মসজিদ বন্ধ না খোলা!
মো.আবু রায়হান : করোনা ভাইরাসের কারণে মসজিদ বন্ধ করা হয়নি,মসজিদ খোলা কিন্তু মুসল্লি সমাগম কমানোর কথা বলা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, মসজিদে জামাত চালু রাখার প্রয়োজনে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ অনধিক পাঁচ জন এবং জুমার জামাতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন। বাইরের মুসল্লি মসজিদে জামাতে অংশ নিতে পারবেন না।এই ঘোষণার পর একদল আলেম মসজিদ খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে অন্যদিকে আল্লামা শফীসহ একদল আলেম সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।যারা মসজিদে জনসমাগমের পক্ষের তারা চরম প্রতিবাদ করেছেন।তারা আল্লাহর গজব থেকে বাঁচতে বেশি বেশি মসজিদে আগমনের কথা বলেন। কিন্তু অপরপক্ষ বলছেন মসজিদে আসা একমাত্র ইবাদত নয়। আরও বহু নেক আমল আছে। মসজিদে মুসল্লি সীমিত করার বিরুদ্ধে যারা তারা এমন ভাবখানা দেখাচ্ছেন যে ইহুদি নাসারা মসজিদ চিরতরের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে! আর খোলা হবে না।ইমান চলে গেল। সব ইহুদী নাসারা হয়ে গেছে ইত্যাদি। অথচ মসজিদ খোলা রয়েছে তা বারবার বলা হচ্ছে!করোনা সংক্রমিত হবার আশংকায় ও জীবন হানি ঠেকাতে মসজিদে মুসল্লি সমাগম শুধু সীমিতকরণের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘তার চেয়ে বড় জালেম আর কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম নিতে বাধা প্রদান করে এবং সেগুলো ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়।’ (সূরা বাকারা-১১৪)।
কোনো মুসলিম শাসক মসজিদ কোন কালে বন্ধ করেছেন এমন ইতিহাস নজিরবিহীন। তারা কেন ধর্মীয় আবেগ অনুভূতি নিয়ে খেলবেন?
ইবনুল হুমাম (রহ.) বিনা প্রয়োজনে মসজিদ বন্ধ রাখাকে, মানুষকে মসজিদ থেকে বাধা প্রদানের অন্তর্ভুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন। তাহলে বোঝা যায় বিশেষ কারণে বন্ধ রাখা যেতে পারে।
বৃষ্টির জন্যও তো নবীজি (সা.) মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়ার কথা বলেছেন।হযরত বেলাল (রা.)আজানের সময় ঘোষণা দিয়েছেন সাল্লু ফি রিহালিকুম অর্থাৎ যার যার ঘরে নামাজ পড়ে নিন। জীবনরক্ষা শরিয়তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেন, আজান শোনার পর বিনা ওযরে যে ব্যক্তি নামাজের জামাতে শরীক হয় না তার একাকী নামাজ পড়া কবুল হবে না। জানতে চাওয়া হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওজর বলতে কী বুঝায়? তিনি বললেন, বিপদ অথবা রোগব্যাধি। (আবু দাউদ, ইবনেমাজাহ)।এই হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে ন্যায় সঙ্গত ওজর আপত্তি থাকলে মসজিদে না গেলেও চলবে। এখন ভাবুন তো করোনা একজনের কাছ থেকে আরেকজনকে যেভাবে সংক্রমিত করছে এতে নিজের সুরক্ষার জন্য কি উপরিউক্ত হাদিস অনুসরণ করা যায় না? তাহলে এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেন মসজিদে না গিয়ে একা নামাজ আদায় করা যাবে না? মসজিদ মুসলমানদের হৃদয়ের স্পন্দন ও আবেগের স্থান। সবার মঙলের কথা চিন্তা করাও ইসলামের শিক্ষা।আপনি সুস্থ কিন্তু আপনার পাশের জন, তিনি তো সুস্থ নাও থাকতে পারেন। তার স্পর্শে আপনিও তো আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্য সামাজিক দূরত্ব, জনসমাগম কয়েকটা দিন এড়িয়ে চললে কি খুব বেশি অসুবিধে ? হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যা পছন্দ করো তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করবে। আরো বর্ণনায় রয়েছে, প্রতিবেশীর জন্যও পছন্দ করবে।” (সহিহ মুসলিম)।আজ সবার হৃদয় পড়ে আছে মসজিদে কিন্তু সাবধানতার জন্য মসজিদে যেতে পারছি না।স্বাভাবিকভাবেই মনটা খুবই ভারাক্রান্ত। আমরা বিপদে আপদে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করি, মসজিদে গিয়ে সিজদাবনত হয়ে মাবুদের কাছে পরিত্রাণ চাই। এই করোনার বিস্তার ও প্রাণনাশ আমাদের ঘরে আবদ্ধ করে রেখেছে। এই ঘর থেকেই মাবুদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে, সিজদায় লুটে পড়তে হবে, আশু নিস্তার চাইতে হবে।তাই আসুন মন খারাপ না করে কয়েকটি দিন বাড়িতে থেকে ইবাদতে মশগুল হই। ঘরে থেকেও জামাতে নামাজের সওয়াব রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দা যদি কোনো নেককাজ নিয়মিত পালন করেন, অতঃপর কোনো রোগ বা ভ্রমণের অপরাগতার কারণে সেই আমলে ছেদ পড়ে, তাহলে গৃহ অবস্থানকালীন সুস্থতার দিনগুলোতে কৃত আমলগুলোর সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, কিতাবুল জানায়েজ)।হাদিসে এরশাদ হয়েছে, সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তার (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তার (আরশের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। ওই যুবক, যে তার প্রতিপালকের ইবাদতে লালিত-পালিত হয়। ওই ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে (এখান থেকে বেরুবার পর থেকে আবার ফেরা পর্যন্ত)...। (সহিহ বোখারি)।
ইনশাআল্লাহ শিগগিরই মসজিদগুলো আবার কাতারে কাতারে পরিপূর্ণ হবে।মসজিদে বিরাজ করবে বেহেশতি আবহ।শেষ করছি তুর্কি জাতীয়তাবাদী কবি জিয়া গোকাল্পের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে, 'Mosques are our barracks. domes our helmets, minarets our bayonets, believers our soldiers.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন