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ,পারমাণবিক বোমা,চন্দ্র অভিযান, মঙ্গলগ্রহ জয় সবই এখন অসার প্রয়োজনবিহীন মনে হচ্ছে।যেখানে মানবতা রাস্তা ঘাটে, ঘরে দম বন্ধ হয়ে মরছে সেখানে এসব প্রযুক্তি ও অভিযান কি কাজে লাগবে?সামান্য একটি ভাইরাস মানুষকে নাস্তানাবুদ করে চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।কপালে ফেলেছে বিস্তর চিন্তার ছাপ।
সারা বিশ্বে করোনায় শুধু প্রাণহানি ঘটছে তা নয়।আজ অনেকে বেঁচে থেকেও যেন মৃত।যারা বেকার তারা ভুগছেন সীমাহীন কষ্টে ও হতাশায়।বাড়ছে গরীব মানুষদের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট।নভেল করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট কোভিড-১৯ মহামারি হিসেবে ছড়িয়েছে বিশ্বের ২১৩টিরও বেশি দেশে।সারাবিশ্বে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬,৮১,১৯১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৫,৭৬,৮৫৯ জন।মৃত্যুবরণ করেছেন ৪,৫৮,৯২৫ জন। বিশ্বের আকাশে বাতাসে দম বন্ধ আর্তনাদ, প্রকৃতি যেন নীরবে সিরিয়াল কিলার হয়ে মানুষ খুন করছে। পৃথিবী নামক গ্রহে বসবাসে যেমন আমাদের অন্য দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগী হয়ে চলতে হয় তেমনি দুর্যোগ দুর্ঘটনা সবাইকে স্পর্শ করে। বৈশ্বিক এই পরিবর্তনের ঢেউ আমাদের গায়ে তথা বাংলাদেশও লাগছে।গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে তিনজনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হবার পর করোনা রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে।বাংলাদেশে বর্তমানে আক্রান্ত ১,০৫,৫৩৫ এবং মৃত ১,৩৮৮ জন।
মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এ দুর্যোগকালীন সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মচারী ছাঁটাইয়ের চিন্তা-ভাবনা করছে।বেতনের কিছুটা অংশও কাটা হচ্ছে।আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)একটি প্রতিবেদনে বলছে যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে।এতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চাকরি হারাতে যাচ্ছে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ।২০০৮-২০০৯ সালের বিশ্ব মন্দার সময় যত মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, এই হার তার চেয়েও বেশি।আমেরিকার দেশগুলোয় চাকরি হারাবে দুই কোটি ৪০ লাখ কর্মী, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় দুই কোটি (ইউরোপে এক কোটি ২০ লাখ), আরব দেশগুলোয় প্রায় ৫০ লাখ ও আফ্রিকায় এক কোটি ৯০ লাখ কর্মী ।আইএলও বলছে, বিভিন্ন আয়ের মানুষজন এর ফলে ক্ষতির শিকার হবে। কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণী।আইএলও-র তথ্য অনুযায়ী, আবাসন ও খাদ্যের পাশাপাশি নির্মাণ, খুচরা বিক্রি, ব্যবসা এবং প্রশাসনিক খাতগুলো বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে।বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পে এরই মধ্যে সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে এই শিল্প টিকে আছে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারের উপর নীর্ভর করে। কিন্তু সেসব দেশে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে বহু পশ্চিমা ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্ডার বাতিল কিংবা স্থগিত করছেন।পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতে ,বাংলাদেশ থেকে যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, তার ৬৩ শতাংশ ইউরোপে যায়, বাকি ১৫ শতাংশ যায় আমেরিকায়। বলা যায়, বেশিরভাগ যাচ্ছে, ওই দুইটি বাজারে। সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, মানুষজন ঘরের ভেতরে। করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরু হওয়ার পর এখন ৩.২ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হচ্ছে। তারা বলছে, হোল্ড করতে, সেটা একটা বিরাট ধাক্কা।বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে গার্মেন্টস শিল্প থেকে।এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে লে-অফ বা সাময়িক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। যদিও সরকার এর আগে কর্মীদের বেতন না কাটা এবং কর্মী ছাটাই না করার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে সরকারকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এ সেক্টরে ৪৫ লাখ মানুষ জড়িত।কোথাও নীরবে চলছে শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই।
গরিব মানুষের দিন গুজরান এক চরম অনিশয়তার মুখে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনায় করোনার প্রভাবের চিত্র উঠে এসেছে। গত ৭ জুন সিপিডি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, করোনার কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী তখন দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে অনুমিত হিসাবে তা নেমে আসে সাড়ে ২০ শতাংশে। সিপিডি বলছে, করোনার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, মানুষের আয় কমেছে। ফলে দারিদ্র্যের হারও বেড়ে গেছে। করোনার কারণে ভোগের বৈষম্য বেড়ে দশমিক ৩৫ পয়েন্ট হয়েছে।সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির প্রভাবে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৮২ শতাংশ। আর গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় ৭৯ শতাংশ কমেছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা কোনো রকমে তিন বেলা খেতে পারলেও পুষ্টিমান রক্ষা করতে পারছে না।দিনমজুর, রিক্সা, ভ্যান চালক, শ্রমিক, দরিদ্র, দুস্থরা আজ করুণ হালে দিনাতিপাত করছে। আয় রোজগার না থাকায় তাদের ত্রাণ ও অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে।কখনো অনাহারে অর্ধাহারে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে।বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের এক জরিপে বলা হয়েছে,"সরকার ঘোষিত লকডাউনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ায় দেশের ৯৫% পরিবারের উপার্জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে দৈনিক রোজগার বা ব্যবসা বন্ধ থাকায় ৭৮.৩% পরিবারের উপার্জন কমেছে।"
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় চার কোটি শিশুর অলস ও মন খারাপের দিন কাটছে। প্রিয় স্কুলে যেতে না পারার কষ্ট ওদের প্রতিনিয়ত তাড়িত করছে। হোম কোয়ারেন্টিন, লকডাউনের কারণে মানুষ অনেকটা বন্দী সময় পার করছে। তারপরও কিছু মানুষের বিনা প্রয়োজনে বাইরে ঘুরোঘুরি করতে বের হওয়াটা খুবই বেদনার।সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ডাক্তার সার্বক্ষণিকভাবে দেশের মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে করোনার অভিশাপে পিষ্ট এদেশের বেকার তরুণেরা, যারা অনেকটাই আলোচনার বাইরে।তারা আজ বেঁচে থেকেও যেন মৃত।দেশে বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৬৬ লাখ। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা ব্যবহার করে কৌশলে এ তথ্য গোপন করে সরকারি হিসাবে দেখানো হচ্ছে মাত্র ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। বিবিএসই বলছে, চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ কর্মক্ষম হলেও শ্রমশক্তিতে যোগ হয়নি। অথচ এদের বেকার দেখানো হয়নি।খোদ সংস্থাটির নিজস্ব হিসাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই চার কোটি ৪০ লাখ বেকারের তথ্য গোপন করা হয়েছে। ফলে ২৬ লাখ একেবারেই বেকার যোগ করলে প্রকৃত বেকার সংখ্যা দাঁড়ায় চার কোটি ৬৬ লাখ। তবে প্রকৃত বেকারত্বের সংখ্যা এই সংখ্যার চেয়ে ঢের বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ব্রিটিশ পত্রিকা ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদন অনুসারে বর্তমানে বিশ্বে ২০টি সর্বাধিক বেকারত্বের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২। ওই প্রতিবেদন অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জন বেকার। বিবিএস বলছে, বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক-প্রকৌশলীর হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। নারী চিকিৎসক-প্রকৌশলীর মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। এরপরই আছেন উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রিধারীরা। তাদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্কিলস ফর টুমরোস জবস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের কলেজগুলো থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ৭০ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট বেকার থাকে এবং বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর ২১ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৩ লাখের।২০৩০ সালের মধ্যে বেকারত্ব দূর করতে হলে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৯-৩০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর পাঁচ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর পাশাপাশি দেশে ১৮ লাখ ৪০ হাজার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু আমাদের বিদেশে কর্মসংস্থানের হারও দিন দিন কমছে।অনেক বেকারদের হয়তো দুই তিনমাসের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতো।দেশে সরকারী চাকরির প্রায় ৪ লাখ পদ শুন্য।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, পাবলিক লাইব্রেরি এবং দেশের সবখানে আজ খাখা করছে বেকার তরুণদের সরব উপস্থিতির খরায়। কেউ মৌখিক, কেউবা লিখিত পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের আশায় প্রহর গুনছেন। এখনো তারা বেকারত্বের জীবন নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায়। এসবের বাইরে সদ্য পাস করা শিক্ষিত বেকারদের অবস্থাও কাহিল। অনেকে মেসে, বাসায়, হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছেন ভালো একটি চাকরির আশায়। তারা বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় টিকলেও চূড়ান্ত ভাবে মনোনীত না হওয়ায় দুর্বিষহ কষ্ট তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।বেকার তরুণেরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসছে কিন্তু সরকার এবিষয়ে নীরব। এইতো কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এক গ্র্যাজুয়েট আত্মহত্যা করেছেন।কারণ হিসাবে জানা গেল, সরকারি চাকরিতে বয়স শেষ হওয়া, দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও চাকরি না পাওয়ায় তরুণ সেন নামে ছেলেটি আত্মহত্যা করেন। তিনি ঢাবির দর্শন বিভাগে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। করোনার কারণে যাদের চাকরিতে আবেদনের বয়স পার হয়েছে। সরকার তাদের কথা বিবেচনা করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে ।
শুধু একটি ভালো চাকরি পাবার আশায় অনেক বেকার ছেলে ঈদ পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে বাড়ি পর্যন্ত যান না। বাড়ি গেলে প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকজনের কটু কথা তাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন করে ভাবতে হয়। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা, কটুক্তি গলাধঃকরণ করতে না পারার যন্ত্রণা, বাড়ি থেকে দূরে কোনো বাসা বাড়ি কিংবা মেসের চার দেয়ালের ভেতরে বসে খেয়ে না খেয়ে থেকে বই হাতে নিয়ে বড় কিছু হবার স্বপ্ন তাদের স্বজন বিচ্ছেদ ভুলিয়ে রাখে। দুখিনি মায়ের মলিন মুখ, পরিশ্রান্ত বাবার কষ্টের হাসি, আদরের বোনের মায়া ভরা মুখের হাতছানি কোনো কিছুই তাদের পেছনে ফেরায় না। তখন অদম্য জেদ বেকারত্ব ঘোচানোর তন্ত্রমন্ত্রে পরিণত হয়।জনৈক কবির কয়েকটি চরণ মনে পড়ে গেল।
বেকারের এই চুল্লিতে কেউ
একটু আগুন দে
আরেকটি বার বেঁচে থাকি
বাঁচার আনন্দে।
মরতে গেলেই ফাঁস কেটে যায়
পাশ কেটে যায় গাড়ি
জুড়তে গেলেই বিয়ের লগন
ঘর ছেড়ে যায় নারী।
কবিতার প্রতিটি চরণ যেন বেকারদের বুকে জমানো বিষাদের অগ্নি বারুদের বিস্ফোরণ। বাড়িতে না যেতে চাইলেও এবার করোনার ভয়াবহতা ও বেঁচে থেকে স্বপ্ন পরিপালনে অনেকে এখন বাড়িতে । হয়তো প্রকৃতির এই নির্মমতায় পরিবারের কটু কথা শুনতে হচ্ছে না।পাড়ার চায়ের দোকানে কম ভীড়ে বেকার ছেলেটির সমালোচনা দখলে নিয়েছে করোনা। এই যাত্রায় ছাড় পেলেও সমালোচনার যে দীর্ঘ পথ। এর আগামাথা নেই। গ্রাম মহল্লার যত জ্ঞানী বিজ্ঞানী, দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সরব উপস্থিতিতে এসব সমালোচনা আদিকাল থেকে চলছে এবং চা দোকান থাকা পর্যন্ত চলবে।এসব চায়ের দোকানের বিরুদ্ধে তরুণেরা একশন নিতে পারে কিন্তু কেমনে নেবে সকাল বিকেল সন্ধ্যায় এই দোকানের চা সিগারেট না খেলে তো তাদের ঝিমুনি যায় না। এলাকায় সব ছেলেই যথেষ্ট ভদ্র।শেষে শহরের দোকানের কথা বলেছি। এই দুর্যোগে বই হাতে নিয়ে হয়তো অনেক বেকার জানালার ওপাশে তার গন্তব্যের ঠিকানা খুঁজে। গভীর রজনীতে বালিশে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে সকালে সবার অগোচরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নতুন দিন শুরু করে। হয়তো করোনার এই দুঃসময়ে অনেক বেকার এভাবেই লিখছে তাদের দিনলিপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষক ইতোমধ্যে তাদের বিভাগের অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছেন। সরকার বিশেষ ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু বেকারেরা বরাবরই পরিত্যাজ্য, অসহায়। একটি পজিশন হোল্ড করার আগ পর্যন্ত সবার জন্য বোঝা, করুণার পাত্র।বেকারদের কেউ নেই।সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস নতুন করে বেকার তৈরি করছে।আমেরিকায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর এ পর্যন্ত ৪ কোটি ২০ লাখ বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছেন। এদের সবাই করোনায় চাকরি হারিয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। নতুন তথ্যে দেখা যায়,করোনাভাইরাস সংকট শুরুর পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন।মার্কিন শ্রম বিভাগ অনুযায়ী, মধ্য মার্চের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২০ লাখ করে মানুষ কাজ হারাচ্ছে। মহামারির আগে এ পরিস্থিতির কথা কল্পনাই করা যেত না।মহামারি শুরুর পর মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে আমেরিকায় বেকারত্বের হার তিরিশের মহামন্দার পর্যায়ে চলে গেছে। গত দশকে হওয়া মহামন্দার সময় এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ বেকারভাতার আবেদন জমা পড়েছিল ৬ লাখ ৬৫ হাজার। অথচ গত সপ্তাহেই এর তিনগুণ আবেদন জমা পড়ল।এই ঢেউ বাংলাদেশেও লাগছে করোনার ভয়াল গ্রাসে অনেকে চাকরি হারিয়ে নতুন করে বেকারে পরিণত হচ্ছেন। এতে প্রলম্বিত হবে বেকার জীবন।

লেখকের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গেই থাকুন-
@raihan88

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...