সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যবহৃত তরবারি



মো. আবু রায়হান-রাসুল্লাহ (সা.)-এর বীরত্বের অন্যতম নিদর্শন তাঁর ব্যবহৃত তরবারিগুলো। তাঁর ৯ টি তরবারি ছিল।তরবারি গুলোর ৮ টি তুরস্কের তোপকাপি প্যালেস যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।বাকি একটি মিসরের কায়রোর হোসাইন মসজিদে আছে। রাসুল্লাহ (সা.)-এর ব্যবহৃত ৯টি তরবারির পরিচয় তুলে ধরা হলো-
আল মাছুর
আল মাছুর-আল মাছুর অন্য নাম মাছুর আল ফিজার ।এটি রাসুল (সা.)-এর প্রথম তরবারি, যা তিনি ওয়ারিশ সূত্রে তাঁর পিতা আব্দুল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছিলেন।হাতলের কাছে আরবি কুফি হরফে তরবারির ওপর খোদাই করে লেখা ছিল আবদুল্লাহ ইবনে মুত্তালিব।তিনি এই তরবারি হাতে নিয়ে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। The prophet Muhammad migrated with the sword from Mecca to Medina, and the sword remained with him until it was transferred, along with other war equipment, to Ali b. Abi Talib.ব্লেডের দৈর্ঘ্য ছিল ৯৯ সেন্টিমিটার আর হাতল ছিল ১৪ সেন্টিমিটারের। হাতল ছিল সোনার তৈরি।নান্দনিক এই তরবারির প্রস্থ ছিল ৪ সেন্টিমিটার, যা উপরিভাগে গিয়ে ৩.৫ সেন্টিমিটার হয়ে গেছে।
আল কাদিব
আল কাদিব-আল কাদিব এটি ছিল লোহার তৈরি অত্যন্ত মজবুত তরবারি দেখতে রডের মতো।এই তরবারি কোনো যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা যায় না।এটি নবিজির ঘরে থাকতো তবে ফাতিমীয় খেলাফাত আমলে ব্যবহার করা হয়।তরবারিতে রৌপ্যে খোদাই করা আছে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।এর দৈর্ঘ্য ছিল ১০০ সেন্টিমিটার। প্রস্থ ছিল ২.৮ সেন্টিমিটার। এই তরবারির ব্লেড ছিল তুলনামূলক চিকন, যার উপরিভাগ ছিল মাত্র ২.২ সেন্টিমিটার। মজবুত এই তরবারিকে সঠিকভাবে চালানোর জন্য ছিল ১৪ সেন্টিমিটার হাতল। শুধু ব্লেডের দৈর্ঘ্য ছিল ৮৬ সেন্টিমিটার।
আল আদব
আল আদব-আল আদব অর্থ তীক্ষ্ণ ধারালো।এই তরবারি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) রাসুল সা কে বদর যুদ্ধের আগে উপহার দিয়েছিলেন।ওহুদের যুদ্ধ চলাকালে এই তরবারি ব্যবহার করা হয়। এর আগে এই তরবারি দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন বিশিষ্ট সাহাবি আবু দুজানা (রা.)। বর্তমানে এটি কায়রোর জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
জুলফিকার
জুলফিকার-জুলফিকার রাসুল (সা.)-এর ব্যবহৃত তরবারিগুলোর মধ্যে অন্যতম।এই তরবারি বদরের যুদ্ধে গনিমতের মাল হিসাবে লাভ করা হয়। ওহুদের যুদ্ধে রাসুল (সা.) এই তলোয়ার খলিফা আলী (রা.)-কে উপহার দেন। ইসলামী ইতিহাসের সূত্র থেকে জানা যায়, ওহুদের যুদ্ধে মক্কার সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধার ঢাল ও শিরস্ত্রাণ এক আঘাতে দ্বিখণ্ডিত করেন আলী (রা.)। এই আঘাতে তার তরবারিও ভেঙে যায়। এই ঘটনার পর রাসুল (সা.) তাঁর জুলফিকার নামের নিজ তরবারি আলী (রা.)-কে দেন। এই তরবারির দৈর্ঘ্য ছিল ১০৪ সেন্টিমিটার, যার মধ্যে ব্লেডের অংশ ছিল ৮৯ সেন্টিমিটার। এর হাতল ছিল অন্যান্য তরবারির তুলনায় হালকা ও বড়, ১৫ সেন্টিমিটার। মজবুত এই তরবারির প্রস্থও ছিল কিছুটা মোটা, ৬ সেন্টিমিটার, যার উপরিভাগ ছিল ৪.৫ সেন্টিমিটার। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-এর তরবারির বাঁটের অগ্রভাগ ছিল রুপার তৈরি। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস-৮১)। হাদিসবিশারদদের মতে, তরবারিটি ‘জুলফিকার’। মক্কা বিজয়ের দিন এটি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিল।
আল কুলায়ি
আল কুলায়ি-আল কুলায়ি বা কিউলাই তরবারি।নামটি সিরিয়া অথবা চিনের নিকটে ভারতের কোনো জায়গার নাম।বনু কাইনুকা থেকে গনিমতস্বরূপ রাসুল (সা.) যে তিনটি তরবারি পেয়েছিলেন, এটি তার একটি। এটি সাধারণত ভ্রমণকালে নিরাপত্তার জন্য তা ব্যবহার করা হতো। যুদ্ধের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হতো না। হাতলসহ এই তরবারির দৈর্ঘ্য ১১৪ সেন্টিমিটার, যার মধ্যে ব্লেড ছিল ১০০ সেন্টিমিটার। তরবারিটির প্রস্থ ছিল ৫.৫ সেন্টিমিটার, যা উপরিভাগে গিয়ে ৪.৫ সেন্টিমিটার হয়ে যায়।তরবারি ব্লেড এবং হাতলের কাছে আরবিতে খোদাই করা আছে- “This is the noble sword of the house of Muhammad the prophet, the apostle of God.”
আল হাত্তাপ
আল হাত্তাপ-আল হাত্তাপ এটি রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে ভারী তরবারি, যা যুদ্ধের জন্য বেশ উপযোগী ও কার্যকর। এটিও বনু কায়নুকা গোত্র থেকে পাওয়া গনিমতের মধ্যে ছিল।অন্য বর্ণনায় আছে দাউদ (আ) জালুতকে পরাজিত করে গনিমত হিসেবে পান।হাতলসহ এই তরবারির দৈর্ঘ্য ১১৩ সেন্টিমিটার, যার ব্লেড ছিল ৯৮ সেন্টিমিটার। ধারালো এই তরবারির প্রস্থ ছিল ৮ সেন্টিমিটার, যা উপরিভাগে ৬ সেন্টিমিটারে শেষ হয়েছে।God gave King David the ability to work with iron, to make armor and weapons and instruments of war, and he made for himself a sword. It was thus that the Hatf sword came about, resembling the al-Battar but larger than it. He used this sword and it was passed onto the tribe of Levites who kept the weapons of the Israelites until it passed into the hands of the prophet Muhammad.
আর রাসুব
আর রাসুব-আর রাসুব এমন একটি তরবারি, যা রুপা দিয়ে মোড়ানো ছিল। এটি রাসুল (সা.)-এর তরবারিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লম্বা, যার দৈর্ঘ্য ছিল ১৪০ সেন্টিমিটার। অনেকের ধারণা, এটি ছিল জাফর সাদিক (রা.)-এর তরবারি। It is said that the weapons of the house of the prophet Muhammad were kept among his family just like the Ark was kept with the Israelites.
আল বাত্তার
আল বাত্তার- আল বাত্তারকে রাসুলের তরবারি বলা হয়।বনি কাইনুকা থেকে গনিমতের মাল হিসাবে রাসুল এটি পান। inscribed in Arabic with the names of David, Solomon, Moses, Aaron, Joshua, Zechariah, John, Jesus, and Muhammad. It also has a drawing of King David when cut off the head of Goliath to whom this sword had belonged originally.রাসুল (সা.)-এর এই তরবারির ওপর খোদাই করে লেখা ছিল আল কিসাস (মৃত্যুদণ্ড) এবং সাইফুল আদল (ন্যায়ের তরবারি)।বলা হয় হযরত ঈসা (আ) যখন ফিরে আসবেন তখন দাজ্জালের বিরুদ্ধে এই তরবারি ধারণ করবেন।তরবারির ব্লেড ছিল ১০১ সেন্টিমিটার।এ ছাড়া এই তরবারিতে ছিল নান্দনিক নকশা।
আল মিখজাম
আল মিখজাম-আল মিখজাম রুপায় মোড়ানো ছিল আল মিখজাম, যা রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময় ব্যবহার করেছেন।তরবারি রাসুল সা আলিকে দেন।আলি তার পুত্রদের দেন।তরবারিতে খোদাই করে জয়নাল আবেদিনের নাম খোদিত আছে।বলা হয় হযরত আলি সিরিয়া অবরোধ কালে এই তরবারি গনিমাত হিসাবে পান। তরবারির ব্লেড ছিল ৯৭ সেন্টিমিটার।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...