সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুরআনে বর্ণিত আদ জাতির ওপর আল্লাহর গজব



আদ আরবের প্রাথমিক যুগের একটি জাতি।আদ গোত্রকে আমালিকা গোত্রও বলা হয়। । আদ জাতি ও সামুদ জাতি ছিল নূহ-এর পরবর্তী বংশধর এবং নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধস্তন পুরুষ।আদ ছিল আরবের প্রাচীনতম জাতি। আদ প্রকৃতপক্ষে নূহ (আ) এর পুত্র সামের বংশধরের এক ব্যক্তির নাম। তার বংশধর ও গোটা সম্প্রদায় আদ নামে পরিচিত। কুরআনুল কারীমে আদের সাথে কোথাও আদে উলা বা প্রথম আদ এবং কোথাও আদ ইরাম শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, আদ সম্প্রদায়কে ইরামও বলা হয় এবং প্রথম আদের বিপরীতে কোন আদে ছানি বা দ্বিতীয় আদও রয়েছে। এ সম্পর্কে তাফসীরবিদ ও ইতিহাসবিদদের উক্তি বিভিন্ন রূপ। অধিক প্রসিদ্ধ উক্তি এই যে, দ্বিতীয় আদ হলো সামুদ জাতি। এ বক্তব্যের সারমর্ম এই যে, আদ ও সামুদ উভয়ই ইরামের দুশাখা। এক শাখাকে প্রথম আদ এবং অপর শাখাকে সামুদ অথবা দ্বিতীয় আদ বলা হয়। ইরাম শব্দটি আদ ও সামুদ উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। (তাফসীর ইবন কাসীর; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া)। খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক দুই হাজার বছর আগে ইয়েমেনের হাজরামাউত অঞ্চলে তাদের বসবাস ছিল বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। কুরআনের বর্ণনা মতে এ জাতিটির আবাসস্থল ছিল আহকাফ এলাকা। এ এলাকাটি হিজায, ইয়ামন ও ইয়ামামার মধ্যবর্তী ‘রুবয়ুল খালী’র দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থিত। এখান থেকে অগ্রসর হয়ে তারা ইয়ামানের পশ্চিম সমুদ্রোপকূল এবং ওমান ও হাজরামাউত থেকে ইরাক পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিস্তৃত করেছিল। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এ জাতিটির নিদর্শণাবলী দুনিয়ার বুক থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু দক্ষিন আরবের কোথাও কোথাও এখনো কিছু পুরাতন ধ্বংসস্তুপ দেখা যায়। সেগুলোকে আদ জাতির নিদর্শন মনে করা হয়ে থাকে।
দীর্ঘাকৃতি, দৈহিক শক্তি ও পাথর ছেদনশিল্পে তাদের বিশেষ খ্যাতি ছিল। তারা পাহাড় কেটে, পাহাড়ের গুহায় বিশাল বিশাল প্রাসাদ তৈরী করেছিল, পানির জন্য গভীর কূপ খনন করেছিল এবং বহু বাগানের মালিক ছিল তারা।স্বহস্তে নির্মিত প্রতিমার পূজা, নবীর সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ, শক্তি ও উন্নত প্রকৌশল শিল্পের বড়াই তাদের আল্লাহর গুণকীর্তন থেকে অন্ধ ও গাফেল বানিয়ে দেয়।তারা অঙ্কন শিল্পেও ছিল সমান দক্ষ। তাদের তৈরি ইরাম-এর মতো অনিন্দ্য তিলোত্তমা শহর ভূমণ্ডলের আর কোথাও ছিল না। কিন্তু এসব শিল্প তাদের প্রকৃতির প্রতিশোধ থেকে রক্ষা করতে পারেনি। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখোনি, তোমার প্রতিপালক আদ জাতির ইরাম গোত্রের প্রতি কী (আচরণ) করেছেন—যারা ছিল সুউচ্চ প্রাসাদের অধিকারী, যার সমতুল্য (প্রাসাদ) কোনো দেশে নির্মিত হয়নি।’ (সুরা ফাজর,আয়াত - ৬-৮)। নিজেদের এই শক্তি-সামর্থ্যের অহংকারে পড়ে দম্ভ করে তারা বলল, مَنْ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةً ‘‘আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিধর আর কে আছে?’’ মহান আল্লাহ বললেন, ‘‘যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর।’’ (হা-মীম সাজদাহ ১৫)।কালক্রমে তারা কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও মূর্তি পূজার লিপ্ত হয়ে পড়ে। দৈহিক শক্তির কারণেও তারা বিভিন্ন অত্যাচার ও উচ্ছৃঙ্খলতায় লিপ্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে তাদের নিকট হুদ (আ.) নবী হয়ে এসেছিলেন, যিনি তাদেরই মধ্যেকার একজন ছিলেন।আল্লাহ বলেন, আর আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না? তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ যারা অবিশ্বাস করেছিল, তারা বলেছিল, ‘আমরা তো দেখছি তুমি একজন নির্বোধ এবং তোমাকে আমরা তো একজন মিথ্যাবাদী মনে করি।’তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোন নির্বুদ্ধিতা নেই, বরং আমি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে একজন রাসূল।( সুরা আরাফ আয়াত-৬৫-৬৭)। ) অর্থাৎ সম্প্রদায়ের নেতা গোছের লোকেরা বলল, “আমরা তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ধারণা তুমি একজন মিথ্যাবাদী।” এটা প্রায় নুহ (আ) সালামের সম্প্রদায়ের প্রত্যুত্তরের মতই– শুধু কয়েকটি শব্দের পার্থক্য মাত্র। হুদ (আ) এর উত্তরে বললেন, আমার মধ্যে কোন নির্বুদ্ধিতা নেই। ব্যাপার শুধু এতটুকুই যে, আমি বিশ্ব পালনকর্তার কাছ থেকে রাসূল হয়ে এসেছি। তার বার্তা তোমাদের কাছে পৌছাই। আমি সুস্পষ্টভাবে তোমাদের হিতাকাংখী। তাই তোমাদের পৈত্রিক মুর্খতায় তোমাদের সঙ্গী হওয়ার পরিবর্তে তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য কথা তোমাদের কাছে পৌছে দেই। কিন্তু তা তোমাদের মনঃপুত নয়। আল্লাহ বলেন, তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছ যে, তোমাদের কাছে তোমাদের একজনের মাধ্যমে তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদেরকে সতর্ক করার জন্য উপদেশ এসেছে? এবং স্মরণ কর যে, আল্লাহ তোমাদেরকে নুহের সম্প্রদায়ের (ধ্বংসের) পরে তোমাদেরকে (তোমাদের আগের লোকদের) স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং সৃষ্টিতে (দৈহিক গঠনে) তোমাদেরকে বেশী পরিমাণে হৃষ্টপুষ্ট বলিষ্ঠ করেছেন। কাজেই তোমরা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহসমূহ স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। ( সুরা আরাফ আয়াত-৬৯)। হুদ (আ) বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থন কর, তারপর তার দিকেই ফিরে আস। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (সুরা হুদ সুরা আয়াত-৫২)।এ আয়াত ও পূর্ববর্তী আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, তিনি তাদেরকে মৌলিকভাবে তিনটি দাওয়াত দিয়েছিলেন। এক. তাওহীদ বা একত্ববাদের আহবান এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্তা বা শক্তিকে ইবাদত উপাসনা না করার আহবান। দুই. তিনি যে তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, তাতে তিনি একজন খালেস কল্যাণকামী, এর জন্য তিনি তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চান না। তিন. নিজেদের অতীত জীবনে কুফরী শির্কী ইত্যাদি যত গোনাহ করেছ সেসব থেকে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং ভবিষ্যতের জন্য ঐসব গোনাহ হতে তওবা কর। যদি তোমরা সত্যিকার তাওবা ও এস্তেগফার করতে পার তবে তার বদৌলতে আখেরাতের চিরস্থায়ী সাফল্য ও সুখময় জীবন তো লাভ করবেই। দুনিয়াতেও এর বহু উপকারিতা দেখতে পাবে। দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টির পরিসমাপ্তি ঘটবে যথাসময়ে শক্তি সামর্থ্য বর্ধিত হবে। এখানে ‘শক্তি’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার মধ্যে দৈহিক শক্তি এবং ধন বল ও জনবল সবই অন্তর্ভুক্ত। ( কুরতুবী, ইবন কাসীর)।কিন্তু তারা স্বীয় ধনৈশ্বর্যের মোহে মত্ত হয়ে তার আদেশ অমান্য করে। তারা শক্তিমত্ত হয়ে বলে বসল, “আমাদের চাইতে শক্তিশালী কে?” (সূরা ফুসসিলাত: ১৫)।) আল্লাহ বলেন, তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের নিকট এ উদ্দেশ্যে এসেছে যে, আমরা যেন শুধু আল্লাহর উপাসনা করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যার উপাসনা করত তা বর্জন করি? সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যে (আযাবের) ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর।’(সুরা আরাফ আয়াত-৭০)। যেভাবে মক্কার কুরাইশরাও রসূল (সা)-এর একত্ববাদের দাওয়াতের উত্তরে বলেছিল,‘‘হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ হতে (আগত) সত্য দ্বীন হয়ে থাকে, তবে আমাদের উপর আকাশ থেকে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদের উপর বেদনাদায়ক আযাব অবতীর্ণ কর।’’ (সূরা আনফাল আয়াত-৩২) অর্থাৎ, শিরক করতে করতে মুশরিকদের বিবেক-বুদ্ধিও লোপ পেয়ে যায়। অথচ জ্ঞান-বুদ্ধির দাবী এটাই ছিল যে, তারা বলত, ‘হে আল্লাহ! যদি এটা সত্য হয় এবং তোমার পক্ষ থেকে আগত হয়, তবে তুমি আমাদেরকে তা গ্রহণ করার তাওফীক দান কর। যাই হোক, আদ সম্প্রদায় তাদের নবী হুদ (আ)-কে বলে দিল, ‘তুমি যদি সত্য হও, তবে তোমার আল্লাহকে বল, যে আযাবের তিনি ভয় দেখাচ্ছেন, সে আযাব যেন পাঠিয়ে দেন! এর পরিণতিতে তাদের উপর প্রথম আযাব নাযিল হয় এবং তিন বছর পর্যন্ত উপর্যুপরি বৃষ্টি বন্ধ থাকে। তাদের শস্যক্ষেত্র শুষ্ক বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যায়। বাগান জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। কিন্তু এতদস্বত্ত্বেও তারা শিরক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করল না। দাহ্‌হাক বলেন, আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর তিন বছর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণ বন্ধ রাখেন। কেবল প্রবল শুষ্ক বাতাস প্রবাহিত হত। অবশেষে আট দিন ও সাত রাত্রি পর্যন্ত উপর্যুপরি তুফান চলতে থাকে। (বাগভী, ফাতহুল কাদীর)। আট দিন সাত রাত পর্যন্ত তাদের উপর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আযাব অবতীর্ণ হয়। ফলে তাদের অবশিষ্ট বাগবাগিচা ও দালানকোঠা মাটির সাথে মিশে যায়। গাছ পালা উপড়ে পড়ল, গৃহ ছাদ উড়ে গেল, মানুষ ও সকল জীবজন্তু শূণ্যে উত্থিত হয়ে সজোরে যমীনে নিক্ষিপ্ত হল, ঝড় এক একটি মানুষকে উপরে তুলে মাটির উপর আছড়ে দিয়েছিল, যার কারণে তাদের মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মগজ বের হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের লাশগুলি বিনা মাথায় এমনভাবে মাটির উপর পড়ে ছিল, যেন তা খেজুরের সারশূন্য কান্ড।
