সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হযরত আইউব (আ.) এর স্ত্রীর নাম কী বিবি রহিমা ?




হযরত আইউব (আ.) এর কবর,ইরাক

হযরত আইউব (আ.) সবরকারী নবিগণের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় এবং অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন। তিনি তাঁর সব সম্পদ, পরিবার হারিয়েছিলেন এবং ১৮ বছর অসুস্থ ছিলেন। বিপদে ধৈর্য ধারণ করায় এবং আল্লাহর পরীক্ষাকে হাসিমুখে বরণ করে নেওয়ায় আল্লাহ কুরআনে হযরত আইউব (আ.) কে ‘ধৈর্যশীল’ ও সুন্দর বান্দা’ হিসাবে প্রশংসা করেছেন।আল্লাহ বলেন,‘আর স্মরণ কর আইউব এর কথা, যখন তিনি তার পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেন, আমি কষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি সর্বোচ্চ দয়াশীল’। ‘অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিলাম এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিলাম। তার পরিবারবর্গকে ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ হতে দয়া পরবশে। আর এটা হ’ল ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ’।(সুরা আম্বিয়া আয়াত ৮৩-৮৪)।পবিত্র আল কুরআনের ৪টি সূরার ৮টি আয়াতে হযরত আইউব (আ.)এর কথা এসেছে। সুরাগুলো হলো নিসা ১৬৩, আনআম ৮৪, আম্বিয়া ৮৩-৮৪ এবং ছোয়াদ ৪১-৪৪।ইবনে কাছীরের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নবি ইসহাক এর দুই জমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মধ্য পুত্র ঈছ-এর প্রপৌত্র ছিলেন ।তিনি হূরান অঞ্চলের বাছানিয়াহ এলাকায় প্রেরীত হয়েছিলেন। যা ফিলিস্তিনের দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর দামেষ্ক ও আযরূআত-এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
হযরত আইউব (আ.) এর কবর

হযরত আইউব (আ.) এর স্ত্রী ছিলেন ইয়াকূব-পুত্র ইউসুফ (আ.)-এর পৌত্রী লাইয়া বিনতে ইফরাঈম বিন ইউসুফ। কেউ বলেছেন, রাহমাহ। তিনি ছিলেন স্বামী ভক্তি ও পতিপরায়ণতায় বিশ্বের এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশে তিনি বিবি রহিমা নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।এক শ্রেণির ওয়ায়েজিন গ্রাম বাংলায় গলা ফাটিয়ে মা বোনদের বিবি রহিমার কিসসা শোনায় । শুধু তাই নয় তাঁর পতিভক্তি বিষয়ে রহিমা নামে জনপ্রিয় উপন্যাস,গল্প,নাটক বাজারে চালু আছে। অথচ বিবি রহিমা নামটির উৎপত্তি কাহিনী নিতান্তই হাস্যকর।পবিত্র কুরআনে সূরা আম্বিয়া ৮৪ আয়াতে رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا (‘আমরা আইউবকে.... আরও দিলাম আমার পক্ষ হতে দয়া পরবশে’)।এই আয়াতের রাহমাতান (رَحْمَةً) শব্দটিকে রহিমা বানিয়ে হযরত আইউব (আ.) এর স্ত্রীর নাম হিসাবে একদল লোক সমাজে চালু করে দিয়েছে। ইহুদি-খ্রিস্টানরা যেমন তাদের ধর্মগ্রন্থের শাব্দিক পরিবর্তন ঘটাতো, এখানেও ঠিক ঐরূপ করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ যেন বলছেন যে, আইউবের স্ত্রী রহিমা তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। পরে আমরা তাকে আইউবের কাছে ফিরিয়ে দিলাম। বস্ত্ততঃ এটি একটি উদ্ভট ব্যাখ্যা বৈ কিছু নয়। মূলতঃ আইউবের স্ত্রীর নাম কি ছিল, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য কুরআন বা হাদিসে নেই। এ বিষয়ের ভিত্তি হলো ইহুদি ধর্মবেত্তাদের রচিত কাহিনীসমূহ। যার উপরে শতভাগ বিশ্বাস স্থাপন করাটাও নিতান্তই ভুল।

আল্লাহ বলেন,‘আর তুমি বর্ণনা কর আমাদের বান্দা আইয়ূবের কথা। যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বলল, শয়তান আমাকে (রোগের) কষ্ট এবং (সম্পদ ও সন্তান হারানোর) যন্ত্রণা পৌঁছিয়েছে ।(আমরা তাকে বললাম,) তুমি তোমার পা দিয়ে (ভূমিতে) আঘাত কর। (ফলে পানি নির্গত হ’ল এবং দেখা গেল যে,) এটি গোসলের জন্য ঠান্ডা পানি ও (পানের জন্য উত্তম) পানীয় ।আর আমরা তাকে দিয়ে দিলাম তার পরিবারবর্গ এবং তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আমাদের পক্ষ হতে রহমত স্বরূপ এবং জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ’।(আমরা তাকে বললাম,) তুমি তোমার হাতে একমুঠো তৃণশলা নাও। অতঃপর তা দিয়ে (স্ত্রীকে) আঘাত কর এবং শপথ ভঙ্গ করো না (বরং শপথ পূর্ণ কর)। এভাবে আমরা তাকে পেলাম ধৈর্যশীল রূপে। কতই না চমৎকার বানদা সে। নিশ্চয়ই সে ছিল (আমার দিকে) অধিক প্রত্যাবর্তনশীল।’(সুরা ছোয়াদ আয়াত, ৪১ -৪৪)।

গ্রন্থনায়-মো আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...