সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শ্রীলঙ্কার নির্বাচন : উদ্বিগ্ন মুসলিম সম্প্রদায়



দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ১৮ নভেম্বর অষ্টমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভারত মহাসাগরের এই সর্ববৃহৎ দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে।এরমধ্যে দিয়ে শ্রীলঙ্কা এখন গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার ভাই শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের হাতে মূল ক্ষমতা ন্যস্ত হলো। ২১ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় এক অনুষ্ঠানে বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ান শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছোটভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে।গুরুত্বপূর্ণ দুটো পদে আপন দুই ভাইয়ের নির্বাচিত হবার ঘটনা শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে এই প্রথম ঘটল। শুধু তাই নয়, পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না তা অনুসন্ধানের দাবি রাখে। যদিও এর আগে শ্রীলঙ্কায় এদুটো গুরুত্বপূর্ণ পদে মা মেয়ের শাসন লঙ্কানরা প্রত্যক্ষ করেছেন। শ্রীলঙ্কায় এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গোতাভায়া রাজাপাকসে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে তার বিরোধী সাজিথ প্রেমাদাসাকে পরাজিত করেন।৭০ বছর বয়সী সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোতাভায়া রাজাপাকসে এক সময়  প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের শাসনামলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।২০০৫-২০১৫ সাল পর্যন্ত দুই দফায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তার আপন বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে।দুই ভাই মিলে সেসময় ৩৭ বছর ধরে চলা তামিলদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায়। এবারের নির্বাচনে গোতাভায়া রাজাপাকসে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পান। সিংহলি অধ্যুষিত এলাকায় ছিল তার ভোট ব্যাংক। বৌদ্ধদের কাছে ছিলেন জনপ্রিয়।নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান মাহিন্দা দেশাপ্রিয়া জানান , ১ কোটি ৫৯ লাখ ৯ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটার ভোট দেন। 
শ্রীলঙ্কা ভারতের দক্ষিণ উপকূল হতে ৩১ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। ১৯৭২ সালের আগে এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি সিলন নামেও পরিচিত ছিল। ৬৫৬০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের শ্রীলংকার ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বৌদ্ধ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হিন্দু জনগোষ্ঠি যারা মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ।  মুসলিম রয়েছে ১০ শতাংশ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ৭ শতাংশ।সিংহলি সম্প্রদায় শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা মুর নামেও পরিচিত। তারা দেশটিতে তৃতীয় বৃহত্তম জাতিগত সম্প্রদায়।শ্রীলঙ্কা আদম পিক (আদম চূড়া বা শ্রী পদ বা পবিত্র পদচিহ্ন) শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের শ্রীপাড়া প্রদেশে অবস্থিত একটি পর্বত চূড়া। যেখানে আদি মানব হযরত আদম (আ.) 
কে প্রেরণ করা হয়েছিল। এখনো সেখানে তাঁর পদচিহ্ন বিদ্যমান।এদিকে শ্রীলঙ্কা প্রাচীনকাল থেকেই বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।সম্ভবত শ্রীলঙ্কাই হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র  অমুসলিম দেশ, যেখানে টেলিভিশন এবং রেডিওতে ৫ ওয়াক্ত নামাজের আজান সম্প্রচারিত হয়।বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় ১৫শ’টি মসজিদ, ১০০টি কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র এবং ২০০টির মতো মাদরাসা ও স্বতন্ত্র ইসলাম শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। যেগুলো ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত।সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে আরবে নবী মুহাম্মদ (সা.)এর আগমনের পূর্ব হতে নৌপথে আরব সাগর, ভারত সাগর হয়ে আরব বণিকদের মালাক্কা প্রণালী হয়ে চিনের ক্যান্টন পর্যন্ত যাতায়াত ছিল। পরবর্তীতে আরব বণিকরা ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে ব্যবসার পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম প্রচারে নিয়োজিত হন। সুতরাং শ্রীলঙ্কায় প্রথম মুসলমানরা আসে আরব বনিকদের মাধ্যমে। বাণিজ্যিক সুবিধার  জন্যই তখনকার স্থানীয় শাসকেরা আরব বণিকদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিতেন। বাণিজ্য দলের কর্মচারীরা শ্রীলঙ্কায় এসে সিংহলি মেয়ে বিয়ে করতেন। প্রথম দিকে আরব বণিকরা আসা যাওয়া উপরই থাকতেন। পরবর্তীতে তারা শ্রীলঙ্কায় স্থায়ীভাবে বসবাস  শুরু করেন। সেসময় মুসলমানরা কলম্বো, ক্যান্ডিতেও  থাকতে শুরু করেন। কিছুদিন পর শ্রীলংকায় মালয় মুসলমানরা এসে বসবাস করতে থাকেন।এক সময়ে শ্রীলঙ্কায় পারসিক, ভারতীয় মুসলমানদের আগমন ঘটে। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের  বিভিন্ন অংশ থেকে মুসলমানরা শ্রীলঙ্কায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন।সেইসময় ভারতের উপকূলীয় কেরালা ও অন্ধ্র প্রদেশের অনেক জায়গায় মুসলিম রাজ্য ছিল।  শ্রীলঙ্কার মুসলমানদের মধ্যে এখনও আরব প্রভাব সুষ্পষ্ট। শ্রীলঙ্কায় মুসলমানদের উপর জুলুম-নির্যাতন, বঞ্চনা ও তাদের উপেক্ষিত করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা শ্রীলঙ্কা দখলের পর থেকে মুসলমানদের জীবনে নেমে আসে নানা দুর্ভোগ ও নির্যাতন। ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী বিদ্বেষ নিয়ে পর্তুগিজরা শ্রীলঙ্কায় আসে এবং মুসলমানদের বহু ঐতিহ্য ও নিদর্শন  ধ্বংস করে।হল্যান্ডের ডাচ অধিবাসীরা ১৬৫৮ সালে শ্রীলঙ্কায় পাড়ি জমায় এবং তারাও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একই পথ অনুসরণ করে। ডাচ উপনিবেশবাদিরা খ্রিস্টধর্ম প্রচার এবং ইসলামের নাম নিশানা মুছে ফেলার জন্য সেখানে খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে।১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা  স্বাধীনতা অর্জন করে।  
বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় কয়েকটি কারণে মুসলমানরা বৌদ্ধদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। প্রথমত: শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধদের অভিযোগ, মুসলমানরা বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করছে এ অভিযোগের কারণে সেখানে জাতিগত সংঘাত হচ্ছে । দ্বিতীয়ত : মুসলমানদের 
অধিকহারে বংশ বৃদ্ধি,  দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অধিকতর রাজনৈতিক সুবিধা এসব অভিযোগ তুলে  সাম্প্রতিককালে কয়েক বছরে বৌদ্ধদের সাথে মুসলমানদের রেষারেষি বেড়েছে। ফলে প্রায় বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা লেগেই থাকে।
গতবছর শ্রীলঙ্কায় মসজিদ ও মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর একের পর এক হামলার পর দেশটিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
মধ্যাঞ্চলীয় ক্যান্ডি শহরের কিছু কিছু এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। যেখানে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সিনহালারা মুসলিমদের মালিকানাধীন দোকানপাট ও বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।সেসময় বৌদ্ধরা চারটি মসজিদ, ৩৭টি বাড়িঘর, ৪৬টি দোকান এবং ৩৫টি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসবাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বেশিরভাগ হামলাগুলি ছিল লিবারেশন টাইগারস অফ তামিল ইলম (এলটিটিই) এবং মার্কসবাদী-লেনিনবাদী, সাম্যবাদী দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) এর দ্বারা পরিচালিত। এলটিটিই সিংহলি জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে সহিংসভাবে শ্রীলঙ্কার উত্তর পূর্ব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠন করার চেষ্টা করেছিল, তামিল টাইগারদের ২০০৯ সালে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হয়। জেভিপি ১৯৭১ এবং ১৯৮৭-৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহে জড়িত ছিল। এলটিটিই এর পরাজয়ের পর ২০১৯ সালের হামলা শ্রীলঙ্কার প্রথম বড় ধরনের হামলা।চলতি বছরে শ্রীলঙ্কায় অনেকটা সময়জুড়ে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের মধ্যে দ্বন্দ্বই ছিল এই সংকটের মূল কারণ। এর মধ্যেই ঘটে যায় দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা। চলতি বছরের এপ্রিলে ইস্টার সানডের দিনে একযোগে কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে চালানো হামলায় নিহত হন ২৬৯ এর বেশি মানুষ। যে হামলার পর শ্রীলঙ্কায় মুসলমানরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায় হামলার শিকার হয় এবং কয়েকজন মুসলমান নিহতও হন।শ্রীলঙ্কায় ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে ১৯ জন মুসলিম এমপি আছেন। তার মধ্যে ৯ জন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। ইস্টার সানডে’তে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় যুক্ত উগ্রপন্থি গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ উঠার পর ৯ জন মন্ত্রী ও ২ জন প্রাদেশিক গভর্নর পদত্যাগ করেন। তারা সবাই মুসলমান। যদিও মূলধারার মুসলমানরা এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন।পদত্যাগকারীরা জানায় তাদেরকে সরকার নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হচ্ছে না।এবারের 
নির্বাচনের একদিন আগে কলম্বোর প্রায় ২৪০ কিলোমিটার উত্তরের তান্তিরিমালের  বন্দুকধারীরা মুসলমানদের গাড়িবহর লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং ইট-পাথর ছুঁড়ে মারে। এতে কমপক্ষে দু’টি বাসে গুলি লাগে।এভাবে প্রতিনিয়ত মুসলমানরা বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর টার্গেটে পরিণত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সময়ে মুসলমানরা কিছুটা নিরাপদ ছিল। এবারের নির্বাচনে মুসলমানরা বর্তমান জয়ী প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে ভোট দেয়। সংখ্যালঘু তামিল সম্প্রদায়ও ছিল গোতাবায়া রাজাপাকসের বিরুদ্ধে। তাই মুসলমানদের পাশাপাশি তামিলরাও গোতাবায়া রাজাপাকসেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। যদিও গোতাবায়া রাজাপাকসে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...