আদ জাতির মানব কঙ্কাল 
এভাবেই সুঠাম দেহের অধিকারী শক্তিশালী একটি জাতি সম্পূর্ণ ধ্বংস ও বরবাদ হয়ে গেল।আদ জাতির উপর যখন প্রতিশ্রুত আযাব নাযিল হয় তখন আল্লাহ তায়ালা তার চিরন্তন বিধান অনুযায়ী হুদ (আ) ও সঙ্গী ঈমানদারগণকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে আযাব হতে রক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, তারপর আমরা তাকে ও তার সাথীদেরকে আমাদের অনুগ্রহে উদ্ধার করেছিলাম,আর আমাদের আয়াতসমূহে যারা মিথ্যারোপ করেছিল এবং যারা মুমিন ছিল না তাদেরকে নির্মুল করেছিলাম।(সুরা আরাফ আয়াত-৭২)।আদ জাতির উপর ঘূর্ণিঝড়ের আকারে আযাব আসা কুরআনুল কারীমে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত রয়েছে। সুরা আল-মুমিনুনে নূহ ( (আ) এর কাহিনী উল্লেখ করার পর বলা হয়েছে, “অতঃপর আমি তাদের পরে আরো একটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।” বাহ্যতঃ এরাই হচ্ছে আদ জাতি। পরে এ সম্প্রদায়ের কাজকর্ম ও কথাবার্তা বর্ণনা করার পর বলা হয়েছে, একটি বিকট শব্দ তাদেরকে পাকড়াও করল। এ আয়াতের ভিত্তিতে কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, “আদ জাতির উপর বিকট ধরনের শব্দের আযাব এসেছিল। কিন্তু উভয় মতের মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। এটা সম্ভব যে, বিকট শব্দ ও ঘূর্ণিঝড় উভয়টিই হয়েছিল। (তাফসীর ইবন কাসীর ৫/৪৭৪; সূরা আল-মুমিনুনের ৪১ নং আয়াতের তাফসীর)। কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে এ আযাব সম্পর্কে যেসব বিস্তারিত বর্ণনা আছে তা হচ্ছে, এ বাতাস উপর্যুপরি সাত দিন এবং আট রাত পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছিল। এর প্রচণ্ডতায় মানুষ পড়ে গিয়ে এমনভাবে মৃত্যুবরণ করে এবং মরে মরে পড়ে থাকে যেমন খেজুরের ফাঁপা কাণ্ড পড়ে থাকে (আল-হাক্কাহ, আয়াত- ৭)। এ বাতাস যে জিনিসের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে তাকেই জরাজীর্ণ করে ফেলেছে (আয-যারিয়াত আয়াত- ৪২)। যে সময় এ বাতাস এগিয়ে আসছিলো তখন আদ জাতির লোকেরা এই ভেবে আনন্দে মেতে উঠেছিলো যে মেঘ চারদিক থেকে ঘিরে আসছে। এখন বৃষ্টি হবে এবং তাদের আশা পূর্ণ হবে। কিন্তু তা এমনভাবে আসলো যে গোটা এলাকায় ধ্বংস করে রেখে গেল। (আল-আহকাফ আয়াত, ২৪-২৫)।আল্লাহর আযাব এসে পৌঁছল, তখন তাদের কোনই কিছুই কাজে এল না। আর তা তাদেরকে পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন করে ছাড়ল। আল্লাহ বলেন, সুতরাং ওরা তাকে মিথ্যাজ্ঞান করল, ফলে আমি ওদেরকে ধ্বংস করলাম। এতে অবশ্যই আছে নিদর্শন; কিন্তু ওদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না। ( সুরা আশ শুয়ারা -১৩৯)।

গ্রন্থনায় -মো. আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...