যারা সরাসরি কুরআন, হাদিস মেনে চলার পক্ষে, আলেম/ইমাম অনুসরণের প্রয়োজন নেই বলে ফতোয়া দেন!




ইসলাম শুধু ধর্ম নয় পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থাও। ইসলামের সুমহান বাণী জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে আল্লাহ পাক এই ধরাধামে অসংখ্য নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন। তাদের মূল কাজ ছিল মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদ তথা তাওহিদের প্রতি আহবান ও পাপাচারের জীবন ত্যাগ করে আল্লাহ মুখী করা। আল কুরআনে নবি-রাসুলদের (আ.) মৌলিক চারটি কাজের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদেরকে তাঁর আয়াতগুলো পড়ে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল।’ (সুরা জুমুআ, আয়াত - ২)হযরত আদম (আ.)থেকে নবুওয়াতের যে মিশনের সূচনা হয়েছি তা শেষ হয়েছিল আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আগমন ও তিরোধানের মধ্য দিয়ে।কেননা তাঁর ওফাতের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে নবী রাসুল আসার সিলসিলা সমাপ্ত হয়ে গেছে। কেয়ামতের আগ পর্যন্ত নতুন করে কোনো নবী রাসুলের আবির্ভাব ঘটবে না।  এজন্য আমাদের রাসুল (সা.) কে খাতামুল আম্বিয়া বলা হয়।  নবী-রাসুলদের দায়িত্ব আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া কিন্তু নবী রাসুলদের অবর্তমানে কারা এই দায়িত্ব পালন করবেন?আম্বিয়াদের রেখে যাওয়া মত ও পথে কারা কান্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কাজ করবেন কুরআন ও হাদিসের বর্ণনাতে তা সুষ্পষ্ট। রাসুলের আনুগত্যের সঙ্গেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁদের আনুগত্যেরও। এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করো, অনুসরণ করো রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা কর্তৃত্বসম্পন্ন (ন্যায়পরায়ণ শাসক ও আলেম) তাঁদের।’ (সুরা  নিসা, আয়াত - ৫৯)।
আল্লাহ তায়ালা যে কোনো শরয়ি সমস্যা নিরসনে তাঁদের দ্বারস্থ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।আল্লাহ এরশাদ করেন  ‘আলেম বা জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করো, যদি তোমরা না জানো।’ (সূরা নাহল, আয়াত -৪৩)।হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এ আয়াতে জ্ঞানী বলতে কুরআন ও ইসলাম সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।’ (তাফসিরে কুরতুবি  ১০ খণ্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা)।আলেমরা  নবীর ওয়ারিশ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আলেমরা নবীদের উত্তরাধিকারী, আর নবীরা দিরহাম বা দিনার অর্থাৎ বৈষয়িক কোনো সম্পদের উত্তরাধিকার রেখে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন ইলম তথা জ্ঞান। অতএব যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করেছে, আলেম হয়েছে, সে অনেক অনেক বেশি মুনাফা লাভ করেছে।’ (আবু দাউদ)।আলেমদের মর্যাদা জানাতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা আলেম, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দেবেন।’ (সূরা মুজাদালা)রাসুল (সা.)বলেন, ‘আমার উম্মতের আলেমগণ বনি ইসরাইলের নবীদের সমতুল্য। আল্লাহ নিজেই মানব বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখছেন, ‘বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে?’ (সূরা জুমার, আয়াত - ৯)
জগতে একজন আলেমের মর্যাদা বোঝাতে গিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছেন। বায়হাকিতে এসেছে, ‘পৃথিবীতে আলেমের অবস্থান আসমানের তারকারাজির মতো। যখন মানুষ তারা দেখতে পায়, তখন সে পথ চলতে পারে। যখন তারকা দেখা যায় না, তখন মানুষ অন্ধকারে পথ হাতড়াতে থাকে। প্রকৃত অবস্থা তো এমনি একজন হক্কানি আলেম সেই সমাজের মানুষের জন্য আলোর দিশারি তাকে অনুসরণে সবাই আলোকিত হতে পারে। 
