সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হযরত আসিয়ার ওপর ফেরাউনের নির্মম নির্যাতন


হযরত আসিয়ার জন্ম হয়েছিল মিসরের অধিবাসী মুজাহিমের ঘরে। ঈসা (আ.) এর জন্মের ১৩৬৩ বছর পূর্বে।আসিয়া আরবী যার অর্থ দুঃখী। পুরো নাম আসিয়া বিনতে মুযাহিম। তিনি আব্বাস শহরে বনী ইসরাইল বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন বনী ইসরাইল বংশের একজন সম্ভ্রান্ত, ধনী, বিদ্বান ও সর্বোপরি একজন অতিশয় ধর্মপরায়ণ মানুষ। তিনি ছিলেন ইয়াকুব (আ.) এর পুত্র লেবিয়ার বংশধর।ইবনে আব্বাসের বর্ণনা মতে তিনি মুসা আ এর ফুফু ছিলেন।হযরত আসিয়া প্রাচীন মিশরের বাদশা  ফেরাউনের (দ্বিতীয় রামেসিস) স্ত্রী ছিলেন।মুজাহিম তার প্রিয় কন্যা আসিয়াকে ফেরাউন দ্বিতীয় রামেসিসের সঙ্গে বিয়ে দেন। আসিয়ার নাম কুরআনে নাই তবে ফেরাউনের  স্ত্রী হিসেবে দুবার উল্লেখ রয়েছে।ফেরাউন ছিল অত্যন্ত প্রতাপশালী।হযরত আসিয়া অনেক দয়ালু ও সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করে ন্যায়ের পথে অবিচল ছিলেন। দুনিয়ার আরাম-আয়েসকে পদাঘাত করে আল্লাহর ভালোবাসাকে প্রধান্য দিয়েছেন। হযরত আসিয়ার মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, 'দুনিয়ার সব নারীর ওপর চারজন নারীর মর্যাদা রয়েছে। তারা হলেন হজরত মরিয়ম (আ.), হজরত আসিয়া (আ.), হজরত খাদিজা (রা.)ও হজরত ফাতিমা (রা.)।
একদিন রাজদুরবারের প্রধান জ্যোতিষী ফেরাউনের কাছে এসে বলল—বাদশাহ নামদার। অচিরেই বনী ইসরাঈলের মাঝে একজন সন্তান জম্ম নিবে। তাঁর হাতে আপনার সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য। জ্যোতিষীর এ সংবাদ বনী ইসরাঈলের উপর অত্যাচারের আগুনে ঘি ঢেলে দিল। ফেরাউনের পাষণ্ডতা উথলে উঠলো। জ্যোতিষীর এ অসহনীয় কথায় তাঁর উন্মত্ততা বেড়ে গেল কয়েকগুণ। নিজেকে একটু প্রবোধ দেয়ার জন্য, মনটাকে একটু সুস্থির করার জন্য বনী ইস্প্রাঈলের উপর জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। সে তাদের নবজাতক পুত্র সন্তানদের ধীরে ধীরে নৃশংসভাবে হত্যা করতে লাগল। তবে শুধু কন্যা সন্তানদের জীবিত রাখত।আল্লাহ পাক বলেন, ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে দূর্বল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্র-সন্তা নদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারী।(সূরা কাসাস আয়াত-৪)।
শিশু মুসা (আ.) কে যখন তার মা ফেরাউনের ভয়ে সিন্দুকে ভরে নীল নদে নিক্ষেপ করেন, তা ভাসতে ভাসতে সেই ফেরাউনের ঘাটে গিয়েই ঘুরপাক খেতে থাকে। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত পোহায়! পাপিষ্ঠ ফেরাউন সিন্দুকটি উঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তার অপবিত্র হাতে তা উঠছিল না। হযরত আসিয়া যখন আল্লাহর নামে তা উঠানোর জন্য হাত দেন, সঙ্গে সঙ্গে তা উঠে আসে। সিন্দুক খুলে একটি পুত্রসন্তান দেখতে পেয়ে ফেরাউনের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। সে তাকে তার ভাবী শত্রু মনে করে হত্যা করতে উদ্যত হয়। কারণ সে গণকদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিল, ইসরাইল বংশে এক শিশুপুত্র জন্মগ্রহণ করবে, যার হাতে তার রাজত্ব ধ্বংস হবে। কিন্তু তার স্ত্রী হযরত আসিয়া তাকে লালনপালন করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। হযরত আসিয়ার কোন সন্তান ছিল না। সিন্দুকে সন্তানটিকে দেখে তার মাতৃত্বের আকাংখা জেগে উঠে।ফেরআউন যখন মুসাকে হত্যা করতে চাইল তখন আছিয়া তাকে হত্যা করতে দেয়নি। কুরআনে বর্ণিত- ফেরাউনের স্ত্রী বলল, ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি। প্রকৃতপক্ষে পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না।(সুরা কাসাস, আয়াত-৯) ।হযরত আসিয়ার এই আবদারের কাছে ফেরআউন আর আপত্তি করতে পারেনি। এই শত্রুর ঘরেই মুসার লালন-পালন হয়ে ছিল। আল্লাহর কুদরতের সামনে ফেরাউনি কৌশল শুধু ব্যর্থ ও বিপর্যস্তই হলো না; বরং ফেরাউন ও তার পারিষদ চরম বোকা বনে গেল। আল্লাহ তায়ালা হজরত আসিয়া (আ.) এর অন্তরে শিশু মুসা (আ.) এর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন। তিনি তাকে নিজ ছেলের মতো ভালোবাসতে থাকেন।ফেরআউন ছিল অত্যন্ত প্রতাপশালী, জঘন্য ও কুখ্যাত। নিজেকে সে খোদা বলে দাবি করে। সে আল্লাহর প্রভুত্বকে অস্বীকার করে নিজের মনগড়া আইন-শাসন ও স্বৈরাচারী নীতি মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়।
হযরত আসিয়ার ইসলাম গ্রহন-
হযরত আসিয়া ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। ফেরআউনের সাথে বিয়ে দিলেও তিনি ফেরাউনের মতো হননি।তিনি ছিল দয়ালু ও জ্ঞানী ছিলেন ।ফেরআউনদের মতো অহংকারী ছিল না। সে মুসা ও হারুনের প্রচারকৃত ধর্ম গ্রহন করেছিল। আল্লাহর রসুল মুসা (আ.) যখন ফেরাউনের দরবারে প্রস্তাব রাখলেন এবং তাকে এক আল্লাহর দিকে ডাক দিলেন তখন মুসা (আ.) ও ফেরাউনের মধ্যে বিতর্ক শুরু হলো। বিবি আসিয়া দরবারের আলোচনা ভিতর থেকে শুনছিলেন এবং তিনি মুসার (আ.) কথা শুনে তখনই ভিতরে বসে তাঁর উপর পূর্ণ ঈমান আনলেন। বিবি আসিয়া ছিলেন নারীদের মধ্যে প্রথম যিনি মুসা (আ.) এর উপর ঈমান এনেছিলেন।মো’জেজা দেখে বিবি আসিয়ার মুসার (আ.) প্রতি ঈমান আরো দৃঢ় হলো এবং তিনি তার এই ঈমান আনার কথা তার পরিচারিকার নিকট তুলে ধরলেন।জাদুকরেরা মুসা (আ.) এর মো’জেজা দেখে তাঁর উপর ঈমান আনলো যা ফেরাউনের রাগকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিল এবং সে সমস্ত জাদুকরদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করল।ফেরাউন এরপর মুসা (আ.) সম্পর্কে সীমাহীন উদ্বেগ নিয়ে বিবি হযরত আসিয়ার কাছে গেলেন। মুসার (আ.) বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহের অভিযোগ আনলেন এবং হযরত আসিয়ার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করলেন। কিন্তু হযরত আসিয়া তার দিকে ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে রইলেন এবং এতে ফেরাউন রাগান্বিত হয়ে উঠলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কেন মুসাকে (আ.) অপছন্দ করেন?” ফেরাউন জবাব দিল, “সে আমার প্রভুত্ব অস্বীকার করে অন্য কাউকে প্রভু হিসেবে মেনে নিয়েছে।” তখন বিবি আসিয়া বলে উঠলেন, “সে যা বলছে তা সত্য। তাঁর কথা মেনে নেও এবং আল্লাহকে একমাত্র প্রভু হিসেবে গ্রহণ কর। তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কর না এবং বাড়াবাড়ি কর না।”
হযরত আসিয়া এই পরিবর্তন দেখে ফেরাউন হতভম্ব হয়ে পড়ল এবং নিজের ঘরেও যে মুসার (আ.) ধর্ম ঢুকে পড়েছে তা বুঝতে পারল। সে রাগে বিস্ফোরিত হতে থাকল এবং প্রহরীদের ডেকে বিবি আসিয়াকে বন্দী করার নির্দেশ দিল। শুধু বন্দী করেই সে ক্ষান্ত হয় নি সে তাঁর উপর নির্যাতন শুরু করল হযরত আসিয়ার ওপর নেমে আসে জুলুম-নির্যাতনের খড়গ। ফেরাউনের নির্দেশে তাকে জিঞ্জিরাবদ্ধ করা হয়। বিরাট পাথরের নিচে তাকে চাপা দিয়ে রাখা হয়। ফেরাউন তার হাত ও পায়ে পেরেক দিয়ে আটকিয়ে মাথার ওপ গরম তেল ঢেলে দিয়েছিলেন। যার ফলে তার মাথার চুল ও চামড়াগুলো ওঠে গিয়েছিল। প্রস্তরাঘাতে তার পবিত্র দেহকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়। কিন্তু এসব অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়নেও হজরত আসিয়ার বিশ্বাসে চুল পরিমাণ পরিবর্তন হয়নি। বরং তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে মহান প্রভুর প্রভুত্বের স্বীকৃতি দিয়ে যে নির্যাতন ভোগ করছিলেন, তাতেই তিনি ঈমানের স্বাদ পাচ্ছিলেন। সে সময় ফেরেশতারা তার সামনে জান্নাতের দৃশ্য তুলে ধরেছিলেন। ফলে ফেরাউনের শাস্তি তার কাছে সহজ হয়ে। তাঁকে ও তাঁর সন্তানদের দুর্গন্ধময় একটি কারাগারে রাখা হলো। তাদের কারাগারে মৃত লাশ এনে রাখা হতো তাদের কষ্ট দেয়ার জন্য। তাদের খাওয়া ও পানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় হযরত আসিয়া ও তাঁর সন্তানরা কষ্ট করছিল। তার সন্তানদের পানির অভাবে মৃতপ্রায় অবস্থা। দুই বছরের শিশু সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন কিন্তু না খেয়ে থাকার দরুন সেটাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও তিনি এই সংকটেও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস হারান নি। তিনি সবরের সাথে নিজের ঈমানের উপর অটল ছিলেন। ফেরাউনের নির্দেশে তার প্রহরী ও সাঙ্গরা এসে হযরত আসিয়াকে নানাভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু হযরত আসিয়া তাঁর বিশ্বাসে অটল ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে তওহীদের উপর অটল ছিলেন।বিবি আসিয়ার দৃঢ়তা দেখে শেষমেষ ফেরাউন নির্দেশ দিলেন তাঁকে অগ্নিকু-ে ফেলার জন্য। তখন বিবি আসিয়া বলে উঠলেন, “মৃত্যু ভয়ে আমি ভীত নই। একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে আমি ভয় করি না।” বিবি আসিয়ার মুখে এই কথা শুনে ফেরাউন আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠল এবং নির্দেশ দিল তাঁর সন্তানদের তাঁর সামনে হত্যা করতে। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখার জন্য বহু লোক জমায়েত হলো। অনেকেই বিবি আসিয়াকে অনুরোধ করল ফেরাউনকে প্রভু বলে মেনে নিতে তাহলে তাঁর সন্তানরা প্রাণভিক্ষা পাবে কিন্তু পুণ্যাত্মা হযরত আসিয়া কিছুতেই তাদের কথায় রাজি হলেন না। ফেরাউন এ দৃশ্য দেখে প্রহরীদের নির্দেশ দিল এবং প্রহরীরা তাঁর বড় ছেলেকে এনে গরম তেলের মধ্যে ছেড়ে দিল! এই বিভৎস দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই আঁতকে উঠলেও তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র ভাবলেশ দেখা গেল না। তিনি পূর্বের ন্যায় সাবের ছিলেন। পাষ- ফেরাউন আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করল সে তাঁর মত পরিবর্তন করেছে কিনা। কিন্তু তিনি পূর্বের ন্যায় জবাব দিলেন। এবার ফেরাউন একে একে তাঁর পরবর্তী ছয় সন্তানকেও ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ের মধ্যে ফেলে পুড়িয়ে হত্যা করল। বিবি আসিয়া পূর্বের ন্যায় দৃঢ়চিত্তে বসে বসে তাঁর সন্তানদের পরিণতি দেখতে লাগলেন। সবশেষে তাদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সন্তান দুই বছরের দুধের মাসুম শিশুর পালা। সেই সন্তানকে গরম তেলে ফেলতে জল্লাদ যখন সন্তানকে ধরে টানছিল সন্তান মাকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে চিৎকার করে কান্না করছিল। কিন্তু মা নিরূপায়। জল্লাদ মায়ের বুক থেকে সন্তানকে কেড়ে নিয়ে গরম তেলে ছুঁড়ে মারল। কী মর্মান্তিক দৃশ্য! তবুও হযরত আসিয়া তাঁর ঈমান থেকে একচুল সরলেন না।
এতকিছু ঘটার পরও যখন হযরত আসিয়া নির্বিকার, ধীর ও সত্যে অটল তখন ফেরাউন তাঁকে শাস্তি দেয়ার জন্য আরো অধিক পরিমাণে মরিয়া হয়ে উঠল। হযরত আসিয়া এমন একজন সৌভাগ্যবতী নারী যিনি পৃথিবীতে থাকতেই জান্নাতের দর্শন লাভ করেছিলেন। এ বিষয়ে আমরা রসুলাল্লাহর একটি হাদিস পাই। রসুলাল্লাহ বলেন, ফেরাউন হযরত আসিয়ার দুই হাত ও দুই পায়ে লোহার পেরেক পুঁতে রাখত। যখন ফেরাউনের লোকেরা চলে যেত তখন মালায়েকগণ তাঁকে ছায়া প্রদান করত। হযরত আসিয়া বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার নিকটে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করুন এবং ফেরাউন ও তার অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে আমাকে মুক্তি দান করুন’। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের ঘর উন্মুক্ত করে দেন (সুরা তাহরীম ১১, মুসনাদে আবী ইয়ালা, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫০৮)। এর পরই তাঁর শাহাদাত কবুল হয়। এই পর্যায়ে তাকে হত্যা করার জন্য পেষণ যন্ত্রের মধ্যে ঢুকানো হলো। ধীরে ধীরে পেষণ যন্ত্র হযরত আসিয়াকে পিষে ফেলা শুরু করল। তীব্র যন্ত্রণায় তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন। তাঁর শরীর থেকে চামড়া উঠে যেতে শুরু করল। ধীরে ধীরে শুধু একটি কথাই বললেন, “আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমদাতা নেই, আল্লাহ তুমি এদের ক্ষমা করো।” এভাবেই ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে শাহাদত বরণ করলেন এই মহিয়সী নারী।আল্লাহর শেষ রসুল (স.) একবার মাটিতে চারটি দাগ কেটে সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কী জানো এগুলো কি?” সাহাবীগণ বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন।” রসুল (স.) বললেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ চার জান্নাতী নারী হচ্ছেন খাদিজা বিনতে খুয়ালিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ, মরিয়ম বিনতে ইমরান এবং আসিয়া বিনতে মুজাহিম।”
হযরত আসিয়া কাফের ও জালিম স্বামীর জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেও ঈমান ও ধৈর্যের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা বিশ্ব নারী সমাজের জন্য এক শাশ্বত আদর্শ হয়ে আছে।

গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...