মসজিদে নববী নির্মাণের ইতিহাস ও ঐতিহ্য


মো. আবু রায়হানঃ হযরত মুহাম্মদ (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর মসজিদে নববী নির্মিত হয়। এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। এই মসজিদটিই হচ্ছে পৃথিবীর সর্বোত্তম ও পবিত্র স্থানের মধ্যে দ্বিতীয়।(Masjid al Nabawi is the second holiest mosque in Islam, the second largest mosque in the world after the Masjid al-Haram in Mecca. It is resting place of the Prophet Muhammad. It was built by the Prophet himself, next to the house where he settled after his migration to Medina in 622 AD.মহিমান্বিত এই মসজিদে নববী অর্থ নবীজির মসজিদ।হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন, তখন এ শহরটির নাম ছিল ইয়াসরিব। রাসুল (সা.) আগমনের পরপরই ইয়াসরিব নামটি পবির্তন করে মদিনা নামকরণ করেন। কিন্তু সেখানে কোন মসজিদ ছিল না যেখানে নবীজিসহ সাহাবীরা নামাজ আদায় করবেন। নতুন হিজরতকারীদের মধ্যে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের শূন্যতা দেখা দিলে নবী (সা.) নিজেই একটি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। আর এ মসজিদের নাম দেন মদীনা মসজিদ। যা মসজিদে নববী (সা.) বা মদিনায়ে মুনাওয়ারা হিসেবে পরিচিত। এ মসজিদের গুরুত্ব ও মর্যাদা নিয়ে কোরআন-হাদিসের অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে।Abu Hurairah(RA) narrated that the Prophet ( SA) said:“One salah offered in my masjid is superior to one thousand salahs offered in other masjids except Masjid al-Haram (Makkah al-Mukarramah).” (Bukhari)মসজিদে নববীতে এক রাকাত নামাজ পড়লে ৫০ হাজার রাকাত কবুল হওয়া নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'আমার এ মসজিদে এক নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (বুখারি ও মুসলিম)।Anas (RA) reports that the Prophet (SA) said: “Whoever performs forty salah in my masjid, not missing one salah in the masjid, for him is granted exemption from the fire of Hell, and exemption from punishment and he shall remain free of hypocrisy.” (Ahmad)। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে- 'তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও (সাওয়াবের আশায়) সফর করাই বৈধ নয়। আর তা হলো-
এক- মসজিদুল হারাম তথা পবিত্র মক্কা নগরীর কাবা শরিফ।
দুই-আমার এ মসজিদ তথা মদিনার মসজিদে নববী এবং
তিন- মসজিদ আল আকসা তথা মুসলমানদের প্রথম কেবলা ও অসংখ্য আম্বিয়া কেরামের পদধূলিতে ধন্য বায়তুল মোকাদ্দাস।

রাসুল (সা.) এর হিজরতের পর মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করেই বিকশিত হয়েছিল ইতিহাসের প্রথম মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার। মহানবী (সা.)-এর সার্বিক তত্ত্বাবধান ও অংশগ্রহণে ঐতিহাসিক এই মসজিদ গড়ে ওঠে। সাহাবিদের দ্বীন শেখানো থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ তিনি মসজিদে নববীতে বসেই আঞ্জাম দিতেন। সাহাবিরা এখানেই তাঁর কাছে কুরআন শিখতেন ।আবার এর প্রাঙ্গণে হতো যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতিসভা।সেসময় মসজিদ সম্মিলনস্থল, আদালত ও মাদ্রাসা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। The masjid also served as a religious school, community center, court and also as a confinement for prisoners.তৎকালীন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এই মসজিদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর খোলাফায়ে রাশেদার যুগ পর্যন্ত মসজিদে নববীই ছিল ইসলামী খিলাফতের প্রাণকেন্দ্র। এখান থেকে মুসলিম বিশ্ব পরিচালিত হতো। পবিত্র মসজিদে নববীতে মহানবী (সা.)’র রওজা পাকের দু’পাশে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবুবকর (রা.) ও দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর রাওজা রয়েছে।

মসজিদে নববী মদিনা মসজিদ নির্মাণের জন্য রাসুল (সা) নাজ্জার গোত্রের এতিম সাহল ও সোহাইল নামক দুই যুবক থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করে ছিলেন। এ জমির ক্ষুদ্র একটি অংশে নবীজি (সা.) বাসস্থান নির্মাণ করে বাকি পুরো অংশেই মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। রাসুল আনসার ও মুহাজিরদের উৎসাহ দিয়ে বললেন,
This load we are carrying, o Lord!
More decent and purer than Khaibar’s load!
O Lord! Blessings, yet otherworldly blessings!
May Thou mercy the Ansar and immigrants!
( Ibn Hisham, Sirah, V. 2, p. 142; İbn Sa’d, ibid, V. 1, p. 210.)

মসজিদের ভিত্তি ও দেয়ালের নিম্নভাগ ৩ হাত পর্যন্ত প্রস্তের হিসেবে নির্মিত ছিল। প্রথম পর্যায়ে মদিনা মসজিদ রৌদ্রে শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়। এই রৌদ্র শুষ্ক ইট ও সিমেন্ট হিসেবে আল-খাবখাবা উপত্যকা হতে আনিত কাদা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তখন মদিনা মসজিদের দেয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। এর ছাদকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছকে স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদকে সুন্দর, রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার উপর কাদামাটির আস্তরণ লেপে দেয়া হয়েছিল। জায়গার প্রতিটি কোণা থেকে তীর নিক্ষেপ করে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গেল তা হলো মসজিদের একটি ক্ষেত্র। আর এ ক্ষেত্রে বর্গের প্রতিটি বাহুর পরিমাণ দাঁড়ালো ১০০ হাত বা ৫৬ গজ।প্রথম মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৭ মাস। অর্থাৎ- ৬২২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে থেকে শুরু হয়ে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ৭ মাসব্যাপী প্রথম মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজের সময় ধরা হয়। প্রথম পর্যায়ে নির্মিত পবিত্র মদিনা মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল। প্রধান প্রবেশ পথটি ছিল দক্ষিণ দিকে যা দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং বাহির হতেন। পশ্চিম দেয়ালে ছিল মসজিদের দ্বিতীয় প্রবেশ পথ যা ‘বাবে রহমত’ নামে স্বীকৃত। তৃতীয় প্রবেশ পথটি ছিল পূর্ব দেয়ালে যা দিয়ে নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে প্রবেশ করতেন। এ জন্য এটির নামকরণ হয় ‘বাব উন নবী (সা.)’। মসজিদটি খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। মসজিদ ঐতিহ্যগতভাবে মদিনার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। মসজিদে নববী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান বিধায় হজ্জের সময়ে আগত হাজিরা হজ্জের আগে বা পরে মদিনায় অবস্থান করেন।

ঐতিহাসিকদের মতে, মদিনা মসজিদেই সর্ব প্রথম মেহরাব, মিম্বার, আজান দেয়ার স্থান বা মিনার এবং অজুর স্থানের ব্যবস্থা করা হয়। রাসুলে আকরাম (সা.)-এর হাতে মসজিদে নববীর প্রতিষ্ঠা হলেও যুগে যুগে বহু সংস্কার ও সম্প্রসারণ হয়েছে এই মসজিদের। সপ্তম হিজরিতে মসজিদে নববীর প্রথম সম্প্রসারণ রাসুল (সা.)-ই করেন। তখন আয়তন বেড়ে হয় দুই হাজার ৪৭৫ স্কয়ার মিটার। এরপর ওমর বিন খাত্তাব (রা.) (১৭ হিজরি) থেকে শুরু করে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (১৪১৪ হিজরি) পর্যন্ত মোট আটবার মসজিদে নববীর সংস্কার ও সম্প্রসারণ হয়েছে। নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় নেয়ার পর ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রা.) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে নববী (সা.)’র একদফা সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ করেন। এসময় মসজিদের উত্তরে ৩০ হাত, দক্ষিণে ১০ হাত ও পশ্চিম দিকে ২০ হাত প্রশস্ত করেন। খলীফা হযরত ওমর (রা.)’র সময় মসজিদের জায়গার পরিমাণ হয় উত্তর-দক্ষিণে ১৪০ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১২০ হাত।

এরপর ৩য় খলীফা হযরত ওসমান গণির খেলাফতকালে ৬৪৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে খেজুর পাতার পরিবর্তে মসজিদের ছাদে ব্যবহার করা হয় সেগুন গাছের কাঠ। তখন ছাদের আকার দাঁড়ায় ১৬০ ´ ১৩০ হাত। এ সময় মসজিদের আয়তন হয় উত্তর দক্ষিণে ১৬০ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫০ হাত। পরবর্তীতে খলিফা আল্ ওয়ালিদের সময় মদিনা মসজিদটি আধুনিক ইমারতে পরিণত হয়। ওয়ালিদ ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে পবিত্র মসজিদে নববী (সা.)-কে সাজিয়ে তোলেন। তাঁর সময় মসজিদে নববী (সা.)’র আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ ´ ২০০ হাত।খলিফা আল-ওয়ালিদ সর্ব প্রথম পবিত্র মসজিদে নববী (সা.)’র ৪ কোণায় ৪টি মিনার নির্মাণ করেন তখন প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ছিল ৫০ হাত এবং প্রস্থে ছিল ৮ হাত। ৯১ হিজরিতে ওমর বিন আবদুল আজিজ খলিফা ওয়ালিদের নির্দেশে মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ করেন। এ সময় হযরত আয়েশা (রা.)-এর কক্ষটি মসজিদে নববীর অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তার ওপর নয়নাভিরাম সবুজ গম্বুজ স্থাপন করেন।

