শুধু কি বাঙালিরাই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে?
মো.আবু রায়হান :
পৃথিবীতে বাংলাদেশের বাঙালীরাই একমাত্র জাতি নয় যারা আপন মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এবং বুকের রক্ত ঝরিয়েছে। এমনও জাতি রয়েছে তারাও নিজ ভাষার জন্য জীবন বিলিয়েছে। বাংলাদেশের বাঙালিরা প্রথম ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করছে এটা সত্য। তবে একমাত্র বাংলাদেশের বাঙালিই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে তা সত্য নয়। কেন সত্য নয় তা ইতিহাস ঘাটলে ভাষার জন্য অন্য জাতিগোষ্ঠীর যারা প্রাণ দিয়েছেন এরকম আরো দু একটি জাতি গোষ্ঠী পাওয়া যায়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বুকে তরুণ তাজা প্রাণের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা জানা থাকলেও ১৯৬১ সালের ১৯ মে ভারতের আসামের বরাক উপত্যকায় তৎকালীন অবিভক্ত কাছাড় জেলার শিলচরে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য যে ১১ তরুণ বাঙালি আত্মাহুতি দিয়েছিল সে ঘটনার কথা আমাদের অনেকের হয়তো জানা নেই। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের সেই লড়াইয়ে পুরুষের পাশাপাশি একজন নারীও সেদিন আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তার নাম কমলা ভট্টাচার্য। ১৬ বছর বয়সী এ তরুণীই হল সমগ্র বাঙালি নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী পৃথিবীর সর্বপ্রথম শহীদ নারী ভাষাসৈনিক। সেদিনের সেই সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, সর্বোপরি ক্রমাগত আন্দোলনের ফলে অর্জিত হয়েছিল বরাক উপত্যকার তিনটি জেলায় সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি।
মায়ের ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ১১ জন শহীদ হন, তারা হলেন- কমলা ভট্টাচার্য (পৃথিবীর এক মাত্র নারী ভাষা শহীদ), শচীন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডিচরন সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব, হীতেশ বিশ্বাস, কুমুদরঞ্জন দাস, তারিণী দেবনাথ, সুনীল সরকার এবং সুকুমার পুরকায়স্থ। আসাম রাজ্য সরকার আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছিল বাংলাকে ২য় রাজ্যভাষা হিসেবে ঘোষণা দিতে।
বরাক উপত্যকাতেই বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার স্বীকৃতির আন্দোলনে ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ শহীদ হোন বিশ্বের দ্বিতীয় নারী ভাষাশহীদ সুদেষ্ণা সিংহ। ঐদিন পুলিশের গুলিতে আহত হোন সহস্রাধিক বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষাযোদ্ধা। শহীদ সুদেষ্ণার স্মরণে ভারত ও বাংলাদেশের মণিপুরীরা ১৬ মার্চ ভাষাদিবস পালন করে থাকে।
সুতরাং একুশ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষার জন্য যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাঁদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন