ঈদের দিনে আমাদের করণীয়
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
এক মাস সিয়াম সাধনার পর আমাদের মাঝে উপস্থিত পবিত্র ঈদুল ফিতর।রমজানে তাকওয়া অর্জনের পর বাকি এগারোটি মাস তাকওয়া্র অনুশীলনই হলো রমজানের চরম শিক্ষা।ঈদুল ফিতরের দিন থেকে মাঠ পর্যায়ে শুরু হয় রমজানের শিক্ষা। রোজার মাধ্যমে যে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা লাভ হয় তারই পূর্ণতা সাধনে যেন আমাদের এনে দেয় বৈপ্লাবিক পরিবর্তন। এ ঈদ মূলত আমাদের মাঝে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের কল্যাণ বার্তা নিয়ে আসে। শান্তির অনুপম বার্তাবাহী ঈদুল ফিতর মুসলমানদের মাঝে অসীম প্রেরণার জন্ম দেয়। এ দিন প্রতিটি মুসলিম সত্তা নব উৎসাহ-উদ্দীপনায় জেগে উঠে। ঈদ অর্থ আনন্দ, উৎসব পর্ব। আর ফিতর অর্থ ভাঙ্গা, চিড়, ভাঙ্গন। এদিক হতে ঈদুল ফিতর অর্থ হলো রোজা ভাঙার পর্ব বা উৎসব। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আল্লাহর নির্দেশে আমরা এদিনে রোজা ভঙ্গ করি বলে এ দিনটির নাম ঈদুল ফিতর।শুধুই আল্লাহর নামে আল্লাহর দেওয়া দানে ধন্য হয়ে আনন্দ প্রকাশের এক অপূর্ব উৎসব আমাদের ঈদুল ফিতর। পুরো রমজান জুড়ে সংযমী থেকে পরিশুদ্ধ হৃদয়ে কলুষমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকারে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরার এমন আবেগ আর কে দিয়েছে আমাদের?রাসুল (সা.) নিজে ঈদ পালন করেছেন এবং সাহাবিদের ঈদ উদযাপন করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে এলেন। তখন মদীনাবাসীকে তিনি দু’টো দিবসে আনন্দ উল্লাস উৎসব করতে দেখেন। পারসিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বসন্তের পূর্ণিমা রজনীতে ‘মেহেরজান’ আর হেমন্তের পূর্ণিমা রজনীতে ‘নাওরোজ’ নামক উৎসবে মদীনাবাসীকে এমন সব আমোদ প্রমোদে মেতে উঠতে দেখলেন, যা সুস্থ বিবেকের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ বিশেষ দিনে তোমাদের আনন্দ উল্লাসের কারণ কি? মদীনার নওমুসলিমগণ বললেন, ‘আমরা জাহেলী যুগ হতে এ দু’টি দিন এভাবে পালন করে আসছি।’ নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের আনন্দ উৎসবের জন্য এর চেয়েও দুটো উত্তম দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার একটি হল ‘ঈদুল ফিতর’ অন্যটি ঈদুল আযহা’। তোমরা পবিত্রতার সাথে এ দু’টি উৎসব পালন করবে।’ –(আবু দাউদ ও নাসায়ী)। এ মহিমান্বিত খুশির দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার জন্য রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মনীতি।ঈদকে সত্যিকার অর্থে আল্লাহ তায়ালার কাছে গৃহীত করতে চাইলে এ বিষয়গুলোও মনে রাখা প্রয়োজন-
১. ঈদের দিন যেন কেউ কোন প্রকার রোযা না রাখে। কারণ এটি হবে ঈদের সঙ্গে চরম ধৃষ্টতা এবং আল্লাহর নেয়ামত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার শামিল। এ বিষয়ে বুখারী শরীফে স্পষ্ট নিষেধ রয়েছে।
২. পরিবারের সবার সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরার টাকা আদায় হয়েছে কিনা, খোঁজ নিন। কারো অনাদায় থাকলে তাকে স্মরণ করিয়ে দিন। ঈদের নামাজের আগে যেন তা দান করা হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। পরেও আদায় করা যায়, তবে নামাজের আগে আদায় করা উত্তম।ঈদের দিন সুবহে সাদিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের আগে ইন্তেকাল করে তার সদকায়ে ফিতর আদায় হবে না। আর যদি কোনো সন্তানাদি সে দিন সুবহে সাদিকের আগে জন্ম নেয়, তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে। (তাহতাবি -৩৯৫)। ফিতরার টাকা ছাড়াও গরিব মিসকিন অসহায়কে দান করুন। নিজের হাতে এবং ছোট বাচ্চাদের হাতে দিয়েও দান করাতে শেখান। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। যা একদিকে অশ্লীল, বেহুদা কথা ও কাজ দ্বারা কলুষিত রোজাকে পবিত্র করে। অন্যদিকে অসহায়-নিঃস্ব গরীবকে খাদ্যদানে সহায়তা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যে ব্যক্তি সদাকাতুল ফিতর ঈদের নামাযের পূর্বে আদায় করবে। তা কবুল করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পরে আদায় করবে। তা সাধারণ সদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে।(আবু দাউদ; ইবনে মাজাহ)।
৩. পাক পবিত্র থাকার জন্য গোসল অপরিহার্য। এজন্য ঈদের দিন গোসল করে ঈদগায়ে যাওয়া উত্তম। রাসুল (সা.) তিনি ঈদের দিন গোসল করতেন। হযরত ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত যে, তিনি ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।(সুনানে বায়হাকি-৫৯২০)।
৪. পোশাক সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য চর্চার অন্যতম উপাদান। ঈদের দিন নতুন বা উত্তম পোশাক পরিধান করা প্রয়োজন। রাসুল (সা.) ঈদগায়ে যাওয়ার আগে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। ইবনুল কায়্যিম (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) দুই ঈদেই ঈদগায়ে যাওয়ার আগে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। (যাদুল নায়াদ )। জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.)-এর একটি সুন্দর জুব্বা ছিল যা তিনি দুই ঈদে ও জুময়ার দিনে পরিধান করতেন। (মুসনাদ বায়হাকী)। ঈদের দিন আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, মুসলিম পন্ডিতগণ প্রত্যেক ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুসজ্জিত হওয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। (আল-মুগনী)।
৫. ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের নামাজ আদায়ের আগে খাবার গ্রহণ করে ঈদগায়ে যাওয়া রাসুল (সা.) এর একটি সুন্নত।মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনায়ও রয়েছে, রাসুল (সা.) কিছু না খেয়ে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে যেতেন না।হযরত বুরাইয়া (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের আগে খেতেন না।(তিরমিজি-৫৪৫)।বুখারী শরীফে হযরত আনাস (রা.) এর বর্ণনায় রয়েছে, রাসুল (সা.) বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেয়ে ঈদের নামাজের জন্য বের হতেন। আমাদের দেশি খাবার- সেমাই-ফিরনীর পাশাপাশি কয়েকটি খেজুরও রাখতে পারেন, তাতে অন্তত এ সুন্নতটিও আদায় হয়ে গেল।
৬.হেঁটে ঈদগায়ে যাওয়া রাসুল (সা.) এর সুন্নত। ওজররত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য নহে। রাসুল (সা.) হেঁটে ঈদগাহে যেতেন। হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, ‘তিনি বলেন হেঁটে ঈদগায়ে যাওয়া সুন্নত’। (বুখারি -৯৮৬)।
৭. ঈদের দিনটি তো আল্লাহ পাকেরই দান। তাই এ দিন বেশি বেশি তাকবির পাঠ করে আল্লাহকে ডাকার মধ্যেই প্রকৃত আনন্দ।কুরআনে এসেছে, তোমরা (রমযানের) রোজা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা কর। (সূরা আল-বাকারা-১৮৫)ঈদের নামাজের জন্য রওয়ানা হওয়ার সময় এবং নামাজের অপেক্ষার সময়গুলোতেও এ তাকবিরে তাশরিক পাঠ করতে থাকুন। রাস্তাঘাটে যাওয়ার সময় উচ্চ শব্দে তাকবির বলুন। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ তাকবির পাঠ করতেন। (মুসতাদরাক - ১১০৬)।
৮. নিজের এবং নিজেদের চারপাশের সবকিছুকে সুন্দর করে সাজানো ও সুগন্ধিময় করে রাখা উচিৎ, এসব বিষয়ে এ দিন কোনো ধরনের কৃপণতা কাম্য নয়। আল্লাহ পাক আপনাকে যেসব নেয়ামত দান করেছেন এবং যে ধন সম্পদ আপনাকে দিয়ে সম্মানিত করেছেন সেগুলো লুকিয়ে রাখাকে তিনি অপছন্দ করেন।আল্লাহ পাকের বান্দারা তার দেয়া উৎসবে খুশী হয়ে তার বিধানমতো তারই দান করা সুন্দর পোশাক পরে তার নাম জপতে জপতে ঈদগাহের দিকে যাচ্ছে কেবলই তার ডাকে সাড়া দিতে- এমন দৃশ্য আল্লাহ পাকের কাছে বড়ই আনন্দময় এবং ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করার বিষয়।
৯. আবদুল্লাহ বিন সায়েব (রা.) হতে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.) এর সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের নামাজ শেষ করলেন, তখন বললেন, যার ভালো লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে। (সুনানে আবু দাউদ - ১১৫৭)।ঈদের দিন আল্লাহ তায়ালা একদল লোককে এভাবে মাফ করে দেয় যেমনি তাদের মা তাদেরকে নিষ্পাপ জন্ম দিয়েছিল। রাসুল (সা.) বলেন, তারা যেন এই দিনে মুসলিমদের জামাতে দোয়ায় অংশগ্রহণ করে। (লাতাইফুল মায়ারিফ)।
১০.ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে কোন সালাত আদায় করা ঠিক নয়। রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ ঈদগাহে যাওয়ার পর নামাযের আগে বা পরে কোন নামায আদায় করতেন না। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) ঈদের দিন বের হয়ে শুধুমাত্র ঈদের দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন। ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে নফল বা অতিরিক্ত কোন নামায আদায় করতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)।
১১. জামাতের সাথে ঈদের সালাত আদায় করতে হবে। ঈদের সালাতের পর ইমাম সাহেব খুতবাহ প্রদান করবেন। এবং মুসল্লিগণ তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবেন। এটি পালন করা ওয়াজিব, ঈদুল ফিতর হলো মুসলিম উম্মাহর মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া অনুশীলনের সমাপনী উৎসব, খুতবাহ অর্থ ভাষণ, বক্তৃতা। খুতবাহতে মুসলিম উম্মাহর দিকনির্দেশনামূলক বাণী ও সকলের কল্যাণের জন্য দু’আ থাকা বাঞ্ছনীয়। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে যে তাকওয়ার গুণ ও বহুবিধ মনুষ্যত্বের গুণাবলি অর্জিত হয়েছে, তা বাকী এগারো মাসে স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে প্রতিফলন ঘটানো উচিত।
১২.ঈদের আরেকটি সুন্নাত হলো এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা। এতে দীর্ঘ হাঁটা এবং বেশি মানুষের সাথে মিশার উপকারিতা রয়েছে। ইবনু সুবাইর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এক রাস্তা দিয়ে ঈদের নামাযে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। (সহী আল বুখারী)। এটা এ জন্য যে, যাতে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (যাদুল-মায়াদ)।
১৩. রাসুল (সা.) এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন একে অপরকে বলতেন, আল্লাহ আমার এবং আপনার তরফ থেকে এ আনন্দকে কবুল করুন। ঈদের দিন এমন আনন্দ ও অনুভূতি প্রকাশ করাও ইসলামের অংশ। তবে এসবের কোনো বিষয়েই যেন আমাদের সীমালঙ্ঘন না হয়, সেদিকে সতর্ক ও সচেতন দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। ইবনে হাজার (রাহ.) বলেন, সাহাবিরা ঈদর দিন ঈদের নামাজের পর বিভিন্ন রকমের ঈদের শুভেচ্ছা করতেন। ঈদ মোবারক ইনশাআল্লাহ, ঈদকুমসাইদ, এ ধরনের বাক্য বলে একে অপরের সঙ্গে ঈদের নামাজের পর শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।ঈদের আনন্দ মানে শুধু খাওয়ার আয়োজন নয়, হাসিমুখে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করুন। পাড়া প্রতিবেশি থেকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজন সবার সঙ্গে সালাম মুআনাকা করুন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, ‘হযরত হাসান (রা.) এক দিন হজরত রাসুল (সা.) এর কাছে আসলেন, তিনি তখন তাকে জরিয়ে ধরলেন এবং কোলাকুলি করলেন’।(শারহুস সুন্নাহ)।তবে করোনার কারণে আপাতত কোলাকুলি,করমর্দন, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলুন।
ঈদের দিন আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করা ভালো।ঈদের দিন আত্মীয় স্বজনদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া একটি বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়। আত্মীয়দের সঙ্গে সর্বদা সম্পর্ক রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আখিরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে’।(বুখারি)(করোনার কারণে বেড়ানো নিষিদ্ধ)।ঈদের দিনসহ সব সময় প্রতিবেশীদের খোঁজখবর রাখতে হবে। রাসুল (সা.) ঈদের দিন তার প্রতিবেশীদের খোজ খবর রাখতেন। (আল হাদিস)।কল্যাণের পথে কোনো অপচয় নেই, এ কথা সত্য। তবে ঈদের যাবতীয় আনন্দের সবটুকু যেন হয় আল্লাহর দেওয়া সীমারেখার ভেতরে, নয়তো উল্টো তা পরম করুণাময়ের নাখোশ হওয়ার কারণ হবে।আজকাল ঈদের সময়ে অতি আধুনিক তরুণ যুবকরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে কানা ফাটানো শব্দযন্ত্র বসিয়ে বিদেশি গান ও ডিজে পার্টির আয়োজন করে থাকেন, বিষয়টি যে শুধু ইসলাম বিরুদ্ধ তা নয় বরং এতে অন্য অনেক মানুষের ক্ষতিও হয়ে থাকে, নিজেদের হালাল আনন্দ বিনোদনের কপালে এমন কালো দাগ বসানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে।” (সহীহ বুখারী)। ঈদের দিনে খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন : ঈদের দিন বৈধ খেলা-ধুলা ও নির্দোষ চিত্ত-বিনোদনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেছেন, ঈদের দিন হাবশীরা রাসূল (সা.) এর নিকট খেলাধুলা করতো। আমি তার ঘাড়ের উপর দিয়ে উঁকি দিয়ে তা দেখার চেষ্টা করছিলাম, তিনি তার ঘাড় নীচু করলেন। ফলে আমি তাঁর ঘাড়ের উপর দিয়ে দেখলাম এবং তৃপ্ত হয়ে ফিরে গেলাম। (আহম্মদ, বুখারী, মুসলিম)।আমাদের এ ব্যস্ত জীবনে ঈদের দিন নিজেদের আপনজনদের সঙ্গে মেলামেশার অপূর্ব সুযোগ। তাই শুধুই টিভি নাটকে চোখ দুটিকে স্থির না রেখে যতদূর সম্ভব যে যেখানে আছেন, সবার সঙ্গে দেখা করুন, অসুস্থ কিংবা বয়স্কদের কাছে গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নিন। বাচ্চাদেরও এসব পালনে উৎসাহিত করুন।এটুকু সামাজিক ভালোবাসাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনেকদিন।(করোনার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন)।সব ধরনের কৃত্রিমতা ও লৌকিকতার মুখোশ ঝেড়ে ফেলে অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠার আহ্বান জানায় ঈদুল ফিতর। তাই আল্লাহ এবং তার রাসুল (সা.) আদর্শের সীমানা ডিঙিয়ে যাতে এর কোনো অমর্যাদা না হয়, সেদিকেও আমাদের সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন ।
গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন