সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আকাশে প্রথম উড়ার কৃতিত্ব ও বিমানের স্বপ্নদ্রষ্টা একজন মুসলিম


মো.আবু রায়হান : আকাশে পাখি উড়তে দেখে মানুষেরও ইচ্ছে করেছিল আকাশে উড়তে। একদিন তা সম্ভবও হলো। গ্রিক উপকথায় ইকারাসের আকাশে ওড়ার কাহিনী হয়তো কম-বেশি অনেকের জানা। আমরা বিমান আবিষ্কারের এক্কেবারে গোড়ার ইতিহাসের দিকে ফিরে যাব। মুসলিম বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই যে মানুষের আকাশে উড়াল দেবার স্বপ্নের বীজ মনোজগতে অঙ্কুরিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে সেটির যে রূপায়ণ ঘটেছে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না তারপরও যেহেতু এই ইতিহাস অনেকেরই অজানা তাই তা আলোকপাত করা উচিত বলে মনে করি। কুরআনে বলা হয়েছে, "আর তোমাদের আরোহনের জন্য এবং শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা জান না।"( সুরা নাহল আয়াত -৮)।এই আয়াতের তাফসীরে বলা যায় ভূগর্ভে, সমুদ্রে, মরুভূমিতে এবং জঙ্গলে মহান আল্লাহ অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি করে থাকেন, যার জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। এর সঙ্গে নব আবিষ্কৃত সকল বাহনও এসে যায়, যা আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ও যোগ্যতা প্রয়োগ করে তাঁরই সৃষ্ট বস্তুকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগিয়ে মানুষ তৈরী করেছে। যেমন বাস, ট্টেন, রেলগাড়ি, জলজাহাজ ও বিমানসহ অসংখ্য যানবাহন এবং আরো অনেক কিছু, যা ভবিষ্যতে আশা করা যায়। হযরত সুলাইমান (আ.) এর বাতাসে ভ্রমণ ও মহানবি (সা.)'র বুরাকে মিরাজ গমন এসব কি আধুনিক কালের বিমানের চেয়ে অধিক গতি সম্পন্ন কোনো বাহন নয় কী? আল্লাহ বলেন, "আর আমি সুলায়মানের জন্য অনুগত করে দিয়েছিলাম প্রবল হাওয়াকে, যা তার নির্দেশে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কেই অবগত ছিলাম।" (সুরা আম্বিয়া আয়াত -৮১)।হযরত সুলাইমান (আ.)এর বাতাসে ভ্রমণের ব্যাপারে কুরআনে তিনবার উল্লেখ রয়েছে। 
রাইট ভাতৃদয়ের  প্রায় এক হাজার বছর আগে ৮৭৫ সালে আব্বাস ইবনে ফিরনাস(৮১০-৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দ)প্রথম আকাশে উড়েন। আব্বাস ইবনে ফিরনাস ১০ মিনিট উড়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন আবিষ্কারক, প্রকৌশলী, উড্ডয়ন বিশারদ, চিকিৎসক, আরবি সাহিত্যের কবি এবং আন্দালুসিয় সুরকার।তাঁকে বলা হয় বিমান এবং বিমানের পিতা। (How Invention Begins: Echoes of Old Voices in the Rise of New Machines By John H. Lienhard). ঐতিহাসিক ফিলিপ কে. হিট্টি তার History of Arab গ্রন্থে মন্তব্য করেন, “ইবনে ফিরনাসই প্রথম ব্যক্তি যিনি আকাশে ওড়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন বৈজ্ঞানিকভাবে।”
আববাস ইবনে ফিরনাস পাখির পালক জড়ো করে তা দিয়ে পাখা বানিয়ে স্পেনের কর্ডোভার উঁচু পাহাড় 'জাবাল আল-আরুস' থেকে উড়ান দিয়েছিলেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।কী বিশাল সাহসী ছিলেন! তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন। পতন কালে আব্বাস ইবনে ফিরনাস দেখলেন তিনি গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।তাঁর মনে হলো, পাখির লেজের কথা। কিন্তু তিনি লেজ বানান নি। সজোরে আঁছড়ে পড়লেন মাটিতে। আহত হলেন। তারপরও ১২ বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্তু উড়াল দেবার সামর্থ ছিল না।আজকের বিমান আবিষ্কারের কথা বলা হলে রাইট ভাতৃদ্বয়ের কথা আসে। যারা বিংশ শতকে বিমান আবিষ্কার করেন। অথচ বিমানের মৌলিক নকশা এবং পৃথিবীর প্রথম উড়ান আব্বাস ইবনে ফিরনাসই করেছিলেন।ইবনে ফিরনাসকে নিয়ে ৯ ম শতকে লেখা কর্ডোভার প্রথম আমির মুহাম্মদের রাজকবি মুমিন ইবনে সাইদের একটি কবিতা আছে। যাতে তাঁকে 'শকুনের পালকে' আবৃত অবস্থায় 'ফিনিক্সের' থেকেও দ্রুতগতি সম্পন্নবলা হয়েছে। এই বিষয়ে একমাত্র মরোক্কান ইতিহাসবিদ আহমেদ মোহাম্মদ আল মাক্কারীর(আনুমানিক ১৫৭৮–১৬৩২) লেখায়। তিনি প্রায় সাত শতাব্দী পরে এই ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন। আলমাক্কারীর লেখা অনুযায়ী:"তার অন্যান্য আগ্রহ উদ্দীপক পরীক্ষাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, তিনি উড়ার চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য তিনি নিজেকে পালকে আবৃত করে নেন এবং শরীরে একজোড়া পাখা যুক্ত করেন। এরপর উচুতে উঠে শুন্যে ঝাপিয়ে পড়েন। যেসব নির্ভরযোগ্য লেখক এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন তাদের মতে তিনি প্রায় পাখির মতই গ্রহণীয় মাত্রার দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হন। উড্ডয়নের স্থানে অবতরণের সময় তিনি পিঠে মারাত্মকভাবে আঘাত পান। এর কারণ, পাখিরা অবতরণের সময় লেজের ব্যবহার করে যা তিনি করেননি।ইউরোপের আরমেন ফিরমানকে আব্বাস ইবন ফিরসাসের নামের ল্যাটিনরূপ বলে ধারণা করা হয়।ফিরনাস তার কাজের দ্বারা অণুপ্রাণিত হয়েছিলেন বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেন।
সম্ভবত ইবনে ফিরনাসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই পরের শতকে ওড়ার চেষ্টা করেছিলেন আল জহুরী। ১০০৭ খ্রিস্টাব্দে আল জহুরী তুর্কিস্থানের উলু মসজিদের ১,০০২ ফুট উঁচু মিনার হতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওড়ার প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।পশ্চিমে একাদশ শতকে ইংল্যান্ডের ইলমার অব মালমেসবুরি প্রায় ১,০০০ ফুট উচু থেকে গ্লাইডিংয়ের মাধ্যমে ওড়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তিনি আংশিক সফলতা পেলেও দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন।

বিমান কে আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রশ্নের উত্তরে সকলেই  বলবেন যে বিমানের আবিষ্কারক উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট ভ্রাতৃদ্বয়।তাদের আগেশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তার আঁকা উড্ডয়ন যন্ত্রের নকশায় প্রথম আকাশে ওড়ার তাত্ত্বিক ধারণা দেন। আমেরিকার এক  গির্জার যাজক মিল্টন রাইট তার দুই ছেলে উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইটকে একটি খেলনা হেলিকপ্টার উপহার দেন। সেটির নকশা করেছিলেন হেলিকপ্টার উদ্ভাবক ফ্রান্সের আলফোন্স পেনাউড। 
কাগজ, বাঁশ এবং একটি রাবার ব্যান্ডের সঙ্গে কর্ক বেঁধে সেটি তৈরি করা হয়েছিল। উইলবার এবং অরভিল খেলনাটি নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেন। কয়েক বার সেটি ভেঙে গেলে দুই ভাই মিলে একটি খেলনা হেলিকপ্টার তৈরি করে ফেলেন। এরপর থেকে তারা স্বপ্ন দেখতে থাকেন হেলিকপ্টারে উড়ে নীল আকাশ পরিভ্রমণের। এভাবে তাদের মনোজগতে আকাশে উড়ার বাসনা তৈরি হয়। আর এই বাসনা থেকেই দুই ভাইয়ের মনে বিমান তৈরির বীজ রোপিত হয়েছিল।১৯০৩ সালে তারা বিমান আবিষ্কারে সক্ষম হন। অরভিল যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফোর্ট মায়ারে অবস্থিত ইউনাইটেড স্টেট আর্মি চত্বরে ১৯০৮-এর  সেপ্টেম্বর সফলভাবে বিমানের সাহায্যে আকাশে ওড়েন। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর তিনি একাকী এক ঘণ্টা ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ড একটানা ভ্রমণ করেন।সপ্তাহ খানেক পর সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট টমাস সেলফ্রিজকে অবজারভার হিসেবে সঙ্গে নিয়ে আকাশে উড়েন। কিন্তু এদিন ১০০ ফুট উপর দিয়ে কয়েক মিনিট ওড়ার পর বিমানের প্রোপেলার ফেটে যায় এবং বিমানটি কাঁপতে থাকে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানটি মাটিতে আছড়ে পরে। সেলফ্রিজের মাথায় আঘাত লাগে এবং তিনি মারা যান। সেটিই ছিল বিমান দুর্ঘটনায়  প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। অরভিল এই দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হলেও বেঁচে যান।  এরপর ১২ বছর অরভিল আর বিমানে উড্ডয়ন করেননি। 
রাইট ভ্রাতৃদ্বয়কেই প্রথম যন্ত্রচালিত উড়োজাহাজ উদ্ভাবনের কৃতিত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু তার আগেও অনেকেই এই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি গিয়েছিলেন। এমনকি ১৯০১ সালে গুস্তাভ হোয়াইটহেড এবং ১৯০২ সালে রিচার্ড পিয়ার্স উড়োজাহাজ উদ্ভাবনে সফল হয়েছিলেন বলেও মেনে নেন অনেকেই। ১৯০৩ সালেই রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের কয়েক মাস আগে যন্ত্রচালিত উড্ডয়ন যন্ত্রের উদ্ভাবনের দাবি করেন জার্মান উদ্ভাবক কার্ল জথোও। 
কিন্তু ভারতের এক মন্ত্রী বলছেন,রাইট ভাতৃদয়ের বিমান আবিষ্কারের এ ইতিহাস ভুল। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সত্যপাল সিং-এর দাবি, বিমানের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় হিন্দু পুরাণ রামায়ণে।তার কথা,"আর যদি বর্তমান যুগের কথা ধরা হয়, তাহলে বিমানের আবিষ্কারক হলেন শিবাকর বাবুজি তালপাঢ়ে!"তিনি বলছেন, রাইট ভাতৃদয়ের আট বছর আগেই বিমান আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন শিওয়াকর বাবুজি তালপাঢ়ে।খোঁজ পড়ে গেছে কে এই মি. তালপাঢ়ে, যিনি বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসে সম্পূর্ণ 'অজানা'ই রয়ে গেছেন!! খুঁজে পাওয়া যায় নি এখনও। কিন্তু মন্ত্রী মি. সিংয়ের ওই মন্তব্য নিয়ে হাসি-মশকরা শুরু হয়ে গেছে সামাজিক মাধ্যমে।২০১৫ সালে একটি বিজ্ঞান সম্মেলনেঅবসরপ্রাপ্ত পাইলট এবং একটি বিমানচালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান ক্যাপ্টেন আনন্দ বোডাস জানিয়েছিলেন, বিমানের আবিষ্কার হলেন ভরদ্বাজ নামের এক ঋষি। প্রায় ৭ হাজার বছর আগে তিনি এই ধরাধামে বসবাস করতেন।অর্থাৎ ৭ হাজার বছর আগেই বিমান আবিষ্কৃত হয়েছিল ভারতের মাটিতে!এখানেই শেষ নয়। বিমানেই থেমে নেই ব্যাপারটা।ভিন গ্রহেও নাকি বিমান পাঠতে সক্ষম হয়েছিলেন প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।সেই বিমানে নাকি অনেক উন্নত রেডার ব্যবস্থাও ছিল।
মূলত:আববাস ইবনে ফিরনাস মানুষের উড্ডয়নের  ইতিহাসে কিংবা আকাশে উড়ার পেছনে মানুষের যে প্রচেষ্টা তার একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে স্বরণীয় হয়ে আছেন। তার প্রচেষ্টাকে বলা যায় আধুনিক বিমান আবিষ্কারের প্রথম ধাপ। মানুষকে ডানা মেলে উড়ার স্বপ্ন দেখানো ইবনে ফিরনাস তাই ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...