মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল-আকসা মসজিদ
আল-আকসা মসজিদ |
মো. আবু রায়হানঃ আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের প্রথম কেবলা হিসেবে পরিচিত এ মসজিদটি পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত।মসজিদল আল আকসার মোট সাতটি নাম রয়েছে। এর অন্য নামগুলো হচ্ছে বায়তুল মোকাদ্দাস বা বায়তুল মাকদিস ,আল কুদস, মসজিদে ইলিয়া, সালাম, উরুশলেম ও ইয়াবুস।আল আকসা মসজিদের অর্থ হচ্ছে- দূরবর্তী মসজিদ।মুসলিমদের কাছে মর্যাদার তৃতীয় স্থানে রয়েছে আল-আকসা মসজিদ ।মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর পর যার স্থান।ইসলামের প্রথম কিবলা ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্মৃতিবাহী মসজিদ হিসেবে আল-আকসা মসজিদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে মুসলিমদের কাছে। নবি (আ.)-গণের পদচারণায় মুখরিত পবিত্র এই ভূমির সঙ্গে ঐতিহাসিক অনেক কারণেই জড়িয়ে আছে মুসলমানদের ধর্মীয় ভাবাবেগ। মহানবী (সা.) মিরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসা মসজিদে এসেছিলেন। পবিত্র কুরআনে সেই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দাকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত রাত্রি ভ্রমণ করিয়েছেন। যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি। যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’(সুরা ইসরা আয়াত-১)।এই মসজিদ প্রাঙ্গণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) সব নবি-রাসুল ও ফেরেশতাদের নামাজের ইমামতি করেন।এখান থেকেই তিনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা করেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘...নবী (সা.) মসজিদে আকসায় প্রবেশ করে নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়ান। অতঃপর তিনি তাঁর দুই পাশে তাকিয়ে দেখেন সব নবি তাঁর সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়েছেন।’(মুসনাদে আহমদ, হাদিস-২৩২৪)।হাদিসে আছে, ‘কাবা শরিফ তথা মাসজিদুল হারামে নামাজে এক লাখ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে মসজিদে নববিতে নামাজে পঞ্চাশ হাজার গুণ সওয়াব, বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজে পঁচিশ হাজার গুণ সওয়াব। রাসুল (সা) ইরশাদ করেছেন,‘আল কুদসের (জেরুসালেম) এমন কোনো জায়গা খালি নেই যেখানে একজন নবী সালাত আদায় করেননি বা কোনো ফেরেশতা দাঁড়াননি।’ (জামে তিরমিজি)। মহানবী (সা) আরো ইরশাদ করেছেন, কোনো ব্যক্তি তার ঘরে এক রাকাত সালাত আদায় করলে এক রাকাত সালাতের সওয়াবই পাবে। আর মসজিদে আদায় করলে ২৫ রাকাতের সওয়াব পাবে এবং জুমার মসজিদে আদায় করলে ৫০০ রাকাতের সওয়াব পাবে। আর মসজিদে নববীতে ও মসজিদুল আকসায় আদায় করলে ৫০ হাজার রাকাতের সওয়াব পাবে এবং মসজিদুল হারামে আদায় করলে এক লাখ রাকাতের সওয়াব পাবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)মুসলমানদের কাছে জেরুজালেম শহরটি আল কুদস নামেও পরিচিত।
ইবনে তাহমিয়ার মতে, আসলে সুলায়মান (আ.) এর তৈরি সম্পূর্ণ ইবাতদের স্থানটির নামই হল মসজিদুল আল-আকসা।মুহাদ্দিসগণ এই বিষয়ে একমত যে সম্পূর্ণ মসজিদ সুলায়মান (আ.) তৈরি করেছিলেন। মসজিদুল আকসার প্রথম নির্মাতা ও নির্মাণকাল নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। তবে অধিকতর সঠিক মত হলো, আদম (আ.) মসজিদুল আকসার প্রথম নির্মাতা। ইবরাহিম (আ.)-এর মাধ্যমে তা আবাদ হয় এবং খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ সালে সুলায়মান (আ.) এই মসজিদটির পূণর্নির্মাণ করেন।তবে হযরত আবু জার গিফারি (রা.)-এর বর্ণিত একটি হাদিস থেকে ধারণা, মসজিদুল আকসার নির্মাণ ইবরাহিম (আ.)-এর মাধ্যমেই হয়েছিল। আবু জার গিফারি (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! পৃথিবীতে প্রথম নির্মিত মসজিদ কোনটি? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। আমি জানতে চাইলাম, তারপর? তিনি বললেন, মসজিদুল আকসা। আমি আবার বললাম, উভয় মসজিদ নির্মাণে সময়ের ব্যবধান কত? তিনি বললেন, ৪০ বছর।’(সহিহ মুসলিম, হাদিস- ৫১২)।স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে হযরত ইয়াকূব (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। তার প্রায় হাজার বছর পরে দাঊদ (আ.) তার পুনর্নির্মাণ শুরু করেন এবং সুলায়মান (আ.)-এর হাতে তা সমাপ্ত হয়। কিন্তু মূল নির্মাণ কাজ শেষ হলেও আনুসঙ্গিক কিছু কাজ তখনও বাকী ছিল। এমন সময় হযরত সুলায়মানের মৃত্যুকাল ঘনিয়ে এল। এই কাজগুলি অবাধ্যতাপ্রবণ জিনদের উপরে ন্যস্ত ছিল।
তারা হযরত সুলায়মানের ভয়ে কাজ করত। তারা তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানতে পারলে কাজ ফেলে রেখে পালাতো। ফলে নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তখন সুলায়মান (আ.) আল্লাহর নির্দেশে মৃত্যুর জন্যে প্রস্ত্তত হয়ে তাঁর কাঁচ নির্মিত মেহরাবে প্রবেশ করলেন। যাতে বাইরে থেকে ভিতরে সবকিছু দেখা যায়। তিনি বিধানানুযায়ী ইবাদতের উদ্দেশ্যে লাঠিতে ভর করে দাঁড়িয়ে গেলেন, যাতে রূহ বেরিয়ে যাবার পরেও লাঠিতে ভর দিয়ে দেহ স্বস্থানে দাঁড়িয়ে থাকে। সেটাই হল। আল্লাহর হুকুমে তাঁর দেহ উক্ত লাঠিতে ভর করে এক বছর দাঁড়িয়ে থাকল। দেহ পচলো না, খসলো না বা পড়ে গেল না। জিনেরা ভয়ে কাছে যায়নি। ফলে তারা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে কাজ শেষ করে ফেলল। এভাবে কাজ সমাপ্ত হ’লে আল্লাহর হুকুমে কিছু উই পোকার সাহায্যে লাঠি ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং সুলায়মান (আ)-এর লাশ মাটিতে পড়ে যায়। উক্ত কথাগুলি আল্লাহ বলেন নিম্নোক্ত ভাবে-স‘অতঃপর যখন আমরা সুলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন ঘুনপোকাই জিনদেরকে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল। সুলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। অতঃপর যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে, যদি তারা অদৃশ্য বিষয় জানতো, তাহ’লে তারা (মসজিদ নির্মাণের) এই হাড়ভাঙ্গা খাটুনির আযাবের মধ্যে আবদ্ধ থাকতো না।’ (সুরা সাবা আয়াত-১৪)।
আল-আকসার, মসজিদের অভ্যন্তর ভাগ । |
সুলায়মানের মৃত্যুর এই ঘটনা আংশিক কুরআনের আলোচ্য আয়াতের এবং আংশিক ইবনে আববাস (রা) প্রমুখ থেকে বর্ণিত হয়েছে (ইবনে কাসির)। ৫৮৬ খ্রিষ্টপূর্বে ব্যবিলনের সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচ্যাদনেজার সুলায়মান (আ) এর তৈরি স্থাপত্যগুলি ধ্বংস করেন।মুসলমানরা বিশ্বাস করে, নির্মাণের পর থেকে এটি ঈসা (আ.) (খ্রিস্টধর্মে যিশু) সহ অনেক নবীর দ্বারা মসজিদের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানরা প্রায় ১৬ মাস মসজিদুল আকসার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করেন। পরবর্তী সময়ে পবিত্র কাবা মুসলিম উম্মাহর জন্য কেবলা হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।হযরত আউফ ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাবুক যুদ্ধের সময় আল-আকসা মসজিদ বিজয়ের সুসংবাদ দেন। রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ১৫ হিজরি মোতাবেক ৬৩৬ সালে মুসলিম বাহিনী আল-আকসা মসজিদ বিজয় করে। হযরত আবু উবায়দাহ আমের ইবনুল জাররাহ (রা.) এই বিজয়ের নেতৃত্ব দেন। কোনো সংঘাত ও রক্তপাত ছাড়াই এই বিজয় অর্জিত হয়। ঐতিহাসিক তাবারি বলেন, খ্রিস্টান শাসকরা যখন শুনল আবু উবায়দাহর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী আল-আকসা মসজিদ অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে তখন তারা প্রতিরোধের সাহস হারিয়ে ফেলে এবং আবু উবায়দাহকে সন্ধির প্রস্তাব দেয়। আবু উবায়দাহ তা গ্রহণ করেন।’ হযরত ওমর (রা.)-এর আল-আকসা মসজিদে আগমনের মধ্য দিয়ে খ্রিস্টান শাসকদের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন হয়।
আল আকসা মসজিদের পূর্ব পাশের বিস্তৃত দৃশ্য |
বর্তমানে আল-আকসা মসজিদ বলতে বোঝাায় আল-আকসা মসজিদ , মারওয়ানি মসজিদ ও বুরাক মসজিদ ৩ টির এর সমন্বয় যা হারাম আল শরীফ এর চার দেয়াল এর মধ্যেই অবস্থিত। খলিফা ওমর (রা) বর্তমান মসজিদের স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।পরবর্তীতে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের যুগে মসজিদটি পুনর্নির্মিত ও সম্প্রসারিত হয়। এই সংস্কার ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে তার পুত্র খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের শাসনামলে শেষ হয়।উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক আদেশে ৬৮৯ থেকে ৬৯১ সালের মধ্যে কুব্বাত আস সাখরা(ডোম অব দ্য রক ) নির্মাণ করা হয়।কুব্বাত আস সাখরা বা ডোম অফ দ্য রক কোন মসজিদ বা এবাদতখানা নয়।টেম্পল মাউন্টেনের উপর অবস্থিত গম্বুজটিতে সাখরা নামের একটি পাথর রয়েছে৷ জনশ্রুতি আছে এ পাথরের ওপর ভর রেখে হযরত হযরত মুহাম্মদ (সা.) উর্ধ্বারোহণ করেন মিরাজের রাতে।
কুব্বাত আস সাখরা |
৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ভূমিকম্পে মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর এটি পুনর্নির্মাণ করেন। পরে তার উত্তরসুরি আল মাহদি এর পুনর্নির্মাণ করেন। ১০৩৩ খ্রিষ্টাব্দে আরেকটি ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফাতেমীয় খলিফা আলি আজ-জাহির পুনরায় মসজিদটি নির্মাণ করেন যা বর্তমান অবধি টিকে রয়েছে।বিভিন্ন শাসকের সময় মসজিদটিতে অতিরিক্ত অংশ যোগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গম্বুজ, আঙ্গিনা, মিম্বর, মিহরাব, অভ্যন্তরীণ কাঠামো।উমাইয়া, আব্বাসি ও সেলজুক শাসনামলে আল-আকসা মসজিদ ও ফিলিস্তিনের ওপর মুসলিম আধিপত্য অক্ষুণ্ন থাকে। ১০৯৬ সালে ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের হাতে ফিলিস্তিনের পতন হয় এবং তারা সাত দশক আল-আকসা মসজিদ দখল করে রাখে। ক্রুসেডাররা আল-আকসা মসজিদ দখলের পর ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করে। খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নেয়ার পর আল আকসা মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গীর্জায় পরিণত করে। তারা মসজিদের গম্বুজের উপরে ক্রুশ স্থাপন করে এর নাম রাখে-সুলাইমানি উপাসনালয়। এবং একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত কুব্বাত আস সাখরাকে গির্জা হিসেবে ব্যবহার করত।২৫ রমজান ৫৮৩ হিজরি মোতাবেক ১১৮৭ সালে মিসরের শাসক সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি আল-আকসা মসজিদ পুনরুদ্ধার করেন। সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম পুনরায় জয় করার পর মসজিদ হিসেবে এর ব্যবহার পুনরায় শুরু হয়।গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম অধিকার করার পর পূর্বের নকশা অনুযায়ী আল আকসা মসজিদের পুণর্নির্মাণ করেন। মসজিদটিতে ২টি বড় এবং ১০টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। এ মসজিদ নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বর্ণ, সিসা বা লিড এবং মার্বেলসহ বিভিন্ন প্রকার পাথর ব্যবহৃত হয়েছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির আয়তন সাড়ে ৩ হাজার বর্গমিটার। এ মসজিদে ৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।
সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবির মৃত্যুর পর আল-আকসা মসজিদ আবারও মুসলিমদের হাতছাড়া হয়। তবে ১১ বছর পর সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুব ১২৪৪ সালে তা পুনরুদ্ধার করেন। ১২৪৪ সাল থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত আল-আকসা মসজিদ মুসলিম শাসকদের অধীনেই থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের উসমানীয় সাম্রাজ্য পরাজিত হলে ১৯১৭ সালে আল-আকসা মসজিদ ব্রিটিশদের শাসনাধীন হয়। ব্রিটিশরা বেলফোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে পবিত্র ভূমিকে ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়।আল-আকসা মসজিদ আইয়ুবী, মামলুক, উসমানীয়, সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল ও জর্ডানের তত্ত্বাবধানে নানাবিধ সংস্কার করা হয়। ১৯৬৭ সালে জর্ডান ও ইসরাইল এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, কম্পাউন্ডের অভ্যন্তরের সব কিছু দেখভাল করবে ওয়াকফ বা ইসলামি ট্রাস্ট। আর ইসরাইল এটির বাইরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। অমুসলিমরা শুধু পরিদর্শনে যেতে পারবেন। তবে সেখানে প্রার্থনা করতে পারবেন না। প্রার্থনা করার অনুমতি কেবল মুসলিমদের।এটির সাথে একই প্রাঙ্গণে কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা ও কুব্বাত আন নবী নামক স্থাপনাগুলো অবস্থিত।স্থাপনাগুলোসহ এই পুরো স্থানটিকে হারাম আল শরিফ বলা হয়। এই জায়গাটি ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি - এই তিন ধর্মের কাছেই পবিত্র স্থান, এবং একে নিয়ে শত শত বছর ধরেই টানাপোড়েন চলছে। মুসলিমদের কাছে এটি হারাম আল-শরিফ এবং ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থান।
মসজিদের আল-কাস নামক অজু স্থান। |
আল-আকসা ও টেম্পল মাউন্ট এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে একটি জর্ডনী-ফিলিস্তিনী ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখানে যে মেটাল ডিটেক্টর বসিয়েছে - এটিকে ফিলিস্তিনিরা এখানে ওয়াকফের কর্তৃত্বের লংঘন এবং ইসরায়েলি দখলদারির দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করছেন।ইহুদিদের কাছে হারাম আল-শরিফ এলাকাটির নাম টেম্পল মাউন্ট বা ঈশ্বরের ঘর এবং এটিই তাদের ধর্মে সবচাইতে পবিত্র স্থান। কারণ ইহুদিরা বিশ্বাস করে, এখানেই নবি আব্রাহাম তার পুত্র ইসমাইলকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। এখানেই ছিল ইহুদিদের প্রথম ও দ্বিতীয় পবিত্র মন্দির- যা ৭০ খ্রীষ্টাব্দে রোমান বাহিনী ধ্বংস করে দেয়। এখানে একটি খ্রীষ্টান ব্যাসিলিকাও ছিল যা একই সাথে ধ্বংস হয়।সেই মন্দিরের শুধুমাত্র পশ্চিম দিকের দেয়ালটিই এখনো টিকে আছে, এবং এটি এখন ইহুদিদের ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান।যিশু খ্রিস্টের স্মৃতিবিজড়িত গির্জার কারণে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছেও পবিত্রতার দিক থেকে সমান গুরুত্বপূর্ণ জেরুজালেম।খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, এখানেই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল যিশুকে।আল আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩৫ একর জমির ওপর নির্মিত। বর্তমানে ইসরাইল ঐতিহাসিক মসজিদটি দখল করে রেখেছে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরাইল রাষ্ট্র জন্ম লাভের পর মসজিদটি মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে যায়।১৯৬৭ সালে ইসরাইল পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যাকাসহ পুরনো শহর পূর্ব জেরুজালেম দখল করার পর পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ একখণ্ড জমি হচ্ছে এই মসজিদ কমপ্লেক্স। যদিও ইসরাইল সৃষ্টির বহু আগ থেকেই জেরুজালেম নিয়ে সঙ্ঘাত চলছে। ১৯৬৯ সালে তারা একবার আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগও করেছিল।১৯৭৯ সাল থেকে আল-আকসা মসজিদ মুক্তির লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের শুক্রবারে ‘আল-কুদস’ দিবস পালন করে। তখন থেকে সারা বিশ্বে দিনটি মুসলিম মুক্তির প্রতীকরূপে পালিত হয়।মসজিদ আল আকসাকে মুসলমানদের পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর পাস করা এক প্রস্তাবনায় বলা হয়, জেরুসালেমের আল আকসা মসজিদের ওপর ইসরাইলের কোনো অধিকার নেই,
আল আকসা মসজিদ ফিলিস্তিনের ছোট্ট একটি অংশ; কিন্তু এটি ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিরোধের প্রতীক। মসজিদ মুসলমানদের কাছে অতি পবিত্র স্থান এবং বিশেষ করে আল আকসা মসজিদ। এমনকি আল আকসার পবিত্রতা ক্ষুন্ন করার ইহুদি তৎপরতার বিরুদ্ধে সেখানকার খ্রিস্টানরাও প্রতিবাদ জানায়; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই স্থাপনার মর্যাদা ক্ষুন্ন করার চেষ্টাকে মুসলিমরা তাদের প্রতি ইসরাইল সরকারের অব্যাহত অবিচার ও নিপীড়নের প্রতীক বলে বিবেচনা করেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন