সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তথাকথিত ভালোবাসা দিবস ও ইসলামে ভালোবাসা


আজ মহাধুমধামের সাথে তরুণ তরুণী ,যুবক যুবতীরা পালন করছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যলেন্টাইন ডে ।চারটি অক্ষরের সংযোগে খুব ছোট একটি শব্দ ভালোবাসা যাকে আরবিতে মুহাব্বত ও ইংরেজী ভাষায় Love বলে।
প্রেম বা ভালোবাসা যায় বলি না কেন ভালোবাসা মানুষের অন্তরের একটি বিশেষ অবস্থার নাম, যা কারো প্রতি আবেগ,প্রবল অনুভূতির সংমিশ্রণ সৃষ্টি করে । Merriam-Webster Dictionary তে বলা হয়েছে, a feeling of strong or constant affection for a person. : attraction that includes sexual desire : the strong affection felt by people who have a romantic relationship, বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী এইসব পরিচয় ছাপিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা আলাদা করে তাদের দিন হিসেবে পালন করছেন আজকের দিনটিকে।ভালোবাসার এই দিনে প্রত্যেক ভালোবাসাময় হৃদয় রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলে,
“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।

বর্তমানের তথাকথিত ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস বেশ কয়েক শতাব্দীর পুরনো ।ভালোবাসা দিবসের সবচেয়ে বেশি আলোচিত ইতিহাসটি হলো ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন'স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রয়ারি ছিল। এরপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন'স স্মরণে ১৪ই ফেব্রয়ারি ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন। খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ সাল থেকে।তৎকালীন যায়যায় দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমানের হাত ধরে। তিনি পড়াশোনা করেছেন বিলাতে।শফিক রেহমান পাশ্চাত্যের শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে পাশ্চাত্য ধারার বল্গাহীন বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চার পথ উন্মুক্ত করেন। তিনি প্রথম যায়যায় দিন পত্রিকার মাধ্যমে এদেশের তরুণ তরুণীদের মাঝে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে পরিচিত করে তোলেন। বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসকে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দেবার জন্য শফিক রেহমানকে বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রবর্তক বলা হয়।সেইসময় ভালোবাসা দিবস প্রচার প্রসারে কিছু ব্যবসায়ীও পৃষ্ঠপোষকতা করে। অপরিণামদর্শী কিছু মিডিয়া কর্মী পত্রিকায় ব্যাপক কভারেজ দেয়। ভালোবাসার চরম খরায় ভোগা বাঙালি তরুণ তরুণীরা লুফে নেয় চরিত্রহননের এই লোভনীয় সুযোগ । ভালোবাসা দিবস এদেশে আগমনের পর ঈমানের ঘরে ভালোবাসার পরিবর্তে শয়তানী কর্ম বাসা বাঁধে। এতে মানব জাতির আজন্ম শত্রু ইবলিশ শয়তান ইন্ধন দিয়ে চলছে।যার ফলে এইডস,সিফিলিস-প্রমেহ, হার্পিস রোগের মতো মহামারি ছড়িয়ে পড়ছে। কথিত ভালোবাসা দিবসের আড়ালে তরুণ তরুণীরা নীল পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে খিলখিল করে হাসছে।এক কালে মানুষ যখন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে জানতো না, তখন পৃথিবীতে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। আজ পৃথিবীতে ভালোবাসার যেন বড়ই অভাব। তাই একটি বিশেষ দিনে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার নাম তো আর ভালোবাসা হতে পারে না।ভালোবাসা যার অর্থ হচ্ছে, অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান; যা মানুষের অন্তরে আল্লাহপাক সৃষ্টিগতভাবে দিয়ে দেন।ভালোবাসা মানুষের অন্তরের একটি বিশেষ অবস্থার নাম, যা কারো প্রতি আবেগ, গভীর অনুভূতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়। প্রকৃত ভালোবাসা হলো মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি, যা ছাড়া অন্য কোনো মানুষ ঈমানদার হতে পারবে না। দুনিয়ায় কাউকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাস। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মা ও রক্তের আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা মহান আল্লাহ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত করে দেন। কিন্তু বর্তমানে প্রেম বা ভালোবাসা বলতে যা প্রচলিত আছে, তা নিছক একটি অবৈধ সম্পর্ক। যে সম্পর্ক মানুষকে পাপের অতল সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। এ এক আলেয়ার আলো আঁধারি খেলা, যা তাকে আল্লাহর রহমত থেকে অনেক দূরে নিয়ে যায়.সাধারণত ভালোবাসা দুই ধরনের (১) বৈধ বা পবিত্র (২) অবৈধ বা অপবিত্র ।বৈধ বা পবিত্র ভালোবাসা বলতে আল্লাহ ও রাসূল( সা.) এর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসা,স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা ইত্যাদিকে বুঝায়। আল্লাহপাক কুরআন শরীফে এরশাদ করেন, যারা ঈমানদার মুমিন, তাদের অন্তরে আল্লাহর মহব্বত ভালোবাসা হবে সর্বাধিক প্রগাঢ়।। (সূরা আল বাকারা আয়াত - ১৬৫)। নবী করীম (সা.) বলেন , “কোন লোক পূর্ণ মুমিন হবে না যতক্ষণ না সে নিজের জীবন এবং পরিবার পরিজনের চেয়ে আমাকে বেশী ভালোবাসবে।” (সহীহ বুখারীঃ ১৫, সহীহ মুসলিম ৪৪) স্বামী স্ত্রী মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন আল্লাহ তায়ালা। হাদীস শরীফে আছে, স্বামী-স্ত্রী মহব্বতের সাথে আলাপ আলোচনা করা কথা-বার্তা বলা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। অন্যথায় রাসূল (সা.) বলেন, যে মহিলা (স্ত্রী) তার স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় সে অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে।রাসূল (সা.) নিজ সন্তান ফাতিমাকে অত্যাধিক ভালোবাসতেন। তিনি স্বীয় জবানে এরশাদ করেন, ফাতিমা আমার কলিজার টুকরা, তাকে কেউ কষ্ট দিলে আমাকেই কষ্ট দেয়া হবে। নবীজির পাক জবানের বর্ণনায় ফুটে উঠে যে সন্তানকে ভালোবাসা ছাওয়াবের কাজ।
বিবাহের পূর্বে আধুনিক যুবক-যুবতীরা যে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাকেই অবৈধ ও অপবিত্র ভালোবাসা বলে।প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে এ ভালোবাসা সৃষ্টি করে বিতাড়িত ইবলিশ শয়তান। শয়তান মানুষকে প্রতিশ্রতি দেয় এবং মানুষের মনে মিথ্যা আশা-বাসনা সৃষ্টি করে,আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, “সে (শয়তান) প্রতিশ্রতি দেয় এবং মানুষের মনে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে। আসলে শয়তান তাদের যে ওয়াদা দেয় তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না।”(সূরা ৪ আননিসা আয়াত ১২০)।
আমাদের সমাজে বেগানা যুবক-যুবতীর প্রেম-ভালোবাসার নামে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের মত বহমান রয়েছে তা সম্পূর্ণ রূপে অবৈধ ও হারাম। বিবাহের পূর্বে এরূপ প্রেম-ভালোবাসা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়,বরং অবৈধ। শয়তান নারী ও পুরুষকে কাছে এনে তাদের মাঝে যোগাযোগ ও আকর্ষণ সৃষ্টি করে দেয়। যার ফলে তারা অবৈধভাবে একজন আরেকজনকে কামনা করতে থাকে আর মনে করে তাকে পেলেই সে সুখী হতে পারবে। এইভাবে পুরুষদেরকে নারীদের দিয়ে এবং নারীদেরকে পুরুষদের দিয়ে শয়তান আদম সন্তানদের ধোঁকা দিয়ে পাপাচারে লিপ্ত করে।
শয়তান মানুষের মন্দ কাজকে তাদের কাছে শোভনীয় ও মোহনীয় করে তোলে। "শয়তান তাদের মন্দ কাজসমূহকে তাদের দৃষ্টিতে চমৎকার ও মনোহরী করে তোলে এবং এভাবে তাদের সরল সঠিক পথ অবলম্বনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।”(সূরা ২৯ আনকাবুত আয়াত- ৩৮)
শয়তান সবার প্রথম আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) কে আল্লাহর নিষেধের কাজে কুমন্ত্রণা দিয়ে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ করে দিয়েছিল। এইজন্য আজ পর্যন্ত শয়তানের এক নাম্বার কাজ হচ্ছে অশ্লীলতা ও নগ্নতা ছড়ানো।যে কাজটি তথাকথিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে অবলীলায় হচ্ছে।মুসলমানদের কলিজা বৈধ ভালোবাসায় ভরপুর। এজন্য ৩৬৫ দিনের একদিন বেছে নিতে হয় না।রাসুল (সা.)বলেন, "যে ছোটদের স্নেহ করেনা ও বড়দের সম্মান করেনা সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত না।"( আবু দাউদ, তিরমিযী)।মুসলমানদের
ভালোবাসা দিবস উদযাপন করার অর্থ ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের অনুসরণ করা। এ ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে। হযরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-কালচারের অনুকরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে এবং যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়কে মহব্বত করবে, তাদের সাথে তার হাশর হবে।” -(সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৫১৪)বর্তমানে আপনারা যে টিভিতে, মিডিয়ায়, রাস্তায় শরীর দেখানো অর্ধনগ্ন নারীদের দেখতে পাচ্ছেন এটা শয়তানী ষড়যন্ত্রের অংশ,এক শ্রেণীর অর্ধনগ্ন নারী পুরুষদেরকে উত্তেজিত করে তাদেরকে ব্যাভিচারের রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইসলাম এইজন্য নারীদেরকে পর্দা করতে আদেশ করেছে, যাতে করে পুরুষদের জন্য কোন প্রকার ফেতনা না থাকে।ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী কোন যুবতী কোন অবস্থায় কোন যুবকের সান্নিধ্যে থাকতে পারেনা। উমর (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন পুরুষ যখন কোন নারীর সাথে একান্তে থাকে, তখন তাদের মাঝে তৃতীয় জন হিসেবে উপস্থিত হয় স্বয়ং শয়তান তাদের মাঝে ভাবাবেগকে উৎসাহিত করে এবং উভয়ের মাঝে খারাপ কুমন্ত্রণা দিতে থাকে এবং সর্বশেষে লজ্জাকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়।” কিন্তু শত আফসোস হলেও সত্য যে, বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষিত ও সচেতন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এই ভালোবাসা নামক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। যার ফলে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে হাজারো জীবন। প্রতিনিয়ত এসিডে দগ্ধ হচ্ছে হাজারো নারী। আধুনিক বিশ্বে আধুনিক প্রেমের বেলায় এটি কি সত্য। তাই বলতে হয় এটা ভালোবাসা নয় এটা মরণ নেশা।প্রেম-ভালোবাসায় লিপ্ত থেকে বহু ছেলে সময়, পড়াশোনা ও জীবন নষ্ট করে, বহু মেয়ে প্রেমিকের মন রক্ষা করতে গিয়ে সতীত্ব নষ্ট করে গর্ভবতী হয়, গর্ভপাত করে সন্তান, নিজের স্বাস্থ্য ও জীবন নষ্ট করে। বছরের পর বছর অনিশ্চিত ঝুলে থাকে কবে বিয়ে হবে,শেষে বিয়ে হয়না, প্রেমিক/প্রেমিকা ধোঁকা দেয়।এ সবই হচ্ছে, আল্লাহর আদেশ উপেক্ষা করে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার দুনিয়াবী সামান্য প্রতিদান, আর পরকালের শাস্তি আরো কঠিন ও ভয়াবহ। অনেক সময় দেখা যায় প্রেম ভালোবাসার মাধ্যমে ছেলেমেয়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। ইসলামে বিয়ে করার উদ্দেশ্যেও তার সঙ্গে বিবাহপূর্ব প্রেম নামে যে অবৈধ ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে, তা করার কোনো সুযোগ নেই। প্রশ্ন জাগতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে তা হয়তো শারীরিক সম্পর্কে না-ও গড়াতে পারে, সে ক্ষেত্রেও কি তা হারাম হবে? তার উত্তর খোঁজার জন্য আপনি আলোচ্য হাদিসগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিবের ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের ব্যভিচার হলো, (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের ব্যভিচার যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের ব্যভিচার আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের ব্যভিচার (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত, হাদিস : ৮৬)।আজকাল তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে প্রেম ভালোবাসার নামে অনেক শিক্ষিত অশিক্ষিত বিবাহিত নারী পুরুষ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। সাময়িক কামনা বাসনা চরিতার্থ করতে পরকীয়ার মতো জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত হতে তারা কুন্ঠাবোধ করছে না । পরকিয়া প্রেম বা অন্যের বিবাহ বন্ধনে থাকা স্ত্রীর সাথে প্রেম-প্রণয়ের মাধ্যমে ব্যভিচারের লিপ্ত হওয়া আরও জঘন্য অপরাধ ও মহাপাপ। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি?” তিনি বললেন, “কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করা।” আমি বললাম: “এটা নিশ্চয়ই জঘন্যতম গুনাহ। তারপর কোনটি?” তিনি বললেন: “তোমার সন্তান তোমার সাথে আহারে বিহারে অংশ নিবে এ আশংকায় সন্তানকে হত্যা করা।” আমি বললাম: “এরপর কোনটি?” তিনি বললেন: “তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।”[বুখারি (৪২০৭) ও মুসলিম ৮৬)
“যে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে, সে জেনে রাখুক, শয়তান অশ্লীল ও মন্দ কাজের আদেশ দেয় (প্রলুব্ধ করে)।”
(সূরা ২৪ আন নূর : আয়াত ২১)।আজ বিশ্ব ভালোবাসা উদযাপনের নামে
তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে।নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে।নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছে।আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি..।’’ (সূরা আন-নূর :১৯)তরুণ-তরুণীরা বিবাহ পূর্ব দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোন রকম কুণ্ঠাবোধ করছে না।ভালোবাসা দিবসের নামে নারীদের শরীরে উল্কি আঁকাতে যেয়ে নিজের ইয্‌যত-আব্রু পরপুরুষকে দেখাতে হয়। যা প্রকাশ্য কবিরা গুনাহ। ভালবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে. ‘যে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে।’’ (মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং-৮৭০)। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্ম-কাণ্ডের ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানি বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে।মানুষের হৃদয় থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে।আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন: ‘‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায় নি।’’ (ইবনু মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং-৪০০৯)।এসব ভালোবাসার শেষ পরিণতি একবুক কষ্ট। দুটো আখির অশ্রু।রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি,
"সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে । তোমরা যে বলো দিবস-রজনী 'ভালোবাসা' 'ভালোবাসা' —. সখী, ভালোবাসা কারে কয়।"কথিত নোংরা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হারাম শরীর আত্মা ও সম্মানের জন্য ক্ষতিকর। যদি ইংরেজি কথিত love এর পূর্ণরুপ করি তাহলে পাই lost of valuable energy.
  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...