সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আজ মহিমান্বিত শবেবরাত ফজিলত ও আমল






সারা মুসলিম দুনিয়ায় আজি এসেছে নামিয়া শবে-বরাত,
রুজি-রোজগার-জান-সালামৎ বণ্টন-করা পুণ্য রাত।
                                                -শবেবরাত, কবি গোলাম মোস্তফা

হিজরি পঞ্জিকার অষ্টম মাস তথা শাবান মাসের ১৫ তারিখ অর্থাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পবিত্র শবেবরাত পালিত হয়ে থাকে। হিজরি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যে পালিত মুসলিমদের একটি পূণ্যময় মহিমান্বিত রজনী শবেবরাত।শবেবরাতের  আরবি হলো লাইলাতুল বরাত। ফারসি শব আর আরবি লাইলাতুন অর্থ রজনী, রাত। বরাত অর্থ হলো মুক্তি, পরিত্রাণ, ভাগ্য। তাহলে সমন্বিত অর্থ দাঁড়ায় পরিত্রাণের রজনী। এই রাতে আল্লাহ মুসলমানদের মাগফিরাত বা গুনাহ থেকে পরিত্রাণ দেন, তাই এ রাতের নামকরণ করা হয়েছে লাইলাতুল বরাত বা শবেবরাত। কুরআন, হাদিস, তাফসির, ফিকহ ও বিভিন্ন গ্রন্থে শবেবরাতের বর্ণনা আছে ভিন্ন নামে, ভিন্ন শব্দে ও আলাদা পরিভাষায়।কতিপয় আলেমদের অভিমত কুরআনের পরিভাষায় শবেবরাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বলা হয়েছে। হাদিসের পরিভাষায় এটাকে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (মধ্য শাবানের রজনী) বলা হয়। তাফসির, হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিকহের গ্রন্থসমূহে শবেবরাতের আরো কিছু নামের উল্লেখ আছে। যেমন, লাইলাতুল কিসমাহ (ভাগ্যরজনী), লাইলাতুল আফউ (ক্ষমার রাত), লাইলাতুত তাওবাহ ( তাওবার রাত), লাইলাতুল ইৎক (জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত) এবং লাইলাতুত দোয়া (প্রার্থনার রাত) ইত্যাদি।শবেবরাতকে ধর্মীয় আবরণে ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালনের প্রধান দুটো কারণ রয়েছে -
প্রথমত: ইসলামে বিশ্বাসীদের একাংশের মতে, এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। 
দ্বিতীয়ত:এই রাতে আল্লাহ আগামী এক বছরের জন্য তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন বলে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের ধারণা।যেমন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন , অর্ধ শাবানের রাতের কার্যক্রম হলো, এ বছর যারা জন্মগ্রহণ করবে এবং যারা মারা যাবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রাতেই মানুষের আমল পৌঁছানো হয়। এতেই তাদের রিজিকের বাজেট করা হয়। (ফাজায়েলে আওক্বাত, বায়হাকি)।
শবেবরাত নিয়ে কুরআন ও হাদিসে  কি কোনো বর্ণনা আছে ? শবেবরাত পালনের পক্ষে ওলামায়ে কেরাম  কুরআনে শবেবরাত থাকা নিয়ে দলিল হিসেবে  উপস্থাপন করেন সূরা আদ-দুখান এর ৩ নং আয়াতকে। তারা কুরআন নাযিলের বরকতময় রাতকে শবে বরাত হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।আল্লাহ পাক বলেন “আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।”(সূরা দুখান আয়াত ৩-৪)।কুরআনের ব্যাখ্যাকারীদের অনেকে আয়াতে উল্লিখিত লাইল' থেকে শবেকদর উদ্দেশ্য বললেও কয়েকজন ব্যাখ্যাকারী এর অর্থ শবেবরাত বলেছেন।এ ব্যাপারে হযরত ইকরিমা (রা.) সহ কয়েকজন তফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখানের দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত্রি বলতে শবেবরাত বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন)।সিহাহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিসগ্রন্থের কোনো কোনো হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়।শবেবরাতে মাঝে মাঝে কবর জিয়ারত করাও প্রমাণিত। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “রাসুল (সা.) মধ্য শাবানের রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকিতে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন।” তিনি বলেন, ‘এ রাতে মহান আল্লাহ বনি কালবের বকরির পশমের সংখ্যার চেয়েও বেশিসংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।’  (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।
শবেবরাতের ফজিলত নিয়ে প্রচলিত হাদিসের সনদের মান নিয়ে মতভিন্নতা বিদ্যমান থাকলেও  আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.) ও নাসিরুদ্দিন আলবানি (রহ.)-এর মতে, শবেবরাতের ফজিলত বিষয়ে বর্ণিত হাদিস সহিহ ও বিশুদ্ধ। আল্লামা তকি উসমানি  লিখেছেন, ‘শবেবরাতের ফজিলত ১০ জন সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে এ রাতের বিশেষ গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।আল্লামা আবদুর রহমান মোবারকপুরী লেখেন, 'শবেবরাতের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে তা প্রমাণ করে যে এই রাতের ফজিলতের ভিত্তি আছে। যারা শবেবরাতের কোনো শরয়ি ভিত্তি নেই বলে ধারণা রাখে, তাদের বিরুদ্ধে হাদিসগুলো প্রমাণ বহন করে।' (তুহফাতুল আহওয়াজি)।আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর মতামতও প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, 'মধ্য শাবান রাতের ফজিলত বিষয়ে অনেক হাদিস রাসুল (সা.) ও সাহাবা, তাবেয়িগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো শবেবরাতের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। 
হযরত ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘এমন পাঁচটি রাত রয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না। সেই রাতগুলো হলো, জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, দুই ঈদের রাত।’ (সুনানে বায়হাকি)।বিভিন্ন সহিহ হাদিসে বর্নিত আছে, হযরত রাসুলুল্লাহ (সঃ) এ মাসে বেশি বেশি নফল রোযা পালন করতেন। শাবান মাসের রোযা ছিল তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এ মাসের শুরু থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং কখনো কখনো প্রায় পুরো শাবান মাসই তিনি নফল রোজা পালন করতেন।  এই রোজা পালনের মধ্য দিয়ে রমজান মাসের রোজার একটি প্রস্তুতি হয়ে যেত। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক রোজা আর অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কয়েক দিন ছাড়া সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন।’ (তিরমিজি)।শাবান মাসজুড়ে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলতের কথা উপরিউক্ত হাদিস থেকে জানা যায়। 
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা.) নবীজি (সা.)-কে শাবান মাসে অধিক রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষ এ মাসের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। অথচ এটি এমন একটি মাস, যে মাসে আল্লাহর কাছে বান্দাদের আমলনামা পেশ করা হয়। অতএব আমি চাই, আমার আমলনামা এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।' (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ)।একটি হাদিসে ১৫ শাবান রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে।হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘১৫ শাবানের রাত যখন হয়, তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে পালন করো এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ প্রথম আসমানে এসে বলেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। আছে কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ )।

সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আর বাৎসরিক বলতে শাবান মাসে আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। তাই শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও নফল ইবাদত করার বিশেষ তাগিদ রয়েছে।আইয়ামে বিজ তথা প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার ব্যাপারে তো হাদিস শরিফে উৎসাহিত করা হয়েছে। আইয়ামে বিজ এর রোজা আদি পিতা হযরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)ও পালন করতেন, যা মূলত সুন্নত। সুতরাং তিনটি রোজা রাখলেও শবে বরাতের রোজার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি জিনিসের অসিয়ত করে গেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে—প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তিনটি রোজা রাখা।’ (বুখারি, মুসলিম )।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) উঠে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন, এতে এত দীর্ঘ সময় ধরে সিজদা করলেন যে আমার ভয় হলো তিনি মারাই গেছেন কি না। এ চিন্তা করে আমি বিছানা থেকে উঠে রাসুল (সা.)-এর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিই, এতে আমার বিশ্বাস হলো তিনি জীবিত আছেন। তারপর নিজ বিছানায় ফিরে এলাম। এরপর তিনি সিজদা থেকে মাথা ওঠালেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কি ধারণা হয়েছে যে নবী তোমার সঙ্গে সীমা লঙ্ঘন করেছে? আমি বলি, জি না, হে আল্লাহর রাসুল! তবে আপনার দীর্ঘ সময় ধরে সিজদার কারণে আমার মনে হয়েছে আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি জানো, আজকের এ রাতটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এ রাতটি অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দাদের প্রতি বিশেষ করুণার দৃষ্টি দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের দয়া করেন। তবে হিংসুক লোকদের তার অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন।"
শবেবরাত অনেক ফজিলত ও বরকতপূর্ণ। কিন্তু কিছু লোক এমন আছে, যারা এ রাতের ফজিলত ও বরকত থেকে বঞ্চিত থাকে। যারা পাপী জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন না। এ পবিত্র রাতে যেসমস্ত লোকের জন্য দয়া ও ক্ষমার দরজা বন্ধ থাকে। এক. মুশরিক। দুই. হিংসা বিদ্বেষপোষণকারী। তিন. ডাকাত। চার. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান। পাঁচ. অন্যায়ভাবে হত্যাকারী। ছয়. জিনা-ব্যভিচারকারী। সাত. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী। আট. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী। নয়. মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি। (শুআবুল ঈমান)।অপর একটি হাদীসে বলা হয়েছে , হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক-বিদ্বেষী লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান)।
শবেবরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নামাজ নেই।যথাসম্ভব ছালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, ছালাতুল হাজাত,ছালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।এই রাতে তসবিহ-তাহলিল, দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া,তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা, কুরআন তেলাওয়াত বেশি বেশি করা, বিশেষ করে সুরা দুখান ও অন্যান্য ফজিলতপূর্ণ সুরা তেলাওয়াত করা।নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মুমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা। সম্ভব হলে রাত জেগে ইবাদত করা, একই ইবাদত দীর্ঘ সময় ধরে না করে একের পর এক বিভিন্ন নফল ইবাদত করতে থাকলে ঘুম চলে যাবে। গোটা রাত জাগা সম্ভব না হলে রাতের বেশির ভাগ সময় ইবাদতে মশগুল থাকতে চেষ্টা করা।কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরা। এ রাতে কবর জিয়ারতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে।কিন্তু  বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মসজিদে না গিয়ে ইবাদত গুলো বাসায় একাকী কিংবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে আদায় করতে পারেন। শুধু শবেবরাত উপলক্ষে নয় সব সময় মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের নেক আমল করার তাওফিক এনায়েত করুন।আমিন

লেখক, মো. আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...