নবীজির আঙ্গুলের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত ও ভারতীয় হিন্দু রাজার ইসলাম গ্রহণ
মো.আবু রায়হান : মহানবি (সা.) কর্তৃক তাঁর জীবনে অসংখ্য মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শিত হয়েছিল।তন্মধ্যে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করণ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মোজেজা। চন্দ্র দ্বিখণ্ডনকে আরবিতে শাক্কুল ক্বামার, ইংরেজি Splitting of the Moon বলে। ইসলামি ঐতিহাসিক বর্ণনানুসারে নবি মুহাম্মদ (সা:)কর্তৃক প্রদর্শিত একটি মোজেজা বা অলৌকিক ক্ষমতা হল চন্দ্র দ্বিখণ্ডন। মদিনায় হিজরতের ৫ বৎসর পূর্বে মক্কার কাফির ও মুশরিকদের একদল নেতা একবার আল্লাহ’র রাসুল (সা.)'র কাছে আসে। তাদের মধ্যে ছিল আবু জেহেল, ওয়ালিদ বিন মুগিরাহ, আস ইবনে ওয়ায়েল, আস ইবনে হিশাম, আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুস, আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিব, জাম‘আহ ইবনুল আসওয়াদ, নযর ইবনে হারেস প্রমুখ।মোজেজার প্রমাণ কুরআন পাকের সুরা কামার এবং অনেক সহিহ হাদিসেও আছে। এসব হাদিস সাহাবায়ে কেরামের একটি বিরাট দলের রেওয়ায়েতক্রমে বর্ণিত আছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, জুবায়ের ইবনে মুতইম, ইবনে আব্বাস ও আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এ কথাও বর্ণনা করেন। যে, তিনি তখন অকুস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং মু'জিযা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন। ঐ দিন রাতের আকাশে পূর্ণ চাঁদ দেখা গিয়েছিল। কাফির মুশরিকরা বলল ‘আপনার নবুয়তের দাবি যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এই চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত হতে বলুন’।রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এ কাজ করলে কি তোমরা ঈমান আনবে?’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ।” অতঃপর রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছে এ বিষয়ে প্রার্থনা করলেন। তার প্রার্থনা কবুল হল। অতঃপর চাঁদ স্পষ্টভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল এবং দুই খণ্ডের মাঝখানে হেরা পর্বত দৃশ্যমান হল। দুই খণ্ডের এক খণ্ড আবি কুবাইস পাহাড় বরাবর, অপরটি কাইকা’আন বরাবর দৃশ্যমান হল।এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা মিনায় নবী কারিম (সা.)'র সাথে ছিলাম। তিনি চন্দ্রকে দিখন্ডিত করলেন এবং এক খন্ড পাহাড়ের পশ্চাতে চলে গেল আরেক খন্ড পাহাড়ের উপরে রইল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো। (সহীহ বুখারী শরীফ ১/৫৪৬; সহীহ মুসলিম শরীফ ২/৩৭৩)। অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, মক্কাবাসীরা রাসুলুল্লাহ (সা.)'র কাছে নবুয়াতের কোনো নিদর্শন দেখতে চাইল। তখন রাসূল (সা.)কে মহান আল্লাহ তায়ালা চন্দ্র দিখন্ডিত করে দেখিয়ে দিলেন। তারা সাহাবায়ের কিরাম ও কাফেররা দেখতে পেল যে, চাঁদের দুই খন্ড হেরা পাহাড়ের দুই পার্শ্বে চলে গিয়েছে। (সহীহ বুখারী শরীফ ১/৫৪৫; সহীহ মুসলিম শরীফ ২/৩৭৩; জামে তিরমিযী শরীফ ৩২৮৫)
ইবনে কাসীর সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রাথমিককালের ইসলামী ইতিহাস রচয়িতাগণ এ ঘটনাকে নির্ভুল বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।এ সময় হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলছিলেন, ‘সাক্ষী থাক ও দেখ’। কাফির ও মুশরিকরা এই অসাধারণ দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। কিন্তু তারা ঈমান না এনে বললো, মনে হয় আপনি আমাদেরকে যাদু করেছেন। চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করার এ ঘটনাকে বলা হয় শাক্কুল ক্বামার। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা ক্বামার (চন্দ্র) অবতীর্ণ হয়। এই সুরার প্রথম দুই আয়াতের অর্থ হল।আল্লাহ বলেন, “কেয়ামত সমাসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে এটা তো চিরাচরিত জাদু।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, মক্কায় (অবস্থানকালে) চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে দুই খণ্ড হয়ে যায়। কোরাইশ কাফেররা বলতে থাকে, এটা জাদু, মুহাম্মদ তোমাদেরকে জাদু করেছে। অতএব, তোমরা বহির্দেশ থেকে আগমনকারী মুসাফিরদের অপেক্ষা কর। যদি তারাও চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় দেখে থাকে, তবে মুহাম্মদের দাবি সত্য। পক্ষান্তরে তারা এরূপ দেখে না থাকলে এটা জাদু ব্যতীত কিছু নয়। এরপর বহির্দেশ থেকে আগত মুসাফিরদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তারা সবাই চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত অবস্থায় দেখেছে বলে স্বীকার করে। (আবু দাউদ তায়ালেসী: ১/৩৮, হাদীস নং ২৯৫, বায়হাকি: দালায়েল ২/২৬৬)।
তারীখে ফিরিশতায় বর্ণিত হয়েছে যে, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার এই দৃশ্য ভারতের মালাবারের জনৈক মহারাজা স্বচক্ষে দেখেন এবং তা নিজের রোজনামচায় লিপিবদ্ধ করেন। অপর একটি বর্ণনায় জানা যায়, এক সময় রাসুল (সা.)'র আবির্ভাব এবং তাঁর চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করার কথা লোকমুখে এক চমকপ্রদ খবর হিসেবে প্রচারিত হতে থাকে। একদিন গুজরাটের রাজা ভোজ তাঁর ইমারতের ছাদে ওঠেন এবং চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত দেখতে পান। এ রহস্য উদঘাটনের জন্য তিনি ব্রাহ্মণদের ডেকে পাঠান। তারা যোগ সাধনা করে বললেন-আরবদেশে এক মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি তাঁর ধর্মের সত্যতা প্রমাণের জন্য আঙ্গুলের ইশারায় এ অলৌকিক ঘটনা দেখিয়েছেন। রাজা হযরত মুহাম্মদ (সা.)'র নিকটে দূত পাঠালেন ও সাথে একখানি পত্র দিলেন। তাতে লিখেন, হে মহামান্য! আপনার এমন একজন প্রতিনিধি আমাদের দেশে পাঠান, যিনি আমাদের আপনার সত্য ধর্ম শিক্ষা দিতে পারেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁর জনৈক সাহাবিকে হিন্দে পাঠিয়ে দেন। তিনি রাজা ভোজকে ইসলামে বাইয়াত করান। তাঁর নাম রাখেন আব্দুল্লাহ। রাজার ধর্ম পরিবর্তনে প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। তারা রাজার পরিবর্তে রাজার ভাইকে সিংহাসনে বসায়। যে সাহাবি এসেছিলেন তিনি সেখানেই ইন্তিকাল করেন। সাহাবি ও ‘আব্দুল্লাহর (রাজা ভোজ) মাজার গুজরাটের ধারদা শহরেই আছে।
(আব্দুল গফুর, মহানবীর (স.)যুগে উপমহাদেশ, প্রবন্ধ)
১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই চন্দ্রে প্রথম পদাপর্ণকারী দলের নেতা নীল আর্মষ্ট্রং স্বচক্ষে চন্দ্রপৃষ্ঠের বিভক্তি রেখা দেখে বিস্ময়াভিভূত হন বলে পরবর্তীতে জানা যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন