করোনায় কী বোধোদয় হবে ?



করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে ৫৪৪ জন মারা গেছেন।মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ হাজার ২৯২ জন।করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, শিল্পপতি,ব্যবসায়ী ,বিটিভির মহাপরিচালক, সচিব, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদসহ আরও অনেক পরিচিত মুখ। ইতোমধ্যে কয়েকজন করোনা জয় করতে না পেরে মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছেন।
এরমধ্যে কিছু করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে।তাদের কেউ কেউ লাখ কিংবা হাজার কোটি টাকার মালিক।তাদের জীবন-যাপনও বিলাসী। সামান্য অসুস্থ বোধ করলেই তারা ছুটে যেতেন সিঙ্গাপুর,থাইল্যান্ড,ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রে।কিন্তু করোনা তাদেরকে সেই সুযোগ তো দেয়নি, উল্টো রীতিমতো তাদের অসহায় অবস্থায় ফেলেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে শুধু করোনা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত জেনারেল হাসপাতালের ১০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪১ জন। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।তারমধ্যে রয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদ আলম।শেষ মুহুর্তে মোরশেদ আলমের ভেন্টিলেটর সাপোর্টের দরকার হলেও তা সময়মতো তিনি পাননি।মোরশেদ আলম এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই। তিনিসহ তার পরিবারের ছয় জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মোরশেদ আলম আইসিইউ ওয়ার্ডে মারা যান।একই হাসপাতালে তার আরেক ভাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।বড় বড় শিল্পপতিদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তদের তালিকায় আরেকটি আলোচিত নাম হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ। করোনায় আক্রান্ত হলে গত ২০ মে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার শরীরে প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের তালিকায় অপর আলোচিত নাম বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবাদুল করিম। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য। ঈদের দু’দিন তার করোনা টেস্টের ফল পজিটিভ আসে।অথচ তাদের মতো দুই তিনজন উদ্যোক্তা চাইলেই দেশের পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে পারতেন। চাইলে হাজার হাজার আইসিইউ বেড দান করতে পারতেন বিভিন্ন হাসপাতালে। কিন্তু তারা কি জানতেন যে, এমন একদিন আসবে...যখন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢাললেও সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডের দরজা খুলবে না!করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ও তাঁর স্ত্রীও। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। তার স্ত্রী নিলুফার মঞ্জুর সানবীমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে নিলুফার মঞ্জুর মঙ্গলবার ভোররাতের দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান।
অথচ মাস খানেক আগেও এসব ভিআইপি সিআইপি হাঁচি-কাশি,জ্বর-ঠান্ডা হলেই এয়ার এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যেতেন মেডিক্যাল চেকাপ করতে। আজ একটি আইসিইউ বেড ও অক্সিজেন সাপোর্টের অভাবে মারা যেতে হচ্ছে।করোনায় আক্রান্ত হলেও অনেকেই সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের জন্য আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের যোগান দেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। অপরদিকে গরীব মানুষের জন্য করোনার চিকিৎসা রীতিমতো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।দেশে স্বাস্থ্য খাতে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে এ ধরণের মহামারি পরিস্থিতি সামাল দিতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। আর শিল্পপতিরাও হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করলেও দেশের চিকিৎসা খাতের জন্য তারা তেমন কিছুই করেনি।কোটিপতিরা এতদিন অসুস্থ হলেই বিদেশে ছুটে গেছেন। অথচ তারা মুনাফার কিছু অংশ দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র পাল্টে যেত। তাদের নিজেদেরকেও এমন করুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না।
বোধোদয় কবিতা-
গরীবের বুকের পাঁজর দিয়ে তৈরি হয় লোভীর প্রাসাদ, আকাশ চুম্বি লোভ লালসা।।
চাপা পড়ে থাকে অধিকার।
একসময়, লোভের পতন হয়, প্রাসাদ ধ্বংস হয়, সেই পাঁজরেই সব দম্ভ ধসে পড়ে।
ভাঙ্গা প্রাসাদে মানুষ চাপা পড়ে না, পড়ে আমাদের বিবেক, মনুষ্যত্ব।।
মৃত্যু হয় গরীবের, এ যেন মুক্তি। মুক্তি সব অন্যায়,অবিচার, জুলুমের।
তারা একে একে মুক্ত হয়ে চলে যায়, আর আমাদের বেঁধে রাখে বিবেকের কাঠগড়ায়।
গ্রন্থনায়-মো.আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল