সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একাত্তরের হীরামণি ও স্বাধীন দেশের হীরামণিরা



৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা বাগানে শ্রমিকরা তিরন্দাজ বাহিনী গড়ে তুলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। হীরামণি সাঁওতাল আর সাবিত্রী নায়েকের মত বীরাঙ্গনার ঋণ আমরা কোনো দিন শোধ করতে পারব না।
এতদিন জেনে আসছি একাত্তরের যুদ্ধে দুই লাখ নারী সম্ভ্রমহানির শিকার হন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরপরই তৎকালীন সরকার যুদ্ধে দুই লাখ নারী এবং মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয় বলে জানায়। তবে এ সংখ্যা নিয়ে তখনই প্রশ্ন ওঠে। এ সংখ্যা আরও বেশি বলে একাধিক উৎস থেকে দাবি করা হয়।উইমেন আন্ডার সিজ প্রজেক্ট জানায়-মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ নন, অন্তত চার লাখ নারী সম্ভ্রমহানির শিকার হন —নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত ‘হোয়াই ইজ দ্য মাস সেক্সুয়ালাইজড ভায়োলেন্স অব বাংলাদেশেশ লিবারেশন ওয়ার বিইং ইগনরড’নিবন্ধে সাংবাদিক আনুশেহ হোসেন লিখেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা বহুলভাবে প্রশংসিত হলেও প্রায় চার লাখ নারী ও মেয়েশিশুর ধর্ষণ এবং নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি বিশ্বের কাছে প্রায় অজানা থেকে গেছে। উইমেন আন্ডার সিজ প্রজেক্ট প্রতিবেদনে গবেষক সুসান ব্রাউন মিলারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়,একাত্তরে হাজার হাজার বাঙালি নারীকে ধরে জোর করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের রাতের পর রাত ধর্ষণ করা হয়। একেবারে শিশুকন্যা থেকে ৭৫ বছরের বৃদ্ধাও এই নিগ্রহের হাত থেকে রেহাই পায়নি। প্রতিদিন ২ থেকে ৮০ জন পুরুষ নারীদের ধর্ষণ করে।

হীরামনির জন্ম মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হুগলিছড়া চা বাগানে। তাঁর বাবার নাম অর্জুন সাঁওতাল। অর্জুন সাঁওতালের ২ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে হীরামণি দ্বিতীয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রায় ২ মাস পূর্বে তার বিয়ে হয় হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা বাগানের চৌকিদার লক্ষণ সাঁওতালের সঙ্গে। প্রথম স্ত্রী লক্ষ্মী সাঁওতালের মৃত্যু হলে লক্ষণ হীরামণিকে বিয়ে করেন। লক্ষ্মী সাঁওতালের ৮ মাসের ছেলে গণেশকে আপন করে নিয়ে সংসার পাতেন হীরামণি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বৈশাখ মাসের কোন এক সকালে পাঞ্জাবিরা বাগানের স্থানীয় এক চা শ্রমিকের স্ত্রীকে ধাওয়া করে। তখন সে আত্মরক্ষায় দৌড়ে হীরামণির ঘরে প্রবেশ করে। সে সময় বিপীন সাঁওতালকে নিয়ে হীরামণি ধান ভানছিলেন। পাঞ্জাবিদের দেখে তিনিও নিজেকে রক্ষা করতে ঘরে যান। তার পিছু পিছু পাঞ্জাবিরা ঘরে প্রবেশ করে। তাদের দেখে হুশ-বুদ্ধি হারান হীরামণি। সুঠাম দেহের দুই পাঞ্জাবি সেনা তাদের সঙ্গে মেতে ওঠে উন্মত্ততায়। ছিন্ন-ভিন্ন করে শরীর! জ্ঞান হারান হীরামণি। লালসা মিটিয়ে পাঞ্জাবিরা তাদেরকে অচেতন অবস্থায় ফেলে চলে যায়।
খবর পেয়ে বাগানের কাজ ফেলে লক্ষণ ঘরে ফিরে দেখেন মেঝেতে পড়ে আছে হীরামণির অর্ধমৃত দেহ। শুরু করেন স্ত্রীকে সুস্থ্য করার আপ্রাণ চেষ্টা। বাগানের ডাক্তারের ওষুধ আর লক্ষণের প্রচেষ্টায় চারদিনের মাথায় জ্ঞান ফিরে আসে হীরামণির। আস্তে আস্তে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু পাঞ্জাবিদের যৌন নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন হীরামণি। দশ মাস দশ দিন পর ভূমিষ্ঠ হয় সন্তান।চা শ্রমিকরা সাধারণত কৃষ্ণবর্ণের। কিন্তু হীরামনি যে বাচ্চার জন্ম দিলেন তার গায়ের রং ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। দেখতেও অন্যরকম। শিশুটিকে দেখে সবাই বুঝতে পারলেন এটা পাঞ্জাবিদের পাপের ফসল। ধীরে ধীরে সে বেড়ে ওঠে। স্বামী লক্ষণ সাঁওতাল এ নিয়ে কোনদিন কোন কথা বলেননি তাকে। তবে এ বাচ্চার জন্য লক্ষণ সাঁওতালের পরিবারকে ঘৃণার চোখে দেখতো বাগানের বাসিন্দারা।
সমবয়সীরাও সহদেবকে টিটকারি করতো পাঞ্জাবির ছেলে বলে। ছোট্ট সহদেব তখন বুঝতে না পারলেও বড় হয়ে সে ঠিকই সব বুঝে যায়। জেনে যায় একাত্তরের ঘটনা। নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মে তার। তবে কখনও সে তার বেদনা বুঝতে দেয়নি মা হীরামণিকে। মাকে খুব বেশি ভালবাসতো সে। কিন্তু বুকের মধ্যে যাতনার আগুন ক্রমেই তীব্রতর হয়ে উঠতে লাগল তার। সেই আগুন নেভাতে মদে বুদ্ হয়ে থাকতো সহদেব। একদিন অতিরিক্ত মদ্যপানে ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ে সে।অভিযোগ আছে- মদের বদলে অতিরিক্ত স্পিরিট খাইয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সব প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে যাকে এতো বড় করেছিলেন সেই সহদেব এভাবে মারা যাবে তা তিনি ভাবতেই পারেননি। বৃদ্ধ লক্ষণ সাঁওতালও জীবনের শেষলগ্নে এসে উপার্জনক্ষম ছেলের মৃত্যুশোক সইতে পারলেন না। এক সময় দুঃখে-শোকে জীবন প্রদীপও নিভে যায় তার।
হীরামণি সাঁওতাল

লক্ষণ সাঁওতালের মৃত্যুতে দুই মেয়ে সহজমণি ও সজনীকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়লেন হীরামণি। নতুন করে শুরু হলো তার জীবনযুদ্ধ। বেঁচে থাকার লড়াই। দুই মেয়ে ও নিজে কাজ করে সংসারটাকে টেনে নিতে শুরু করলেন। তারা বড় হলো। তাদেরকে বিয়ে দিলেন। হীরামণি কখনও ভিক্ষের ঝুলি আবার কখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনমতে জীবন চালিয়ে নিচ্ছিলেন। বয়সের ভারে অচল হয়ে পড়েছেন হীরামনি। অবশেষে তিনি ৩ মার্চ ২০১৬ সালে নিজ বাড়িতে মারা যান।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টি সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ২০তম সাক্ষী মো. আবদুল মোতালেব ট্রাইব্যুনাল-২-এ জবানবন্দি দেন। হবিগঞ্জ চুনারুঘাটের একরতলী ৭৭ বছর বয়সী মোতালেব জানান, একাত্তরে সম্ভবত বৈশাখের শেষ দিকে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য তিনি বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় ডোলনা চা বাগানের দরগাবিলে বটগাছের কাছে ফাঁড়ির রাস্তায় হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের পাঁচটি গাড়ি দেখেন। চারটি গাড়ি চা বাগানের দিকে চলে যায়। দরগাবিল রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি থেকে তিনি পাকিস্তানি সেনা মেজর ইউসুফ আলী, শের বাহাদুর, মেজর ইউসুফ, সৈয়দ কায়সার এবং দু'জন অপরিচিত বাঙালিকে দেখেন। গাড়ি থেকে নেমে তাকে ইশারায় ডাক দেন শের বাহাদুর। এ সময় কায়সার তার সম্পর্কে পাকিস্তানিদের বলেন, সে মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা কে কোথায় আছে জানতে চান কায়সার। তিনি খবর দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মেজর ইউসুফ ও শের বাহাদুর বলেন, সে ভালো লোক। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় আমরা তাদের বাংলাঘরে থাকতাম। তাদের বাড়িতে থেকে ক্যাম্প পরিচালনা করতাম। এ সময় কায়সার বলেন, 'ওকে ছাড়া যাবে না।' ডোলনার দিকে যাওয়া চারটি গাড়ি ফিরে এলে তাকে (মোতালেবকে) গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
গাড়িটি চান্দপুর ছাগলবাজার থেকে একটু দূরে গিয়ে থামে। এ সময় দুই পাকিস্তানি এলে কায়সার অপরিচিত দুই বাঙালি ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী এক চা শ্রমিকের বাড়ির দিকে যান।পরে তারা তাকে ছেড়ে দেন। এ সময় তিনি আখক্ষেতের ভেতর দিয়ে হীরামণি সাঁওতালের বাড়িতে ওঠেন। বাড়ির কাছে গিয়ে তিনি হীরামণি সাঁওতালের কান্নাকাটি ও চিৎকার শুনতে পান। হীরামণি সাঁওতাল চিৎকার করে বলছিলেন, 'ওরা আমাকে বেইজ্জতি করেছে। আমি আর বাঁচতে চাই না।'এর পর কায়সার ও পাকিস্তানিরা চলে গেলে বাড়ির ভেতরে ঢুকে তিনি দেখতে পান, এক মহিলা কাঁদছেন। তার নাম হীরামণি সাঁওতাল। সাক্ষী জানতে পারেন, কায়সারের নির্দেশে দুই পাকিস্তানি সেনা হীরামণিকে ধর্ষণ করে। এ গেল পাকিস্থানি ও তাদের দোসরদের বিভীষিকাময় দিনের কথা ।
এবার আসি স্বাধীন দেশের কথায়।গত ১২ জুন শুক্রবার লক্ষ্মীপুরে ঘরে একা পেয়ে হীরামণি (১৪) নামে স্থানীয় পালেরহাট পাবলিক হাইস্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দিনে-দুপুরে সদর উপজেলার হামছাদী ইউনিয়নের পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হীরামণি পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামের হারুনুর রশিদের মেয়ে। তার বাবা হারুনুর রশিদ ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। ঢাকার এক হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সঙ্গে আছেন হীরামনির মা ও ছোট দুই ভাইবোন। বাড়িতে কেউ না থাকায় সে হামছাড়ি ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে নানার বাড়িতে ছিল। শুক্রবার সকালে সে নিজেদের বাড়িতে আসে। এসময় ঘরে সে একাই ছিল। এরমধ্যে সে পাশের এক বাড়িতে গিয়ে কিছু সময় গল্প করেছিল। এরপর সে আবার ঘরে চলে আসে। দুপুর দুইটার দিকে প্রতিবেশী এক নারী তাকে ডাকতে যান। তিনি ঘরে গিয়ে দেখেন, হীরামনি অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় খাটের ওপর পড়ে আছে। তার পায়ের দিকটা মাটিতে।
হীরামণি (১৪)
নারীর প্রতি সহিংসতার পরিসংখ্যানগুলো এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে। মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৬২২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৭০৩ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৪৫ জনকে। অপহরণের শিকার হয়েছে ১৪৭ জন। নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ২৬৪ জন। ফতোয়ার শিকার হয়েছে ২৪ জন। শুধু বর্তমানের চিত্র নয় ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের পরিসংখ্যান দেখলে আতঙ্কিত হতে হয়। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর তথ্যানুসারে এই সময়ে মোট ধর্ষণের শিকার ১৩ হাজার ৬৩৮ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২ হাজার ৫২৯ জন এবং ধর্ষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ৬ হাজার ৯২৭ জন।


গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান

Commen

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...