ইসলাম দিয়েছে আইসোলেশনের ধারণা

 


মো.আবু রায়হান : করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকে আইসোলেশন কথাটি খুব বেশি আলোচিত হচ্ছে। আইসোলেশনের বহুবিধ অর্থ থাকলেও  রোগীকে আলাদা ব্যবস্থায় রেখে চিকিৎসা করাকে আইসোলেশন বুঝানো হয়। ‘The complete separation from others of a person suffering from contagious or infectious disease.’ কারো শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলে, সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হলে, মূল কথা করোনার উপসর্গ হয়েছে তা ধরা পড়লে তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।আইসোলেশনের সময় চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকতে হয় রোগীকে। অন্য রোগীদের কথা ভেবে হাসপাতালে আলাদা জায়গা তৈরি করা হয় এসব রোগীদের জন্য। অন্তত ১৪ দিনের মেয়াদে আইসোলেশন চলে। অসুখের গতিপ্রকৃতি দেখে তা বাড়ানোও হতে পারে। আইসোলেশনে থাকা রোগীর সঙ্গে বাইরের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না। তাদের পরিবার পরিজনের সঙ্গেও এই সময় দেখা করতে দেওয়া হয় না। জরুরী প্রয়োজনে দেখা করতে দেওয়া হলেও অনেক বিধিনিষেধ মেনে অনুমতি মিলে।
যেহেতু করোনা অসুখের কোনো প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি, তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময় কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এমন কিছু ওষুধ ও পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। যাদের শরীরে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও করোনার প্রকোপ অল্প, তারা এই পদ্ধতিতে সুস্থও হন। যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও রোগের হানা বড়সড় রকমের, তাদের পক্ষে সেরে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।আজ আইসোলেশন নিয়ে যত কথা হচ্ছে তার অস্তিত্ব  মহানবী (সা.)'র যুগে ও পরবর্তীতেও ছিল। কিন্তু আইসোলশন শব্দটি সেভাবে ব্যবহৃত না হলেও আইসোলেশনের কার্যক্রম যেভাবে পরিচালিত হয় তার সব সুযোগ সুবিধায় সেখানে ছিল।মহানবী (সা.)'র যুগে অসুস্থদের সেবা-শুশ্রূষা করা হতো দুইভাবে। মহানবী (সা.) যুদ্ধে আহত সাহাবিদের জন্য যুদ্ধের ময়দানের অনতিদূরে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যোপযোগী স্থানে তাঁবু স্থাপনের নির্দেশ দিতেন। তাঁবু ছিল আহত অসুস্থ সাহাবিদের অস্থায়ী হাসপাতাল।বর্তমান কালের আইসোলেশনের সঙ্গে তুলনীয়। খন্দকের যুদ্ধের সময় মুসলমানরা চিকিৎসাসেবার জন্য স্বতন্ত্র তাঁবু স্থাপন করে।হযরত সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) যখন যুদ্ধে আহত হন, রাসুল (সা.) তাঁকে এই স্বতন্ত্র তাঁবুতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেসব তাঁবুতে আহতদের সেবার জন্য নিযুক্ত থাকত নারী সাহাবি অন্যান্যরা চিকিৎসা সেবায় নিযুক্ত  থাকতেন। এই চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিককালের আইসোলেশনের সঙ্গে সাযুজ্য রাখে।যদি বলি বর্তমান পৃথিবীর ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল ও চিকিৎসার ধারণাটি এখান থেকেই মানুষ নিয়েছে তাহলে তা অত্যুক্তি হবে না। 

মহামারির সংক্রমণ এড়াতেও ইসলামে আইসোলেশনেরও ব্যবস্থা ছিল।আইসোলেশন পালনে ইসলামের কোনো বিধি-নিষেধ নেই। কেননা এতে নিজে যেমন নিরাপদ থাকা যায় তেমনি পরিবারের অন্যরাও নিরাপদ থাকতে পারে। সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এ ধরনের কাজের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) (৬৩৪-৬৪৪ খ্রি.)'র যুগে ফিলিস্তিনে আমওয়াস মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তখন হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) অনুগতদের উদ্যেশে ভাষণে বলেন, ‘হে লোক সকল, যখন এ ধরনের মহামারী দেখা দেয়, তখন তা আগুনের মতো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।’ এরপর তিনি সবাইকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে ভাগ করে নির্দেশ করেন, ‘পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড়ে চলে যাও। আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যে, কেউ কারো সঙ্গে মিলিত হতে পারবে না।’আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে তারা দীর্ঘদিন পাহাড়ে অবস্থান করে। তখন যারা আক্রান্ত ছিলেন, তারা মৃত্যুবরণ করে শাহাদত লাভ করেন। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা মহামারী তুলে নেন।হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) সুস্থদের নিয়ে নগরীতে প্রত্যাবর্তন করেন। (ইবনুল আসির, আল-কামিল ফিত তারিখ, মুখতাসারু তারিখি দিমাশক)।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল