সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মসজিদ আল কিবলাতাইন এর ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃমসজিদ আল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ, মদিনায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ।পবিত্র মদিনা শরিফের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত মসজিদে কিবলাতাইন ইসলামী যুগের তৃতীয় মসজিদ।মসজিদে নববী থেকে এর দূরত্ব চার কিলোমিটার।সর্বপ্রথম মানব হযরত আদম (আ.) থেকে হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত লক্ষাধিক নবি-রাসুলের একটি মাত্র কিবলা ছিল, আর তা হলো বায়তুল মোকাদ্দাস। কিন্তু রাহমাতুল্লিল আলামিন, বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সৌভাগ্যবান উম্মতের একাংশের ভাগ্যে বায়তুল মোকাদ্দাস ও পৃথিবীর প্রথম ঘর পবিত্র কাবা, এই উভয় কিবলার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের বিরল সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে।মসজিদে কিবলাতাইন পৃথিবীর প্রাচীন মসজিদ গুলোর অন্যতম। কিবলা আরবি শব্দ। নামাজ আদায়ের দিকনির্দেশকে কিবলা বলা হয়। আর দুটি কিবলা বুঝানো হয় কিবলাতাইন শব্দ দ্বারা। এখানে নামাজ পড়ার সময় মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশের ওহি আসে। এরপর তার সাথে জামাতে নামাজে দাঁড়ানো মুসল্লিরাও প্রথম কেবলা জেরুজালেমর বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে মক্কার বায়তুল্লাহ দিকে ফিরে যায়। এজন্য মসজিদটির নাম ‘মসজিদ আল কিবলাতাইন’। অর্থাৎ দুই কিবলার মসজিদ।রাসুলুল্লাহর (সা.) কিছুসংখ্যক সাহাবায়ে কেরামসহ বিশিষ্ট সাহাবি হযরত বিশর ইবনে বারা (রা.)-এর নিমন্ত্রণে যোগ দিতে মদিনার অদূরে বনু সালামায় পৌঁছে জোহরের নামাজ, মতান্তরে আসরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে তাশরিফ নিলেন।মসজিদটি বনু সালামা অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে এর প্রথম নাম ছিল মসজিদে বনু সালামা।সেখানে কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর। মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর প্রায় ১৬ মাস বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। এরপর বায়তুল মোকাদ্দাসের পরিবর্তে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কাবা শরিফকে মুসলমানদের জন্য চিরস্থায়ী কিবলা হিসেবে নির্ধারণ করেন।The Prophet (SM) turned around towards the Ka’bah and the Sahabah copied out of obedience. Thus the Ka’bah became the new Qibla of the Muslims for all time to come.কাবা আজও বিশ্বের প্রায় ১২৫ কোটি মুসলমানের কিবলা তথা অন্তরের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিগণিত।
কেবলা পরিবর্তনের আদেশ আসার আগে থেকেই রাসূল (সা) এর প্রতীক্ষায় ছিলেন। তিনি নিজেই অনুভব করছিলেন ইসরাঈল বংশীয়দের নেতৃত্বের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং তার সাথে সাথে বায়তুল-মোকাদ্দাসের কেন্দ্রীয় মর্যাদা লাভেরও অবসান ঘটেছে। এখন আসল ইবরাহিমী কেবলার দিকে মুখ ফিরানোর সময় হয়ে গেছে। কাবা মুসলিমদের কেবলা সাব্যস্ত হোক - এটাই ছিল রাসূল (সা) -এর আন্তরিক অভিপ্রায়। সব জাতি, গোত্র এবং সব ধর্মের একটি বিশেষ নিদর্শন বা প্রতীক থাকে, যার অনুপস্থিতিতে সে জাতি ও গোত্রের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত হতে পারে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ নামাজের জন্য একটি স্বতন্ত্র কিবলা অনুভব করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরি হওয়ার সুবাদে মিল্লাতে ইব্রাহিমের প্রতিষ্ঠা ও পুনর্গঠনের জন্য কাবার দিকে মুখ করার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। আর মুসলমানদের কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাস হওয়ার কারণে কপট হৃদয়ের ইহুদিরাও এই বলে অপপ্রচার করে বেড়াত যে আমাদের ও মুসলমানদের কিবলা যেহেতু এক এবং অভিন্ন, অতএব ধর্মের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের উচিত আমাদেরই অনুসরণ করা। এসব কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হৃদয়ের সুপ্ত বাসনা ছিল, কাবা যদি মুসলমানদের কিবলা হতো! এ বাসনা তীব্রতর হলে তিনি ব্যাকুল নয়নে আকাশের দিকে বারবার তাকাতেন, ওহির মাধ্যমে এর অনুমোদনের প্রত্যাশায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য দোয়াও করছিলেন। এ কারণেই তিনি বার বার আকাশের দিকে চেয়ে দেখতেন যে, ফেরেশতা নির্দেশ নিয়ে আসছেন কি না। হিজরতের দ্বিতীয় বছরের রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে।কারো মতে এ নির্দেশটি তৃতীয় হিজরীর রজব বা শাবান মাসে নাযিল হয়।
কিবলা পরিবর্তনের দিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই মসজিদে জোহর কারো কারো মতে আসর নামাজ আদায় করছিলেন। জেরুজালেম নগরীর বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদমুখি হয়ে নামাজ আদায় করছিলেন তিনি। দুই রাকাত নামাজ শেষ করেছেন। ঠিক এমন সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে নির্দেশ আসে কিবলা পরিবর্তনের। কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ ঘটনাটি উল্লেখ আছে সূরা বাকারার ১৪৪ নম্বর আয়াতে। সেখানে ইরশাদ হচ্ছে, "আকাশের দিকে তোমার বারংবার মুখ ফিরানোকে আমি প্রায় লক্ষ্য করি। সুতরাং আমি তোমাকে এমন ক্বিবলার দিকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেব, যা তুমি পছন্দ কর। অতএব (নামাযে) তুমি মাসজিদুল হারামের (পবিত্র কা’বাগৃহের) দিকে মুখ ফেরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, (নামাযে) সেই (কা’বার) দিকে মুখ ফেরাও। আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে, এ (বিধান) তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আগত সত্য। তারা যা করে সে সম্বন্ধে আল্লাহ উদাসীন নন।" (সূরা বাকারা আয়াত- ১৪৪)।রাসূল (সা.)-কে মক্কা নগরীর পবিত্র কাবামুখি হয়ে নামাজ আদায়ের নির্দেশ জানিয়ে দেন হযরত জিবরাইল (আ.)। এই নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে রাসূল (সা.) নামাজের মধ্যেই কিবলা পরিবর্তন করেন। সাথে সাথে পরিবর্তন করেন তার পেছনে নামাজ আদায় করতে থাকা সাহাবিরা। এ ঘটনার পর থেকেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে মসজিদ আল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ হিসেবে। ইবনে সা’আদ বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা) একটি দাওয়াত উপলক্ষে উম্মে বিশর ইবনে বারা' ইবনে মা’রুর-এর ঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে যোহরের সময় গিয়েছিল। তিনি সেখানে নামাজে লোকদের ইমামতি করতে দাঁড়িয়েছিলেন। দু’রাকাত সালাত আদায় হয়ে গিয়েছিল। এমনি সময় তৃতীয় রাকাতে ওহীর মাধ্যমে এ আয়াতটি নাযিল হল। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ও তার সঙ্গে জামাতে শামিল সমস্ত লোক বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কাবার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। (তাবাকাতে ইবনে সা'দ- ১/২৪২)। এরপর মদীনা ও মদীনার আশেপাশে এ নির্দেশটি সাধারণভাবে ঘোষণা করে দেয়া হল। বারা ইবনে আযেব বলেন, এক জায়গায় ঘোষকের কথা এমন অবস্থায় পৌছল, যখন তারা রুকূ করছিল। নির্দেশ শোনার সাথে সাথেই সবাই সে অবস্থাতেই কাবার দিকে মুখ ফিরালো। আনাস ইবনে মালেক বলেন, এ খবরটি কুবায় পৌছল পরের দিন ফজরের নামাজের সময়। লোকেরা এক রাকাআত সালাত শেষ করেছিল, এমন সময় তাদের কানে আওয়াজ পৌছল, ‘সাবধান! কেবলা বদলে গেছে। এখন কাবার দিকে কেবলা নির্দিষ্ট হয়েছে। এ কথা শোনার সাথে সাথেই সমগ্র জামাত কাবার দিকে মুখ ফিরালো। (বুখারী- ৪৪৮৬)।
মুসলমানদের পূর্বের কেবলা- হিজরতের পূর্বে মক্কা-মোকাররামায় যখন নামাজ ফরয হয়, তখন কাবাগৃহই নামাজের জন্য কেবল ছিল, না বায়তুল-মোকাদ্দাস ছিল এ প্রশ্নে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,ইসলামের শুরু থেকেই কিবলা ছিল বায়তুল-মুকাদ্দাস। হিজরতের পরও ষোল/সতের মাস পর্যন্ত বায়তুল-মোকাদ্দাসই কেবলা ছিল। এরপর কাবাকে কেবলা করার নির্দেশ আসে। তবে রাসূল (সা) মক্কায় অবস্থানকালে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে-ইয়ামানীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন যাতে কাবা ও বায়তুল-মোকাদ্দাস উভয়টিই সামনে থাকে। মদীনায় পৌছার পর এরূপ করা সম্ভব ছিল না।তাই তার মনে কেবলা পরিবর্তনের বাসনা দানা বাঁধতে থাকে। অন্যান্য সাহাবী ও তাবেয়ীগণ বলেন, মক্কায় নামাজ ফরয হওয়ার সময় কাবা গৃহই ছিল মুসলিমদের প্রাথমিক কেবলা। কেননা ইবরাহীম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-তাদের কেবলা তাই ছিল। মহানবী রাসূল (সা) মক্কায় অবস্থানকালে কাবাগৃহের দিকে মুখ করেই নামাজ আদায় করতেন। মদীনায় হিজরতের পর তার কেবলা বায়তুল-মোকাদ্দাস সাব্যস্ত হয়। তিনি মদীনায় ষোল-সতের মাস পর্যন্ত বায়তুল-মোকাদাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। এরপর প্রথম কেবল অর্থাৎ কাবাগৃহের দিকে মুখ করার নির্দেশ নাযিল হয়।ইহুদিরা সাধারণত কিবলা হিসেবে জেরুজালেমের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তন করে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্যতা দান করেন। এ ছাড়া নামাজরত অবস্থায় কিবলা পরিবর্তন করে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও সাহাবাগণ আনুগত্যের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
মসজিদের ভেতরের অংশ
মসজিদটি নির্মাণ-ইতিহাস- দ্বিতীয় হিজরি মোতাবিক ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে মদিনা মুনাওয়ারার বনি সালামা অঞ্চলের খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়কসংলগ্ন এ মসজিদ  দ্বিতীয় হিজরিতে সাওয়াদ বিন গানাম গোত্রের লোকেরা  নির্মাণ করেন। নির্মাণকাজে তারা কাঁচা ইট, পাথর, খেজুরগাছের পাতা ও ডাল ব্যবহার করেছিল। অতঃপর কিংবদন্তি ন্যায়পরায়ণ শাসক, দ্বিতীয় ওমর নামে খ্যাত খলিফা হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহ.) ১০০ হিজরিতে মসজিদে কিবলাতাইন পুনর্নির্মাণ করেন। এর দীর্ঘকাল পর মসজিদে নববীর প্রখ্যাত খাদেম শুজায়ি শাহিন আল জামালি ৮৯৩ হিজরিতে ছাদসহ 'মসজিদে কিবলাতাইন' পুনর্নির্মাণ করেন। এই নির্মাণের ৫৭ বছর পর তুরস্কের উসমানীয় খলিফা সুলাইমান আল কানুনি ৯৫০ হিজরিতে আগের তুলনায় বৃহৎ আয়তনে 'মসজিদে কিবলাতাইন' পুনর্নির্মাণ করেন।
মসজিদের আয়তন ও মুসল্লি ধারণক্ষমতা- ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ ঐতিহাসিক মসজিদের মুসল্লি ধারণক্ষমতা দুই হাজার। মসজিদটির আয়তন তিন হাজার ৯২০ বর্গ মিটার। গম্বুজসংখ্যা দুটি, ব্যাস আট মিটার ও সাত মিটার। উচ্চতা ১৭ মিটার। মিনার সংখ্যা দুটি। ইসলামের স্বর্ণালি ইতিহাসে মসজিদে কিবলাতাইনের আবেদন চিরভাস্বর।
বৈশিষ্ট্য - এ মসজিদ একটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যা অন্য কোনো মসজিদে নেই। তা হলো, রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই মসজিদে দুটি মেহরাব তথা ইমামের দাঁড়ানোর স্থান ছিল। যার একটি বায়তুল মাকদাসমুখী। অন্যটি ছিল কাবাঘরমুখী। পরে সংস্কারের সময় অবশ্যই বায়তুল মোকাদ্দাসমুখী মিম্বরটি গুঁড়িয়ে দিয়ে কাবাঘরমুখী মেহরাবটি অবশিষ্ট রাখা হয়। মসজিদ আল কিবলাতাইন বছরজুড়ে দেশ-বিদেশের মুসলমানদের আগমনে মুখরিত থাকে। হজের সময় এই ভিড় আরো বাড়ে।মদিনায় আগমনকারী দেশ-বিদেশের মুসলমানরা মসজিদটি পরিদর্শন ও এখানে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মনে আলাদা একটি প্রশান্তি অনুভব করেন। ইসলামের ইতিহাসে মসজিদ আল কিবলাতাইনের আবেদন চির ভাস্বর ও অমলিন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...