আবাবিল কোনো পাখির নাম নয় বরং এক ঝাঁক পাখি
মো.আবু রায়হান :মহানবি (সা.)'র জন্ম বৎসরে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাসে একটি বিখ্যাত ঘটনা সংঘটিত হয়।ঘটনাটি ইতিহাসে হস্তী বর্ষ বা হস্তিবর্ষ , আরবিতে আমুল ফিল, ইংরেজিতে The Year of the Elephant নামে পরিচিত।ইয়েমেনের শাসক আবরাহা কাবা ঘর ধবংস করতে মক্কায় আসে। যে ঘটনাটি কুরআনের সুরা ফিলে বর্ণিত হয়েছে। আবরাহার কাবা ঘর আক্রমণের প্রাক্কালে আল্লাহর পক্ষ থেকে আবাবিল নামে পাখি এসে তার দলের ওপর কংকর নিক্ষেপ করে ফলে আবরাহার কাবা ধ্বংসের অভিলাষ নসাৎ হয়ে যায়। এ ঘটনাটি আমরা সকলেই জানি। কিন্তু যাকে আমরা আবাবিল পাখি বলে অভিহিত করি সেটি কি আসলেই পাখির নাম? চলুন আগে ঘটনাটি আরেকবার জেনে নিই।তারপর না হয়....
হাবশার বাদশাহর পক্ষ থেকে ইয়ামেনে আবরাহা গভর্নর ছিল। সানায় আল কালীস বা আল কুলীস অথবা আল কুল্লাইস নামে একটি বিশাল গীর্জা নির্মাণ করল। আর চেষ্টা করল, যাতে লোকেরা কা’বাগৃহ ত্যাগ করে ইবাদত ও হজ্জ-উমরাহর জন্য এখানে আসে। এ কাজ মক্কাবাসী তথা অন্যান্য আরব গোত্রের জন্য অপছন্দনীয় ছিল। অতএব তাদের মধ্যে একজন আবরাহার নির্মাণকৃত উপাসনালয়ে পায়খানা করে নোংরা করে দিল। আবরাহার নিকট খবর পৌঁছল যে, গির্জাকে কেউ নোংরা ও অপবিত্র করে দিয়েছে। যার প্রতিক্রিয়ায় সে কা’বা ঘরকে ধ্বংস করার দৃঢ়সংকল্প করে নিল। সে ৬০ হাজার সৈন্য ও ১৩টি হাতি নিয়ে মক্কার পথে রওনা হল। কিছু হাতীও তাদের সাথে ছিল। মক্কার নিকট পৌঁছে সৈন্যরা মক্কার সর্দার মহানবী (সাঃ)'র দাদা আবদুল মুত্তালিবের উটগুলি দখল করে নিল। এ ব্যাপারে আব্দুল মুত্তালিব আবরাহাকে বললেন, আমার উটসমূহকে ফিরিয়ে দিন; যা আপনার সৈন্যরা ধরে রেখেছে। আবরাহা বলল, এখন আমরা তোমাদের কাবা ধ্বংস করতে এসেছি, আর তুমি কেবল উট ছেড়ে দেওয়ার দাবী কর? তিনি বললেন, উটগুলোর মালিক আমি। তাই আমি সেগুলো আমার চাই। বাকী থাকল কা’বা ঘরের ব্যাপার যাকে আপনি ধ্বংস করতে এসেছেন, তো সেটা হল আপনার ব্যাপার আল্লাহর সাথে। কাবার মালিক আল্লাহ। তিনিই হলেন তার হিফাজতকারী। আপনি জানেন আর বায়তুল্লাহর মালিক আল্লাহ জানেন। অতঃপর যখন এই সৈন্যদল মিনার কাছে মুহাসসার উপত্যকার নিকট পৌঁছল, তখন আল্লাহ তাআলা একটি পাখির দলকে প্রেরণ করলেন যাদের ঠোঁটে এবং পায়ে পোড়া মাটির কাঁকর ছিল যা ছোলা অথবা মসুরীর দানা সমপরিমাণ ছিল। পাখিরা উপর থেকে সেই কাঁকর বর্ষণ করতে লাগল। যে সৈন্যকে এই কাঁকর লাগল সে গলে গেল, তার শরীর হতে গোশত খসে পড়ল এবং পরিশেষে সে মারা গেল। সানাতে পৌঁছতে পৌঁছতে খোদ আবরাহারও একই পরিণাম হল। এইভাবে আল্লাহ তাআলা নিজ ঘর কাবাকে হেফাজত করলেন। সংক্ষেপে ঘটনা এমনই। এই ঘটনাকে কেন্দ্র সুরা ফিল নাযিল হয়েছে। সুরা ফিলের ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"আর তাদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পাঠান।"ইংরেজি অনুবাদও অনুরূপ, "And He sent against them birds in flocks."এই আয়াতের অর্থ করতে গিয়ে অনেকে ভুলক্রমে বলে থাকেন আল্লাহ আবাবিল নামে পাখি পাঠিয়েছেন। মোদ্দা কথা, আবাবিল পাখীর নাম নয়, বরং এর অর্থ হল, ঝাঁকেঝাঁকে।আবাবিল "শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে, ঝাঁকে ঝাঁকে, যা একটার পর একটা আসে। কারও কারও মতে, শব্দটি বহুবচন। অৰ্থ পাখির ঝাঁক-কোন বিশেষ প্রাণীর নাম নয়।" (তাবারী)।ইবনু হিশাম বলেন, আবাবিল অর্থ জামায়াত বা দলে দলে।"কোনও বিশেষ প্রাণীর নাম নয়, এই পাখি আকারে কবুতর অপেক্ষা সামান্য ছোট ছিল। কিন্তু এ জাতীয় পাখি আগে কখনও দেখা যায়নি। (কুরতুবি)।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন