লাদাখ কেড়ে নিল ভারতের ঘুম
পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষে এক কর্নেল-সহ ২০ জওয়ানের মৃত্যুর খবর আগেই নিশ্চিত করেছিল ভারতীয় সেনা।হাতাহাতি, পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি থেকে শুরু করে, রড, লাঠি, ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। মধ্যরাতের পর তা থেমে যায়।অনেক দেহ নদী থেকে টেনে তোলা হয়।অনেকে এতটাই আহত ছিল যে, সকালে মারা যায়।ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার রাতে গালওয়ান ভ্যালির লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে ভারত-চিন সীমান্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় একটি নির্দিষ্ট সময় পর পিছিয়ে যাবে চিনের সেনা। এক ঘণ্টা পর ৫০-৬০ জন ভারতীয় সেনাকে নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বের হয় কর্নেল সন্তোষ বাবু। সেই সময় চিনা সেনার তৈরি করা তাবু ভাঙতে ভাঙতে এগোতে থাকে তাঁরা। ভাঙা পড়ে চিনা সেনার একটি নজরদারি পোস্টও।জানা যায়, এরপরই প্রায় ২৫০ চিনা সেনা ভারতীয় সেনার উপর হামলা চালায়। দু’পক্ষে শুরু হয়ে যায় তুমুল হাতাহাতি।এই সংঘর্ষে কর্নেল সন্তোষ বাবু সহ ২০ জন সেনার মৃত্যু হয়।তার সঙ্গে আরও চার জওয়ান গুরুতর জখম হয় বলে সেনা সূত্রে জানা যায়। লাদাখের এই সংঘর্ষে চিনা বাহিনীর এক কমান্ডিং অফিসারের মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতীয় সেনার সূত্র উদ্ধৃত করে দাবি করেছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। যদিও বেজিংয়ের তরফে এ বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে গলওয়ান উপত্যকায় লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষ শুরু হয়।মঙ্গলবার প্রথমে তিন জনের মৃত্যুর কথা বলা হয় ভারতীয় সেনার তরফে। কিন্তু রাতের দিকে ভারতীয় সেনা নিশ্চিত করে জানায়, সংঘর্ষে গুরুতর জখম আরও ১৭ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষে গুরুতর জখম হওয়ার পর প্রায় জিরো ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রায় দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার জেরেই তাঁদের মৃত্যু হয় বলে ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়।ভারতের দিকে হতাহতের মোট সংখ্যা ২৪ জন। গত পাঁচ দশকে এধরনের ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ ভারত ও চীনের মধ্যে হয়নি। ১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম চীন ও ভারতের মধ্যে প্রাণহানি হওয়ার মতো এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো। ১৯৬২ সালে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ হয়।
কাশ্মীর উপত্যকা, জম্মু আর লাদাখ - এই তিনটি অঞ্চল নিয়েই ছিল জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য। এর মধ্যে গত বছরের আগস্ট মাসে ভারতের সংসদ জম্মু এবং কাশ্মীর উপত্যকাকে নিয়ে একটি আর লাদাখকে আলাদা করে দিয়ে আরও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল তৈরির আইন পাস করে। In August 2019, a reorganisation act was passed by the Parliament of India which contained provisions to reconstitute Ladakh as a union territory, separate from the rest of Jammu and Kashmir on 31 October 2019.
লাদাখ ভারতের অন্যতম জনবিরল অঞ্চল । ৪.৬ জন প্রতি বর্গ কিমিতে গোটা অঞ্চলে মাত্র পৌনে ৩ লক্ষ লোকের বাস।লাদাখ উত্তরে কুনলুন পর্বতশ্রেণী এবং দক্ষিণে হিমালয় দ্বারা বেষ্টি।লাদাখের পূর্বে আকসাই চীন ,যা চীন ১৯৬২ সালে ভারতের কাছ থেকে দখল করে নেয়।বর্তমানে লাদাখ শুধুমাত্র লেহ জেলা ও কার্গিল জেলা নিয়ে গঠিত।উঁচু উঁচু পাহাড়, শীতল মরুভূমি, সবুজ উপত্যকা , বরফাবৃত পর্বতশিখর, মেঘহীন নীল আকাশ, নীলকান্ত মণির মতো ঘন নীল শান্ত সরোবর ; গর্জনময়ী নদী –সবে মিলে অনুপম লাদাখ । ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ তথা ভ্রমন পিপাসুদের দর্শনাকাঙ্খিত লাদাখ তিব্বতী সংস্কৃতি দ্বারা লাদাখ প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত তাই এই অঞ্চলকে ক্ষুদ্র তিব্বত বলা হয়ে থাকে।লাদাখে বৌদ্ধ ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা প্রায় সমান। পূর্বাঞ্চলে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং উত্তর ও পশ্চিমে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ লাদাখের লেহ্-তে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ। The main religious groups in the region are Muslims (mainly Shia) (46%), Tibetan Buddhists (40%), Hindus (12%) and others (2%).১৯৯৯ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য সুপরিচিত কার্গিল জেলার বেশিরভাগ মানুষই মুসলমান।পর্যটকরা পূর্বাঞ্চলের দিকে বেশি ঝোঁক পরিলক্ষিত হয় কেননা এই অঞ্চলে বৌদ্ধদের নিদর্শন বেশি রয়েছে এবং সেগুলো সরাসরি তিব্বতি বৌদ্ধ সংস্কৃতির সাথে সর্ম্পকিত।সম্প্রতি বিতর্কিত লাদাখ সীমান্ত নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই সূত্র ধরে দুই দেশই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধের সমাধানে দুই পক্ষই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো।
গ্রন্থনায়-মো.আবু রায়হান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন