সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইভিএম নিয়ে কেন এতো বিতর্ক ?


মো.আবু রায়হান:
আসন্ন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক চলছে ।এরমধ্যে  ২২ জানুয়ারি ইভিএমে ভোট গ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন একজন আইনজীবী।যেহেতু ইভিএম-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদে এখনো পাস হয়নি। এ অবস্থায় সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ অবৈধ ঘোষণার আর্জি জানিয়ে তিনি এ রিট আবেদন করেন।তবে রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন অগ্রাহ্য করে নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট গ্রহণের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক  সুজনের  অনলাইনে পরিচালিত এক জরিপে ১,৪০০ জন অংশ নেন। যার ৯১ শতাংশই আসন্ন সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছেন।১৯৬০ এর দশকে আমেরিকায় প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হয় ।সেহিসাবে ইভিএম পদ্ধতির বয়স বেশ পুরনো বা প্রায় ৬০ বছর হতে চলছে। ছয়দশকেও  বিশ্বের কোনো দেশেই ইভিএম পুরোপুরি মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।জানা যায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪টি দেশ ইভিএম ব্যবহার বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে।কিন্তু এর মধ্যে ১৪টি দেশ ইভিএম পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। ১১টি দেশ আংশিক ব্যবহার করছে।বর্তমানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে ৫টি দেশ। ভারতের ইকোনমিক টাইমস পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের ২০০টি দেশের মধ্যে মাত্র ৪টি দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে,
বর্তমানে পুরোপুুরি ইভিএম চালু আছে শুধুমাত্র ভারত, ব্রাজিল, ফিলিপাইন এবং এস্তোনিয়ায়
এখন এসব দেশেও ইভিএম নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে।এক অনুসন্ধানে জানা যায়, 
গত ১৫ বছরে পৃথিবীর যতগুলো দেশ ইভিএম গ্রহণ করেছে, তার চেয়ে বেশি দেশ ইভিএম বাতিল করেছে।ইভিএম বাতিল করেছে এমন দেশের তালিকায় আছে জার্মানি,বেলজিয়াম, নরওয়ে, ভেনেজুয়েলা, ইউক্রেন ,স্পেন, ইতালি, আয়ারল্যান্ড,নেদারল্যান্ডস,ফিনল্যান্ড,
মালয়েশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো রাজ্য। সম্প্রতি ভারতেও বিরোধী দলগুলো ইভিএমের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। ।
উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে ইভিএমের গ্রহণযোগ্য ব্যবহার ঘটেনি।বর্তমান বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ দেশে ইভিএম পদ্ধতি নেই। যে কয়েকটি দেশ এটি চালু করেছিল তারাও এখন এটি নিষিদ্ধ করেছে। আয়ারল্যান্ডও ২০০২-২০০৪ সালে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিতর্কের মুখে দুটি কমিশন গঠন করে। কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইভিএম যন্ত্র বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রযুক্তিগত রক্ষাকবচ অপ্রতুল। ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ড পরিত্যাগ করে। জার্মানির ফেডারেল কোর্ট ইভিএমকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়।
 ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডস ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করেছে কারচুপির কারণে নয়, 
মেশিন টেম্পারিং করা যাবে বলে। ২০০৯ সালে ফিনল্যান্ডের সুপ্রিমকোর্ট ইভিএমে গৃহীত ৩টি মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের ফলাফল অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করে।ড. অ্যালেক্স হালডারমেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ইভিএমের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ পেয়েছেন, আমেরিকায় ইভিএম টেম্পারপ্রুফ নয়। ফলে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যেও ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
 বিশেষজ্ঞদের অভিমত প্রোগ্রামিংয়ে যদি কিছু করা হয় তাহলেই ইভিএমে জাল ভোট সম্ভব।
ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ব্যালট ইউনিট সচল করার পর তাকে ভোট দিতে না দিয়ে অন্য কেউ ঐ ভোট দিয়ে দিলে তা ঠেকানোর কোনো উপায় নেই ইভিএমে। ব্যালট ইউনিটে আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার পদ্ধতি নেই ইভিএমে।এতে জাল ভোট পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ ব্যবস্থায় কোনো ভোটার ফিঙ্গার দিয়ে ব্যালট ইউনিট পেল, কিন্তু বুথে ঢুকে আরেকজন তার পক্ষে ভোট দিয়ে দিতে পারে৷এছাড়া 
ইভিএমের প্রতিটি ইউনিট চালু অবস্থায় আলাদা করা যায়। অনেকের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা ভোট কেন্দ্র দখলের পরে গোপনে সরবরাহ করা শুধুমাত্র কন্ট্রোল ইউনিট বদলে দিতে পারে। আর সেই নতুন কন্ট্রোল ইউনিটে যদি আগে থেকে কারও পক্ষে ভোট দেওয়া থাকে তবে ফল বদলে দেওয়া সম্ভব।
ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক ও সীমাবদ্ধতা থাকলেও কিছু সুফলও কিন্তু রয়েছে। 
ইভিএম ব্যবহারের ফলে কোটি কোটি ব্যালট পেপার ছাপানোর খরচ থেকে পরিবহনের খরচ, সবই কমেছে। ভোট গণনার সময়ে কম লোকে কম সময়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। একটি মেশিন দিয়ে বেশ কয়েকটি নির্বাচন করা সম্ভব। শুধু মেশিনটিতে নতুন করে প্রোগ্রামিং করাতে হবে।ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হলে কোনও ভোটারের ভোট বাতিল হয় না। ভোটের তথ্য মেশিনে দীর্ঘ সময় অবিকৃত অবস্থায় থাকে।একজন ভোটার ভোট দেয়ার পরে ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড ব্যালট ইউনিট আপনাআপনি অকার্যকর হয়ে যায়।সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এই সময়ে সুইচ অন করলেও সেটি চালু হয় না। ফলে, একজন ভোটার একাধিক ভোট দিতে পারে না।কোনও কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে ভোটকর্মীরা কন্ট্রোল ইউনিটের ক্লোজ সুইচটি চেপে দিলেই দখলকারীরা কোনও ভোট দিতে পারে না। আবার প্রতি মিনিটে ৫টির বেশি ভোট দেওয়াও যায় না। হাঙ্গামার সময়  কন্ট্রোল ইউনিটের পোলিং কার্ড খুলে রেখে দিলে আগের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...