সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দরিদ্রতা কুফরির দিকে ধাবিত করে



আমরা জানি অভাবে স্বভাব নষ্ট। তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ দরিদ্রতার কারণে মানুষের ধর্ম পরিবর্তনের ঘটনা।এদিকে ইসলামের দৃষ্টিতে দারিদ্র্য হচ্ছে মানব -জীবনের একটি ভয়াবহ সমস্যা। ইসলাম দারিদ্র্যকে একজন মুসলমানের আকিদা-বিশ্বাস, তার স্বভাব-চরিত্র ও সুস্থ চিন্তা-ভাবনা ধ্বংসকারী বিপদ বলে চিহ্নিত করেছে। ধর্ম,কর্ম ছেড়ে দেয়।আর তাই রসুলুল্লাহ (সা) দারিদ্রতা থেকে পানাহ চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন।হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা) (এ দোয়ায় উল্লিখিত বিষয়গুলো থেকে) পানাহ চাইতেন। ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের ফিতনা থেকে, জাহান্নামের আজাব থেকে পানাহ চাই এবং আপনার কাছে পানাহ চাই অধিক ধন-সম্পদের ফিতনা থেকে ও দারিদ্র্যের ফিতনা থেকে।’ (বুখারি)।
১৯৭৫ সালে পুর্বতিমুরে খৃষ্টানদের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০%। কিন্তু ১৯৯০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ৯০%। মাত্র ২০ বছরের মধ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পুর্বতিমুরকে খৃষ্টান স্বাধীন রাস্ট্রে পরিণত করা হল।তারা সেখানে সূদুর প্রসারী পরিকল্পনা করেছিল।জনগনকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা জীবন যাপনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের যোগানদান, অর্থ সম্পদের প্রলোভন ইত্যাদি সাথে ব্রেন ওয়াশ সব মিলিয়ে তারা অধিকতর দ্রুতগতিতে তাদের উদ্দেশ্য সফল করেছিলো।বর্তমানে পূর্ব তিমুরে ৯৮% ক্যাথলিক এবং ১% প্রটেস্ট্যান্ট। ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মগুলি দ্বীপের মধ্যে প্রায় ৫% জনগণের ধর্ম।দক্ষিণ সুদানে ও তারা সফলতার সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে সক্ষম হয়েছিল।নাইজেরিয়াতেও তারা মোট জনসংখার অর্ধেক খৃষ্টান বানাতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ১৮ কোটি জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৫২ জন মুসলিম। সাব সাহারা আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলো এ নাইজেরিয়া। মুসলিমদের পাশাপাশি শতকরা ৪৬ জন খ্রিস্টান এবং বাকি শতকরা ২ জন অন্য ধর্মের অনুসারী। অধিকাংশ মুসলিম দেশটির উত্তরাংশে বসবাস করে। অপরদিকে দক্ষিণ অঞ্চলে অধিকাংশ খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে ও তারা সফলতার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে চলছে। বাংলাদেশের এক-দশমাংশ ভু -ভাগ এবং সবচেয়ে সৌন্দর্য মন্ডিত ও সম্ভাবনাময়ী অঞ্চল চট্টগ্রাম, পার্বত্যচট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার বড় অংশকে তারা খৃষ্টান বানাতে সক্ষম হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় রয়েছে ১৪টি জাতিসত্তা। এর মধ্যে চাকমা, মারমা, রাখাইন, তংচইঙ্গা, পাংখোয়া, লুসাই ও বোমাং উল্লেখযোগ্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাংখোয়া, লুসাই ও বোমাং উপজাতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক লোক ধর্মান্তরিত হয়েছে। খাগড়াছড়ির পানছড়ি, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি, বাঘাইছড়ি ও সাজেক এলাকায় গভীর পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষজনই আকৃষ্ট হচ্ছে ভিন্নধর্মে। এনজিও এবং মিশনারিদের সহায়তায় ধর্ম পরিবর্তনকারী মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে অবহেলিত এসব পাহাড়িবাসী। মিশনারিগুলো সেই দুবর্লতাকে কাজে লাগাচ্ছে। বলা হচ্ছে, খিস্ট্রান হলেই কেউ তাদের জায়গাজমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে না। গহিন অরণ্যে পাহাড়িদের মধ্যে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন উপজাতি নেতারা। কারণ এতে পাহাড়িদের মধ্যেই সম্প্রীতিতে ফাটল ধরছে। উপজাতি নেতাদের অভিযোগ, গহিন অরণ্যের দরিদ্র লোকদের ধর্মান্তরিত হতে প্রলোভন দেখিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ কাজে জড়িত কিছু এনজিও, মিশনারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।
খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের ধর্মান্তরের ঘটনা বেশি। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানেও আছে। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য রুইথি কারবারি সমকালকে বলেন, সেবার নামে এসে পাহাড়িদের ধর্মান্তরিত করতে প্রকাশ্যে কাজ করছে কিছু এনজিও, মিশনারি সংস্থা। ধর্মান্তরিত করার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে দরিদ্র মানুষদের দুবর্লতাকে। ইতিমধ্যে তাদের প্রলোভনের টোপ গিলেছে বহুসংখ্যক পাংখোয়া, লুসাই, বোমাং এবং কিছুসংখ্যক চাকমা ধর্মাবলম্বী অন্যান্য উপজাতিকে টাগের্ট করেও সংস্থা গুলো কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ পর্যন্ত কত লোক আদি ধর্ম ছেড়ে খিষ্ট্রান হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ হিসাব বলা মুশকিল। তবে ধর্ম পরিবর্তনের ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে কোনো না কোনো পাহাড়ি জনপদে। সংখ্যাটা বড়ই হবে।এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগনকে খৃষ্টান ধর্মেবিশ্বাসী করতে নানা ভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে ও অলরেডি অনেক মুসলমান ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে।
দরিদ্রতা ইমানি চেতনা ও তাকওয়ার পরিপন্থী। কোনো মানুষ সঠিক ইসলামী ধারার জীবনযাপন করতে চাইলে তাকে অবশ্যই অর্জনক্ষম হতে হবে অর্থাৎ সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে হবে। নিজেকে দরিদ্রতার অভিশাপমুক্ত করতে হবে। অর্থনৈতিক মুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত একটি চমৎকার হাদিস আছে। হযরত উমর (রা.) বলেন_ সুফফায় বসবাসকারী কিছু ব্যক্তি রাসূলের (সা.) কাছে এসে অভাব-অভিযোগের আরজি পেশ করলে নবী (সা.) বলেন, দরিদ্রতা প্রায় কুফরির পর্যায়ে নিয়ে যায় আর হিংসা তাকদিরকে অতিক্রম করে। সুতরাং তোমরা বলো, হে আল্লাহ, হে সাত আসমান ও আরশে আজিমের রব, আমাদের থেকে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করো এবং আমাদের দরিদ্রতা থেকে মুক্তি দাও। (আত-তাবরানী) এ হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট যে, দরিদ্রতার মধ্যে থেকে ইমানের পরিপূর্ণ দাবি পূরণ সম্ভব নয়। এ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কর্মসংস্থানের পথে অগ্রসর হতেই হবে।

গ্রন্থনায়-মো আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...