এরপর খলিফা মাহদী ৭৭৫-৭৮৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ পবিত্র মসজিদটি আবারো সম্প্রসারণসহ সংস্কার করেন এসময় এ আয়তন দাঁড়ায় ৩০০ ´ ৩০০ হাত। পরবর্তীতে ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে মামলুক সুলতান কয়েত-বে পবিত্র মসজিদে নববী (সা.)-এর মধ্যে গম্বুজ প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র এ গম্বুজ শরীফে রং-এর আস্তরণ দিয়ে সবুজ গম্বুজ বানিয়ে ছিলেন ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ। আর সেই থেকেই আজ অবধি মদিনায়ে মুনাওয়ারা তথা পবিত্র মসজিদে নববী শরীফের উপর নূরানী এ সবুজ গম্বুজ শরীফটি কোটি কোটি ঈমানদার তথা আশেকে রাসুল (সা.)দের মাঝে আলোকবর্তিকা ও প্রাণস্পন্দন হয়ে আছে। যা কিয়ামত পর্যন্ত ঈমানি চেতনা দান করবেন নবী প্রেমিকদের অন্তরে। ১৯০৯ সালে এই মসজিদের মাধ্যমেই আরব উপদ্বীপের বিদ্যুতায়ন শুরু হয়।সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ পবিত্র মসজিদ-এ নববী (সা.)’র নব সজ্জা, আধুনিকায়নে রূপদান করেন এর পরিকল্পনা করা হয় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ মসজিদ আধুনিকায়ন করা হয়। বাদশাহ ফাহাদের যুগেই মসজিদে নববীর সম্প্রসারণে নতুন অবকাঠামো লাভ করে। এতে মসজিদের আয়তন বৃদ্ধি পায় ৮২ হাজার মিটার। প্রতিষ্ঠাকালীন আয়তন এক হাজার ৫০ স্কয়ার মিটার থেকে বেড়ে বর্তমানে মসজিদে নববী দুই লাখ ৩৫ হাজার স্কয়ার মিটারে দাঁড়িয়েছে।বর্তমানে মসজিদে নববী শরীফ বহুগুণ বড় ও সম্প্রসারিত হয়েছে। সম্পূর্ণ আধুনিক নতুন নকশার ভিত্তিতে এটিকে সম্প্রসারণ ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। যাহাতে এক সাথে প্রায় সাত লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

বাদশাহ ফাহাদ মসজিদে নববীতে নারীদের নামাজ আদায়ের জায়গা তৈরি করেন। এ ছাড়া মসজিদের বাইরের নিরাপত্তা দেয়াল, মসজিদ প্রাঙ্গণের ছাতা, ইলেকট্রিক গম্বুজ, আধুনিক অজুখানা, নতুন মিনার, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা, আধুনিক পাঠাগার ইত্যাদি সংযুক্ত হয়। বর্তমানে মসজিদে নববীতে ১০টি সুউচ্চ মিনার ও প্রায় ২০০টি ছোট-বড় গম্বুজ রয়েছে।বিশালকার এ পবিত্র মসজিদে নববী (সা.)’র সমস্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজ পরিবারের।
সুফফা

আসহাবে সুফফা-সুফফার অর্থ ছাদবিহীন ভিটা ইহা মসজিদে নববী সংলগ্ন একটি ছোট ভিটা। অনেক সাহাবী দেশ-বিদেশ থেকে এসে এখানে নবী করিম (সা.)এর শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করতেন এবং ছাত্রাবাস হিসেবে এখানে অবস্থান করতেন। এ জন্য তাকে আসহাবে সুফফা বা ভিটাবাসী বলা হয়। ইহা বর্তমানে বামে জিবরাইল দিয়ে ঢুকতেই সামনে ও বামে এবং রাসুল (সা.) এর রওজা শরীফের ঘেরার উত্তর সংলগ্ন একটা ভিটা, ইহা বরকতের স্থান। এখানে বেলায়ত, জিকির, মুরাকাবা তছবিহ ও নফল নামাজ পড়বেন। এখানেও রওজাতুল জান্নাতের মতই সর্বদা ভিড় লেগেই থাকে।মসজিদে নববীর ভেতরে কয়েকটি স্তম্ভ রয়েছে, সেগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বা খুঁটি বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তৈরি মসজিদে খেজুর গাছের খুঁটিগুলোর স্থলে উসমানী সুলতান আবদুল মাজিদ পাকা স্তম্ভ নির্মাণ করেন। এগুলোর গায়ে মর্মর পাথর বসানো এবং স্বর্ণের কারুকাজ করা । প্রথম কাতারে ৪টি স্তম্ভের লাল পাথরের এবং পার্থক্য করার সুবিধার জন্য সেগুলোর গায়ে নাম লেখা রয়েছে।
উস্ত্তওয়ানা হান্নানা (সুবাস স্তম্ভ)- হুজুর পাক (সা.) এখানে একটি শুকনো গাছে হেলান দিয়ে খুতবা পাঠ করতেন। কাঠের মিম্বার তৈরির পর তাতে দাঁড়িয়ে খুতবা দেয়ায় শুকনো গাছটি রাসূল (সা.) এর বিচ্ছেদের কান্না শুরু করে দেয়। তিনি তখন মিম্বার থেকে নেমে গাছটির উপর তাঁর পবিত্র হাত রাখতেই এটির কান্না থেমে যায়। সেটিকে ঐস্থানে সমাহিত করা হয়।
উস্ত্তওয়ানা সারির- এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করতেন এবং রাতে আরামের জন্য তাঁর বিছানা এখানে স্থাপন করা হতো। স্তম্ভটি হুজরা শরিফের পশ্চিম পাশে জালি মোবারকের সঙ্গে রয়েছে।
উস্ত্তওয়ানা উফুদ- বাইরে থেকে আগত প্রতিনিধিদল এখানে বসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করতেন এবং এখানে বসেই কথা বলতেন। এ স্তম্ভটিও জালি মোবারকের সঙ্গে রয়েছে।
উস্ত্তওয়ানা আয়েশা (আয়েশা স্তম্ভ)- নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা রয়েছে, লোকজন যদি সেখানে নামাজ পড়ার ফজিলত জানত, তাহলে সেখানে স্থান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করত।’ স্থানটি চিহ্নিত করার জন্য সাহাবায়ে কিরাম চেষ্টা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত আয়েশা (রা.) তাঁর ভাগ্নে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.)-কে সে জায়গাটি চিনিয়ে দেন। কতিপয় দুষ্ট ইহুদী হযরত আয়েশার বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র করলে তিন দিন তিন রাত এখানে অবস্থান করেন এবং নামাজ কুরআন তেলায়াত করতে থাকেন হুজুর পাক (সা.) এ দৃশ্য দেখে তাকে কিছু বলেননি। অতপর আয়েশা (রা.) বিষয়ে ওহি নাযিল হয়। সে জন্য এই পিলারকে আয়েশার পিলার বলা হয়।এটিই সেই স্তম্ভ। এই স্তম্ভটি উস্ত্তওয়ানা উফুদের পশ্চিম পাশে রওজায়ে জান্নাতের ভেতর।
উস্ত্তওয়ানা আবু লুবাবা (তওবা স্তম্ভ)-একটি ভুল করার পর হজরত আবু লুবাবা (রা.) নিজেকে এই স্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত রাসুল (সা.) নিজে না খুলে দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এর সঙ্গে বাঁধা থাকব।’ নবী করিম (সা.) বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে আল্লাহ আদেশ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত খুলব না।’ তিন দিন পর তার সম্পর্কে ক্ষমার আয়াত নাযিল হলে দয়াল নবী তার বাঁধন খুলে দেন। এখানে নামাজ এবং দোয়া, তওবা কবুল হয় ।এটি উস্ত্তওয়ানা উফুদের পশ্চিম পাশে রওজায়ে জান্নাতের ভেতর অবস্থিত।
জান্নাতুল বাকি

উস্ত্তওয়ানা জিবরাইল- রাসুলুল্লাহ (সা)এর নিকট ফেরেশতা হযরত জিবরাইল যখনই হযরত দাহিয়াতুল কালবি (রা)এর আকৃতি ধারণ করে ওহি নিয়ে আসতেন, তখন অধিকাংশ সময় তাঁকে এখানেই উপবিষ্ট দেখা যেত।
মিহরাবে নববী- যে মিম্বারের ডান পাশে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়াতেন।মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে কাউকে কষ্ট না দিয়ে এখানে নফল নামাজ পড়েন। মিহরাবের ডানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাঁড়ানোর জায়গা।
জান্নাতুল বাকি- মসজিদে নববীর পাশেই জান্নাতুল বাকি গোরস্থান। এটি মসজিদে নববীর দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত। আরবীতে বলা হয়- বাকিউল গারকাদ, মাকবারাতুল বাকি ।এখানে হযরত ফাতেমা (রা.), হজরত ওসমান (রা.)সহ অগণিত সাহাবায়ে কিরামের কবর রয়েছে। ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতে জান্নাতুল বাকিতে অন্তত দশ হাজার সাহাবার কবর রয়েছে।এর একপাশে নতুন নতুন কবর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখানে শুধু একটি পাথরের খণ্ড দিয়ে চিহ্নিত করা আছে একেকটি কবর।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল