সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তাহলে শাদ্দাদের বেহেশত নির্মাণের কাহিনি ভিত্তিহীন ?


শাদ্দাদের বেহেশত নির্মাণ নিয়ে নানান মুখরোচক গল্প কাহিনি প্রচলিত আছে। শাদ্দাদের কাহিনী আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা অর্থাৎ আরব্য রজনী গ্রন্থের ২৭৭ থেকে ২৭৯ তম রাতে বলা হয়। কাসাসুল আম্বিয়া গ্রন্থেও কাহিনি উল্লেখ আছে। কিন্তু কুরআন ও হাদিসের বর্ণনায় শাদ্দাদের বেহেশত নির্মানের কাহিনি উল্লেখ নেই। ইসলামি চিন্তাবিদদের জিজ্ঞেস করলে, তারা বলে থাকেন শাদ্দাদের বেহেশতের কাহিনী স্বীকার বা অস্বীকার করবার মতো উপাত্ত হাতে নেই, তাই এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না।বলা হয়, শাদ্দাদ এবং তার ভাই শাদ্দিদ পালা করে এক হাজার আদ গোত্রের ওপর রাজত্ব করে। পুরো আরব আর ইরাকের রাজা ছিল শাদ্দাদ। উপকথা অনুযায়ী, হুদ (আ) শাদ্দাদকে পরকালের বেহেশতের প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু শাদ্দাদ বলল সে নিজে বেহেশত বানাবে দুনিয়াতেই, লাগবে না তার পরকালের বেহেশত। এরপর ইয়েমেনের আদানের কাছে এক বিশাল এলাকা জুড়ে শাদ্দাদের বেহেশত নির্মাণ শুরু হয়। প্রাচীর দেয়ালগুলো ৭৫০ ফুট উঁচু ছিল, আর প্রস্থে ৩০ ফুট। চারদিকে চারটি ফটক। ভেতরে তিন লক্ষ প্রাসাদবাড়ির কথা বর্ণিত আছে, উপকথা অনুযায়ী জানা যায় যার নির্মাণ কাজ শেষ হয় ৩০০ /৫০০ বছরে।
ফটক দিয়ে ঢুকবার জন্য হাজার হাজার সেনা নিয়ে অগ্রসর হলো শাদ্দাদ। তিন হাজার গজ দূরে এসে তার বাহিনী অবস্থান নিল। এমন সময় অদ্ভুত এক হরিণের দিকে তার নজর পড়ল। দেখে মনে হচ্ছিল, হরিণের পা গুলো রূপার, শিং সোনার আর চোখে ইয়াকুত পাথরের। শাদ্দাদের শিকারের নেশা ছিল। বাহিনীকে থামতে বলে নিজেই রওনা দিল হরিণটি ধরবার জন্য। কিন্তু হউপকথার সংক্ষেপে প্রথম কাহিনী হলো -রাজা আদের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে শাদিদ রাজা হয়, ৭০০ বছর পর্যন্ত চলে তার রাজত্ব। খুবই কড়া এবং ন্যায় ছিল তার শাসন। হুদ (আ) চেষ্টা করেও অবশ্য পৌত্তলিক শাদিদকে আল্লাহর পথে আনতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর উজির শাদ্দাদ রাজা হয়। হ্যাঁ, এ সংস্করণে তারা পালা করে শাসন করেনি, বরং ছোট ভাই উজির বা মন্ত্রী ছিল। রাজা হবার পর তার কাছেও হুদ (আ) গিয়ে বেহেশতের কথা বললেন। তখন শাদ্দাদ বলল, তোমার আল্লাহর বেহেশতের কোনো দরকার আমার নেই। এরকম একটি বেহেশত আমি নিজেই বানিয়ে নেব।(But the king answered, "I stand not in need of thy promises, for I can even in this world build me gardens and pleasure-houses of gold, and costly pearls, and jewels.)।হযরত হুদ (আ) তাকে হুশিয়ার করে দিলেন যে, আল্লাহ পরকালে যে বেহেশত তৈরী করে রেখেছেন, তোমার বানানো বেহেশত তার ধারে কাছেও যেতে পারবেনা। অধিকন্তু তুমি আল্লাহর সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য অভিশপ্ত হবে। কিন্তু শাদ্দাদ কোন হুশিয়ারীর তোয়াক্কা করলো না। সে সত্যি সত্যিই দুনিয়ার উপর একটি সর্ব-সুখময় বেহেশত নির্মানের পরিকল্পনা করল।শাদ্দাদ তার পাশের এক বিশাল সাম্রাজ্যের রাজা ভাগ্নে জোহাক তাজীর কাছে দূত পাঠাল, দূত মারফত শাদ্দাদ বলল, ভাগ্নে! তোমার রাজ্যে যত সোনারূপা আর মূল্যবান জওহরত আছে, সব সংগ্রহ করে আমার দরবারে পাঠিয়ে দেবে, যত মেশক আম্বর আর জাফরানাদি আছে সেগুলোও। আমি দুনিয়ায় এক বিশাল বেহেশত তৈরি করতে চাই।আশপাশের অনুগত রাজাদেরও শাদ্দাদ একই নির্দেশ দিল। আর নিজের সকল প্রজার ক্ষেত্রেও একই নির্দেশ ছিল, কারো কাছে কোনো জহরত পাওয়া গেলে তার ভাগ্যে আছে কঠিন শাস্তি। তল্লাশিও চলত নিয়মিত।একে একে জহরতে ভরে যেতে লাগলো শাদ্দাদের দরবার। বেহেশতের স্থান বাছাইয়ের জন্য অনেক লোক নিয়োগ করা হলো। অবশেষে ইয়েমেনের একটি স্থানকে পছন্দ করা হলো। আয়তন ছিল ১৪০ ক্রোশ। দেশ-বিদেশ থেকে আসা ৩০০০ সুদক্ষ কারিগর কাজ শুরু করল।এক দরিদ্র বিধবা বৃদ্ধার নাবালিকা মেয়ের গলায় ৪ আনা রূপার একটি অলংকার ছিল। এক তালাশকারীর চোখে সেটা পড়ে যায়, সে ছিনিয়ে নেয় সেটি। দুঃখী মেয়েটি ধুলোয় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকে। সে দৃশ্য দেখে সে বৃদ্ধা দু'হাত তুলে ফরিয়াদ করে, "হে আমার প্রতিপালক, তুমি সবই অবগত। দুঃখিনীর প্রতি জালিম শাদ্দাদের অত্যাচারের দৃশ্য তোমার অদেখা নয়। তুমি ছাড়া আমাদের ফরিয়াদ শোনার কেউ নেই। তুমি শাদ্দাদকে ধ্বংস করে তোমার দুর্বল বান্দাকে রক্ষা কর।"ওদিকে বেহেশত বানাবার কাজ চলছে পুরোদমে। ৪০ গজ নিচ থেকে মর্মর পাথর দিয়ে বেহেশতের প্রাসাদের ভিত্তি স্থাপন করা হলো। আর তার উপর সোনা-রুপানির্মিত ইট দিয়ে প্রাচীর বানানো হলো। বর্ণিত আছে, কৃত্রিম গাছ ও শাদ্দাদ বানায়, যার শাখা প্রশাখাগুলো ছিল ইয়াকুত পাথরের, আর পাতাগুলো নির্মিত হয়েছিল 'ছঙ্গে-জবরজদ' দিয়ে। আর ফল হিসেবে ঝুলছিল মণি মুক্তা আর হীরা জহরত। আর মেঝে ছিল চুন্নি পান্নার মতো মূল্যবান পাথরের, সাথে মেশকের ঘ্রাণ। স্থানে স্থানে ঝর্নাধারা ছিল দুধ, মদ আর মধুর। আর চেয়ার টেবিল ছিল লক্ষাধিক, সবই সোনার তৈরি। মোটকথা, এলাহি কাণ্ড, মনোহরী এক দৃশ্য।নির্মাণকাজ শেষ হলে সে বেহেশতের রিণের দেখা আর মেলেনি। এক বিকট অশ্বারোহী তার পথ রোধ করে দাঁড়ালো, যেই না শাদ্দাদ তার বাহিনীর কাছ থেকে সরে এলো। অশ্বারোহী বললেন, "এই সুরম্য প্রাসাদ কি তোমাকে নিরাপদ রাখবে?"
শাদ্দাদ জিজ্ঞেস করল, "তুমি কে?"
"আমি মালাকুল মাউত। মৃত্যুর ফেরেশতা।"
"এখানে কী চাও?"
"এখনো বোঝোনি? আমি তোমার জান কবজ করতে এসেছি।"
শাদ্দাদ নিষ্পলক চোখে রাকিয়ে রইল, তার স্বপ্ন পূরণ না করেই চলে যেতে হবে? "আমাকে অন্তত একবার আমার পরম সাধের বেহেশত দেখতে দাও?"
আযরাঈল (আ) বললেন, "আল্লাহর অনুমতি ছাড়া এক মুহূর্ত বাড়তি সময়ও তোমাকে দিতে পারি না। আমার উপর নির্দেশ এখুনি তোমার জান কবজ করা।"
"তাহলে ঘোড়া থেকে নামি আমি।"
"না, ঘোড়াতে থাকা অবস্থাতেই তোমার জান কবজ করতে হবে আমার।"
শাদ্দাদ এক পা মাটিতে পা রাখতে গেলো। কিন্তু সেটি মাটি স্পর্শ করবার আগেই আযরাঈল (আঃ) দেহপিঞ্জর থেকে আত্মা বের করে নিলেন। আর জিব্রাঈল (আঃ) এর প্রকাণ্ড এক শব্দ করলেন যাতে মারা গেল উপস্থিত সেনাবাহিনী, আর অসংখ্য ফেরেশতা এসে ধ্বংস করে দিয়ে গেল দুনিয়ার 'বেহেশত', পরে রইল ধ্বংসস্তূপ।
আরেকটা গল্প এমন-
একবার আল্লাহ্‌ মৃত্যুর ফেরেশতা আযরাঈল (আ)-কে বললেন, "আযরাঈল! তুমি তো অনেক আত্মা কবজ করেছ। কারো প্রাণ নিতে গিয়ে কি তোমার মনে করুণার উদ্রেক হয়েছিল? কারো প্রতি দয়া দেখিয়েছ?"আযরাঈল (আঃ) বললেন, "জান কবজের সময় সকলের প্রতিই করুণা হয়, কিন্তু আপনার আদেশই চুড়ান্ত।"আল্লাহ্‌ বললেন, "তবে কোন আত্মাহরণের সময় তুমি সবচেয়ে বেশি করুণা অনুভব করেছিলে?"তখন আযরাঈল বললেন, "একবার আদেশ হয়েছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত নৌকার যাত্রীদের জান কবজের। নৌকা ডোবার পর সকলেই মারা গেল। কিন্তু নৌকার একটি তক্তা আপনার নির্দেশে একটি গর্ভবতী মহিলাকে বাঁচিয়েছিল। ফেরেশতারা তক্তার ওপরের সে মহিলাকে একটি দ্বীপে পৌঁছে দিল স্রোতের সাহায্যে। সেখানে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিল সে। নবজাত সন্তানকে দেখে মহিলাটি সব দুঃখ ভুলে গেল। তখনই আমি নির্দেশ পেলাম, এ নারীর জান কবজ করতে হবে। আর নবজাত শিশুটিকে তার পাশেই রেখে যেতে হবে, জীবিত। তখন আমি কেঁদেছিলাম, এ শিশুটির কী হবে? তার তো মৃত্যু ছাড়া আর গতি নেই, কোনো পশু তাকে খেয়ে ফেলবে।দ্বিতীয়বার আমার দয়ার উদ্রেক হয়েছিল শাদ্দাদের প্রতি। শাদ্দাদ এত বছর চেষ্টা করে তার প্রাসাদ তৈরি করল অথচ সে তা একনজর দেখা হতে বঞ্চিত রয়ে গেল। আফসোস নিয়ে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।"আল্লাহ্‌ বললেন, "আযরাঈল! সে শিশুটিই ছিল শাদ্দাদ। তার মায়ের মৃত্যুর পর আমি গ্রীষ্ম ও শীতের দ্বারা তাকে কষ্ট দেইনি। তার এক আঙুল হতে দুধ আর এক আঙুল হতে মধুর ঝর্না প্রবাহিত করেছিলাম। তার জীবন বাঁচিয়েছিলাম। এরপর তাকে বিশাল দেশের প্রতাপশালী সম্রাট করেছি। কিন্তু সে এ নিয়ামতের শুকরিয়া না করে নিজেকে ঈশ্বর দাবি করে। তাই আমার আযাব তাকে গ্রাস করে।" (এ গল্পেরও কোনো প্রমাণিত ভিত্তি উল্লেখ করা নেই)।অনেকে আবার মিথ্যাকে আল্লাহর নামেও চালিয়েছেন। এক লেখক লিখেছেন: ‘‘সে বেহেশতের কথা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও কোরআন পাকে উল্লেখ করেছেন যে, হে মুহাম্মাদ!, শাদ্দাদ পৃথিবীতে এমন বেহেশত নির্মাণ করেছিল, দুনিয়ার কোনো মানুষ কোনোদিনই ঐরূপ প্রাসাদ বানাতে পারে নাই...।’’আল্লাহর কালামের কি জঘন্য বিকৃতি!! এখানে কুরআনের সূরা ফাজরের ৬-৭ আয়াতের অর্থকে বিকৃত করে উপস্থাপিত করা হয়েছে। মূলত অনেক মুফাস্সির এ আয়াতের তাফসীরে সনদ বিহীনভাবে এ সকল বানোয়াট কাহিনী উদ্ধৃত করেছেন। আবার ‘কাসাসুল আম্বিয়া’ জাতীয় গ্রন্থে সনদ বিহীনভাবে এগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। শাদ্দাদের বেহেশত বানানোর কাহিনি একেবারেই অবাস্তব ও কাল্পনিক; নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল দ্বারা তা প্রমাণিত নয়। যারা এটি উল্লেখ করেছেন তারা ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে তা এনেছেন। এজন্যই ইমাম ইবনে কাসীর ও আল্লামা ইবনে খালদুনসহ আরো অনেকেই এ কিসসাকে অবাস্তব ও কাল্পনিক বলে অভিহিত করেছেন।শাদ্দাদের জান্নাত বা বেহেশত সম্পর্কিত যা কিছু কাহিনী হিসেবে বলা হয়, এসবই বানোয়াট, ভিত্তিহীন কথা। কিছু ইহূদীদের বর্ণনা ও কিছু জালিয়াতগণের কাল্পনিক কল্পকাহিনী। এ বিষয়ক কোনো কিছুই রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে কোনো সহীহ বা জঈফ সনদে বর্ণিত হয় নি। মূলত কিছু মুফাস্সির সনদবিহীনভাবে এ সকল বানোয়াট কাহিনী উদ্ধৃত করেছেন।এ বিষয়ে প্রখ্যাত মুফাস্সির ইবনু কাসীর রহ. বলেন,
-وَإِنَّمَا نَبَّهْتُ عَلَى ذَلِكَ لِئَلَّا يُغْتَرَّ بِكَثِيرٍ مِمَّا ذَكَرَهُ جَمَاعَةٌ مِنَ الْمُفَسِّرِينَعِنْدَ هَذِهِ الْآيَةِ، مِنْ ذِكْرِ مَدِينَةٍ يُقَالُ لَهَا: (إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ)… فَإِنَّ هَذَا كُلَّهُ مِنْ خُرَافَاتِ الْإِسْرَائِيلِيِّينَ، مِنْ وَضْعِ بَعْضِ زَنَادِقَتِهِمْ، لِيَخْتَبِرُوا بِذَلِكَ عُقُولَ الْجَهَلَةِ مِنَ النَّاسِ أَنْ تُصَدِّقَهُمْ فِي جَمِيعِ ذَلِكَ.
আমি এ বিষয়ে এজন্য সতর্ক করছি যে, অনেক মুফাস্সির এ আয়াতের (সূরা ফাজর ৭) ব্যাখ্যায় ইরাম শহর সম্পর্কে এ সকল কথা বলেছেন। এদের কথায় পাঠক ধোঁকাগ্রস্থ হবেন না। … এ সকল কথা সবই ইহূদীদের কুসংস্কার ও তাদের কোনো কোনো যিনদীকের বানোয়াট কল্প কাহিনী। এগুলো দিয়ে তারা মুর্খ সাধারণ জনগণের বুদ্ধি যাচাই করে, যারা যা শোনে তাই বিশ্বাস করে। (তাফসীরে ইবনু কাসীর ৮/৩৯৫)।
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবন খালদূন রহ. বলেন,
وأبعد من ذلك وأعرق في الوهم ما يتناقله المفسّرون في تفسير سورة والفجر. في قوله تعالى (أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ * إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ) فيجعلون لفظة إرم اسما لمدينة وصفت بأنّها ذات عماد أي أساطي
সূরা ফজরের আয়াত ‘আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার পালনকর্তা আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কি আচরণ করেছিলেন, যাদের দৈহিক গঠন স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ ছিল’–এর তাফসিরে (কিছু) মুফাসসিরগণ যা বলে থাকেন, তা নিতান্ত অসম্ভব ও ভিত্তিহীন। তারা বলে থাকেন, ইরাম একটি শহরের নাম; যা বহু স্তম্ভবিশিষ্ট প্রাসাদময়…। (তারিখে ইবন খালদূন -১/১৮)।উক্ত আলোচনার আলোকে আশা করি স্পষ্ট হয়েছে যে, শাদ্দাদের তৈরিকৃত বেহেশত বলতে কিছু ছিল না। এর কোনো অস্তিত্বই ছিল না।
গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...