তাহলে আমাদের দ্বীনি বিষয়ে জানতে এতো লজ্জা কেন? কেউ অপরিচিত জায়গায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করে যে অমুক গ্রামে বা শহরে কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হবে? ওই রাস্তা সম্পর্কে জানা হয়ে গেলে সে পথচলতে শুরু করে। অচেনা জায়গায় কারো গাইডলাইন অনুসরণ না করলে গন্তব্যের দেখা মেলে না বা খুঁজে পেতে কঠিন হয়। নতুন পথ পাড়ি দিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য নিতে হয়, তেমনি দ্বীনের পথে চলতে হলে আলেমদের গাইডলাইন অনুসরণ করতে হয়। তাঁদের কাছে গিয়ে বলতে হবে যে আমাকে পথ দেখিয়ে দিন, আমি কোন পথে চলব। কেননা পথচলার আগে অবশ্যই রাস্তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। অন্যথায় পদে পদে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘...তোমরা যদি না জানো, তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো।’ আল্লাহ তাআলা তাঁদের বানিয়েছেন নিজ একত্ববাদের অন্যতম সাক্ষ্য। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতারা এবং ন্যায়নিষ্ঠ আলেমরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।’ (সুরা : আলে ইমরান আয়াত -১৮)।
হাদিসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আবেদের অপেক্ষা আলেমের মর্যাদা তেমন যেমন তোমাদের সর্বাপেক্ষা ছোট ব্যক্তির তুলনায় আমার মর্যাদা!’ তিরমিজি। আরেক হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আলেমের জন্য সৃষ্টিজগতের সব কিছুই মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত।’ (জামে আস সগির ও কানজুল উম্মাল)।
এক ক্লাসে সবাই যেমন ফাস্ট হতে পারে না তেমনি একই সমাজে বসবাসকারী সবাই আলেম হতে পারে। একটি সমাজে বিভিন্ন পেশার মানুষ বাস করে যেমন আলেম, কুলি দিনমজুর, কামার কুমোর কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, ডাক্তার। এখন প্রশ্ন হলো এই সমাজে বসবাসকারী কৃষক যে জীবনে কুরআন ছুঁয়ে দেখেনি সে সরাসরি কুরআন ও হাদিস থেকে কি আমল করবে? তার সে ক্ষমতা কি আছে? তাহলে তাকে আগে আলেমের কাছে যেতে হবে, শিখতে হবে। তারপর যদি কুরআন হাদিসের পান্ডিত্য অর্জন করে সেটা পরের কথা। যারা সরাসরি কুরআন হাদিস অনুসরণের কথা বলেন, ভালো কথা আপনাদের সেই এলেম আছে। সাধারণ জনগণ কার কাছে যাবে? নিশ্চয়ই একজন আলেমের কাছে। এই সাধারণ বিষয়টি মেনে নিতে কেন আপনাদের এতো গোঁড়ামি ন্যাকামি ও কষ্ট ? যারা নিজেদের সুন্নি, আহলে হাদিস, শিয়া, খারেজি, রাফেজি,মুতাযিলা, আশারিয়া পরিচয় দিচ্ছেন, তারা কুরআনের নিম্নোক্ত বাণীকে অস্বীকার করছেন, আল্লাহ বলেন, তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে (ইসলাম) আঁকড়ে ধর (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।' (সূরা আল ইমরান আয়াত - ১০৩)।
মুসলিমদের আল্লাহ এক, রাসুল এক, ইসলাম এক, আমার প্রথম ও শেষ পরিচয় আমি মুসলিম মুসলিমরা ছাড়া অন্য নামে যারা পরিচয় দেবে তারা হলেন ফেরকাবাজ, বাতিল।রাসুল (সা.) বলেন, এখন আর শয়তান এই বাসনা রাখে না যে, আরব উপদ্বীপের মুসলমানরা তাকে আর উপাসনা করবে। কিন্তু সে এখনো বাসনা রাখে যে, তাদের মধ্যে সে দলাদলি, মতবিরোধ ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দেবে। অতএব, যে লোক দুজন মানুষ অথবা দুদল লোকের মধ্যে বিবাদ-বিসংবাদ বাধিয়ে দেয়, তাদের মাঝে কারও জন্য পীড়াদায়ক এবং উত্তেজনাকর কথা ও সংবাদাদির লেনদেন করে, সে শয়তানের সমগোত্রীয়, চোগলখোর এবং মানুষের ভিতরে সবচেয়ে জঘন্য প্রকৃতির লোক।রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেন, .....আর আমার উম্মাত হবে ৭৩ দলে বিভক্ত। এই সবগুলো দলই হবে জাহান্নামী, একটি দল ছাড়া।সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন— সেই (সত্যপন্থী) দলটি কারা?
নবী ( সা.) বললেন— ‘যারা আমার ও আমার সাহাবাদের মত ও পথ অনুসরণ করবে।’ [সুনান তিরমিযী, হাদীস-২৬৪১)। ইসলামে ইমাম, আলেমদের কাছে সোহবত ও তালিম নিতে নিষিদ্ধ করেনি সুতরাং যারা এর বিরোধিতা করেন তাদের নতুন করে ভাবতে হবে তারা কোন দলে। সাধারণ মুসলিমদের সরাসরি কুরআন হাদিসের অনুসরণ করে চলার মতো ইলেম নেই বলেই তারা বিভিন্ন আলেমের কাছে তালিম নিয়ে আমল করার চেষ্টা করেন। এর মানে তিনি ঐ আলেম বা মাযহাবের পূজা করেন না।

    লেখক: মো.আবু রায়হান 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