কুরআনে আলোচিত আসহাবে কাহফের কাহিনি
ছবিঃ প্রতীকী
আসহাবে কাহাফ অর্থ গুহাবাসী।আসহাবে কাহাফকে পাশ্চাত্যে Seven sleepers of Ephesus অর্থাৎ এফিসাসের সুপ্ত সপ্তক আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয়। হযরত ঈসা (আ.)-এর ঊর্ধ্বলোকে গমনের পরবর্তী সময়ে আসহাবে কাহফের ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটি তৎকালীন রোম সাম্রাজ্যের কোনো এক স্থানে সংঘটিত হয়েছিল। রোমের ক্ষমতায় তখন অধিষ্ঠিত ছিলেন একজন অত্যাচারী শাসক। তাফসিরে ইবনে কাসিরে উল্লেখ আছে, যে অত্যাচারী শাসকের তাড়ায় যুবকরা পালিয়েছিল, তার নাম ছিল দাকিয়ুস। তাদের সঙ্গে একটি কুকুর ছিল। কুকুরের নাম ছিল কিতমির।হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)বলেছেন, গুহাবাসীর সংখ্যা ছিল সাত জন। কোনো কোনো বর্ণনা মতে, তাদের নাম ছিল—মুকসালমিনা, তামলিখা, মারতুনিস, সানুনিস, সারিনুনিস, জু-নিওয়াস, কাস্তিতিউনিস।সুরা কাহাফের ৯-২৬ নং আয়াতে আসহাবে কাহাফের ঘটনা উল্লেখ রয়েছে ।কুরআনের সুরা কাহাফ মক্কাতে অবতীর্ণ হয়, অর্থাৎ তখনও হযরত মুহাম্মাদ (সা) ও তাঁর অনুসারীরা হিজরত করে মদিনায় চলে যাননি। কিন্তু মক্কাতে তখন তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে দেখে কাফের কুরাইশরা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। যেহেতু নবী (সা) এমন ধর্ম প্রচার করে চলেছিলেন, যেখানে আগের নবীদের সাথে ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনুসৃত নবীরা মিলে যায়, তাই কুরাইশ নেতারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা ইহুদি র্যা বাইদের(আলেম) সাথে পরামর্শ করবে। নাযার ইবনে হারিস এবং উকবা ইবনে মুয়িত নামের দুজনকে তারা মদিনার ইহুদি র্যা বাইদের কাছে প্রেরণ করে এই বলে যে, তারা যেন মুহাম্মাদ (সা.) এর ব্যাপারে তাদের মতামত জানায়।তারা মদিনা পৌঁছালে ইহুদি আলেমরা তাদের কথা শুনে মীমাংসা করার জন্য একটি উপায় বাতলে দেন, রসূলুল্লাহ্ সম্পর্কে তারা কি বলে, জানার জন্যে। ইহুদি পন্ডিতরা তাদেরকে বলে দেয় যে, তোমরা তাকে তিনটি প্রশ্ন কর। তিনি এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে বুঝে নেবে যে, তিনি আল্লাহ্র রসূল। অন্যথায় বুঝবে, তিনি একজন বাগাড়ম্বরকারী রসূল নন ( নাউযুবিল্লাহ)।
এক. আমরা আপনার কাছে (মুহাম্মাদ সাঃ)প্রথম যুগের সেই যুবকদের সম্পর্কে জানতে চাই যাদের খোঁজ পাওয়া যায় নি। আপনি তাদের অবস্থা আমাদের কাছে বর্ণনা করুন। কেননা তাদের বিষয়টা নিতান্ত আশ্চর্যজনক ও রহস্যেঘেরা।
দুই. তাঁকে সে ব্যক্তির অবস্থা জিজ্ঞেস কর, যে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম এবং সারা বিশ্ব সফর করেছিল।তাঁর ঘটনা কি?
তিন. তাঁকে রূহু সম্পর্কে প্রশ্ন কর যে, এটা কি?
এই তিনটি প্রশ্নের উত্তরসহ মহান আল্লাহ তাআ’লা সূরা কাহাফ অবতীর্ণ করেন।
আল্লাহ বলেন, তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর? (সুরা কাহাফ আয়াত-৯)।
এক নং প্রশ্ন হলো আসহাবে কাহাফ নিয়ে।অর্থাৎ, এই একটাই বৃহৎ ও বিস্ময়কর নিদর্শন নয়, বরং আমার প্রতিটি নিদর্শনই বিস্ময়কর। আসমান ও যমীনের এই সৃষ্টি, তার ব্যবস্থাপনা, সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রকে আয়ত্তাধীন করা এবং রাত ও দিনের পরিবর্তন ও অন্যান্য অসংখ্য নিদর্শন কি কম বিস্ময়কর? কাহাফ সেই গুহাকে বলা হয় যা পাহাড়ে থাকে। রাকীম কারো নিকট সেই গ্রামের নাম, যেখান থেকে এই যুবকরা গুহায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ বলেছেন, সেই পাহাড়ের নাম, যাতে ঐ গুহা ছিল।আসহাবে কাহাফ ও আসহাবে রকীম একই দলের দুই নাম, না তারা আলাদা দু’টি দল? এ মতভেদ নিয়েই উপরোক্ত মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। যদিও কোন সহীহ হাদীসে এ সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট বর্ণনা নেই, কিন্তু ইমাম বুখারী ‘সহীহ’ নামক গ্রন্থে আসহাবে কাহাফ ও আসহাবে রকীমের দুটি আলাদা আলাদা শিরোনাম রেখেছেন। ইমাম বুখারীর এ কাজ থেকে বোঝা যায় যে, তার মতে আসহাবে কাহাফ ও আসহাবে রকীম পৃথক পৃথক দু’টি দল। হাফেজ ইবনে হাজার ও অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে কুরআনের পূর্বাপর বর্ণনা অনুযায়ী আসহাবে কাহাফ ও আসহাবে রকীম একই দল।কাহাফ এর অর্থ বিস্তীর্ণ পার্বত্য গুহা। বিস্তীর্ণ না হলে তাকে গার বলা হয়। (কুরতুবী)।রাকিম এর শাব্দিক অর্থ লিখিত বস্তু। সাঈদ ইবন জুবাইর বলেন, এর অর্থ একটি লিখিত ফলক। সমসাময়িক বাদশাহ এই ফলকে আসহাবে কাহাফের নাম লিপিবদ্ধ করে গুহার প্রবেশপথে বুলিয়ে রেখেছিল। এ কারণেই আসহাবে কাহাফকে রকীমও বলা হয়। মুজাহিদ বলেন, রকীম সে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত উপত্যকার নাম, যাতে আসহাবে কাহাফের গুহা ছিল।ইবন আব্বাস বলেন, সে পাহাড়টিই রকীম। ইকরিমা বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা) কে বলতে শুনেছি যে, রকীম কোন লিখিত ফলকের নাম না কি জনবসতির নাম, তা আমার জানা নেই।ক'ব আহবার, ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেবাহ, ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রকীম রোমে অবস্থিত আয়লা অর্থাৎ আকাবার নিকটবর্তী একটি শহরের নাম। (ইবন কাসীর)।
আসহাবে কাহফের স্থান ও কাল নির্ণয়ে বিভিন্ন মত এসেছে। এগুলোর কোনটি যে সঠিক সে ব্যাপারে সঠিক কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। আলেমগণ এ ব্যাপারে দুটি অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তাদের একদলের মত হলো, আমাদেরকে শুধু এ ঘটনার শুদ্ধ হওয়া ও তা থেকে শিক্ষা নেয়ার উপরই প্রচেষ্টা চালানো উচিত। তাদের স্থান ও কাল নির্ধারনে ব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্য একদল মুফাসসির ও ঐতিহাসিক এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত পেশ করার মাধ্যমে কাহিনীটি বোঝার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। কুরআন মজীদে উল্লেখ রয়েছে তাদের ঘটনা তবে গুহার অবস্থান উল্লেখ করা হয়নি। কেউ কেউ বলেন যে, এটি ইফিসাস, তুরস্ক; অন্যরা বলেন, এটি জর্ডানের আম্মানের দক্ষিণ রাজী গ্রামে সপ্তম ঘুমের গুহা,চিনের উইঘুর মুসলমানরাও তিউযুকজামকে নির্দেশ করে, তুর্ন হল গুহাটির অবস্থান, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, কুরআনের বর্ণনার সাথে এই স্থানটি মিল রয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছিল প্রাচীন গ্রিক শহর আনাতোলিয়া বা ইফিসাসে। কাছেই ছিল গ্রিক দেবী আরটেমিসের বিখ্যাত মন্দির।অধিকাংশের মতে, আসহাবে কাহফের ঘটনাটি ঘটে আফসোস নগরীতে।ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় ওই জালিম শাসকের নাম দাকিয়ুস উল্লেখ করা হয়েছে। আর গুহায় আত্মগোপনের আগে যুবকরা যে শহরে বাস করতেন, তার নাম আফসোস বলা হয়েছে।এটি এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত রোমকদের সর্ববৃহৎ নগরী ছিল। এর ধ্বংসাবশেষ তুরস্কের ইজমির (স্মার্না) শহর থেকে ২০-২৫ মাইল দক্ষিণে পাওয়া যায়।হাফেয ইবন কাসীর (রাহ) তাঁর তাফসীরে এ সাতজন যুবকের কালকে ঈসা (আ)এর পূর্বেকার ঘটনা বলে মত দিয়েছেন। ইহুদিগণ কর্তৃক এ ঘটনাটিকে বেশী প্রাধান্য দেয়া এবং মক্কার মুশরিকদেরকে এ বিষয়টি নিয়ে রাসুল (সা)কে প্রশ্ন করতে শিখিয়ে দেয়াকে তিনি তাঁর মতের সপক্ষে দলিল হিসেবে পেশ করেন।
কিন্তু অধিকাংশ মুফাসসির ও ঐতিহাসিকগণ এ ঘটনাটিকে ঈসা (আ) পরবর্তী ঘটনা বলে বর্ণনা করে থাকেন। তাদের মতে, ঈসা (আ) এর পর যখন তাঁর দাওয়াত রোম সামাজ্যে পৌঁছতে শুরু করে তখন এ শহরের কয়েকজন যুবকও শিরক থেকে তাওবা করে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থে তাদের যে বর্ণনা এসেছে তা সংক্ষেপ করলে নিম্নরূপ দাঁড়ায়, তারা ছিলেন সাতজন যুবক। তাদের ধর্মান্তরের কথা শুনে তৎকালীন রাজা তাদেরকে নিজের কাছে ডেকে পাঠান।তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের ধর্ম কি? তারা জানতেন, এ রাজা ঈসার অনুসারীদের ঘোর বিরোধী। কিন্তু তারা কোন প্রকার ভীত না হয়ে পরিষ্কার বলে দেন, আমাদের রব তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব। তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদকে আমরা ডাকি না। যদি আমরা এমনটি করি তাহলে অনেক বড় গুনাহ করবো। রাজা প্রথমে ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন, তোমাদের মুখ বন্ধ করো, নয়তো আমি এখনই তোমাদের হত্যা করার ব্যবস্থা করবো।তারপর কিছুক্ষণ থেমে থেকে বললেন, তোমরা এখনো শিশু। তাই তোমাদের তিনদিন সময় দিলাম। এরমধ্যে যদি তোমরা নিজেদের মত বদলে ফেলো এবং জাতির ধর্মের দিকে ফিরে আসো তাহলে তো ভাল, নয়তো তোমাদের শিরশ্ছেদ করা হবে। এ তিন দিন অবকাশের সুযোগে এ সাতজন যুবক শহর ত্যাগ করেন। তারা কোন গুহায় লুকাবার জন্য পাহাড়ের পথ ধরেন। পথে একটি কুকুর তাদের সাথে চলতে থাকে।তাঁরা কুকুরটাকে তাদের পিছু নেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য বহু চেষ্টা করে।কিন্তু সে কিছুতেই তাদের সঙ্গ ত্যাগ করেনি। শেষে একটি বড় গভীর বিস্তৃত গুহাকে ভালো আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়ে তাঁরা এর মধ্যে লুকিয়ে পড়েন। কুকুরটি গুহার মুখে বসে পড়ে। দারুন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত থাকার কারণে তাঁরা সবাই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন। কয়েকশত বছর পর তাঁরা জেগে উঠেন। তখন ছিল অন্য এক রাজার শাসনামল। রোম সাম্রাজ্য তখন খিস্ট্র ধর্ম গ্ৰহণ করেছিল এবং আফসোস শহরের লোকেরাও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেছিল।এটা ছিল এমন এক সময় যখন রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে মৃত্যু পরের জীবন এবং কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে জমায়েত ও হিসেব নিকেশ হওয়া সম্পর্কে প্ৰচণ্ড মতবিরোধ চলছিল। আখেরাত অস্বীকারের বীজ লোকদের মন থেকে কিভাবে নির্মূল করা যায় এ ব্যাপারটা নিয়ে রাজা নিজে বেশ চিন্তিত ছিলেন। একদিন তিনি আল্লাহর কাছে দো'আ করেন যেন তিনি এমন কোন নির্দশন দেখিয়ে দেন যার মাধ্যমে লোকেরা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে। ঘটনাক্রমে ঠিক এ সময়েই এ যুবকরা ঘুম থেকে জেগে উঠেন। জেগে উঠেই তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করেন, আমরা কতক্ষণ ঘুমিয়েছি?
কেউ বলেন একদিন, কেউ বলেন দিনের কিছু অংশ। তারপর আবার একথা বলে সবাই নীরব হয়ে যান যে এ ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন। এরপর তাঁরা নিজেদের একজন সহযোগীকে রূপার কয়েকটি মুদ্রা দিয়ে খাবার আনার জন্য শহরে পাঠান। তারা ভয় করছিলেন, লোকেরা আমাদের ঠিকানা জানতে পারলে আমাদের ধরে নিয়ে যাবে এবং মূর্তি পূজা করার জন্য আমাদের বাধ্য করবে। কিন্তু লোকটি শহরে পৌঁছে সবকিছু বদলে গেছে দেখে অবাক হয়ে যান। একটি দোকানে গিয়ে তিনি কিছু রুটি কিনেন এবং দোকানদারকে একটি মুদ্রা দেন। এ মুদ্রার গায়ে অনেক পুরাতন দিনের সম্রাটের ছবি ছাপানো ছিল। দোকানদার এ মুদ্রা দেখে অবাক হয়ে যায়। সে জিজ্ঞেস করে, এ মুদ্রা কোথায় পেলে? লোকটি বলে, এ আমার নিজের টাকা, অন্য কোথাও থেকে নিয়ে আসিনি। এ নিয়ে দু'জনের মধ্যে বেশ কথা কাটাকাটি হয়। লোকদের ভীড় জমে উঠে। এমন কি শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নগর কোতোয়ালের কাছে পৌছে যায়। কোতোয়াল বলেন, এ গুপ্ত ধন যেখান থেকে এনেছো সেই জায়গাটা কোথায় আমাকে বলে। সে বলেন, কিসের গুপ্তধন? এ আমার নিজের টাকা। কোন গুপ্তধনের কথা আমার জানা নেই।কোতোয়াল বলেন, তোমার একথা মেনে নেয়া যায় না। কারণ তুমি যে মুদ্রা এনেছো এতো কয়েক শো বছরের পুরনো। তুমি তো সবেমাত্র যুবক, আমাদের বুড়োরাও এ মুদ্রা দেখেনি। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন রহস্য আছে। লোকটি যখন শোনেন অত্যাচারী জালেম শাসক মারা গেছে বহুযুগ আগে তখন তিনি বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোন কথাই বলতে পারেন না। তারপর আস্তে আস্তে বলেন, এ তো মাত্ৰ কালই আমি এবং আমার ছয়জন সাথী এ শহর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম এবং জালেম বাদশার জুলুম থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। লোকটির একথা শুনে কোতোয়ালও অবাক হয়ে যান।তিনি তাকে নিয়ে যেখানে তাঁর কথা মতো তাঁরা লুকিয়ে আছেন সেই গুহার দিকে চলেন। বিপুল সংখ্যক জনতাও তাদের সাথী হয়ে যায়। তারা যে যথার্থই অনেক আগের সম্রাটের আমলের লোক সেখানে পৌঁছে। এ ব্যাপারটি পুরোপুরি প্রমাণিত হয়ে যায়। এ ঘটনার খবর তৎকালীন সম্রাটের কাছেও পাঠানো হয়। তিনি নিজে এসে তাদের সাথে দেখা করেন। তারপর হঠাৎ তারা সাতজন গুহার মধ্যে গিয়ে শুয়ে পড়েন এবং তাদের মৃত্যু ঘটে। এ সুস্পষ্ট নির্দশন দেখে লোকেরা যথার্থই মৃত্যুর পরে জীবন আছে বলে বিশ্বাস করে। এ ঘটনার পর সম্রাটের নির্দেশে গুহায় একটি ইবাদাতখানা নির্মাণ করা হয়।(বিস্তারিত কুরতুবী; বাগভী; ইবন কাসীর; তাফসীর ও আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ- ২/৫৭০)
আসহাবে কাহাফের এক ব্যক্তি প্রশ্ন তুলল যে, তোমরা কতকাল নিদ্রামগ্ন রয়েছ? কেউ কেউ উত্তর দিল: একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ। কেননা, তারা সকাল বেলায় গুহায় প্রবেশ করেছিল এবং জাগরণের সময়টি ছিল বিকাল। তাই মনে করল যে, এটা সেই দিন যেদিন আমরা গুহায় প্রবেশ করেছিলাম। (ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর) অর্থাৎ, যেভাবে আমি তাদেরকে আমার নিজ কুদরতে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলাম, সেইভাবে ৩০৯ বছর পর আমি তাদেরকে উঠালাম এবং এমনভাবে উঠালাম যে, তাদের শারীরিক অবস্থা ঐ রকমই সুস্থ ছিল, যেমন ৩০০ বছর পূর্বে শোয়ার সময় ছিল। এই জন্য আপোসে তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করল। হতে পারে যখন তারা গুহায় প্রবেশ করেছিল, তখন দিনের প্রথম প্রহর ছিল এবং যখন জাগ্রত হয়, তখন দিনের শেষ প্রহর ছিল। এইভাবে তারা মনে করল যে, মনে হয় আমরা একদিন অথবা তার থেকেও কম, দিনের কিছু অংশ এখানে ঘুমিয়ে থেকেছি।দীর্ঘকাল ঘুমিয়ে থাকার কারণে তারা বড়ই দ্বিধা-দন্দ্বে ভুগছিল। পরিশেষে এ বলে এই বিষয়কে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দিল যে, তিনিই সঠিক জানেন কতকাল আমরা এখানে ছিলাম।কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা তাদের গুহায় ৩০০ বছর অবস্থান করল। তোমরা এর সঙ্গে ৯ বছর যোগ করে নেবে।’ ( সুরা কাহাফ, আয়াত - ২৫)।তাদের ঘুমন্ত থাকবার সময় ৩০০ বছর, সাধারণ সৌর হিসেবে। তবে চান্দ্র হিসেবে অতিরিক্ত ৯ বছর ধরলে, সেটি ৩০৯। তৎকালীন চান্দ্র ক্যালেন্ডার ব্যবহারকারীগণ প্রতি একশ সৌর বছরের তিন বছর যোগ করে নিত। কিন্তু সিরিয়ার কাহিনীতে নিশ্চিত করে সময় বলা নেই। কোনো কোনো মতে সেটি ১৮৪ বছর, কোনো কোনো মতে দু’শো বছরের বেশি, কেউ কেউ বলেন ২০৮ বছর। তাদের ঘুমের তারিখগুলি কুরআনে দেওয়া হয়নি; কিন্তু তারা দাকিয়ুস (২৪৯-২৫১ খ্রিস্টাব্দ) নিপীড়নে গুহায় আশ্রয় নেয় এবং দাকিয়ুস মারা যায় ২৫১ সালে।তাঁরা থিওডোসিয়াস(৩৭৮-৩৯৫) বা থিওডোসিয়াস দ্বিতীয় (৪০৮-৪৫০) এর সময় জেগে ওঠেন । হাকিমুল উম্মত হযরত থানভি (রহ.) বয়নুল কোরআনে তাফসিরে হক্কানির বরাত দিয়ে আসহাবে কাহাফের স্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ধৃত করে লিখেছেন, যে অত্যাচারী শাসকের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আসহাবে কাহাফ গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁর সময়কাল ছিল ২৫০ খ্রিস্টাব্দ। এর পর ৩০০ বছর পর্যন্ত তাঁরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের জাগ্রত হওয়ার ঘটনা ঘটে। রাসুল (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এভাবে রাসুল (সা.)-এর জন্মের ২০ বছর পূর্বে আসহাবে কাহাফ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন।
গ্রন্থনায়- মো. আবু রায়হান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন