সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লাত উযযা ও মানাত এদের পরিণতি





তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে।(সুরা নাজম আয়াত-১৯-২০)।

এ কথা মুশরিকদেরকে তিরস্কার করে বলা হচ্ছে যে, এই হল আল্লাহর মহিমা যা উল্লেখ হয়েছে। তিনি হলেন জিবরীল (আ)-এর মত মহান ফিরিশতার স্রষ্টা। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষটি হল তাঁর রসূল। তাঁকে তিনি আসমানে ডেকে নিয়ে স্বীয় বড় বড় নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন। তাঁর উপর অহীও অবতীর্ণ করেন। বল তো, তোমরা যেসব উপাস্যের উপাসনা কর, তাদের মধ্যেও কি এই বা এই ধরনের গুণাবলী আছে? অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের যে শিক্ষা দিচ্ছেন তোমরা তো তাকে গোমরাহী ও কুপথগামিতা বলে আখ্যায়িত করছে। অথচ এ জ্ঞান তাকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে। আর আল্লাহ তা’আলা তাকে চাক্ষষভাবে এমন সব সত্য ও বাস্তবতা দেখিয়েছেন যার সাক্ষ্য তিনি তোমাদের সামনে পেশ করছেন। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে মুশরিক আরবদের তিনজন দেবীর কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে যাদেরকে মক্কা, তায়েফ, মদীনা এবং হিজাজের আশে পাশের লোক জন বেশী বেশী পূজা করত।তফসীরে কুরতুবীর বরাতে তফসীরে মাআরেফুল কোরআনে বলা হয়েছে, আরবের মুশরিকরা অসংখ্য প্রতিমার পূজা করত, তন্মধ্যে তিনটি প্রতিমা ছিল সমধিক প্রসিদ্ধ। আরবের বড় বড় গোত্র এগুলোর এবাদতে আত্মনিয়োগ করেছিল। এসব প্রতিমার অবস্থান স্থলে মুশরিকরা বড় বড় জাঁকজমক পূর্ণ গৃহ নির্মাণ করে রেখেছিল। এসব গৃহকে কাবার অনুরূপ মর্যাদা দান করা হত। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (স.)এসব গৃহ ভূমিস্মাৎ করে দেন।আরবে মূর্তি পূজার প্রবর্তক ছিল আমর ইবনে লুহাই। তার প্রকৃত নাম রাবীয়া ইবনে হারেছা। সে আরবের প্রসিদ্ধ খোজাআ গোত্রের লোক ছিল। আমরের পূর্বে জুরহুম গোত্র ছিল কাবার মোতাওয়াল্লী। আমর লড়াই করে জুরহুমকে মক্কা হতে বিতাড়িত করে দেয় এবং নিজেই হেরমের মোতাওয়াল্লী হয়ে বসে। সে একবার সিরিয়ায় কোনো এক শহরে গমন করে এবং সেখানে লোকদের মূর্তি পূজা করতে দেখে এবং জিজ্ঞাসা করে, কেন ওদের পূজা করে? তারা বলে, এগুলো অভাব দূরকারী, যুদ্ধবিগ্রহে বিজয় দানকারী এবং খরা-দুর্ভিক্ষে পানি বর্ষণকারী। আমর তাদের কাছ থেকে কয়েকটি মূর্তি নিয়ে আসে এবং কাবার আশেপাশে স্থাপন করে। কাবা যেহেতু আরবের কেন্দ্র ছিল, তাই সকল গোত্রে মূর্তি পূজার প্রচলন হয়ে যায়। আর সেখান থেকে নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

এক

লাত  ছিলেন আরবের প্রাক-ইসলামী যুগের একজন দেবী। মক্কার তিনজন প্রধান দেবীর একজন। ইসলাম পূর্ববর্তী সময়ে আরবের অধিবাসীগন মানাত ও উযযার সাথে লাতকে আল্লাহর মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করত।এ তিনজন দেবীর মধ্যে লাত এর আস্তানা ছিল তায়েফে।লাত শব্দের অর্থ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতানৈক্য আছে।ইবনে জারীর তাবারীর জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ হচ্ছে। এ শব্দটি আল্লাহ শব্দের স্ত্রীলিংগ। এর অর্থ ঘুরা বা কারো প্রতি বুকে পড়া। মুশরিকরা যেহেতু ইবাদাতের জন্য তার প্রতি মনযোগী হতো, তার সামনে ঝুঁকতো এবং তার তাওয়াফ করতো তাই তাকে ‘লাত’ আখ্যা দেয়া শুরু হলো। এর আরেক অর্থ মন্থন করা বা লেপন করা। ইবনে আব্বাস বলেন যে, “মুলত সে ছিল একজন মানুষ, যে তায়েফের সন্নিকটে এক কঙ্করময় ভূমিতে বাস করত এবং হজের উদ্দেশ্যে গমনকারীদের ছাতু ও অন্যান্য খাদ্য খাওয়াত।” (বুখারী- ৪৮৫৯)।সে মারা গেলে লোকেরা ঐ কঙ্করময় ভূমিতে তার নামে একটা আস্তানা গড়ে তোলে এবং তার মূর্তি তৈরী করে তার উপাসনা করতে শুরু করে।এটা ত্বায়েফের বানূ সাক্বীফ গোত্রের সব চাইতে বড় প্রতিমা ছিল। তায়েফ বাসী লাতের পূজা করত। হিশাস্ম ইবনে আল কালবি লিখিত কিতাব আল আসনাম (মূর্তি সম্পর্কিত বই) থেকে জানা যায় ইসলাম পূর্ববর্তী যুগে আরবগণ বিশ্বাস করতেন লাত কাবা শরীফে বাস করেন। এবং সেখানেও তার একটি মূর্তি স্থাপিত ছিল।তাবুক যুদ্ধ পরিচালিত হওয়ার একই বছরে ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে রাসুল (সা ) এর নির্দেশে আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে তায়েফে লাতের মন্দির ধ্বংস করা হয়। এর পূর্বে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী বনু হাওয়াজিন গোত্র মালিকের নেতৃত্রে তায়েফ অবরোধ করে রাখে।

দুই
উযযা শব্দটির উৎপত্তি এটা আল্লাহর গুণবাচক নাম আযিয থেকে উদ্ভূত। আর উযযা এর স্ত্রীলিঙ্গ। যার অর্থ, عَزِيْزَةٌ (প্রিয়তমা)।কেউ কেউ বলেছেন, এটা গাত্বফানে একটি গাছ ছিল, যার পূজা করা হত। কেউ বলেছেন, এটি শয়তান জিন্নী (পেতনী) ছিল, যা কোন কোন গাছে দেখা দিত। আবার কারো মতে এটি একটি সাদা পাথর ছিল, লোকেরা যার পূজা করত। এটি কুরাইশ ও বনী কিনানাহ গোত্রের লোকদের নিজসব উপাস্য ছিল।এর আস্তানা ছিল মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী “নাখলা” উপত্যকায়। বনী হাশেমের মিত্র বনী শায়বান গোত্রের লোক এর প্রতিবেশী ছিল। কুরাইশ এবং অন্যান্য গোত্রের লোকজন এর যিয়ারতের জন্য আসতো, এর উদ্দেশ্যে মানত করতো এবং বলি দান করতো।হুবাল দেবতার মতই উযযাকেও সমৃদ্ধি ও কল্যাণের আশায় কুরাইশরা পূজা করত কা'বার মত এ স্থানটিতেও কুরবানী বা বলির জন্তু নিয়ে যাওয়া হতো এবং এটিকে সমস্ত মূর্তির চেয়ে অধিক সম্মান দেয়া হতো।মক্কা বিজয়ের অব্যবহিত পর রাসুল্লাহ (সা) মক্কার আশেপাশে মূর্তিপুজা প্রথা বিলোপের ব্যবস্থা নিলেন।রাসুল খালিদ বিন ওয়ালিদকে নির্দেশ দিলেন সেটিকে ধ্বংস করে দিতে। ৮ই হিজরী রমজান মাসে খালিদ বিন ওয়ালিদ ৩০ জন ঘোড়াসওয়ারী সৈন্যসহ সেখানে যান। পূরাহিতরা তাকে বাধা দিতে চাইলে তাদের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে খালিদ ও তার সেনারা মন্দির ও মূর্তিটিকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে ফিরে আসেন। ফিরে এসে নবী মুহাম্মদকে সব কথা বললে নবী মুহাম্মদ খালিদকে প্রশ্ন করেন সেখানে সে কিছু দেখতে পেয়েছে কি না। খালিদ না সূচক উত্তর দিলে তিনি খালিদকে আবার ফিরে গিয়ে কিছু খুঁজে দেখতে বলেন। নির্দেশমতে খালিদ ফিরে গেলে এক জীর্ণাকৃতি চুলের কৃষ্ণাঙ্গ নগ্ন মহিলাকে সেখানে দন্ডায়মান দেখতে পান। তখন খালিদ বিন ওয়ালিদ মহিলাটিকে তার তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে সরাসরি মাথা থেকে পা পর্যন্ত চিরে দ্বিখন্ডিত করে ফেলেন। ফিরে এসে নবী মুহাম্মদকে ঘটনা বললে নবী বলেন যে, হ্যা এবার ঠিক আছে এবং তিনি আরও বললেন যে, ঐ মহিলাটিই ছিল আসল উযযা। এখন থেকে আর কখনোই সে তোমাদের এলাকায় পূজিত হবে না।(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪র্থ খন্ড)।এ উযযা কোরেশ এবং সকল বনি কেনানার সর্বাধিক বড় মূর্তি ছিল এবং বনি শায়বান ছিল তার প্রধান সেবক।
তিন
মানাতকে প্রাক ইসলামি যুগের আরবগণ  ভাগ্যের দেবী হিসেবে পূজা করত । মানাত নামে পেত্রা বাসীদের কাছে পূজিতা হত এবং একে গ্রেকো-রোমান দেবী নেমেসিস এর সমতুল মনে করা হয় । মানাতকে দেবতা হুবাল এর স্ত্রী মনে করা হয়।মানাত হল, مَنَى يَمْنِى ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ হল, صَبَّ (বহানো)। এর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য লোকেরা তার নিকট প্রচুর পরিমাণে পশু জবাই করত এবং তাদের রক্ত বহাতো। এটা ছিল মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত একটি মূর্তি। (ফাতহুল ক্বাদীর) ।বনী খুযাআহ গোত্রের লোকেদের এটি নিজস্ব মূর্তি ছিল।(আয়সারুত তাফাসীর ও ইবনে কাসীর) মানাত এর আস্তানা ছিল মক্কা ও মদীনার মাঝে লোহিত সাগরের তীরবর্তী কুদাইদের মুশাল্লাল নামক স্থানে। বিশেষ করে খুযাআ, আওস এবং খাযরাজ গোত্রের লোকেরা এর খুব ভক্ত ছিল। তার হাজ ও তাওয়াফ করা হতো এবং তার উদ্দেশ্যে মানতের বলি দেয়া হতো। হজের মওসুমে হাজীরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং আরাফাতে ও মিনায় অবস্থানের পর সেখান থেকে মানাতের যিয়ারত তথা দর্শনলাভের জন্য লাব্ববায়কা লাব্বায়কা ধ্বনি দিতে শুরু করতো।যারা এ দ্বিতীয় হজ্জের নিয়ত করতো তারা সাফা এবং মারওয়ার মাঝে সাঈ করতো না। বুখারী-৪৮৬১,ফাতহুল কাদীর; তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর) । বুক অফ আইডলস এ আছে -এই তিন দেবীর মধ্যে মানাত সবচেয়ে প্রাচীন । আরবগণ তাদের সন্তানদের নামকরণ আবদ মানাত এবং যায়িদ মানাত করত । মানাতের মূর্তি কুদায়িদ এর নিকটবর্তী সমুদ্র উপকূলে ছিল যা মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থান । আরবগণ তাঁকে অর্চনা ও তাঁর কাছে উৎসর্গ করত । আউস, খাজরায, মক্কা-মদিনা ও তাঁর আশেপাশের নাগরিকরা তাঁর পূজা করত, তাঁর কাছে বলি দিত এবং তাঁকে নৈবেদ্য প্রদান করত । আউস, খাযরাজ এবং ইয়াসরিব তীর্থযাত্রায় নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে নিশিপালন করত কিন্তু মস্তক মুণ্ডন করত না । তীর্থযাত্রার পরে তারা বাড়ি ফিরত না বরং যেখানে মানাত পূজা হয়েছিল সেখানে মস্তক মুণ্ডন করত এবং কিছু সময় অতিবাহিত করত । মানাত দর্শন না করা পর্যন্ত তারা তীর্থযাত্রা অসম্পূর্ণ মনে করত। ধ্বংস করতে হুজুর (সা.) সা’দ ইবনে জায়েদ আশহালীকে প্রেরণ করেন এবং তার সঙ্গে গমন করেন ত্রিশজন আরোহী। সেখানকার সেবক জিজ্ঞাসা করে, তোমরা কি চাও? তাঁরা বললেন, আমরা মানাত ধ্বংস করতে এসেছি। সে বলল, তোমরা এবং মানাত জানে। সা’দ তা ধ্বংস করার জন্য যখন অগ্রসর হন, তখন বিক্ষিপ্ত কেশধারী এক নারী বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বের হয়। সেবক বলল, মানাত? এরা তোর নাফরমান বান্দা। সা’দ (রা.) অগ্রসর হয়ে সেই নারীকে হত্যা করেন। অতঃপর তার মূর্তি ঘর ধ্বংস করেন এবং গুদাম ঘর ভেঙ্গে দেন, কিন্তু সেখানেও কিছু পাওয়া যায়নি।

চার
হোবল কাবার ছাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত  ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিমা, কোরেশরা যুদ্ধসমূহে তার জয়ধ্বনি করতো। তারা একে খোদা-ই আজম বা মহান খোদা বলে বিশ্বাস করতো। মানুষ আকৃতির এবং ইয়াকুত পাথর নির্মিত এ প্রতিমা সর্বপ্রথম কাবায় এনে স্থাপন করেছিল মোয়ারের গোত্র ও আদনানের প্রপৌত্র খোজায়মা ইবনে মোদারিকা। হোবলের সামনে সাতটি তীর থাকতো, সেগুলোতে লেখা থাকতো ‘লা’ (না) এবং ‘নাআম’ (হ্যাঁ)। আরবরা যখন কোনো কিছু করতে চাইতো তখন ঐসব তীরে লটারি নিক্ষেপ করতো। হ্যাঁ, অথবা না যা কিছু আসতো, সেই অনুযায়ী কাজ করতো। ওহুদ যুদ্ধে আবু সুফিয়ান উলু হোবল বলে জয় ধ্বনি করেছিলেন। এই উলু হোবল হতে হিন্দুদের উলু ধ্বনির উদ্ভব বলে মনে করা হয়। রাসূলুল্লাহ (স.) মক্কা বিজয়ের দিন কাবায় প্রবেশ করে হোবল প্রতিমা ধ্বংস করেন।
এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন স্থানে বহু প্রতিমা ও প্রতিমালয় স্থাপিত ছিল।মক্কা বিজয়ের পর এবং আরো অন্যান্য সময়-সুযোগে নবী করীম (সাঃ) ঐ সমস্ত মূর্তিসহ আরো অন্যান্য সকল মূর্তির মূলোৎপাটন করেন। ঐগুলোর উপর নির্মিত গম্বুজ ও গৃহাদি ভেঙ্গে ফেলান। যে গাছগুলোর তা’যীম (সম্মান প্রদর্শন) করা হত, সেগুলো সব কেটে ফেলান এবং মূর্তিপূজার সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন মিটিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়।আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা) যখন (মক্কা বিজয়ের দিন) মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন কাবা ঘরের চারপাশে তিনশত ষাটটি মূর্তি ছিল।রাসুল (সা) নিজের হাতের লাঠি দিয়ে মূর্তিগুলোকে আঘাত করতে থাকেন আর বলতে থাকেন, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।(সহীহুল বুখারী, হাদিস নং ৪৭২০) ।এ কাজের জন্য তিনি খালেদ, আলী, আমর ইবনে আস এবং জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী (রাঃ)-দের সেই সেই স্থানে প্রেরণ করেন, যেখানে এ মূর্তিগুলো স্থাপিত ছিল। তাঁরা সেখানে গিয়ে সেসব ভেঙ্গে ফেলে আরব ভূভাগ থেকে শিরকের নাম পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করে দেন। (ইবনে কাসীর) প্রথম শতাব্দীর বহু পরে আরবের মাটিতে আবার একবার উক্ত শ্রেণীর শিরকীয় কার্যকলাপ ব্যাপক হয়ে ওঠে। এ সময় মহান আল্লাহ দাওয়াতের পতাকাবাহী শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব নামক একজন সংস্কারক আলেমকে তওফীক দেন। তিনি ‘দিরইয়্যাহ’র শাসকের সহযোগিতায় শাসন ও ক্ষমতা বলে শিরকের এই সমস্ত কার্যকলাপের পরিসমাপ্তি ঘটান। তারপর বাদশাহ আব্দুল আযীয; নাজদ ও হিজাযের শাসক (বর্তমান সউদী শাসকবর্গের পিতা ও এই দেশের প্রতিষ্ঠাতা) তাঁর সেই দাওয়াত পুনরায় নবায়ন ও সংস্কার করেন। তিনি সমস্ত পাকা কবর ও গম্বুজকে ভেঙ্গে ফেলে নবী করীম (সাঃ)-এর সুন্নতকে পুনর্জীবিত করেন।

গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...