সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

করোনার দোয়া এবং বিবিধ প্রসঙ্গ


মো.আবু রায়হান :ফেরাউন যখন লোহিত সাগরে ডুবে মরছিল তখন বলছিল আহাদ, আহাদ, আহাদ অর্থ আল্লাহ অদ্বিতীয়, তার কোনো অংশীদার নেই। আল্লাহর কঠিন আজাব দেখে সেদিন ফেরাউন তাওবা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তার তাওবা গৃহীত হয়নি। আল্লাহ তাআলা তাকে সাগরে ডুবিয়ে মেরেছেন। শুধু তাই নয় আল্লাহ তায়ালা বললেন,  ‘আজ আমি তোমার (ফেরাউন) দেহ রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকো। অবশ্যই মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্পর্কে উদাসীন।’ (সুরা : ইউনুুস, আয়াত : ৯২)।এতে বোঝা গেল,  তওবার দরজা সব সময় উন্মুক্ত থাকে না।কেননা  আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তোমাদের উপর আযাব আসার পূর্বেই তার কাছে আত্মসমর্পণ কর। তার (আযাব আসার) পরে তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।'(সুরা আল জুমার,আয়াত-৫৪)।হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, হযরত আবু মুসা আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস আশয়ারী (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ পশ্চিম (আকাশ) দিক থেকে সূর্যোদয় (কেয়ামত) না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতে তার ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করতে থাকেন। যাতে রাতে গুনাহগার তওবা করে। (মুসলিম)।উপরিউক্ত কোরআন ও হাদিসের আলোকে ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, আযাবের পূর্ব মুহুর্তে তওবা করা যায়।আজাব শুরু হলে তওবা করার সুযোগ নেই। সেই তওবা আল্লাহর দরবারে গৃহীতও হবেনা।
আজ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আমরা আল্লাহ কে ডাকছি। এ ডাকা যেন সাময়িক না হয়। এ ডাকার মধ্যে যেন কপটতা না থাকে। খালেছ দিলে যেন তাকে ডাকি। তিনিই আমাদের রক্ষাকর্তা, পালনকর্তা।শুধু ফেসবুকের প্রোফাইলে দোয়া লিখে রাখলে হবে না। ফেরাউনও অনুতপ্ত হয়েছিল, আল্লাহকে স্মরণ করেছিল কিন্তু আল্লাহ তাকে সুযোগ দেননি। এ ধরেনের মহমারিতে আল্লাহ তায়ালা পূর্বের জামানায় অসংখ্য গোত্র ও জনপদ পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছেন।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কর্মফল। আমি তোমাদের অনেক অপরাধ মাফ করে থাকি’ (সূরা শুয়ারা অায়াত- ৩০)।যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার মতো জঘন্য পাপচার বেড়ে যায়, তখন আল্লাহ তাদের মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দেন। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘'যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।" (সুনানে ইবনে মাজাহ)।
মহামারি প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি, বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারি। অতএব, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস )।
আজ করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে একটি দোয়া পড়ছি। অনেকে বলছেন এই দোয়া করোনা থেকে বাঁচার দোয়া। এটি সঠিক কথা নয়।সঠিক কথা হচ্ছে এটি মহামারি হতে বাঁচার দোয়া। নবিজি (সা.) যেকোনো মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এই দোয়াটি পড়তে বলেছেন,সুতরাং এটি মহামারি থেকে বাঁচার দোয়া।দোয়াটি হলো, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি,ওয়া সাইয়ি ইল আসক্কাম।' আজ যদি করোনার থেকে বাঁচার দোয়া বলে এটি চালিয়ে  দেন তাহলে ইসলাম বিরোধীরা এই দোয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। বলবে চৌদ্দশ বছর পূর্বে কি করোনা ছিল? মুসলমানদের পাগলে পেয়েছে। কেন একথা বলার সুযোগ করে দেবেন।তাই বলুন যে কোনো মহামারি থেকে বাঁচার দোয়া।যদিও ইসলামের বাণী সর্বযুগে অনুসরণীয় ও আপডেটেড তা যে নামেই চালানো হোক না কেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...