জগদীশচন্দ্র বসুর ১৩৫০ বছর আগে আল কুরআনে গাছের প্রাণের স্বীকৃতি
মো.আবু রায়হান : আজ থেকে ১০০ বছর আগের মানুষেরা গাছের যে প্রাণ আছে তা জানতো না। বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু গাছের যে প্রাণ আছে তা আবিষ্কার করে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দেন। সর্বপ্রথম তার উদ্ভিদের প্রাণ থাকার ঘোষণায় বিশ্ব চমকে গিয়েছিল। জগদীশ চন্দ্র বসু তিনি ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের কাছে জে. সি. বোস নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি সমকালীন বাঙালী বিজ্ঞানীদের মধ্যে পরীক্ষাভিত্তিক বিজ্ঞান চর্চায় ছিলেন অগ্রগণ্য। বিজ্ঞানে তার অবদানের মধ্যে এক বিরাট অংশ জুড়ে আছে জৈবপদার্থবিদ্যা বা বায়োফিজিক্স।বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র ১৯০২ সালে রচনা করলেন ‘Responses in the living and non living’| ১৯০৬ সালে প্রকাশিত তার দুটি গ্রন্থের মধ্যে তিনি প্রমাণ করলেন উদ্ভিদ বা প্রাণীকে কোনভাবে উত্তেজিত করলে তা থেকে একইরকম সাড়া মেলে। তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন যে প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। মানব জীবনের ন্যায় উদ্ভিদেরও যে জীবন আছে, আছে অনুভূতি শক্তি আছে। গাছের বৃদ্ধি মাপার জন্য তিনি একটি সূক্ষ্ম যন্ত্র তৈরি করেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল এটির বাংলা নাম দেবেন ‘বৃদ্ধিমান’, কিন্তু ইংরেজ সাহেবদের বিকৃত উচ্চারণে তা ‘বারডোয়ান’-এ পরিণত হয় কি না, এজন্য নাম দিলেন ‘ক্রেস্কোগ্রাফ। তিনি তারই আবিষ্কৃত ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেছিলেন উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্ব।১৯১৪ সালে তিনি ইংল্যান্ডে তার গবেষণার প্রমাণের জন্য লজ্জাবতী ও বনচাঁড়াল গাছ নিয়ে যান। এ গাছগুলো সহজে সাড়া দিতে পারে। জগদীশ বাবু অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রয়েল সোসাইটিতেও তার উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করলেন, জীবদেহের মত বৃক্ষেরও প্রাণ আছে, তারাও আঘাতে উত্তেজনায় অণুরণিত হয়। গাছের প্রাণ আছে, এ নিয়ে আজ কাউকে বোঝাবার দরকার হয় না। অথচ এ সত্যটি প্রমাণে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে অনেক সাধনা করতে হয়েছিল।একমাত্র তিনিই প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, জীবদেহের মত বৃক্ষেরও প্রাণ আছে। তার আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত সারা বিশ্বের মানুষের ধারণা ছিল উদ্ভিদ জড় পদার্থ মাত্র। তিনিই লক্ষ্য করেন, উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। মানুষের মতো উদ্ভিদেরও রয়েছে আবেগ ও সুখ-দুঃখের অনুভূতি।
এক গাছের সঙ্গে আরেক গাছের পারস্পরিক যোগাযোগ রয়েছে। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা গবেষণায় এর সত্যতাও পেয়েছেন। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু অনেক আগেই তার অব্যক্ত গ্রন্থের ভূমিকায় সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন- ‘ভিতর ও বাহিরের উত্তেজনায় জীব কখনো কলরব কখনো আর্তনাদ করিয়া থাকে। মানুষ মাতৃক্রোড়ে যে ভাষা শিক্ষা করে সে ভাষাতেই সে আপনার সুখ-দুঃখ জ্ঞাপন করে।' কিন্তু জগদীশ চন্দ্র বসুর ১৩৫০ বছর আগে অবতীর্ণ হওয়া মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় আল-কুরআনে উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তা স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে-তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে, যা কিছু আছে ভুমন্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি পর্বতরাজি বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ। আবার অনেকের উপর অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।" (সুরা হজ্জ আয়াত -১৮)।
এ আয়াতে মানুষসহ জড় পদার্থ এবং গাছ জীবজন্তুরও যে চেতনা আছে সে কথা বলা হয়েছে। কেননা চেতনা, অনুভূতি বা প্রাণ না থাকলে এরা সেজদা করে কিভাবে? অবশ্য তারা যে মানুষের মতো সেজদা করে এমনটি নয়। তাদের সেজদা পদ্ধতি আলাদা। অনেকে সেজদা দ্বারা তাদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের কথা বলেছেন। হাদীসে এসেছে, আবু যার (রা.) বলেন, একদা নবী (সাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তুমি কি জানো, সূর্য কোথায় যায়?" আমি বললাম, 'আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন।' তিনি বললেন, "সূর্য যখন ডুবে যায় তখন আরশের নীচে গিয়ে আল্লাহকে সিজদা করে। তারপর তাকে পূর্বাকাশে উদিত হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু একদিন এমন আসবে, যেদিন বলা হবে, তুমি ফিরে যাও; অর্থাৎ যেখান হতে এসেছ, ওখানেই ফিরে যাও।" (বুখারী, মুসলিম) এভাবেই একজন সাহাবীর কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি স্বপ্নে গাছকে নিজের সাথে সিজদা করতে দেখেছেন। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ১০৫৩নং)।সূরার আর রহমানে বলা হয়েছে যে, 'আর তৃণলতা ও বৃক্ষাদি সিজদা করছে।'( আয়াত -০৬)।আধুনিক বিজ্ঞান বলছে-গাছের প্রাণ আছে, শুধুমাত্র এখানেই শেষ নয়। গাছেরা মানুষের মতোই সংবেদনশীল। ওদের প্রাণ আছে, দুঃখ আছে, কষ্ট আছে, রোগবালাই আছে, ভালোবাসার বন্ধনও আছে, ভাষা আছে। ওদের ভাষায় ওরা কথা বলে। আনন্দ প্রকাশ করে। দুঃখ প্রকাশ করে। ওদের ভাষা আমরা বুঝি না। প্রশ্ন হতে পারে-"তাহলে তাদের হাসি, কথা কান্না আমরা শুনতে পাই না কেন? যাদের শব্দ বিজ্ঞান সমন্ধে ধারণা আছে, তারা জানেন যে-
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী শ্রবণেন্দ্রিয় নির্দিষ্ট কম্পাংকসীমার শব্দ শুনতে সক্ষম।২০ থেকে ২০ হাজার হার্জের কম বা বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ আমাদের কান শুনতে পায় না। এই জন্য গাছের হাসি-কান্না সুখ, দুঃখের কথা আমরা শুনতে পাই না।কুরআনে এই তথ্য এভাবে তুলে ধরা হয়েছে- মহান আল্লাহ বলেন, সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু ওদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। (সূরা ইসরা আয়াত -৪৪)।কুরআনুল কারীমের বহু আয়াত ও বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, বিবেক, চেতনা ও ইচ্ছা থেকে কোন সৃষ্টবস্তুই মুক্ত নয়। সবার মধ্যেই কম-বেশী এগুলো বিদ্যমান আছে। জন্তু-জানোয়ারের বিবেক ও চেতনা সাধারণত অনুভব করা হয়। উদ্ভিদের বিবেক ও চেতনাও সামান্য চিন্তা ও গবেষণা দ্বারা চেনা যায়।প্রিয় নবি (সা.) সৃষ্টির সবকিছুর উপর সমানভাবে মায়া-মমতা দেখিয়েছেন। গাছের প্রতি মায়া ছিল তাঁর অফুরন্ত। নবী (সা.) বলেছেন, বৃক্ষের সঙ্গে আমাদের আন্তরিকভাবে ব্যবহার করা উচিত গাছের পাতা ছিঁড়লে গাছ ব্যথা পায়না এমনটি নয়, গাছেরও জীবন আছে এবং পাতা ছিঁড়লে গাছ কষ্ট পায়।উপরিউক্ত কুরআন হাদিসের বর্ণনা মতে ইসলাম গাছের প্রাণের অস্তিত্বের স্বীকৃতি অনেকই আগেই দিয়েছে যা এতদিন ধরে আলোচনায় আসেনি। কিন্তু জগদীশ চন্দ্র বসু নতুন করে বলার ফলে তা আলোচনায় আসে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন