সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লুত (আ.) এর সমকামী জাতির ওপর আল্লাহর গজব

লুত (আ.) আল্লাহ প্রেরিত একজন নবী যাকে সদোম ও গোমোরাহ নামক শহরদ্বয়ের অধিবাসীদের নিকট নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল । লুত (আ.) জাতির বসবাস ছিল বর্তমানে যে এলাকাটিকে ট্রান্স জর্দান বলা হয় সেখানেই । ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী স্থানে এ এলাকাটি অবস্থিত।কিন্তু আজ এ জাতির নাম-নিশানা দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এমনকি তাদের জনপদগুলো কোথায় কোথায় অবস্থিত ছিল তাও আজ সঠিকভাবে জানা যায় না। মৃত সাগরই তাদের একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে টিকে আছে। এই অঞ্চলটি জর্ডান ও (প্যালেষ্টাইনের) বায়তুল মুক্বাদ্দাসের মধ্যস্থলে অবস্থিত ছিল যাকে সাদুম বলা হয়। বাইবেলেও এ জাতির কেন্দ্রীয় স্থান সাদুম বলা হয়েছে । এ ভূখন্ড ছিল শস্য-শ্যামল। এখানে সর্বপ্রকার শস্যাদি এবং ফল-মূলের প্রাচুর্য ছিল। কুরআনুল করীম বিভিন্ন স্থানে এদের সমষ্টিকে মুতাফিকা ও মুতাফিকাত শব্দে বর্ণনা করেছে। আল্লাহ বলেন, তিনি উৎপাটিত (মুতাফিকা) আবাস ভূমিকে উল্টিয়ে দিয়েছিলেন। (আন নাজম আয়াত- ৫৩)। মুতাফিকাতবাসী (বিধ্বস্ত জনপদের অধিবাসী) লুত (আ.) -এর সম্প্রদায় যাদের জনপদের নাম ছিল সাদুম। মুতাফিকাত এর অর্থ হল, উল্টো-পাল্টাকৃত। এদের উপরে প্রথমতঃ আসমান থেকে পাথর বর্ষণ করা হয়েছিল, আর দ্বিতীয়তঃ তাদের জনপদকে উল্টো-পাল্টা করে দেওয়া হয়েছিল। যার কারণে বস্তিটার উপরিভাগ নিম্নে এবং নিম্নভাগ উপরে হয়ে গিয়েছিল। এই কারণেই তাদেরকে আসহাবে মুতাফিকাত বলা হয়। লুত (আ.)ও আল্লাহ্ তায়ালা নবুওয়াত দান করে জর্দান ও বায়তুল মোকাদাসের মধ্যবর্তী সাদূমের অধিবাসীদের পথ প্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেন। এ এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় বড় শহর ছিল। এসব শহরের মধ্যে সাদুমকেই রাজধানী মনে করা হত। লুত লুত (আ.) এখানেই অবস্থান করতেন। লুত (আ.) ছিলেন ইবরাহীম (আ.) এর ভ্রাতুষ্পুত্র। উভয়ের মাতৃভূমি ছিল পশ্চিম ইরাকে বসরার নিকটবর্তী প্রসিদ্ধ বাবেল শহর। এখানে মূর্তিপূজার ব্যাপক প্রচলন ছিল। স্বয়ং ইবরাহীম (আ.) এর পরিবারও মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল তাদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ্ তা'আলা ইবরাহীম (আ.) কে নবী করে পাঠান। কিন্তু সবাই তার বিরুদ্ধাচরণ করে এবং ব্যাপারটি নমরূদের অগ্নি পর্যন্ত গড়ায়। স্বয়ং পিতা তাকে গৃহ থেকে বহিষ্কার করার হুমকি দেন। নিজ পরিবারের মধ্যে শুধু স্ত্রী সারা ও ভ্রাতুষ্পপুত্র লুত মুসলিম হন। অবশেষে তাদেরকে সাথে নিয়ে ইবরাহীম (আ.) দেশ ছেড়ে সিরিয়ায় হিজরত করেন। জর্দান নদীর তীরে পৌছার পর আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহীম (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসের অদূরেই বসতি স্থাপন করেন। আল্লাহ্ তা'আলা লুত (আ.) কে তাদের হেদায়াতের জন্য নিযুক্ত করেন। আল্লাহ বলেন,আর আমি লূতকেও পাঠিয়েছিলাম। তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, “তোমরা কি এমন খারাপ কাজ করে যাচ্ছ যা তোমাদের আগে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি? ( সুরা আরাফ আয়াত-৮০)। লুত (আ.) তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ার সাথে সাথে (যা ছিল প্রত্যেক নবীর মৌলিক দাওয়াত এবং সর্বপ্রথম তাঁরা এরই প্রতি স্ব স্ব জাতিকে দাওয়াত দিতেন। পুরুষ-সঙ্গমের যে মহা অপরাধ তাঁর জাতির মাঝে বিদ্যমান ছিল, তার জঘন্য ও ঘৃণ্য হওয়ার কথাও তাদের কাছে বর্ণনা করেন। লূত (আ) এর পাপী সম্প্রদায়ই প্রথম সমকামিতা (অর্থাৎ পুরুষ-পুরুষ এবং মহিলা-মহিলা যৌন আচরণ করা) শুরু করে। আর এরই কারণে এ কুকর্মের নাম হয়ে পড়েছে ‘লিওয়াত্বাত’। তাই এটাই সমীচীন ছিল, এই জাতিকে প্রথমে এই অপরাধের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত করানো। লুত (আ.) স্বজাতিকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমরা এমন অশ্লীল কাজ কর, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি।” অর্থাৎ লুত (আ.) এর জাতি নারীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের সাথে কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করত। এটা ছিল এমন কাজ যা এর পূর্বে কোন জাতি করেনি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে,পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সুরা আরাফ আয়াত-৮১)। যারা হল কাম-চরিতার্থ করার প্রকৃত স্থান এবং যৌনতৃপ্তি লাভের আসল জায়গা। এতে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তাদের প্রকৃতির বিকৃতি ঘটেছিল। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পুরুষদের যৌনক্ষুধা নিবৃত্ত করার জন্য নারীদের লজ্জাস্থানকে তার প্রকৃত স্থান হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এই যালিমরা সীমা অতিক্রম করে পুরুষদের পায়খানার দ্বারকে এই কাজের জন্য ব্যবহার করতে আরম্ভ করে দেয়। পুরুষদের কাছে তোমরা কাম-চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে এই অশ্লীল কাজের জন্যই যাও। এ ছাড়া তোমাদের আর এমন কোন উদ্দেশ্য থাকে না, যা বিবেক-বুদ্ধির অনুকূল হয়। এ দিক দিয়ে তারা একেবারে পশুদের মত ছিল, যারা কেবল কাম-চরিতার্থ করার জন্য একে অপরের উপর চড়ে। কিন্তু বর্তমানে এই শুদ্ধ প্রকৃতি থেকে বিচ্যুতিকে এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকেই পাশ্চাত্যের তথাকথিত ‘সভ্য’ জাতিরা ‘স্বাধীনতা’ বলে গ্রহণ করেছে। আর এটাই এখন মানুষের ‘মৌলিক অধিকার’ রূপে বিবেচিত হয়েছে। অতএব এ থেকে বাধা দেওয়ার অধিকার কারো নেই।
লুত (আ.) এর জীবন্ত স্ত্রীর মূর্তি
তাই সেখানে এখন সমলিঙ্গী ব্যভিচারকে আইন-সংগত বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে! এটা এখন কোন অপরাধই নয়। লুত (আ.) তাদের নিষেধ করলে উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, ‘এদের (লূত্ব এবং তার সঙ্গীদের)কে জনপদ হতে বহিষ্কৃত কর। এরা তো এমন লোক যারা পবিত্র থাকতে চায়।’( সুরা আরাফ আয়াত- ৮২]। এটা হল লুত (আ.) কে গ্রাম থেকে বের করার কারণ। এ লোক এই অন্যায় থেকে বেঁচে থাকতে চান। কাজেই উত্তম হল, তিনি আমাদের সাথে আমাদের গ্রামে যেন না থাকেন। অথবা ঠাট্টা ও উপহাস ছলে তারা এ রকম কথা বলেছিল।এজন্য আল্লাহ্ তায়ালা বলছেন, তোমরা মনুষ্যত্বের সীমা অতিক্রমকারী সম্প্রদায়। প্রত্যেক কাজে সীমা অতিক্রম করাই তোমাদের আসল রোগ। যৌন কামনার ক্ষেত্রেও তোমরা আল্লাহ্‌র নির্ধারিত সীমা ডিঙ্গিয়ে স্বভাববিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়েছ। লুত (আ.) এর উপদেশের জবাবে তার সম্প্রদায় বলল, এরা বড় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন বলে দাবী করে। এদের চিকিৎসা এই যে, এদেরকে বস্তি থেকে বের করে দাও।আল্লাহ তায়ালা জিব্রাইল (আ.) সহ কতিপয় ফেরেশতাকে কওমে লুতের উপর আযাব নাযিল করার জন্য প্রেরণ করেন। যাত্রাপথে তারা ফিলিস্তানে প্রথমে ইব্রাহিম (আ.) এর সমীপে উপস্থিত হন। আল্লাহ তায়ালা যখন কোন জাতিকে আযাব দ্বারা ধ্বংস করেন তখন তাদের কার্যকলাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আযাবই নাযিল করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাগণকে যুবকরুপে প্রেরণ করেন।লুত (আ.) প্রথম অবস্থায় ফেরেশতাদের চিনতে না পেরে মানুষ মনে করে তাদের নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন হলেন। কারণ মেহমানের আতিথেয়তা নবীর নৈতিক দায়িত্ব। পক্ষান্তরে দেশবাসীর কু-স্বভাব তার অজানা ছিল না। উভয় সংকটে পড়ে তিনি স্বগতোক্তি করলেন আজেকের দিনটি বড় সংকটময়।আল্লাহ বলেন, আর যখন আমাদের প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের কাছে আসল তখন তাদের আগমনে তিনি বিষন্ন হলেন এবং নিজকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করলেন এবং বললেন, এটা বড়ই বিপদের দিন।( সুরা হুদ আয়াত-৭৭)। লুত (আ.) এর অস্থিরতার কারণ তফসীরবিদগণ লিখেছেন যে, উক্ত ফেরেশতাগণ দাঁড়িবিহীন তরুণের আকৃতিতে এসেছিলেন, ফলে লুত (আ.) নিজ সম্প্রদায়ের নোংরা স্বভাবের কারণে এই পরিস্থিতিকে বড় সংকটজনক ভাবছিলেন। কারণ তিনি জানতেন না যে, আগত উক্ত তরুণগুলি, (মানুষ) মেহমান নয়; বরং আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতা, যাঁরা এই সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্যই এসেছেন।এসময় লুত (আ.) এর স্ত্রী নবীর বিরুদ্ধাচাণ করে কাফেরদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতো। সম্মানিত ফেরেশতাগণ সুদৰ্শন যুবকের আকৃতিতে যখন লুত (আ.) এর গৃহে উপনীত হলেন তখন তার স্ত্রী সমাজের সমকামী দুষ্ট লোকদের খবর দিল যে আজ আমাদের গৃহে কতিপয় সুন্দর তরুণ মেহমান আগমন করেছেন। যখন সেই সমকামী লোভী লম্পটরা জানতে পারল যে, কিছু সুন্দর যুবক লুতের বাড়িতে মেহমান হয়ে এসেছে, তখন তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে লুত (আ.) এর বাড়ির দিকে ছুটে এল। কুকর্মের প্রভাবে তারা এতোটা নির্লজ্জ হয়েছিল যে, লুত (আ.) এর মত একজন সম্মানিত নবীর গৃহ প্রকাশ্যভাবে অবরোধ করেছিল। তারা যুবকদের (ফেরেশতাদের) নিজেদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতে লাগল, যাতে তাদের সাথে আপন বিকৃত যৌন-কামনা চরিতার্থ করতে পারে। আর তাঁর কওমের লোকেরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তার (গৃহ) পানে ছুটে আসতে লাগল। পূর্ব থেকেই তারা কু-কর্মে তৎপর ছিল। লূত (আঃ) বললেন-হে আমার কওম, এ আমার কন্যারা রয়েছে, এরা তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং অতিথিদের ব্যাপারে আমাকে লজ্জিত করো না, তোমাদের মধ্যে কি কোন ভাল মানুষ নেই। (সুরা হুদ আয়াত-৭৮)।এ আয়াতে কন্যা বলে কাদেরকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত আছে, একঃ হতে পারে লুত সমগ্র সম্প্রদায়ের মেয়েদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কারণ নবী তার সম্প্রদায়ের জন্য বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে থাকেন। আর সম্প্রদায়ের উম্মতের জন্য পিতৃতুল্য এবং উম্মতগণ তার সন্তানস্বরূপ। যেমন কুরআনের সূরা আহযাবের ৬ষ্ঠ আয়াতের সাথে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) ক্বেরাতে وَهُوَ أبٌ لَهُمْ বাক্যও বর্ণিত আছে। যার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সমগ্র “উম্মতের পিতা” বলে অভিহিত করা হয়েছে। সে হিসাবে লুত (আ.) এর কথার অর্থ হল, তোমরা নিজের কদাচার হতে বিরত হও এবং ভদ্রভাবে কওমের কন্যাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে বৈধভাবে স্ত্রী রূপে ব্যবহার কর। (তাবারী; কুরতুবী)। দুই আবার এও হতে পারে যে, তাঁর ইঙ্গিত ছিল তাঁর নিজের মেয়েদের প্রতি। “এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতর” –একথা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, তিনি তাদের কাছে তার মেয়েদের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। লুতের বক্তব্যের পরিষ্কার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আল্লাহ যে জায়েয পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন সেই পদ্ধতিতেই নিজেদের যৌন কামনা পূর্ণ করো এবং এ জন্য মেয়েদের অভাব নেই। (কুরতুবী)। অর্থাৎ, যদি এখানে আসার পিছনে তোমাদের উদ্দেশ্য যৌন-প্রবৃত্তিই পূরণ করে শান্তি ও তৃপ্তি অর্জন করাই হয়, তাহলে তার জন্য আমার নিজের মেয়েরা উপস্থিত আছে, তাদেরকে তোমরা বিয়ে করে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করে নাও। এটাই তোমাদের জন্য সর্বদিক থেকে কল্যাণকর হবে। কোন কোন তফসীরকার বলেন, (লুত (আ.) আমার) কন্যা বলে সমগ্র জাতির মহিলাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন এবং তাদেরকে স্বীয় কন্যা এই জন্য বলেছেন যে, পয়গম্বরগণ নিজ উম্মতের জন্য পিতৃতুল্য। উদ্দেশ্য এই যে, তোমাদের উক্ত কাজের জন্য নারীজাত আছে, তাদেরকে বিবাহ কর ও নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ কর। (ইবনে কাসীর)। আমার বাড়িতে আগত মেহমানদের সাথে জোরপূর্বক দুর্ব্যবহার করে আমাকে অপমানিত করো না। তোমাদের মাঝে কি এমন কোন ন্যায়নিষ্ঠ ভাল মানুষ নেই, যে অতিথিপরায়ণতার চাহিদা ও এই স্পর্শকাতর অবস্থাকে বুঝতে পারে এবং তোমাদেরকে তোমাদের নোংরা সংকল্প থেকে বিরত রাখে? লুত (আ.) এ সব কথা এই জন্য বলেছিলেন যে, তিনি সেই ফিরিশতাগণকে অভ্যাগত (মানুষ) মুসাফির ও মেহমান ভাবছিলেন। ফলে তিনি তাদের হেফাযত করাকে নিজ ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার জন্য জরুরী ভাবছিলেন। যদি তিনি গায়েব জানতে, তাহলে ঐ অস্থিরতায় ভুগতেন না, যে অস্থিরতার কথা কুরআন মাজীদে বর্ণনা করা হয়েছে।
তারা বলল, তুমি তো জান, তোমার কন্যাদেরকে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই; আমরা কি চাই তা তো তুমি জানই।(সুরা হুদ আয়াত- ৭৯)। লুত (আ.) তাদেরকে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখিয়ে বললেন “আল্লাহকে ভয় কর” এবং কাকুতি মিনতি করে বললেন “আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে অপমানিত করো না”। তিনি আরো বললেন “তোমাদের মাঝে কি কোন ন্যায়নিষ্ঠ ভাল মানুষ নেই?” আমার আকুল আবেদনে যার অন্তরে এতটুকু করুণার সৃষ্টি হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে শালীনতা ও মনুষ্যত্বের লেশমাত্রও ছিল না। তারা একযোগে বলে উঠল “আপনি তো জানেনই যে, আপনার বধু কন্যাদের প্রতি আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আর আমারা কি চাই তাও আপনি অবশ্যই জানেন।অর্থাৎ বৈধ ও স্বাভাবিক নিয়মকে তারা একদম অস্বীকার করে দিল এবং অস্বাভাবিক কর্ম এবং নির্লজ্জতার উপর অটল থাকল। যাতে আন্দাজ করা যায় যে, এই সম্প্রদায় তাদের সেই অশ্লীল কুকর্মে কত বাড়া বেড়েছিল এবং বিকৃত যৌনাচারে কতটা অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।লুত (আ.) এক সংকটজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন হায়! আমি যদি তোমাদের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী হতাম, অথবা আমার আত্মীয় স্বজন যদি এখানে থাকত যারা এই যালেমদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করতো তাহলে কত ভালো হতো। ফেরেশতাগণ লুত আলাইহিস সালামের অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করে প্রকৃত রহস্য ব্যক্ত করলেন এবং বললেন, আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনার দলই সুদৃঢ় ও শক্তিশালী। আমরা মানুষ নই বরং আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতা। তারা আমাদেরকে কাবু করতে পারবে না বরং আযাব নাযিল করে দুরাত্মা দুরাচারদের নিপাত সাধনের জন্যই আমরা আগমন করেছি। তারপরও লুত (আ.) তাদের বাধা দিতে থাকলেন। কিন্তু তারা কোন বাঁধাই মানল না। ; তারা বলল, হে লুত! নিশ্চয় আমরা আপনার রব প্রেরিত ফিরিশতা। তারা কখনই আপনার কাছে পৌছতে পারবে না। কাজেই আপনি রাতের কোন এক সময়ে আপনার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড়ুন এবং আপনাদের মধ্যে কেউ পিছন দিকে তাকাবে না, আপনার স্ত্রী ছাড়া। তাদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। নিশ্চয় প্রভাত তাদের জন্য নির্ধারিত সময়। প্রভাত কি খুব কাছাকাছি নয়? (সুরা হুদ আয়াত-৮১)। এখানে পরিবারবর্গ বলে লুত (আ.) তার পরিবারের ঈমানদার ও তার অনুগামী, অনুসারী সকল মুমিনকেই বোঝানো হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর)। যখন তোমরা শব্দ শুনবে তখন তোমরা পিছনে তাদের দিকে তাকিও না। তাদের আযাবে তাদেরকে থাকতে দাও [ইবন কাসীর] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এটা ছিল কাওমে লুতের ঈমানদারদের চিহ্ন যে তারা পিছনে ফিরে তাকাবে না। (বাগভী)।তখন জিবরীল (আ.) বের হয়ে তাদের মুখের উপর তার ডানা দিয়ে এক ঝাপটা মারলেন। আর তাতেই তারা অন্ধ হয়ে গেল। তারা যখন ফিরছিল তারা পথ দেখতে পাচ্ছিল না। (ইবন কাসীর) এ কথায় আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর অবশ্যই তারা লুতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে অসদুদ্দেশ্যে দাবি করল, তখন আমরা তাদের দৃষ্টি শক্তি লোপ করে দিলাম এবং বললাম, আস্বাদন কর আমার শাস্তি এবং ভীতির পরিণাম। (সূরা আল-কামার আয়াত-৩৭)।তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশক্রমে লুত (আ.) কে বললেন- আপনি কিছুটা রাত থাকতে আপনার লোকজনসহ এখান থেকে অন্যত্র সরে যান এবং সবাইকে সতর্ক করে দিন যে, তাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়, তবে আপনার স্ত্রী ব্যতীত। কারণ, অন্যদের উপর যে আযাব আপতিত হবে, তাকেও সে আযাব ভোগ করতে হবে। এর এক অর্থ হতে পারে যে, আপনার স্ত্রীকে সাথে নেবেন না। এ হিসেবে তিনি তাকে সাথে নিয়ে বের হননি। (কুরতুবী)।দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে যে, তাকে পিছনে ফিরে চাইতে নিষেধ করবেন না। (কুরতুবী)। আরেক অর্থ হতে পারে যে, সে আপনার হুশিয়ারী মেনে চলবে না। সুতরাং সে তাদের সাথে বের হবার পর যখন একটি পাথর পতনের শব্দ শুনে লুতের হুশিয়ারী না মেনে পিছনের দিকে তাকায় এবং বলে উঠে, হায় আমার জাতি! সে তাদের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছিল। আর তখনি একটি পাথর এসে তাকে আঘাত করে এবং সে মারা যায়। (বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর)। এটি এক মর্মম্ভদ শিক্ষণীয় ঘটনা। এ সূরায় লোকদেরকে একথা শিক্ষা দেবার জন্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, কোন বুযর্গের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং কোন বুযর্গের সুপারিশ তোমাদের নিজেদের গোনাহের পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে না। উক্ত আযাবের ধরন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- যখন আযাবের হুকুম কর্যকরী করার সময় হল, তখন আমি তাদের বসতির উপরিভাগকে নীচে করে দিলাম এবং তাদের উপর অবিশ্রান্তভাবে এমন পাথর বর্ষণ করালাম, যার প্রত্যেকটি পাথর চিহ্নিত ছিল। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি পাথরকে কি ধ্বংসাত্মক কাজ করতে হবে এবং কোন পাথরটি কোন অপরাধীর উপর পড়বে তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছিল। (তাবারী; বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর)।আল্লাহ বলেন, অতঃপর যখন আমাদের আদেশ আসল তখন আমরা জনপদকে উল্টে দিলাম, এবং তাদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পোড়ামাটির পাথর। যা আপনার রবের কাছে চিহ্নিত ছিল। আর এটা যালিমদের থেকে দূরে নয়।(সুরা হুদ আয়াত ৮২-৮৩)।
ডেড সী তে ভাসমান মানুষ
সারকথা এই যে, গোণা-গুণতি কয়েকজন মুসলিম ছিল। তাদেরকে আযাব থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা লুত (আ) কে নির্দেশ দেন যে, স্ত্রী ব্যতীত অন্যান্য পরিবার-পরিজন ও সম্পর্কশীল লোককে নিয়ে শেষ রাত্রে বস্তি থেকে বের হয়ে যান এবং পিছনে ফিরে দেখবেন না। কেননা, আপনি যখন বস্তি থেকে বের হয়ে যাবেন, তখনই কালবিলম্ব না করে আযাব এসে যাবে। লুত (আ.) এ নির্দেশ মত স্বীয় পরিবার-পরিজন ও সম্পর্কশীলদেরকে নিয়ে শেষ রাত্রে সাদূম ত্যাগ করেন। তার স্ত্রী প্রসঙ্গে দু’রকম বর্ণনা রয়েছে। এক বর্ণনা অনুযায়ী সে সঙ্গে রওয়ানাই হয়নি। দ্বিতীয় বর্ণনায় আছে, কিছু দূর সঙ্গে চেয়েছিল। ফলে সাথে সাথে আযাব এসে তাকেও পাকড়াও করল।কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন জায়গায় এ ঘটনাটি সংক্ষেপে ও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাদের উপর আপতিত আযাব সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, যখন আমার আযাব এসে গেল, তখন আমি বস্তিটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর স্তরে স্তরে প্রস্তর বর্ষণ করলাম যা আপনার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নযুক্ত ছিল। সে। বস্তিটি এ কাফেরদের থেকে বেশী দূরে নয়।এতে বুঝা যাচ্ছে যে, উপর থেকে প্রস্তর বর্ষিত হয়েছে এবং নীচে থেকে জিবরীল আলাইহিস সালাম গোটা ভূখণ্ডকে উপরে তুলে উল্টে দিয়েছেন। সূর্যোদয়ের সময় বিকট শব্দ তাদেরকে পাকড়াও করল। লুত (আ) এর সম্প্রদায়ের উপর পতিত ভয়াবহ আযাবসমূহের মধ্যে ভূখণ্ড উল্টে দেয়ার আযাবটি তাদের অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজের সাথে বিশেষ সঙ্গতিও রাখে। কারণ, তারা বৈধ পন্থার বিপরীত কাজ করেছিল। সূরা হুদের বর্ণিত আয়াতসমূহের শেষে আল্লাহ্ তায়ালা আরবদেরকে হুশিয়ার করে এ কথাও বলেছে যে, উল্টে দেয়া বস্তিগুলো যালেমদের কাছ থেকে বেশী দূরে নয়। সিরিয়া গমনের পথে সব সময়ই সেগুলো তাদের চোখের সামনে পড়ে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তারা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না। এ দৃশ্য শুধু কুরআন নাযিলের সময়েরই নয়, আজও বিদ্যমান রয়েছে। বায়তুল মুকাদ্দাস ও জর্দান নদীর মাঝখানে আজও এ ভূখণ্ডটি ‘বাহরে লুত বা’ লুত সাগর,বাহরে মাইয়েত বা মৃত সাগর নামে পরিচিতি। এর ভূ-ভাগ সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেক নীচে অবস্থিত। এর একটি বিশেষ অংশে নদীর আকারে আশ্চর্য ধরণের পানি বিদ্যমান। এ পানিতে কোন মাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি জীবিত থাকতে পারে না। এ কারণেই একে মৃত সাগর বলা হয়। কথিত আছে, এটাই সাদূমের অবস্থান স্থল। ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী, ২৮টি দেশ সমকামি বিয়েকে স্বীকৃতি দিয়েছে, দেশগুলো হল-আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, কলম্বিয়া, ডেনমার্ক, ইকুয়েডর, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইডেন, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং উরুগুয়ে।ইসলামে সমকামিতাকে বড় ধরনের অপরাধ বলা হয়েছে। কিন্তু, তা সত্বেও পাঁচটি মুসলিম দেশ সমকামিতাকে আইনতগত বৈধতা দিয়েছে। দেশগুলো হলো- ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মালি, জর্ডন, ও আলবানিয়া।এদের মধ্যে তুরস্ক ১৮৫৮ সালেই এর বৈধতা দেয়। অথচ তারা লুত (আ) এর কাওমের ওপর আপতিত আজাবের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়নি। পৃথিবীর প্রাচীনতম অভিজাত জনপদগুলোর একটি ছিল ইতালির পম্পেই নগরী। ব্যভিচার, সমকামিতা ও পতিতাবৃত্তির কারণে আল্লাহ পম্পে নগরী ধ্বংস করে দেন। এমনকি তারা নিজেরা পশু-পাখির সঙ্গেও যৌন বিকৃতির পিপাসা মেটাত। আল্লাহ সেই জনপদকে ধ্বংস করে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ, যার অধিবাসীরা ছিল জালিম (পাপাচারী) এবং তাদের পরে সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি।’ (সুরা আম্বিয়া আয়াত - ১১) রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আমার উম্মতের জন্য সবচেয়ে বেশী ভয় পাচ্ছি যে, তারা লুতের জাতির কাজ করে বসবে’। (তিরমিযী- ১৪৫৭) অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য যবেহ করে আল্লাহ তাকে লা'নত করেছেন, যে ব্যক্তি যমীনের সীমানা পরিবর্তন করে তাকে আল্লাহ লা'নত করেছেন, যে ব্যক্তি কোন অন্ধ ব্যক্তিকে পথ ভুলিয়ে দেয় তাকে আল্লাহ লা'নত করেছেন, যে ব্যক্তি পিতা-মাতাকে গালি দেয় আল্লাহ তাকে লা'নত করেছেন, যে ব্যক্তি তার আপন মনিব ব্যতীত অন্য কাউকে মনিব বানায় আল্লাহ তাকে লা'নত করেছেন, আর যে ব্যক্তি লুতের জাতির কাজ করে তাকেও আল্লাহ লা'নত করেছেন, আর যে ব্যক্তি লুতের জাতির কাজ করে তাকেও আল্লাহ লা'নত করেছেন, আর যে ব্যক্তি লুতের জাতির কাজ করে তাকেও আল্লাহ লা'নত করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ- ১/৩০৯)।অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যদি কাউকে তোমরা লুত জাতির কাজ করতে দেখ তবে যে এ কাজ করছে এবং যার সাথে করা হচ্ছে উভয়কে হত্যা কর। (আবু দাউদ- ৪৪৬২)।
গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...