সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কিছু দেশে নিষিদ্ধ ভালোবাসা দিবস এবং বাংলাদেশে এ দিবস এলো যেভাবে ?


পাশ্চিমাদের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। ইরান, মালয়েশিয়ায়, সৌদি আরবে এ দিবস পালন নিষিদ্ধ। ২০০৭ সালে পাকিস্তানে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সেদেশের আদালত। বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। পাকিস্তানে এ বছর ভালোবাসা দিবসকে বোন দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

ভালোবাসা দিবসের আমদানিকারক হিসেবে ধরা হয় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। যদিও বলায় ১৯৮৩ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাবিতে ছাত্র হত্যাকাণ্ড ঘটে তা ভুলিয়ে দিতে এদেশে ভালোবাসা দিবসের আমদানি করা হয় । শফিক রেহমান ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত লন্ডনে নির্বাসিত থাকে। কেউ বলে, সে এই সময় লেখাপড়া করার জন্য সেখানে ছিল। যাহোক, এই সময়টাতে লন্ডনে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হতো। ফলে শফিক রেহমান সিদ্ধান্ত নেয় স্বদেশে এসে সে এ দিবসকে পুরো বাংলায় ছড়িয়ে দিবে। কারণ দর্শাতে গিয়ে বলা হয়, সে নাকি এ দিবসের মাঝে ভালোবাসার বাণী খুঁজে পেয়েছিল। ঘনবসতির এই বাংলাদেশে নাকি ভালোবাসার খুব দরকার ছিল বলেও জানায় সে। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে এ দিবসটি শুরু করার আগে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ থেকে ধর্মীয় কারণে ‘সেন্ট’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। অতঃপর ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাপক প্রচার চালানো হয় সেসময়কার ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকায়। এরপর ধীরে ধীরে এ দিবসের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়ে যায় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।


ভালোবাসার এক আবেগ নিয়ে রাজধানীতে সৃষ্টি হয়েছে ‘লাভ রোড’। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতেই যেন নামকরণ ‘লাভ রোড’।রাজধানীর তেজগাঁও-এর একটি রাস্তার নাম ‘লাভ রোড’। বিজয় সরণী ওভারব্রিজ হয়ে মগবাজার মহাখালী রাস্তা পার হলেই পূর্বপাশের রাস্তা এটি। প্রচার রয়েছে, রাস্তাটির নামকরণ করেছেন দৈনিক পত্রিকা যায়াযায়দিন-এর এক সময়ের সম্পাদক শফিক রেহমান। লাভ রোডে ঢুকতেই যায়যায়দিন পত্রিকার ভবন। রোডের পাশে আরও কয়েকটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে।নামকরণ হয়েছিল প্রায় এক দশক আগে। ‘লাভ রোড’ লেখা রাস্তাটির নামফলক ভেঙে গেছে। কেউ কেউ বলেন, সংস্কার করতে গিয়ে ভাঙা হয়েছে। আর সংযুক্ত হয়নি নামফলকটি। রাস্তার অনেকাংশেই খানাখন্দে ভরা। ‘লাভ রোড’-এর জন্য কর্তৃপক্ষের যেন কোনোই ভালোবাসা নেই।নামকরণের চিহ্ন নেই। আর দশটি রাস্তার মতোই এরও বেহালদশা। তাতে কী হয়েছে? তবুও ভালোবাসার প্রতীক ‘লাভ রোড’। রাস্তাটির নামকরণের সঙ্গে যারা পরিচিত, তারা এ রাস্তায় এলেই মনে পড়ে যায় ভালোবাসার কথা, বিরহের কথা। প্রেম-ভালোবাসার নিদর্শন রাস্তাটি নিয়ে মানুষের কৌতূহলেরও অন্ত নেই।রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। আবার রাজধানীতে বেড়াতে এলেও কৌতূহলের বশে অনেকেই রাস্তাটি দেখে যান। কেউ কেউ আসেন প্রিয়জনের হাতে হাতে রেখে। হাজারো প্রেমজুটির বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষীও লাভ রোড। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ‘লাভ রোড’ জমে ওঠে প্রেমিক-প্রেমিকার পদচারণায়।মিরপুর দুই স্টেডিয়ামের পাশেও রয়েছে লাভ রোড।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...