বায়তুল হিকমাহ মধ্যযুগে জ্ঞান বিজ্ঞানের বাতিঘর

মো. আবু রায়হান: বায়তুল হিকমাহ (House of Wisdom) ছিল আব্বাসীয় আমলে ইরাকের বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগার, শিক্ষায়তন ও অনুবাদ কার্যালয়। Baytul Hikma consisted of a library, translation bureau, observatories, reading rooms, living quarters for scientists & administration buildings. মূলত বায়তুল হিকমাহ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। De Lacy O’Leary বলেন:“The caliph Al-Mamūn has founded a school he named Bayt al-Hikmah, and he made it an institution that embraces the translation of the Greek books”(Islam at the crossroads )।বায়তুল হিকমাহ এটিকে ইসলামি স্বর্ণযুগের একটি প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।৭৫০ সালে যাবের যুদ্ধে উমাইয়াদের পতনের পর আব্বাসীয় দ্বিতীয় খলিফা আল মানসুর (৭৫৮-৭৭৫) জ্ঞান চর্চা, বুদ্ধিবৃত্তি, কৃষ্টি ও সভ্যতার যে বীজ বপন করেন, তা তাঁর উত্তরসূরী হারুনুর রশিদের (৭৮৬-৮০৯) সযত্নে অঙ্কুরিত হয়ে বৃদ্ধি পায় এবং পরিশেষে আল মামুনের আমলে সুস্বাদু ও সুবৃহৎ ফলভারে নত মহীরুহে পরিণত হয়। আব্বাসীয় শাসনামলে তাদের রাজধানী শহর বাগদাদ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়।বায়তুল হিকমাহ খলিফা হারুনুর রশিদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার পুত্র খলিফা আল মামুনের (৮১৩-৮৩৩) সময় তা সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছায়।হারুনুর রশিদের গ্রন্থাগার যা বায়তুল হিকমাহ এর পূর্বসূরি ছিল সেটিও বায়তুল হিকমাহ বলে পরিচিত ছিল। ইতিহাসবিদ আল কিফতি এটির নাম দেন খিজানুল হিকমাহ(অর্থ জ্ঞানগ্রন্থের ভান্ডার)।তবে খলিফা আল মামুন (৮১৩-৮৩৩)৮৩০ সালে বায়তুল হিকমাহ প্রতিষ্ঠা করেন।বায়তুল হিকমাহ ,দারুল ইলম ও খিজানুল হিকমাহ নামেও পরিচিত।হিকমাহ শব্দের দিকে সম্বন্ধ থেকে বোঝা যায় এই প্রতিষ্ঠান মৌলিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সম্ভার নিয়ে গড়া।মিসরের সুবিখ্যাত চিন্তানায়ক ও সাহিত্যিক আহমদ আমিনের মতে, হিকমাহ শব্দটি আরবরা দর্শনের সমার্থক হিসেবেই বেশি ব্যবহার করেছে। এখানে বায়তুল হিকমাহ নামকরণের ক্ষেত্রে দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতি জাগতিক ও বৈষয়িক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সম্ভার বোঝানোকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। কারণ এই গ্রন্থাগারের বেশির ভাগ গ্রন্থ ধর্মবিষয়ক নয়, বরং বিভিন্ন জাতির দর্শন-হিকমাহ। (আহমদ আমিন, দুহাল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৬৪)।Bayt al-Hikmah was the first library to have a distinguished reputation in the Islamic world, it is fair to say that it was the first Islamic university that united scientist, scholars and students, becoming the first scientific centre that provided people with a huge collection of reading and scientific materials related to the, medicine, philosophy, and wisdom (hikmah).

গ্রন্থাগারে পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ
এসময় বায়তুল হিকমাহ প্রতিষ্ঠানটি গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, আলকেমি, প্রাণিবিদ্যা, ভূগোল ও মানচিত্রাঙ্কন বিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানচর্চার অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। ভারতীয়, গ্রীক ও পারসিয়ান রচনা ব্যবহার করে পন্ডিতরা বৈশ্বিক জ্ঞানের বিরাট ভান্ডার অর্জন করেন এবং এর মাধ্যমে তাদের নিজেদের আবিষ্কারের দিকে এগিয়ে যান। নবম শতকের মধ্যভাগে বায়তুল হিকমাহ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গ্রন্থভান্ডার। বায়তুল হিকমাহর সাথে সংশ্লিষ্ট যারা ছিলেন-সাহল ইবনে হারুন (মৃত্যু ৮৩০), প্রধান গ্রন্থগারিক, হুনায়ন ইবনে ইসহাক (৮০৯-৮৭৩) চিকিৎসক,ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আল কিন্দি (৮০১-৮৭৩) দার্শনিক ও পলিমেথচ, মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খোয়ারিজমি, (৭৮০-৮৫০) গণিতবিদ,বনু মুসা ভ্রাতৃবৃন্দ, প্রকৌশলী ও গণিতবিদ,সিন্দ ইবনে আলি (মৃত্যু ৮৬৪) জ্যোতির্বিজ্ঞানী,আবু উসমান সাধারণত আল জাহিজ নামে পরিচিত (৭৮১-৮৬১) লেখক ও জীববিজ্ঞানী, আল জাজারি (১১৩৬-১২০৬), চিকিৎসক ও প্রকৌশলী।বায়তুল হিকমার বিভিন্ন কক্ষে সংগৃহীত গ্রন্থ, নানা দেশের মানচিত্র, শহরের ছবি, নভোমণ্ডল ও মহাকাশবিষয়ক চিত্র প্রভৃতি রাখার জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষ ছাড়াও গবেষক, সম্পাদক, টীকাকার, পাণ্ডুলিপি লেখক ও তাদের সহযোগীদের জন্য আলাদা আলাদা কক্ষ বরাদ্দ ছিল।
ছবি কাল্পনিক- গ্রন্থাগারে শিক্ষক অধ্যয়নরত 
বায়তুল হিকমা গ্রন্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণ করে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার গ্রন্থ ওই গ্রন্থাগারটিতে সংরক্ষিত ছিল। সংগৃহীত, অনূদিত ও রচিত বইগুলো সংরক্ষণ করাই ছিল গ্রন্থাগারের মূল কাজ।খলিফা হারুন ও তার উজির বার্মাক ইয়াহিয়া বিন খালিদের উদ্যোগে ফারসি, গ্রিক, মিসরীয়, কালদীয় প্রভৃতি ভাষার বই গ্রন্থাগারটিকে সমৃদ্ধ করেছিল।ওই সময়ে ইসলামের আগের যুগের দুষ্প্রাপ্য সম্পদ, প্রাচীন আরবের কসিদা ও কবিতা, চিঠিপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, সন্ধিপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষের উদ্যোগ নেয়া হয়। আবদুল মুত্তালিবের স্বহস্তলিখনও গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত ছিল।ঐতিহাসিক গবেষক ওস্তাভলি বোঁ (মৃ. ১১৩৯ খ্রি.) লিখেছেন, ইউরোপে যখন বই ও পাঠাগারের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, অনেক মুসলিম দেশে তখন প্রচুর বই ও পাঠাগার ছিল। সত্যিকার অর্থে বাগদাদের বায়তুল হিকমায় ৪০ লাখ, কায়রোর সুলতানের পাঠাগারে ১০ লাখ, সিরীয় পাঠাগারে ৩০ লাখ বই ছিল। অন্যদিকে মুসমানদের সময়ে শুধু স্পেনেই প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার বই প্রকাশিত হতো।বায়তুল হিকমা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিকের মধ্যে সাহল ইবন হারুন, সাঈদ ইবন হারুন এবং সালাম অন্যতম ছিলেন। ওই তিনজন গ্রন্থাগারিককে সাহিব উপাধি প্রদান করা হয়। বীজগণিতের জনক মুহাম্মদ ইবন মুসা আল খারেজমি (৭৮০-৮৫০ )ও খলিফা মামুনের সময় গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করেন।বায়তুল হিকমাহ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় স্থাপিত প্রথম বৃহদাকার লাইব্রেরি। আরবদের অগাস্টাসখ্যাত খলিফা আল মামুনের আমলে বায়তুল হিকমাহ গবেষণাগার, বিশ্ববিদ্যালয় ও লাইব্রেরি হিসেবে পূর্ণাঙ্গ জৌলুসপ্রাপ্ত হয়। (মুহাম্মদ নুরুল আমীন, বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান, পৃষ্ঠা -৩৭৬)। আব্বাসীয় খলিফাদের কয়েকজন যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর আগে খোঁজ নিতেন বিজিতদের বইপত্রের ব্যাপারে। তাঁদের কাছে অন্য ধন-সম্পদের চেয়ে বই ছিল বেশি বেশি কাঙ্ক্ষিত। এর প্রমাণ পাওয়া যায় বাইজান্টাইনদের সঙ্গে যুদ্ধের সময়। শান্তিচুক্তির শর্ত হিসেবে ক্লদিয়াস টলেমির লেখা আলমাজেস্ট বইটি দাবি করা হয়। গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ বিষয়ের এ বই লেখা হয়েছিল খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে।ঐতিহাসিক শামসুল হকের ভাষায়, 'আব্বাসীয় আমলে (৭৫০-১২৫৮ খ্রি.) বাগদাদ নগরীর গৌরবের মূলে যেসব কারণ ছিল, তাদের মধ্যে এখানকার সুসমৃদ্ধ গ্রন্থাগারগুলো ছিল অন্যতম। প্রায় দেড়শ বছর ধরে বায়তুল হিকমাহতে গ্রিক ও সংস্কৃত ভাষার নানা বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক গ্রন্থ
আরবি আল মাজেস্ট
আরবিতে অনুবাদের কাজ চলে।এসময় গ্রীক, চৈনিক, সংস্কৃত ও সিরিয়াক ভাষা থেকে অসংখ্য গ্রন্থ আরবিতে অনুদিত হয়। The languages which were spoken, read and written there were Arabic (as the lingua franca), Farsi, Hebrew, Aramaic, Syriac, Greek and Latin; also occasionally Sanskrit, which was used to translate the old Indian manuscripts in astronomy and mathematics. অনুবাদ আন্দোলন খলিফা হারুনুর রশিদের সময় ব্যাপক আকার লাভ করে। পূর্বসূরির মত তিনিও জ্ঞানচর্চার অনুগামী ছিলেন। রচনাগুলো মূলত চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক হলেও অন্যান্য শাখা যেমন দর্শনও দ্রুত এতে যুক্ত হয়। পন্ডিত ও অনুবাদকদের জন্য এখানে জীবনধারণ করা সম্মানের বিষয়ে পরিণত হয়। জ্ঞানের আদান প্রদানের জন্য আল মামুন অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিকে বায়তুল হিকমাহতে নিয়ে আসেন। ৯ম থেকে ১৩ শতক পর্যন্ত পারসিয়ান ও খ্রিষ্টানসহ অসংখ্য পন্ডিত ব্যক্তি এই গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। হুনায়ন ইবনে ইসহাক (৮০৯-৮৭৩) নামক খ্রিষ্টান চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী ছিলেন সবচেয়ে দক্ষ অনুবাদক যিনি ১১৬টি গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ করেন।প্রধান অনুবাদক হিসেবে খলিফা তাকে দায়িত্ব দেন।অনুবাদের বইয়ের ওজনে তাকে সোনা উপহার দেয়া হতো । Al-Ma’moun made Hunayn the Head of the Translation Department (Diwan Al-Tarjama). Hunayn was good in four languages: Syriac, Arabic, Farsi and Greek. It is reported that the Caliph used to give him the equivalent weight in gold to that of the books he had translated into Arabic.সাবিত ইবনে কুরা (৮২৬ -৯০১) আপোলোনিয়াস, আর্কিমিডিস, ইউক্লিড ও টলেমির গুরুত্বপূর্ণ রচনা অনুবাদ করেন। দেড়শত বছর যাবত সহজলভ্য গ্রিক ভাষার সকল বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক কর্ম অনুবাদ করা হয়। এরিস্টটলের টপিক গ্রন্থের মাধ্যমে অনুবাদ শুরু হয়। আবু ইউসুফ ইয়াকুব আল কিন্দিকে মামুন শুধু এরিস্টটলের রচনাবলি অনুবাদ করার দায়িত্ব দেন।The renowned scholar Abu Yousuf Ya’qoub Al-Kindi (physician, philosopher, mathematician, geometer, logician, and astronomer) was chosen by Al-Ma’moun to be one of the scholars charged with the translation of the works of Aristotle. He had his own personal library at home, which was referred to as Al-Kindiya. গ্রিক কাজগুলো ইতিমধ্যে তাদের তৃতীয় অনুবাদ ছিল। পিথাগোরাস, প্লেটো, এরিস্টটল, হিপোক্রেটিস, ইউক্লিড, প্লটিনাস, গ্যালন, চরক, আর্যভট্ট ও ব্রহ্মগুপ্তের লেখা অনুবাদ করা হয়। এ সময় লিউকের পুত্র কোস্টার এর মাধ্যমে গ্রীক সিরিয়া ও ক্যালডিয় ভাষার গ্রন্থাদি, মানকাহ এবং দাবান নামক ব্রাহ্মন মনীষীদের দ্বারা সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার গ্রন্থাদি আরবিতে অনুবাদ করা হয়।খলিফা মামুনের খেলাফতকালে শুধু গ্রিক রচনাবলি অনুবাদ করতেই বায়তুল হিকমা থেকে প্রায় তিন লাখ দিনার ব্যয় করা হয়েছিল।(Khuda Buksh,The Islamic Libraries,p-128)।অধিকন্তু নতুন আবিষ্কার অনুবাদের পরীক্ষাকে উৎসাহিত করে। তারা প্রাচীন লেখনীগুলো বোঝার সুবিধার্থে টীকা-টিপ্পনী যোগ করতেন। ব্যাখ্যা হাজির করতেন। অনেক ক্ষেত্রে শিরোনাম ও পরিভাষাও বদল করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো টলেমির আলমাজেস্ট যা ছিল মূল কর্ম মেগালে সিনটেক্সিস এর আরবিরূপ।নতুন আব্বাসীয় বৈজ্ঞানিক প্রথায় উন্নতমানের অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় এ সময়ের অনুবাদগুলো পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় উন্নততর ছিল। সেসাথে নতুন ধারণা গড়ে তোলার জন্যও গুরুত্ব প্রদান করা হয়।বলা হয় সেই সময় লিখিত বই ও পান্ডুলিপি বহনের জন্য আল মামুন ১০০টি উট বাহন হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। It is also said that Al-Ma’moun used the load of one hundred camels to transport from Khurasan (in north east Persia) to Baghdad magnificent hand-written books and manuscripts to include them in the library of Dar Al-Hikma. Hence, Al-Ma’moun took special interest in translation and transcription.খলিফা আল মামুন সালাম নামে একজনকে গ্রীসে পাঠান গ্রীক বই আরবিতে অনুবাদের জন্য। বায়তুল হিকমা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্লেটো, অ্যারিস্টটল প্রমুখ বিশ্বখ্যাত মনীষীর গ্রন্থাবলি গ্রিক ভাষা থেকে আরবি এবং পরবর্তীকালে লাতিন ভাষায় অনুবাদ হয়, এর মাধ্যমে মুসলমানরা ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সংরক্ষণ করেছে।বায়তুল হিকমাহর এসব অনূদিত গ্রন্থ ইউরোপের রেনেসাঁয় ভূমিকা পালন করেছে।
চিকিৎসকের জটিল অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া শিক্ষা।
শিক্ষার্থীদের পাঠদান, বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা ও বিতর্কের আয়োজন, গবেষণাকাজ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল বায়তুল হিকমার একাডেমি বিভাগের।একাডেমি বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বাগদাদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। পন্ডিতরা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকর্মে স্থপতি ও প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সরকারি দিনপঞ্জির হিসাব রাখেন এবং সরকারি কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তারা একইসাথে চিকিৎসক ও পরামর্শদাতাও ছিলেন। It is important to point out that Al-Ma’moun (who was fluent in Arabic and Farsi for his mother was Persian from Khurasan) used to preside over and actively participate with the scientists, scholars and wise men their seminars, discourses and discussions of various subjects in the Arts and the Sciences. (Jawad, Mustafa; and Susa, Ahmad (1958); A Detailed Guide to Baghdad’s Map: in Baghdad’s Plans, Old and Modern. Baghdad: p.130)।আল মামুন ব্যক্তিগতভাবে বায়তুল হিকমার দৈনন্দির কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি নিয়মিতভাবে এর পন্ডিতদের সাথে সাক্ষাত করতেন এবং খোজখবর নিতেন। তিনি বিভিন্ন একাডেমিক বিতর্কে অংশগ্রহণ করতেন। অধিকন্তু তিনি তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বায়তুল হিকমার পন্ডিতদের বিভিন্ন দলগঠন করতেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি পৃথিবীর মানচিত্রের, আলমাজেস্টের তথ্যের সঠিকতা ও পৃথিবীর সঠিক আকারের ব্যাপারে আদেশ প্রদান করেন। তিনি মিশর বিষয়ক গবেষণাকেও উৎসাহিত করেন এবং ব্যক্তিগতভাবে পিরামিডের খননে অংশ নেন।তার পূর্বসূরির অনুকরণে আল মামুন বিদেশে জ্ঞান সংক্রান্ত রচনার অনুসন্ধানে হিকমাহ হিকমাহর পন্ডিতদের প্রেরণ করেন। এমনকি এর একজন পরিচালককে কনস্টান্টিনোপল এ উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়। তার সময় সাহল ইবনে হারুন নামক পারসিয়ান কবি ও জোতিষবিদ বায়তুল হিকমার প্রধান গ্রন্থগারিক ছিলেন। নবম শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বায়তুল হিকমাহ এসময়ের সর্ববৃহৎ বইয়ের ভান্ডারে এবং মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। অসংখ্য আরব ও পারসিয়ান মেধাবী ব্যক্তি এতে আকৃষ্ট হয়। বায়তুল হিকমাহ জ্ঞানচর্চার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠে। যদিও এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ধাচের প্রতিষ্ঠান ছিল না। প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরাসরি শিক্ষক থেকে ছাত্রদের মধ্যে জ্ঞানের প্রবাহ ঘটত। আরবিতে গ্রন্থ অনুবাদ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি পন্ডিতরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক
 লিখিত বৈজ্ঞানিক পান্ডুলিপি।
অবদান রাখেন। উদাহরণস্বরূপ, বিখ্যাত গণিতবিদ আল খোয়ারিজমি বায়তুল হিকমাহতে কর্মরত থাকার সময় বীজগণিতের উপর ব্যাপক অবদান রাখেন।খোয়ারিজমি ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বীজগণিত এবং সমাধান নিয়ে বই লিখেছেন। তিনি বীজগণিতকে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে গণ্য এবং প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ‘আল-জাবরা' নামে তাঁর বইটি এ বিষয়ক অনবদ্য গ্রন্থ হিসেবে আজো অবশিষ্ট রয়েছে। এতে তিনি বেশ কিছু এলগরিদম উদ্ভাবন করেন।এলজেবরা” ও এলগরিদম শব্দ দুটি আল খোয়ারিজমির সাথে সম্পর্কিত। এর পাশাপাশি, তিনি আরব জগতে হিন্দু সংখ্যা পদ্ধতির প্রচলন ঘটান। পরে তা ইউরোপে পৌছায়। আল কিন্দি তথ্যের গোপনীয়তা বিষয়ক ক্রিপোটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করেন।এছাড়াও জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানে অনেক মৌলিক গবেষণা হয়। মুহাম্মদ জাফর ইবনে মুসা মুহাম্মদ মুসা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের বিশ্বজনীনতার কথা প্রথম বলেন। পরবর্তীতে ১০ শতকে আল হাসান বিশেষত আলোকবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরীক্ষার সম্পাদন করেন। তার এসকল অর্জন এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে।মুহাম্মদ মুসা ও তার ভ্রাতৃদ্বয় আহমেদ ইবনে মুসা ও হাসান ইবনে মুসা (তাদের একসাথে বনু মুসা বলা হয়) ছিলেন দক্ষ প্রকৌশলী। তারা কিতাবুল হিয়াল নামক যন্ত্র সংক্রান্ত গ্রন্থ লেখেন। এতে একশতেরও বেশি বর্ণনা ও সেগুলোর ব্যবহারবিধি ছিল। এর মধ্যে ছিল একটি “স্বয়ংক্রিয়ভাবে খেলতে সক্ষম যন্ত্র” পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন প্রগ্রামড-মেশিনের নমুনা। যা তৈরি হয়েছিল এখানেই।।চিকিৎসাবিজ্ঞানে হুনায়ন ইবনে ইসহাক চক্ষুরোগ নিয়ে আলোচনা করেন। অন্যান্য পন্ডিতরা গুটিবসন্ত, সংক্রমণ ও অস্ত্রোপচার বিষয়ে লিখেছেন। এসকল গ্রন্থ পরবর্তীকালে রেনেসার সময় চিকিতসাশাস্ত্রের আদর্শ পাঠ্যপুস্তকে পরিণত হয়।আল মামুনের শাসনের সময় বিজ্ঞান সর্বপ্রথম ব্যাপকাকারে গবেষণা প্রত্যক্ষ করে। টলেমির পর্যবেক্ষণ পরীক্ষা করার জন্য খলিফা বাগদাদে প্রথম মানমন্দির নির্মাণের আদেশ দেন। টলেমির তথ্যউপাত্তগুলো পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং দক্ষ ভূগোলবিদ, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তার পুনর্নির্মাণ করেন। আল মামুন পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়ের জন্য গবেষণা সংগঠিত করেন।পৃথিবীর প্রথম বিস্তৃত মানচিত্র তৈরি হয় হিকমায়।অনেকের মতে এই প্রচেষ্টাগুলো পৃথিবীর প্রথম রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণাকর্ম।
মানমন্দির
মানমন্দির -খলিফা আল মামুনের আদেশে ৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে আল শামাসিয়ায় মানমন্দির নির্মিত হয়। এটিই ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মানমন্দির ও মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র।মানমন্দির নির্মাণে বায়তুল হিকমাহর পন্ডিতরা সরাসরি কাজ করেন। একে মুমতাহান মানমন্দির বলা হতো। গ্রিক মানমন্দিরের আদলে তা নির্মাণ করা হয় এবং গ্রিক মানমন্দিরে ব্যবহৃত উপকরণ এখানে স্থাপন করা হয়।সূর্য, চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহের পর্যবেক্ষণের পর দ্বিতীয় একটি মানমন্দির দামেস্কের কাছে কাসিউন পর্বতের উপর স্থাপন করা হয়। এসব পরিশ্রমলব্ধ ফলাফল আল জিজ আল মুমতাহান নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়।ইয়াহিয়া ইবনে আবি মানসুর, আব্বাস জাওহারি, সিন্দ বিন আলী, আবু সাহল ফজল, মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খাওয়ারিজমি প্রমুখ গবেষককে মানমন্দিরে নিয়োগ দেওয়া হয়।বাগদাদের অন্যান্য গ্রন্থাগারের সাথে বায়তুল হিকমাহও হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ

বাগদাদ অবরোধ
অবরোধের সময় ১২৫৮ সালে ধ্বংস হয়ে যায়।তার সংগ্রহগুলো দজলা নদীতে নিক্ষেপ করেন।নাসিরুদিন আল তুসি প্রায় ৪০,০০০ এর মত পান্ডুলিপি রক্ষা করতে সক্ষম হন। যা তিনি অবরোধের পূর্বে মারাগেহ নিয়ে যান।হালাকু খান বায়তুল হিকমার বই নদীতে ফেলেই থামেননি, বরং তাতে অগ্নিসংযোগও করে। এতে বায়তুল হিকমার মূল্যবান সংগ্রহশালা ধ্বংস হয়ে যায়। কথিত আছে, বায়তুল হিকমা ও অন্যান্য পাঠাগারের বইয়ের কালিতে তখন দজলা-ফোরাতের পানি কালো হয়ে যায়।দীর্ঘ ছয় মাস দজলা নদীর পানি কালো রং ধারণ করে।The magnificent collection of books and manuscripts of the House of Wisdom was thrown into the muddy waters of the River Tigris whose brown colour turned black for days as a result of the washing away of the ink used in the of the writing of these books and manuscripts. মুসলিম বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় বায়তুল হিকমা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।হালাকু খানের হাতে ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ৩২ জন আব্বাসীয় খলিফার সবাই বায়তুল হিকমার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