ইফতারের সময় ,ফযিলত ও ইফতারের দোয়া


ইফতার হচ্ছে রমযান মাসে মুসলিমগণ সারাদিন রোজা রাখার পর সূর্যাস্তের সময় যে খাবার গ্রহণ করেইফতার আরবি শব্দ, যার অর্থ রোজা ভঙ্গ করা বা সমাপ্ত করা।ইসলামি পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু খেয়ে বা পান করে রোজা সমাপ্ত করার নামই ইফতার। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ- একটি হলো তার ইফতারের সময়, অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়।' (বোখারি ও মুসলিম)।রোজা রেখে ইফতারের ওপর অশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।সময়মতো ইফতার করার মধ্যেও রয়েছে অশেষ সওয়াব ও ফযিলত। রাসুল (সা.)   এরশাদ করেন, তোমরা ইফতারের সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে নাও। এতটুকু বিলম্ব করো না।তিরমিজি শরীফে বর্ণিত আছে যে, আমি ওই ব্যক্তিকে সর্বাধিক ভালোবাসি যে ইফতারের সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে নেয়।সূর্যাস্তের পর ইফতারে বিলম্ব করা অনুচিত। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সাবধানতার জন্য কিছু সময় বিলম্ব করা উত্তম।সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা সুন্নত এবং সূর্যাস্তের আগে ইফতারির সামগ্রী সামনে নিয়ে বসে থাকা মোস্তাহাব।ইফতারের সময় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, সুবহে সাদিক হতে রাত অবধি রোজা পূর্ণ করো। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৭) অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোজা শেষ করে ইফতার করা। রাত (শুরু) হওয়ার সাথে সাথেই (সূর্যাস্তের পর পরই) ইফতারী করে নাও, দেরী করো না। হাদীসেও রোযা তাড়াতাড়ি ইফতারী করার তাকীদ ও ফযিলতের কথা এসেছে। আর দ্বিতীয় নির্দেশ হল, ‘বিসাল’ (একটানা রোযা) করো না। অর্থাৎ, একদিন রোযা রেখে ইফতারী না করে (এবং সেহরীও না খেয়ে) পরের দিনও রোযা রেখো না। নবী করীম (সাঃ)ও এ রোযা রাখতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।ইফতার সম্পর্কে রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে অধিকতর প্রিয় তারাই, যারা আগেভাগে ইফতার করে। (তিরমিজি শরিফ)সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেনমানুষ কল্যাণের সঙ্গে থাকবে তত কাল, যত কাল তারা শিগগির ইফতার করবে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)।
ইফতারের সময় যে দোয়া পড়তে হয়-
হযরত মু’আয ইবনে যুহরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.)যখন ইফতার করতেন তখন এ দোআ পাঠ করতেন- “আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওআ’লা রিজক্বিকা আফত্বারতু” (হে আল্লাহ! আমি আপনারই জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি)’ -(ইমাম আবু দাউদ মুরসাল হিসেবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)। ইফতারের আগ মুহূর্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম সময়।রাসূলে পাক (সা.) যখন ইফতার করতেনতখন বলতেনআমার তৃষ্ণা নিবৃত্তআমার শিরা উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ পাক পরওয়ারদেগারের পুরস্কার নির্ধারিত হয়ে গেছে। (দাউদ শরীফ)।হুজুর পাক (সা.) বলেছেন, ইফতার করার সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয়ে যায় না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, দুই. ন্যায়বিচারক বাদশাহের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। (আহমদ)।

রাসুল (সা.)যা দিয়ে ইফতার করতেন-
রাসুল (সা.)কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর, অর্থাৎ খোরমা দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) নামাজের আগে ইফতার করতেন কয়েকটি টাটকা খেজুর দিয়ে। যদি তিনি টাটকা খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনা খেজুর (খুরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। আর তাও যদি না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি)হযরত সালমান ইবনে আমের আদ-দাব্বি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে তখন তার খুরমা খেজুর দিয়ে ইফতার করা উচিত। তবে যদি সে খুরমা খেজুর না পায়, তাহলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ, পানি পবিত্র। (আবু দাউদ, তিরমিজি)বিদায় হজের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছিলেন, ‘দাস-দাসীদের প্রতি সর্বদা সদ্ব্যবহার করবে। তাদের ওপর কোনোরকম অত্যাচার করবে না। তোমরা যা খাবে তাদেরও তাই খাওয়াবে; যা পরবে তাই পরাবে। ভুলে যেও না তারাও তোমাদেরই মতো মানুষ।’ অতএব আমরা যখন ঘরে ইফতার করি তখন যেন বাসার গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নিয়ে পরিবারের সবাই একসঙ্গে ইফতার করি। কোনো রোজাদারকে ইফতার করানো অত্যধিক ফজিলতের কারণ।
ইফতার করানোর ফজিলত-
সময়মত ইফতার করা যেমন ফজিলতের তেমনি রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলতও অনেক। হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল(সা) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে অথবা কোন যোদ্ধাকে জিহাদের সামগ্রী দ্বারা সজ্জিত করে দেবে তার জন্যও তার অনুরূপ সাওয়াব রয়েছে’ -(বায়হাকী ও শারহুস সুন্নাহ্)। হযরত সালমান ফারসী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে, তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমরা সবাই রোজাদারকে ইফতার করাতে সক্ষম নই।রাসুল (সা.) বললেন, পানি মিশ্রিত এক চুমুক দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তাকে এ পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তভাবে খানা খাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজ (হাউজে কাওসার) হতে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বে তৃষ্ণার্ত হবে না।’(বায়হাকী ওয়াবুল ঈমান, মেশকাত)।
গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল