সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

মো আবু রায়হানঃমুসলিম আলেম ওলামাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। এ নিয়ে তাদের মধ্যে  বিভেদও বিস্তর। তবে শর্তাসাপেক্ষে কিছু আলেম ওলামা কুরআন হাদিসের দলিলের ভিত্তিতে জন্মনিয়ন্ত্রণের বৈধতা দিয়ে থাকেন।  কুরআন হাদিসে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা, না করার পক্ষে যথেষ্ট দলিলাদি রয়েছে যা তারা প্রমাণ হিসাবে পেশ করে থাকেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ বলতে সন্তান সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রত্যাশিত সময়ে গর্ভধারন কে বোঝানো হয়। জন্মনিয়ন্ত্রণের সমার্থক শব্দ হিসেবে  গর্ভবিরতিকরণ,  গর্ভনিরোধ,  প্রজনন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়।জন্মনিয়ন্ত্রণের ইংরেজি হলো Birth control।উইকিপিডিয়া মতে Birth control, also known as contraception and fertility control, is a method or device used to prevent pregnancy.গর্ভধারণ প্রতিরোধের এক বা একাধিক কর্মপ্রক্রিয়া, পদ্ধতি, সংযমিত যৌনচর্চা অথবা ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে ঐচ্ছিকভাবে গর্ভধারণ বা সন্তান প্রসব থেকে বিরত থাকার স্বাস্থ্যবিধিই হলো জন্ম নিয়ন্ত্রণ। ইতিহাস ঘেটে পাওয়া যায় সর্বপ্রথম   ৫০০০ -৩২০০ খ্রি.পূর্বে মিসরীয় সভ্যতায় জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়।প্রাচীনকালে জন্ম নিয়ন্ত্রণে বিঘ্নিত যৌন মিলন ও বিবিধ প্রকার প্রাকৃতিক ভেষজ ঔষধি  সেবনের মাধ্যমে জন্ম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হতো। আধুনিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ সংস্কারক মার্গারেট সেনগার ১৯১৪ সালে দ্যা ওমেন রেবেল নামক একটি আট পৃষ্ঠার মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং এর মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রচারণা শুরু হয়।মূলত বিংশ শতাব্দীতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে প্রচারণা পায়।এটিকে পরিবার পরিকল্পনা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ইংরেজিতে 'বার্থ কন্ট্রোল' বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ শব্দটির  প্রবক্তাও হলেন মার্গারেট সেনগার।  ১৯৬০ এর দশকে জন্ম নিয়ন্ত্রণে  জরাযুস্থ গর্ভ-নিরোধক পিলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে সাধারণ জনগণেরর মধ্যে এটি দ্রুত বিস্তার ঘটে। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জনসংখ্যা সমস্যা কে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের  জনসংখ্যা নীতির রুপরেখায় “পরিবার পরিকল্পনা নীতি” প্রণীত হয়। এর আগে ১৯৫৩ সালে বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম পরিবার পরিকল্পনার কাজ শুরু করে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে বাংলাদেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণে যেসব পদ্ধতি এখন ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো হল জন্ম বিরতিকরণ পিল, কপার টি, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন, লাইগেশন, কনডম, ভ্যাসেকটমি, ফোম ট্যবলেট,, নরপ্লান্ট, কনডম , আইইউডি,  ল্যাম (LAM) ইত্যাদি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের হিসাব মতে বাংলাদেশে সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকেন। মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। একটি পরিসংখ্যান মতে, এ পদ্ধতির হার ইরানে ৭৩%, আলজেরিয়াগ ৭১%, তুরস্কে ৭৩%, বাহরাইনে ৬২%, তিউনিশিয়ায় ৬৩%, ইন্দোনেশিয়ায় ৬২%, মিশর ৬০%, জর্দান ৫৯%, মালয়েশিয়া ৪৯%, মরক্কোগ ৬৭%, কুয়েতে ৫২%, কাতারে ৪৩.২, লিবিয়ায় ৪৫%। বর্তমান মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে এক অনুষ্ঠানে বলেন,  "পরিবার পরিকল্পনা এবং গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা মুসলিম পরিবারের জন্য নয়।তিনি আরো বলেন, আমাদের বংশধরদের সংখ্যা বহুগুণে বাড়াবো, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টি বিবেচনা করা কোনো মুসলিম পরিবারের জন্য উচিত নয়।"আল্লাহ পাক  বলেন, “তোমরা নিজেরাই নিজেদের হত্যা করো না। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতি অতীব দয়াবান (সুরা নিসা আয়াত -২৯)।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ সাধারণত তিন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। ক. সাময়িক পদ্ধতি   খ. স্থায়ী পদ্ধতি  ও গ.গর্ভপাত পদ্ধতি । 
ক. সাময়িক পদ্ধতি  : এই পদ্ধতির ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন ,আযল করা অর্থাৎ সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো( (With drawal)।হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)এর যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও সাময়িক পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)।পিল খাওয়া,কনডম ব্যবহার, পেশীতে বড়ি ব্যবহার, জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি। এ পদ্ধতি কেবল নিম্মোক্ত ক্ষেত্রে বৈধ হবে।
প্রথমত: দুই বাচ্চার জন্মের মাঝে কিছু সময় বিরতি দেওয়া যাতে প্রথম সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যার ঘাটতি না হয়।
দ্বিতীয়ত:সন্তানদের স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার কিংবা তাদের সঠিক লালন-পালনের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হওয়ার আশংকা থাকলে।
তৃতীয়ত:মহিলা অসুস্থ ও দূর্বল হওয়ার কারণে গর্ভধারণ বিপদজনক মনে হলে। 
চতুর্থত:দৃগ্ধপোষ্য শিশু মায়ের আবার গর্ভসঞ্চার হলে শিশুর পক্ষে তা ক্ষতিকর হতে পারে। তখন মায়ের দুধের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ফলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
এছাড়া বৈষয়িক অসুবিধা, সমস্যা ও অনিশ্চয়তা তো আছেই। কোনো মুসলিম সন্তানাদির কারণে হারাম জিনিস গ্রহণ ও অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়ার পরিণতি দেখা  দিতে পারে এমতাবস্থায় জন্ম নিয়ন্ত্রণ বৈধ হবে। আল্লাহ বলেন,“ আল্লাহ্ তোমাদের সহজ স্বচ্ছলতা কামনা করেন এবং তিনি কষ্ট ও কাঠিন্য কামনা করেন না।” (সুরা আল বাকারা আয়াত-১৮৫) ।
মিসরের কায়রোয় অবস্থিত আল আজহার 
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেক্টর প্রখ্যাত ইমাম শেখ মাহমুদ শালতুত তাঁর ‘আলফাতাওয়া’নামক বিখ্যাত গ্রন্থে বলেন,  আলেমগণের অভিমত হলো, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মতিতে সাময়িকভাবে গর্ভনিরোধক ব্যবহার জায়েয তো বটেই, আর্থ- সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত কারণে স্থায়ীভাবেও জায়েয”।

খ. স্থায়ী ব্যবস্থা :নারী পুরুষের  অপারেশনের মাধ্যমে এই স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।স্থায়ী পদ্ধতি যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।এই পদ্ধতিকে আলেম ওলামারা সম্পূর্ণ অবৈধ বলেছেন। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন, স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)।নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে স্থায়ীভাবে প্রজনন ক্ষমতা বিনষ্ট করার পদ্ধতি ছিল খাসি হয়ে যাওয়া অর্থাৎ অণ্ড-কোষ কেটে ফেলা । হাদীসে একে নিষেধ করা হয়েছে। এতে স্থায়ীভাবে প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়। হযরত কায়েছ (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (সা.)এর সঙ্গে জিহাদে যেতাম, আর আমাদের সাথে জৈবিক চাহিদা মিটানোর কোন কিছু থাকতো না (এতে আমরা যৌন পীড়নে ভুগতাম )। তাই রাসূলুল্লাহ ( সা.) এর কাছে খাসি হওয়ার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু তিনি আমাদেরকে এটা করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী )।মালয়েশিয়ার জাওহার- এর মুফতি আলহাজ আব্দুল জলিল জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফাতোয়াটি প্রদান করেন।“ স্থায়ী পদ্ধতি ছাড়া ঔষধ কিংবা গর্ভনিরোধক উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা জায়েয। যদি দু’জন অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তার স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহনের পরামর্শ দেন তাহলে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণও জায়েয”। অবশ্য কোন জরায়ুতে ক্যান্সার বা এমন কোন রোগ যদি হয়, যার কারণে জরায়ু কেটে ফেলা ছাড়া কোন উপায় থাকে না, সেক্ষেত্রে জরায়ু কেটে ফেলা জায়েয আছে। এতে চিরতরের জন্য গর্ভধারণের সক্ষমতাও বিনষ্ট হতে পারে। 
গ. গর্ভপাত ঘটানো পদ্ধতি :
গর্ভপাত ঘটানো পদ্ধতি জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি প্রাচীন পদ্ধতি। জন্মনিয়ন্ত্রণের উপায়-উপাদানের অনেক উন্নতি সত্ত্বেও বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এপদ্ধতিও চালু রয়েছে। এ পদ্ধতিটি অবৈধ। তবে যদি নারী কোন কারণে অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে গর্ভপাত বৈধ হবে বলে ইসলামী স্কলাররা মত দেন। মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা।ইসলামী পন্ডিত আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন,উম্মতে মুসলিমার সকল ফুকাহা এ ব্যাপারে একমত, (রূহ আসার পর) গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। আল কুরআনে বলা হয়েছে, "জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল’?)(সুরা তাকভীর আয়াত, ৮-৯)।আল্লাহ। পাক বলেন, “দারিদ্রের কারণে সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দেই।"(সূরা আনআম, আয়াত: ১৫১) তিনি আরও বলেন: “দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই রিযিক দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহা অপরাধ।”(সূরা বনী ইসরাইল,আয়াত: ৩১)।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুযোগে  অনেক অবিবাহিত নারী পুরুষ পারস্পরিক দৌহিক সম্পর্ক জড়িয়ে পড়তে পারে। অথচ আল্লাহ পাক ব্যভিচার সম্পর্কে  বলেন,"তোমরা অবৈধ যৌন সম্ভোগের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।"( সুরা বনী ইসরাঈল আয়াত -৩২)। শয়তান মানুষকে দরিদ্রতার ভয় দেখিয়ে অসামাজিক, অনৈতিক কাজের প্রতি প্রলুব্ধ করে। নারী জাতি আল্লাহভীতির পাশাপাশি আরও একটি নৈতিকতা রক্ষা করতে বাধ্য হয়। তা হলো অবৈধ সন্তান জন্মের ফলে সামাজিক মর্যাদা বিনষ্ট হবার আশংকা। জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেয়ার ফলে, এ আশংকা থেকে একদম মুক্ত। যারা বাইজি নৈশক্লাবে নাচ-গান করে, পতিতা বৃত্তি করে, প্রেমের নামে রঙ্গলীলায় মেতে উঠে, তারা অবৈধ সন্তান জন্মানোর আশংকা করে না।
বর্তমানে বাংলাদেশে জনসংখ্যা যেভাবে হুহু করে বাড়ছে তা অবশ্যই  চিন্তার বিষয়। প্রতি ১৩ সেকেন্ডে দেশে একজন শিশু জন্মগ্রহণ করছে আর ১৪৪ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। গড় হিসাবে প্রতি দুই মিনিট ২৪ সেকেন্ডে মোট জনসংখ্যায় ১১ জন বৃদ্ধির বিপরীতে একজনের মৃত্যু হওয়ায় ওই সময়ে জনসংখ্যায় ১০ জন যুক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে প্রায় ছয় হাজার শিশু। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যা ছিল সাত কোটি ১৪ লাখের মতো, ১৯৯১ সালে ১০ কোটি ৬৩ লাখ এবং ২০১১ সালে দাঁড়ায় ১৪ কোটি ২৩ লাখ। জনসংখ্যাবিদদের হিসাবে জানুয়ারি, ২০১৮-তে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার। বিবিএসের তথ্যমতে এ বছরের জুলাই মাসে দেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬৯ হাজারে।বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব ভারতের চেয়ে চার গুণ ও চীনের চেয়ে প্রায় আট গুণ বেশি। বিবিএস ২০১৫ সালে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছিল। তাতে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ২০১৪ সালের প্রাক্কলনের তথ্য ব্যবহার করা হয়। এতে বলা হয়, ২০৫১ সালে দেশের মানুষ হবে ২১ কোটি ৮৪ লাখ। আর ২০৬১ সালে হবে ২২ কোটি ৫৭ লাখ।এই পরিসংখ্যানের অর্থ, জনসংখ্যা  বেড়েই চলছে।রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমরা সে সমস্ত নারীদের বিয়ে করো যারা প্রেমময়ী ও বেশি সন্তান জন্মদানে সক্ষম, কারণ কেয়ামতের দিন আমি তোমাদের সংখ্যার জন্য গর্ব করবো।" (আবু দাউদ ও নাসাঈ)।শরীয়ত সম্মত বিধান ব্যতীত জন্মনিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। আবার ছোট একটি দেশের জনবিস্ফোরণ  আমাদের জন্য যেন বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকেও দৃষ্টি  দিতে হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...