সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতের নতুন নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবংকিছু প্রাসঙ্গিক কথা

 

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিল ১০ ডিসেম্বর ভারতের লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও পাশ হলো।ইতোমধ্যে ভারতের  রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর করায় তা আইনে পরিণত হয়েছে । বিল পাশের পর ভারতের আসাম পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে
ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ এবং রক্তক্ষয়ী সংঘাত। বিলের বিরুদ্ধে উত্তর-পূর্ব ভারতে আন্দোলনে  আসাম এখন অগ্নিগর্ভ। ত্রিপুরাও চলছে প্রতিবাদ।নিহত হয়েছেন কয়েকজন আন্দোলনকারী।আসামে 
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনারকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে শহরে আসার সময় নিরাপত্তা-বহরে হামলা চালায় নাগরিকত্ব বিলের বিরোধী উত্তেজিত জনতা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সহকারী হাই কমিশনারের গাড়ী। রাজ্যসভায় বিল পেশের আশঙ্কায় এই বছরের শুরুতে প্রায় পুরো উত্তরপূর্ব ভারত জুড়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছিল।নতুন করে বিলটি পাশের ফলে আবারও উত্তপ্ত ভারতের রাজ্যগুলো।ভারতের নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৭, ১৯৬০, ১৯৮৫, ১৯৮৬, ১৯৯২ এবং ২০০৩ সালে অর্থাৎ মোট ছয় বার সংশোধন করা হয়েছে।এবার দিয়ে সাত বারের মতো সংশোধন করা হলো। 

নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাশ করা বিষয়ে  বিজেপি সরকার বলছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়াই আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য। বিজেপি সরকারের যুক্তি তিন দেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ফলে ঐসব দেশে মুসলমানদের ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয় না।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর আগে স্বীকার করেছেন যে এই বিল পাস করা হচ্ছে তার দলের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী। আর সেটা হচ্ছে, ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা, যেখানে হিন্দুদের অধিকার অগ্রাধিকার পাবে।নাগরিকত্ব সংশোধন বিল বিজেপি নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল।মোদী সরকার বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে কথা বলেন তা ডাহা মিথ্যা। কেননা এসব দেশে সংখ্যালঘুরা অনেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন। পাকিস্তানের সংবিধানেও ২০৫, ২০৬ ও ২০৭ ধারায় সংখ্যালঘু ও তফসিলিদের জন্য বিশেষ সুবিধা ঘোষিত হয়েছে। অনেকেরই জানা নেই যে, পাকিস্তান সরকার এ জন্য ২০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষিত রাখে, যার ১০ শতাংশ তফসিলিদের জন্য, ৯ শতাংশ উচ্চবর্ণ হিন্দুদের জন্য ও ১ শতাংশ বৌদ্ধদের জন্য সংরক্ষিত হয়। এ সবেরই লক্ষ্য ছিল নাগরিকদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনা, যাতে তারা দেশত্যাগ না করেন। এই জন্যই ১৯৫০ সালে ৮ এপ্রিল নেহরু-লিয়াকত আলি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পাকিস্তানে বর্তমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চিন্তা করা যায় না অথচ ভারতে তা অহরহ ঘটছে। 
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা এযাবৎ কালের মধ্যে  সবচেয়ে বেশি নিরাপদে আছেন। ২০১১ সালের ২৫ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্মসংশ্লিষ্ট সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।সংবিধানের তৃতীয় ভাগ মৌলিক অধিকারের ৪১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে –
(১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে
(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে
(২) কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোনো ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোনো ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না। 
বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারি আইনেই ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত৷ বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ২৯৫ থেকে ২৯৮ ধারার আইনে এ সংক্রান্ত অপরাধ এবং শাস্তির বিধান আছে৷ মোটা দাগে এই অপরাধগুলো হলো,
২৯৫ – কোনো বা যে কোনো বিশেষ ধর্মবোধে অবমাননা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উপসানলয়ের ক্ষতি সাধন বা অপবিত্র করা৷
২৯৫ (ক) – কোনো বা যে কোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে উক্ত যে কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক কাজ৷
২৯৬ – ধর্মীয় সমাবেশে গোলমাল সৃষ্টি৷
২৯৭ – সমাধিস্থান ইত্যাদিতে অনধিকার প্রবেশ৷
২৯৮ – ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করার উদ্দেশে শব্দ উচ্চারণ বা অঙ্গভঙ্গি৷
এ সব অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচচ দুই বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান আছে৷ অ্যাডভোকেট শ. ম রেজাউল করিম বলেন, ‘‘এই আইন সব ধর্মের জন্য৷ এই আইনের সুবিধা সব ধর্মের মানুষ সমানভাবে নিতে পারবে৷ আর যে কোনো ধর্মের অবমাননাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ কোনো বিশেষ ধর্মের জন্য বা একক কোনো ধর্মকে সুরক্ষা দিতে এই আইন নয়৷বাংলাদেশে  প্রায় ৮৮.২% মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। প্রায় ১০.৭০% জন হিন্দু। বাকীরা মূলত বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। অথচ বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে ২৫% সংখ্যালঘুদের নিয়ন্ত্রণে। 

ভারতের অভ্যন্তরে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরোধিতার কারণ-
প্রথমত: ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোতে এ বিলের ফলে বহুসংখ্যক বেআইনি বাংলাদেশিরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন বলে স্থানীয়দের ভেতরে  উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। 
দ্বিতীয়ত:এই বিল পাসের ফলে বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় পাবে। এতে এই অঞ্চল বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত হবে এবং স্থানীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে।
তৃতীয়ত:আশঙ্কা করা হচ্ছে এ অঞ্চলের জনবিন্যাসের ধরণ বদলাবে। 
চতুর্থত:অসমীয়রা ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান এই নাগরিকত্ব বিলের। চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যে কেউ আসামে এসেছেন, তাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হবে, যে কারণে কয়েক বছর ধরে ঐ রাজ্যে নাগরিক পঞ্জী তৈরির কাজ চলছে।
অসমীয়া দলগুলি বলছে, এই বিলের মাধ্যমে আসলে বিজেপি আসামে ভোটের অঙ্ক খেলতে চাইছে। বাংলাদেশ থেকে আসামে যে অনেক হিন্দু চলে এসেছেন, তাদেরকে নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া গেলে বিজেপির ভোট ব্যাংক জোরদার হবে।
ভারতের সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ৫ নম্বর থেকে ১১ নম্বর, অর্থাৎ মোট সাতটি ধারায় নাগরিকত্বের প্রশ্নে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের আওতায় ভারতে বসবাসকারী কোনও ব্যক্তি অথবা যার পিতা ভারতীয়, অথবা যিনি ভারতে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল জুড়ে বাস করে এসেছেন, তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার যোগ্য।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। এবারের সংশোধনীতে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে।বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান  থেকে আনা নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বী (হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান) জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ৫ বছরে।ভারতে বেআইনি অভিবাসীরা ভারতের নাগরিক হতে পারে না।পুরনো আইনের আওতায়, ১) যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করে থাকেন অথবা ২) বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি এ দেশে বাস করে থাকেন, তাহলে তিনি বিদেশি অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য হবেন।ভারতের বিদেশি আইন ১৯৪৬ এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯২০ মোতাবেক অবৈধ অভিবাসীকে জেলে পাঠানো বা প্রত্যর্পণ করা হয়ে থাকে।
এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্যই এই বিল। অন্যভাবে বললে, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা।বিলে বলা হয়েছে 
২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও তার আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টানদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।অর্থাৎ অবৈধ অভিবাসীদের ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে বাস করলেও তাদের জেলে বা নিজেদের দেশে পাঠানো হবে না।তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। 
বিজেপি সরকারের দ্বিমুখী নীতি। আসামের নাগরিক পঞ্জীথেকে ১১-১৪ লাখ হিন্দু বাঙালীর নাম বাদ পড়েছে, তাদেরও বিজেপি এটাই বোঝাচ্ছে যে নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়ে গেলে তারা ভারতীয় হয়ে যেতে পারবেন।কিন্তু নাগরিক পঞ্জী থেকে যে কয়েক লক্ষ মুসলমান বাদ পড়েছেন, তাদের যে কী হবে, তা নিয়ে কোনও কথা বলে নি বিজেপি।এদিকে ভারতে পাশ হওয়ায় নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে মুসলমানদের জন্য ‘বৈষম্যমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর।
এই বিল নিয়ে প্রধান আপত্তির বিষয় হলো বিলে  মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করা হয়েছে।কেননা ভারতের সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যে সমতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এ বিল তার পরিপন্থী।১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা ছিল, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সংশোধিত বিলে ওই সময় কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। তবে তাতে বাইরে থেকে আসা মুসলিমদের কথা বলা হয়নি।
নাগরিক সংশোধন বিলটিতে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে আসা হাজার হাজার অভিবাসীদের সুরক্ষার বিষয়টিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে বসবাস করে না, এমন সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে ভারত সরকারের খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই।
বিজেপি সরকার বলেছে মানবিক কারণে এই বিল পাস করা হয়েছে।কিন্তু বাস্তবে তা ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছুই নয়।  যার জ্বলন্ত উদাহরণ মায়ানমারের সংখ্যালঘু  রোহিঙ্গা মুসলিমরা তাদের দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়ের জন্য নির্যাতিত হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় চেয়েছিল, তখন ভারত সরকার তাদের জন্য কোনো আইনি সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। উল্টো তারা রোহিঙ্গাদের ভারতের জন্য হুমকি মনে করে তাদের দেশ থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছে।মূল কথা নাগরিক সংশোধন বিল ভারতের মুসলিমদের কোনঠাসা করে, ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের খোলস থেকে বের করে হিন্দু রাষ্ট্রকরণের দিকে এগিয়ে  নিয়ে যাওয়া। ভবিষ্যৎ বলে দেবে ভারতের জনগণ বিজেপি সরকারের এই বিতর্কিত বিলকে কিভাবে গ্রহণ করবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...