সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া শের -ই- মহিশুর টিপু সুলতান

 

অষ্টাদশ শতক ভারতীয় উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য ছিল প্রভাব বিস্তারের শতাব্দী। এই শতকের মাঝামাঝিতে  ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের পূর্বে বাংলায় স্বাধীন নবাব, নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান  সেনাপতি মীর জাফরকে হাত করে বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সূচনা করে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাবের পতন সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ প্রভুত্ব কায়েমের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। যার ধারাবাহিকতায় গুটিকয়েক স্বরাজ ব্যতীত সমগ্র ভারত ব্রিটিশদের পদানত হয়। এই শতকে ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বিরুদ্ধে তৃতীয় মহিশুরের যুদ্ধে টিপু সুলতান নিহত হন। ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রামী বলা হয় তাঁকে। বহু যুদ্ধে জয়ী হয়ে অবশেষে শ্রীরঙ্গপত্তনমের যুদ্ধে নিজের দুর্গে তাঁর পতন হয়।সেসময় ব্রিটিশ সৈন্যরা ভেঙে ফেলে নগরের প্রাচীর। যুদ্ধ উপদেষ্টারা টিপুকে পরামর্শ দেয় গুপ্ত দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে। তিনি বলেন ‘ভেড়া বা শিয়ালের মতো দু'শ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু'দিন বেঁচে থাকাও ভালো।' তিনি ভীরুর জীবন বেঁচে নেননি। বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের মতো টিপুর এক সেনাপতি মীর সাদিক টিপুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মেলায়। একারণে টিপু সুলতানের ভাগ্য বিপর্যয় ছিল অনিবার্য। ১৭৫০ সালের ২০ নভেম্বর টিপুর জন্ম।টিপু শব্দের অর্থ বাঘ। তার পুরো নাম সুলতান ফতেহ আলি খান সাহাব।পিতার  সুযোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন টিপু সুলতান। তাঁর পিতা ১৭৪৯ খ্রিষ্টাব্দে টিপু নামে এক ফকিরের দোয়ায় এক পুত্রসন্তান লাভ করেন এবং আনন্দচিত্তে ঐ ফকিরের নামেই ছেলের নাম রাখেন টিপু। মহিশুরের স্থানীয় ভাষায় (কানাড়ী ভাষা) টিপু শব্দের অর্থ হলো বাঘ। হয়তো তাঁকে 'শের-ই-মহিশুর' ডাকার পিছনে এটাও একটা কারণ ছিল। উপাধিটি ইংরেজরাই তাঁকে দিয়েছিল। পিতা হায়দার আলি ছিলেন প্রথমে মহীশূর রাজ্যের সেনাপ্রধান, পরবর্তীকালে মহীশূরের সুলতান। ১৭৮০ সালে ফতেহ আলী সাহাব টিপু মহিশুরের সিংহাসনে আরোহণ করেন। টিপুর বাঘ (শের) হয়ে ওঠার পিছনে মূল কারণ ছিলো তার অসাধারণ দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, ক্ষিপ্রতা, এবং কৌশলপূর্ণ রাজ্য পরিচালনা ও সমর নৈপুণ্য। ভারতীয়দের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে টিপু সুলতানের নাম ছিল অনুপস্থিত, অনুচ্চারিত । তাঁর বীরত্ব গাথা ভূমিকা ছিল অপ্রকাশিত। তবে টিপুকে নতুন করে মানুষের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় গত শতাব্দীর নববইয়ের দশকে। তাঁকে খুঁজে বের করার পেছনে ইতিহাস চর্চার প্রবৃত্তির চেয়ে অন্য কারণ ছিল প্রধান। নব্বইয়ের দশকে ডিডি ন্যাশনাল টিভি চ্যানেলে দেখানো ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান’ নামের সিরিয়ালটির কথা সবাই জানেন ।‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান’-এর লেখক ভগবান এস গিদোয়ানী একথা স্বীকার করেছেন যে কোনো ভারতীয় নয়, বরং লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে এক ফরাসী ছাত্র তাকে টিপু সুলতানের বীরত্বগাথার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ডিডি ন্যাশনালের পরে এই গিদোয়ানীর মাধ্যমেই ‘টিপুর বীরত্ব গাঁথা ভারতে নতুন করে আলোচনায় আসে। এরপর, ভারতীয় পরিচালক সঞ্জয় খান এ নিয়ে টিভি সিরিয়াল বানান এবং তিনি নিজেই এই সিরিজের শিরোনাম –ভূমিকায় অভিনয় করেন।১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এই ধারাবাহিকটির শুটিংয়ে আগুন লেগে ৬২ জন কলাকুশলী মারা যান। গুরুতর আহত হয়ে প্রায় এক বছর হাসপাতালে ছিলেন সঞ্জয় খান নিজেও। সেসময় তার শরীরে প্রায় ৭২টি সার্জারি লেগেছিল।বাংলাদেশে ৯০,র দশকে বিটিভিতে জনপ্রিয় ধারাবাহিক হিসেবে ‘দ্য সোর্ড অফ টিপু সুলতান’ প্রচারিত হতে থাকে। তখনো আকাশ-সংস্কৃতি স্যাটেলাইট টিভি সম্প্রচার শুরু হয়নি। বিটিভিতে তখন বিদেশি ধারাবাহিকের ডাবিং সম্প্রচার করা হতো। সেসময় বিটিভির টিপু সুলতান ধারাবাহিকটি ছিল তুমুল জনপ্রিয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার তেজস্বী আর ক্ষিপ্র, লড়াকু লড়াই জয় করে নিয়েছিলো ভারত-বাংলাদেশের দর্শকদের হৃদয়। তিনি যে সত্যিকারের বীর ছিলেন এবং ব্রিটিশদের জন্য ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক, তা টিপুর নাম না শোনা অনেক দর্শকে টিপু সুলতানের সেই অবদানের কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয় শাসক যিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ব্রিটিশরা ভারতের জন্য কতোটা বিপদজনক হয়ে উঠছে। ব্রিটিশদের উৎখাতের জন্য তাই তিনি লড়েছিলেন চার-চারটি যুদ্ধে।টিপু বিশ্বের প্রথম রকেট আর্টিলারি এবং বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করেছিলেন।তাঁর সময়ে কৃষ্ণ রাজা সাগর বাঁধের ভিত্তি স্থাপন তৈরি হয়েছিল। তিনি শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যের উন্নতিরও চেষ্টা করেছিলেন।
টিপু সুলতান শুধু একজন বীর যোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক ও নতুনত্বের উদ্ভাবক। তাঁর উদ্ভাবনের মধ্যে রয়েছে নতুন মুদ্রা, চান্দ্রবর্ষের নতুন হিসাব, ভূমিকর, সিল্কশিল্প, সেনা প্রশাসন ও যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রকেট যা শত্রুপক্ষকে বিস্মিত করে দেয়। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে মহিশুর আঠারো শতকের অন্যতম সমৃদ্ধ রাজ্যে পরিণত হয়।টিপু সুলতানই ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। টিপু একজন শাসক হিসেবে তার অন্যতম সাফল্য ছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায়। ভারতের একটি ক্ষুদ্র রাজ্যের শাসক হওয়ার পরেও তাঁর সাহসিকতা ও বীরত্ব দেখে ফরাসি সেনাপতি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট  ফ্রান্সকে মহিশুরের সঙ্গে জোট গঠনের পরামর্শ দেন। মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে হায়দার আলী ও টিপু সুলতান সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। দ্বিতীয় শাহ আলম তাঁকে নাসিব-উদ-দৌলা উপাধি দেন। এ ছাড়া তিনি আফগানিস্তানের শাসক জামান শাহ দুররানি, তুর্কি শাসক সুলতান প্রথম আবদুল হামিদ ও পারস্যের জান্দ বংশের  শাসক মোহাম্মদ আলী খানের সঙ্গে টিপু সুলতানের ভালো সম্পর্ক ছিল।
১৭৯৯ সালের ৪ মে যখন টিপু সুলতানের হত্যার খবর প্রচারিত হয় তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রশাসক রিচার্ড ওয়েলেসলি বলেছিলেন, 'ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, ভারতবর্ষের মৃত আত্মাকে স্মরণ করে আমি পান করছি। গোটা ভারতবর্ষই এখন আমাদের।'
ইংরেজ ঐতিহাসিক ও কিছু হিন্দু ঐতিহাসিক টিপু সুলতানকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন, তাকে হিন্দু খ্রিস্টান হত্যাকারী বলে অভিহিত করেছেন। যারা টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এমন কিছু ঐতিহাসিকও টিপু সুলতানকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন।তাদের অনেকে মনে করেন,  টিপু গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছেন, হিন্দুদের মন্দির, খ্রিস্টানদের চার্চ ধ্বংস করেছেন, অন্তত দশ হাজার ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছেন। বলা হয়ে থাকে, কর্ণাটকের কোদাভা সম্প্রদায়ের হিন্দুদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে টিপু বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবন্দীকে চাপের মুখে ইসলামে দীক্ষিত করেন। এছাড়া মালাবার ও কালিকূট আক্রমণেও এমন ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটে বলে টিপু-বিরোধীরা দাবি করে থাকেন। ভারতে দ্বিতীয় দফায় বিজেপি সরকার দিল্লির ক্ষমতায় আসার পর টিপু সুলতানকে ইতিহাসের খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করার যত্রতত্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।মহীশূরের সুলতান, টিপু সুলতান সম্বন্ধে স্কুলের ইতিহাসের পাঠ্য বইয়ে যা যা লেখা আছে তা সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার।বিজেপির  নেতাদের  দাবি যে টিপু সুলতানকে যেভাবে গৌরবান্বিত করা হয় স্কুলের পাঠ্য বইগুলিতে, তা বন্ধ করা উচিত। টিপু সুলতান হিন্দুদের ওপরে সাংঘাতিক অত্যাচার করতেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন বিজেপির  বিধানসভা সদস্য।  মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান যোসেফ তিনি বলেন, টিপু সুলতানকে ভারতীয় ইতিহাসের একজন খলনায়ক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।টিপু সুলতানকে নিয়ে যা বলা হচ্ছে, সেগুলো রাজনৈতিক কথাবার্তা। টিপু সুলতানকে একজন খলনায়ক করে তোলার এই প্রচেষ্টাটা কয়েক বছর ধরেই শুরু হয়েছে।  কর্নাটকে সরকারিভাবে যে টিপু জয়ন্তী পালিত হতো তা-ও বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি।বিজেপি এবং হিন্দু পুনরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস মনে করে টিপু সুলতান কুর্গ, মালাবার সহ নানা এলাকায় কয়েক লক্ষ হিন্দুকে মেরে ফেলেছিলেন এবং বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করেছিলেন।টিপু সুলতানকে নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে, তাতে এরকম তথ্য বিশেষ পাওয়া যায় না যে তিনি নির্দিষ্টভাবে হিন্দুদের ওপরেই অত্যাচার করেছিলেন।
অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান যোসেফ বলেন কুর্গ বা মালাবার উপকূলে যুদ্ধ নি:সন্দেহে হয়েছিল সেখানকার হিন্দু শাসকদের সঙ্গে। এবং সেই যুদ্ধে অনেক হিন্দুর যে প্রাণ গিয়েছিল, সেটা অস্বীকার করা যাবে না - কিন্তু সেটাকে একটা ধর্মীয় অত্যাচার বলা ভুল।তিনি আরো বলেন, মহাভারতের কাহিনিতে তো যারা নিহত হয়েছিলেন, তারাও হিন্দুই ছিলেন। হিন্দুদের দাবি অনুযায়ী টিপু হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন না। কেননা কয়েকটি পয়েন্টে তা আলোচনা করলে বিষয়টি পরিস্কার হবে, 
প্রথমত: মারাঠারা যখন মহীশূর দখল করতে এসেছিল, তখন তারা অতি পবিত্র হিন্দু তীর্থ শৃঙ্গেরি মঠ ধ্বংস করে দিয়েছিল - এমনকী বিগ্রহটিও ধ্বংস করে দেয় তারা।শৃঙ্গেরি মঠ পুণর্নিমানে অর্থ দিয়েছিলেন টিপু সুলতান। এগুলোকে তো ধর্মীয় নিপীড়ন বলা যায় না।
দ্বিতীয়ত:টিপু সুলতান যখন ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে যেতেন, রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে শাসন চালাতেন একজন হিন্দু - পুন্নাইয়া। আবার মালাবার দখল করার সময়েও টিপুর সেনাপতি ছিলেন শ্রীনিবাস রাও - তিনিও হিন্দু।টিপুর পরেই যার হাতে সব ক্ষমতা, সেই পুন্নাইয়া, কুর্গে হিন্দুদের ওপরে অত্যাচার করতে দিয়েছেন, এটা কি যুক্তিগ্রাহ্য বা হিন্দু হয়েও শ্রীনিবাস রাও মালাবারে হিন্দুদের ধর্মান্তকরণ করণে মদদ দিয়েছিলেন - সেটা কি মেনে নেওয়া যায়?
তৃতীয়ত:ব্যক্তিগত পর্যায়ে টিপু সুলতান ধার্মিক মুসলিম ছিলেন। নিয়মিত প্রার্থনা করতেন এবং এবং তার এলাকার মসজিদ গুলোর উপর তার বিশেষ নজর ছিল। মূলধারার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনামতে টিপু সুলতানের শাসনব্যবস্থা সহনশীল ছিল। তার শাসনকালে তিনি ১৫৬ টা হিন্দু মন্দিরে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ দিতেন। বরাদ্দ পাওয়া এরকম এক বিখ্যাত মন্দির হলো শ্রীরাঙ্গাপাটনার রঙ্গন অষ্টমী মন্দির।
চতুর্থত:ভারতের রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক বিভেদ যতই জোরালো হচ্ছে, ততই জোরালো হচ্ছে টিপুকে নিয়ে বিতর্ক। কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)গত শতকের  সত্তরের দশকে টিপু সুলতানের নামে এক জীবনী প্রকাশ করে, যেখানে তাঁর নামে কোনো ধরনের নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়নি। টিপু ইস্যুতে আরএসএসের অবস্থান এখন প্রায় উল্টো। সবই এখন মুসলিম বিদ্বেষ থেকে করা হচ্ছে  

পরিশেষে বলা যায় মুসলিম হবার কারণে চরমপন্থী  হিন্দুদের কাছে তিনি নিন্দিত, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের তিনি প্রতিবন্ধক ছিলেন যে  কারণে তাদের কাছে তিনি বিকৃত ও ধিকৃত। কিন্তু দেশপ্রেমিক -ভারতীয় হিন্দু মুসলিমদের কাছে তিনি বীরপুরুষ, সাহসী সূর্য সন্তান। কিছুদিন আগে কর্ণাটকে একটি নির্মিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে টিপু বিশ্ববিদ্যালয়। টিপু উপমহাদেশের স্বাধীনতাকামীদের কাছে প্রেরণার বাতিঘর।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...