সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আল্লাহর ওপর ভরসা কেমন হওয়া উচিত?

 

মো.আবু রায়হান : আল্লাহর ওপর ভরসা করা মুসলিমদের আবশ্যকীয় কর্তব্য।আরবি তাওয়াক্‌কুলের’ অর্থই হলো আল্লাহকে নিজের অভিভাবক নিযুক্ত করা এবং তাঁর উপর পূর্ণভাবে ভরসা করা।‘(হে রাসূল) বলুন, আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। তাওয়াক্‌কুলকারীরা তাঁর উপরই নির্ভর করে।’ (যুমার আয়াত - ৩৮)।বিশুদ্ধতার সাথে আল্লাহর উপর ভরসার সাথে আবশ্যক হলো জীবিকার উপায়-উপকরণ অনুসন্ধান করা ও কাজ করা। কাজ না করে আল্লাহ রিজিকের মালিক, তিনিই খাওয়াবেন,তিনিই করোনা থেকে রক্ষা করবেন। আপনার কথা সঠিক। আপনার কথায় যথেষ্ট পরিমাণে আল্লাহর ওপর ভরসা আছে কিন্তু আগেই বলেছি, আল্লাহর উপর ভরসার সাথে আবশ্যক হলো জীবিকার উপায়-উপকরণ অনুসন্ধান করা ও কাজ করা। এ কাজটি আপনাকেই করতে হবে। আল্লাহ আপনাকে এমনি এমনি মুখে তুলে খাওয়াবেন না। আপনি চেষ্টা করবেন, চেষ্টার ফল দেবেন আল্লাহ। আল্লাহর ওপর ভরসা কেমন হবে এ সংক্রান্ত একটি হাদিস জেনে নেই, ‘একদিন, নবী (সা.) এক বেদুইনকে লক্ষ্য করলেন যে, সে তার উটটি না বেঁধে চলে যাচ্ছে। তখন তিনি বেদুইনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি তোমার উটটি বেঁধে রাখছো না কেন?’
জবাব বেদুইন বললো, ‘আমি ইশ্বরের (আল্লাহ) উপর ভরসা রেখেছি।’ তখন নবী (সা.) বললেন, ‘তোমার উটটি আগে বেঁধে রাখ, তারপর আল্লাহ উপর আস্থা রাখ।’( তিরমিযী) ।হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকার নাম আল্লাহর উপর ভরসা (তাওয়াক্কুল) নয়, বরং আল্লাহর দেয়া সুযোগ সুবিধা ও উপায় উপকরণসমূহ কাজে লাগিয়ে ফলাফলের জন্য তাঁর উপর নির্ভর করার নামই হচ্ছে আল্লাহ ভরসা।আল্লাহর ওপর ভরসার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো নবী (সা.) মক্কা হতে মদিনা হিজরতের সময় ছওর গুহায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় বাইরে কাফের মুশরিকদের কোলাহল শব্দ শোনে নবী (সা.)'র সঙ্গী হযরত  আবু বকর (রা.) ভয় পেয়ে গেলেন। ভাবলেন এই বুঝি ধরা পড়তে হয়,আমরা তো দুজন মাত্র। নবী (সা.)আবু বকরের অভিব্যক্তি বুঝতে পেরে বললেন, 
 হে আবু বকর! আল্লাহ্ আমাদের তৃতীয় জন। অর্থাৎ আমাদের সাহায্যকারী।” (বুখারী ও মুসলিম)।যে কথা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ এভাবে বর্ণনা করেছেন: “যখন তাকে কাফেররা বহিষ্কার করেছিল, তিনি ছিলেন দুজনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ্ আমাদের সাথে আছেন।"এই করোনা মহামারিসহ যেকোনো বিপদ আপদ দুর্যোগে আমাদের ভরসা করতে হবে আল্লাহর ওপর। সাথে সাথে নিজেদের সচেতন ও বিপদ হতে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...