সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হযরত ইলিয়াস (আ.) এর কাওমের বাআল দেবতার পূজা

ইলিয়াস (আ.) একজন নবি ছিলেন । আল্লাহ বলেন, আর নিশ্চয় ইলিয়াস ছিলেন রাসূলদের একজন। (সুরা সাফফাত১২৩)। হযরত ইলিয়াস (আ.) ফিলিস্তীনের পার্শ্ববর্তী জর্ডানের আল আদ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ইলিয়াস (আ.) হারূন (আ.)-এর বংশোদ্ভূত বনি ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত একজন নবী ছিলেন। কাতাদা বলেন, ইল্‌ইয়াস ও ইদ্‌রীস একই ব্যক্তি। (তাবারী) অন্যদের নিকট তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সে মতে তিনি ছিলেন, ইলিয়াস ইবনে ফিনহাস ইবনে আইযার ইবনে হারূন ইবনে ইমরান।( ইবন কাসীর)।কুরআনে ইলিয়াস (আ.)এর কথা সুরা আনামের ৮৫ আয়াত ও সুরা সাফফাতের ১৩১,১৪৩ আয়াতে বলা হয়েছে।(সুরা সাফফাতের ১৩০ নং আয়াতে তাকে ইলয়াসীন বলা হয়েছে, অধিকাংশ মুফাস্‌সির বলেন, এটি ইলিয়াসের দ্বিতীয় নাম। যেমন ইবরাহীমের দ্বিতীয় নাম ছিল আব্রাহাম। আর অন্য কোন কোন মুফাসসিরের মতে আরববাসীদের মধ্যে ইবরানী (হিব্রু) ভাষায় শব্দাবলীর বিভিন্ন উচ্চারণের প্রচলন ছিল। যেমন মীকাল ও মীকাইল এবং মীকাইন একই ফেরেশতাকে বলা হতো। একই ঘটনা ঘটেছে ইলিয়াসের নামের ব্যাপারেও। স্বয়ং কুরআন মজীদে একই পাহাড়কে একবার “তুরে সাইনা” বলা হচ্ছে এবং অন্যত্র বলা হচ্ছে, “তুরে সীনীন” (তাবারী) । বাইবেলের আলোচনায় তিনি এলিজা নামে পরিচিত। আর কুরআনে উল্লিখিত তার নাম হলো ইলিয়াস।তাবারি বলেন, তিনি ছিলেন কুরআনে বর্ণিত নবী ইয়াসার চাচাতো ভাই। তাঁকে বা’লাবাক্ক্ নামক এলাকায় প্রেরণ করা হয়েছিল। অনেকে সে জায়গার নাম সামেরা বলেছেন, যা ফিলিস্তীনের মধ্য পশ্চিমে অবস্থিত। সেখানের মানুষ বাআল নামক এক মূর্তির উপাসনা করত। অনেকে বলেন, এটা একটি দেবী ছিল। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বাআল শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন সূরা বাকারার ২২৮, সূরা নিসার ১২৭, সূরা হূদের ৭২ এবং সূরা নূরের ৩১ আয়াতসমূহ।সূরা সাফফাত ১২৫ আয়াতে যে বাআল (بعل) দেবতার কথা বলা হয়েছে, আরবী ভাষায় এর অর্থ স্বামী বা মালিক। এটি সম্ভবত একটি হিব্রু শব্দ। কেননা তখনকার সময় ফিলিস্তীন অঞ্চলের ভাষা ইবরানী বা হিব্রু ছিল। এটি ইসরাইলি পূজিত দেবমূর্তির নাম। হযরত মূসা (আ.) এর সময়ে শাম অঞ্চলে এর পূজা হতো এবং এটাই ছিল তাদের সর্বাধিক জনপ্রিয় দেবতা। এটি লেবাননের একটি প্রসিদ্ধ শহরের নাম, যা উক্ত বাআল দেবতার নামেই নামকরণ করা হয়েছে। বাইবেলের বর্ণনা মতে মূসার প্রথম খলিফা ইউশা বিন নূনের ইন্তেকালের পরপরই বনী ইসরাঈলের মধ্যে এ নৈতিক ও ধর্মীয় অবক্ষয়ের সূচনা হয়ে গিয়েছিল। একেশ্বরবাদী মূসার এর অনুসারীগণ বাআলের পূজা শুরু করে।ইলিয়াস (আ.)এর সময় তৎকালীন শ্যাম দেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিন প্রভৃতি এলাকা। এর কোনো অংশের জন্য অথবা গোটা এলাকার জন্যই ইলিয়াস (আ.) নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। তবে তিনি মূলত বনি ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তখন বনি ইসরাইলের সাম্রাজ্য দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। এক অংশকে বলা হতো ইয়াহুদা। যার রাজধানী ছিল বায়তুল মোকাদ্দাস। অপর ভাগের নাম ছিল ইসরাইল এবং তাদের রাজধানী ছিল তৎকালীন সামেরাহ এবং বর্তমানের নাবলুস।

বাআলের ব্রোঞ্জ মূর্তি,
 খ্রিস্টীয় দ্বাদশ-চতুর্দশ শতক,
 রাস শর্মা (প্রাচীন উগারিট)
অঞ্চলে প্রাপ্ত।
তারা আপোষে পরস্পরে মারমুখী ছিল। ফেলে আসা নবু্য়তি সমাজ ব্যবস্থা থেকে তারা অনেক দূরে একটি পতিত সমাজে পরিণত হয়েছিল। কিতাবধারী ও কিতাবহীন জাহেলী সমাজের মধ্যে পার্থক্য করার কোন উপায় ছিল না।তৎকালীন ইসরাইলের শাসনকর্তার নাম বাইবেলে আহাব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার স্ত্রী ছিল ইযবীল। যে বাআল দেবমূর্তির পূজা করত। সে বাআল মূর্তির নামে এক বিশাল উপাসনালয়ও তৈরী করে এবং সেখানে সকল বনি ইসরাইলকে মূর্তিপূজায় আহবান করে।ফলে দলে দলে লোক সেদিকে আকৃষ্ট হয়েছিল।কারো কারো মতে, জাহেলী আরবদের প্রসিদ্ধ দেবমূর্তি হোবল এর আরেক নাম বাআল। মক্কার খুযাআহ গোত্রের নেতা আমর বিন লুহাই সর্বপ্রথম সিরিয়া থেকে বহু মূল্যের বিনিময়ে এই মূর্তি নিয়ে এসে কাবা গৃহে স্থাপন করে,জনগণকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে,সিরিয়রা এই মূর্তির অসীলায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং এলাকা শস্য-শ্যামল হয়ে উঠবে। এটাই ছিল কাবা গৃহে স্থাপিত প্রথম দেবমূর্তি। পরে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে আরও মূর্তি এনে স্থাপন করে। এভাবে রাসূলের আবির্ভাবকালে তার সংখ্যা ৩৬০-য়ে গিয়ে দাঁড়ায়। তবে তারা এর দ্বারা তাদের দাবী মতে ইবরাহিমি ধর্মের তাওহীদ বিশ্বাসে কোন ত্রুটি হচ্ছে বলে মনে করত না। তারা এটাকে শিরক ভাবত না; বরং আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের অসীলা মনে করত।আল্লাহ বলেন, জেনে রাখ, খাঁটি আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য।যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা বলে, ‘আমরা এদের পূজা এ জন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দেবে।ওরা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে, আল্লাহ তার ফায়সালা করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না, যে মিথ্যাবাদী অবিশ্বাসী।(সুরা যুমার আয়াত-৩)।মূসা-হারুন, দাঊদ ও সুলায়মান নবীর উম্মতেরা বিনা দ্বিধায় শিরকের মহাপাপে আত্মাহুতি দিচ্ছিল। এমন এক মর্মান্তিক অবস্থায় আল্লাহ পাক তাদের নিকটে তাওহীদের বাণী প্রচারের জন্য ইলিয়াস (আ.)কে নবী হিসাবে প্রেরণ করেন।ইলিয়াস (আ.) সেই জনপদের লোকজন এবং শাসনকর্তা আহাব সত্যের দাওয়াত দিলেন। তাওহিদের কথা বললেন এবং কাল্পনিক দেবতা বাআল পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিলেন। সেই কথা কুরআনে এভাবে বলা হয়েছে, 'আর নিঃসন্দেহে ইলিয়াস রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। সে সময়ের কথা স্মরণ কর, যখন সে তার জাতিকে বলেছিল তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করো না? তোমরা কি বাআলকে ডাক, আর সর্বোত্তম স্রষ্টাকে ত্যাগ করো! আসলে আল্লাহই তোমাদের রব আর তোমাদের পূর্ব পুরুষদেরও রব। (সুরা আস সাফফাত ১২৩-১৩২)।বিগত নবীগণের যে দুরবস্থা হয়েছিল, ইলিয়াস (আ.)-এর ভাগ্যে তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি ইসরাইলের শাসক আহাব ও তার প্রজাবৃন্দকে বা‘ল দেবমূর্তির পূজা করতে নিষেধ করলেন এবং এক আল্লাহর প্রতি ইবাদতের আহবান জানালেন। কিন্তু দু’একজন হকপন্থী ব্যক্তি ছাড়া কেউ তাঁর কথায় কর্ণপাত করল না। তারা ইলিয়াস (আ)-এর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হ’ল। তাকে যত্রতত্র অপমান-অপদস্থ করা শুরু করল। এমনকি দৈহিক নির্যাতনও শুরু হয়ে গেল। কিন্তু ইলিয়াস (আ.) তাঁর দাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে রাজা ও রাণী তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে তিনি রাজধানী ছেড়ে অনেক দূরে এক পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করলেন এবং আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করে বৃষ্টি বর্ষণের অধিকার লাভ করেন। ফলে সারা দেশে তিন বছর অনাবৃষ্টি দেখা দিল। ইলিয়াস (আ.) মনে করলেন অনাবৃষ্টি দূর করার জন্য তিনি যদি তাদেরকে মোজেযা প্রদর্শন করেন, তাহলে হয়ত তারা শিরক বর্জন করে তাওহীদ কবুল করবে এবং এক আল্লাহর ইবাদতে ফিরে আসবে। এসময় এক বিধবার সন্তানকে রোগ মুক্ত করলে বিধবা ইলিয়াস (আ.) এর অনুসারি হন।

আল্লাহর হুকুমে ইলিয়াস (আ.)তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে সরাসরি ইসরাইলের বাদশাহ আহাবের দরবারে হাযির হলেন। তিনি বললেন, দেশব্যাপী এই অনাবৃষ্টির কারণ হলো আল্লাহর নাফরমানী। তোমরা নাফরমানী থেকে বিরত হলে এ আযাব দূর হতে পারে। তোমরা বলে থাক যে, তোমাদের বাআল দেবতার নাকি সাড়ে চারশ’ নবী (!) আছে। তাই যদি হয়, তাহলে তুমি তাদের সবাইকে একত্রিত কর। তারা এই অনাবৃষ্টি দূর করার জন্য বাআল দেবতার নামে কুরবানী করুক। আর আমি একই উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে কুরবানী পেশ করি। যার কুরবানী আসমান থেকে আগুন এসে ভস্ম করে দেবে, তার ধর্মই সত্য বলে গণ্য হবে। ইলিয়াস (আ.)-এর এ প্রস্তাব সবাই সানন্দে মেনে নিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘কোহে কারমাল’ নামক পাহাড়ী উপত্যকায় সকলে সমবেত হলো। বাআল দেবতার নামে তার মিথ্যা নবীরা কুরবানী পেশ করল। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাআল দেবতার উদ্দেশ্যে আকুতি-মিনতি ও কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করা হলো। কিন্তু দেবতার কোন সাড়া পাওয়া গেল না। আসমান থেকে কোন আগুন নাযিল হলো না।অতঃপর ইলিয়াস (আ.)আল্লাহর নামে কুরবানী করলেন এবং যথাসময়ে আসমান থেকে আগুন এসে তা খেয়ে গেল। বস্ত্ততঃ এটাই ছিল কুরবানি কবুল হওয়ার নিদর্শন। এভাবেই কবুল হয়েছিল আদমপুত্র হাবিলের কুরবানী। তখনকার সময় মুশরিকদের মধ্যেও এ রীতি গ্রহণযোগ্য ছিল, যা ইলিয়াসের বর্তমান ঘটনায় প্রমাণিত হয়।আসমান থেকে আগুন এসে কুরবানী কবুলের এই অভাবনীয় দৃশ্য দেখে অনেকে সাথে সাথে সিজদায় পড়ে গেল এবং ইলিয়াসের দ্বীন কবুল করে নিল। সকলের নিকটে ইলিয়াস (আঃ)-এর সত্যতা স্পষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু বাআল পূজারী কথিত ধর্মনেতারা তাদের জিদের উপরে অটল রইল। এইসব ভণ্ড নবীরাও তাদের স্বার্থান্ধ অনুসারীরা ঈমান আনল না।এরপর হত্যা করা হল ভণ্ড নবীদের। আর ইলিয়াস (আ) দোয়া করতেই বৃষ্টি নামলো। দুর্ভিক্ষ বন্ধ হয়ে গেল। এদিকে আহাবের স্ত্রী ইযবিল ইলিয়াস (আ.) কে পুনরায় হত্যার চক্রান্ত শুরু করে দিল। ফলে তিনি রাজধানী সামেরাহ (নাবলুস) ছেড়ে চলে গেলেন এবং কিছুদিন পর বনু ইসরাইলের অপর রাজ্য পার্শ্ববর্তী ইয়াহূদিয়াহতে উপস্থিত হলেন। ঐসময় বাআল পূজার ঢেউ এখানেও লেগেছিল। হযরত ইলিয়াস (আ.) সেখানে পৌঁছে তাওহিদের দাওয়াত শুরু করলেন। সেখানকার সম্রাট ইহুরাম-এর কাছেও তিনি দাওয়াত দিলেন। কিন্তু নিরাশ হ’লেন। অবশেষে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো।কয়েক বছর পর ইলিয়াস (আ.) পুনরায় ইসরাইলে ফিরে এলেন এবং আহাব ও তার পুত্র আখযিয়া’-কে সত্য পথে আনার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারা তাদের শিরকি ধ্যান-ধারণায় অটল রইল। অবশেষে তাদের উপরে বৈদেশিক আক্রমণ ও মারাত্মক রোগ-ব্যধির গযব নাযিল হলো।
গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...