ক্ষমতার সিঁড়ি কেন ছাত্র রাজনীতি?
এক সময় ছাত্র রাজনীতি পরিচ্ছন্ন, মেধাবী নেতৃত্ব উপহার দিত। ছাত্রদের দাবি আদায়ে সোচ্চার ও লড়াকু সৈনিক ছিল। মত পথ, মতবাদ আলাদা হলেও সাধারণ ছাত্রদের দাবি আদায়ে ছিল এক ও অভিন্ন প্লাটফর্মে। সেই সোনালী যুগের ঐতিহ্যের ধ্বজাধারী ছাত্র সংগঠন গুলো অধিকাংশ আজ কলুষিত ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আতংকের বিষয়। ছাত্র রাজনীতি মানেই যেন গা শিউরে উঠার মতো কোনো ব্যাপার স্যাপার। অস্ত্রের ঝনঝনী, খুন জখম মারামারি, দলাদলি, কোন্দল, ক্যানটিনে ফাও খাওয়া, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই ইত্যাদি এখন ছাত্র রাজনীতির সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, হলের টিভি রুমের নিয়ন্ত্রণ, হল দখল, রুম দখল যেন চর দখলের মতো বিষয়। অন্যকে ফাঁপর, গেস্ট রুমে ভদ্রতা আদব কায়দা শেখানোর নামে মানসিকভাবে হেনস্থা ছাত্র রাজনীতির নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ছাত্র রাজনীতির অতীত গৌরবের কথা ফলাও করে প্রচার করা হয় কিন্তু বুঝতে হবে বর্তমানের ছাত্র রাজনীতি জাতিকে কী উপহার দিচ্ছে? লেজুড় বৃত্তি ক্ষমতা আরোহণের সিড়ি ও টিকে থাকার খুঁটি হিসেবেইই ছাত্র রাজনীতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণ ছাত্রদের দাবি আদায়ে নেই দৃশ্যমান কোন ভূমিকা। পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, অনিয়ম,চাকরিতে ঘুষ দুর্নীতি, কাগজ কলমের দাম বৃদ্ধি, সেশনজট, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে ছাত্র রাজনীতি নিরব। যেখানে স্বার্থ নেই সেখানে ছাত্র রাজনীতির কদাচিতও সাক্ষাৎ মিলেনা। ভাই ভাই জিকির লবিং তদবির করেই সময় পার। পোস্ট পদবি পেলে হুংকার চেচামেচি আর ক্ষমতার বড়াইে হতে হয় আটোসাটো। যেন বিশাল কিছু হয়ে গেলাম। ছাত্র রাজনীতির যেখানে যোগ্যতা ও ত্যাগ তিতিক্ষার পরিবর্তে ভাই ভাই ডাক, লবিং তোষামোদকে প্রশ্রয় দিয়ে নেতা বানানো হয় সেখানে মোসাহেবী, চাটুকার রাজনীতিই গড়ে উঠবে। ভালো কিছু আশা করা মানে তেঁতুল গাছ লাগিয়ে মিষ্টি আম আশা করার মতো। ছাত্র রাজনীতি কিভাবে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে আসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। ভবিষ্যতে কাদের হাতে দেশের দায়িত্ব দিয়ে যাব তারা জাতিকে কি উপহার দেবে? কারণ তাদের মধ্যে কতটুকু দেশপ্রেমের ছটা আছে না চাটুকদারিতা আর মারামারিতে এক্সপার্ট? তাদের হাতে জাতি কতটুকু নিরাপদ থাকবে? খুনি, লুটেরা ভবিষ্যতের নেতৃত্বে আসলে দেশের কি অবস্থা হবে একবার ভাবছেন? সৎ আদর্শ দেশপ্রেমিক ছাত্র রাজনীতির বীজ বপন করতে হবে। নচেৎ দক্ষ যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দেশ হবে অকার্যকর ও করদ রাজ্য। ক্ষমতায় আরোহণের কারো সিড়ি নয় ছাত্র রাজনীতি হোক মেধা কল্যাণ, প্রজ্ঞাময়, জাতির কল্যাণে নিবেদিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন