হযরত দাউদ ও সুলাইমানের ন্যায় বিচার

এবং স্মরণ কর দাঊদ ও সুলাইমানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্য ক্ষেত্র সম্পর্কে; তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোন সম্প্রদায়ের মেষ; আর আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের বিচার। (সুরা আম্বিয়া আয়াত-৭৮)।
দুইজন লোক দাউদ (আ.) এর কাছে উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ছাগলপালের মালিক ও অপরজন শস্যক্ষেত্রের মালিক। শস্যক্ষেত্রের মালিক ছাগলপালের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন যে, তার ছাগলপাল রাতে আমার শস্যক্ষেত্রে চড়াও হয়ে সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। ফসলের কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি। এই অভিযোগ ছাগলপালের মালিক স্বীকার করে নিয়েছিল। ঘটনা শুনে দাউদ (আ.) রায় দিলেন যে, ছাগলপালের মালিক তার ছাগলপাল শস্যক্ষেত্রের মালিককে অৰ্পণ করবে। (ফিকহ এর পরিভাষায় ‘যাওয়াতুল কিয়াম’ অর্থাৎ যেসব বস্তু মূল্যের মাধ্যমে আদান প্রদান করা হয়, সেগুলো কেউ বিনষ্ট করলে তার জরিমানা মূল্যের হিসাবেই দেয়া হয়। ছাগলপালের মূল্য বিনষ্ট ফসলের মূল্যের সমান বিধায় বিধি মোতাবেক এই রায় দেয়া হয়েছে)। মামলার রায়ের পর বাদী ও বিবাদী উভয়ই দাউদ (আ.) এর আদালত থেকে বের হলে, দরজায় তার পুত্র সুলাইমান (আ.) এর সাথে তাদের দেখা হয়।সুলাইমান (আ.) তখনো নবুওয়ত লাভ করেননি।তিনি দুজনের মামলার রায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা রায় জানিয়ে দেন। সুলাইমান (আ.) বলেন, আমি রায় দিলে তা অন্যরকম হতে পারতো এবং সেই রায় তোমাদের দজনের জন্য উপকারী হতো। এরপর তিনি পিতা দাউদের কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে এ কথা জানালেন। দাউদ (আ.) বলেন, এই রায় থেকে উত্তম এবং উভয়ের জন্য উপকারী রায়টা কি? সুলাইমান বললেন, আপনি ছাগলপাল শস্যক্ষেত্রের মালিককে দিয়ে দিন। সে এগুলোর দুধ, পশম ইত্যাদি দ্বারা উপকার লাভ করতে থাকুক এবং ক্ষেত ছাগলপালের মালিককে অর্পণ করুন। সে তাতে চাষাবাদ করে শস্য উৎপন্ন করবে। যখন শস্যক্ষেত্র ছাগলপাল নষ্ট করার পূর্বের অবস্থায় পৌঁছে যাবে তখন শস্যক্ষেত্র তার মালিককে এবং ছাগলপাল  ছাগলের মালিককে ফিরে পাবে। দাউদ (আ.) এই রায় পছন্দ করে বললেন, বেশ এখন এই রায়ই কার্যকর হবে। অতঃপর তিনি দুই পক্ষকে ডেকে দ্বিতীয় রায় কার্যকর করলেন। এ সত্ত্বেও আল্লাহ দাউদ (আ.) এরও প্রশংসা করেছেন এবং বলেন , আমি দাউদ ও সুলাইমান উভয়কেই জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছি।আমি সুলাইমানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমি দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান।...............(সুরা আম্বিয়া আয়াত-৭৯)।
দু’জন বিচারপতি যদি একটি মোকদ্দমার ফায়সালা করে এবং দু’জনের ফায়সালা বিভিন্ন হয়, তাহলে যদিও একজনের ফায়সালাই সঠিক হবে তবুও দু'জনেই ন্যায়বিচারক বিবেচিত হবেন। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে বিচার করার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা উভয়ের মধ্যে থাকতে হবে। তাদের কেউ যেন অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতা সহকারে বিচারকের আসনে বসে না যান। (কুরতুবী)।রাসূলুল্লাহ (সা) একথা আরো বেশী সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন “যদি বিচারক নিজের সামর্থ অনুযায়ী ফায়সালা করার পূর্ণ প্রচেষ্টা চালান, তাহলে সঠিক ফায়সালা করার ক্ষেত্রে তিনি দুটি প্রতিদান পাবেন এবং ভুল ফায়সালা করলে পাবেন একটি প্রতিদান ৷”(বুখারী-৬৯১৯, মুসলিম- ১৭১৬)।অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “বিচারক তিন প্রকারের। এদের একজন জান্নাতী এবং দু’জন জাহান্নামী। জান্নাতের অধিকারী হচ্ছেন এমন বিচারক যিনি সত্য চিহ্নিত করতে পারলে সে অনুযায়ী ফায়সালা দেন। কিন্তু যে ব্যক্তি সত্য চিহ্নিত করার পরও সত্য বিরোধী ফায়সালা দেয় সে জাহান্নামী। আর অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি জ্ঞান ছাড়াই লোকদের মোকদ্দমার ফায়সালা করতে বসে যায় সেও জাহান্নামী।”(আবু দাউদ- ২৫৭৩, তিরমিযী- ১৩২২, ইবনে মাজাহ- ২৩১৫)।

        গ্রন্থনায় মো.আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল