সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাবরি মসজিদ মামলার রায় মুসলমানদের রক্তক্ষরণ বাড়িয়েছে

 

আজ ৯ নভেম্বর বিশ্ব ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। আজকের দিনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠীকে খুশি করতে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট প্রায় পাঁচশ বছরের পুরনো মসজিদ বাবরি মসজিদ নিয়ে এক বিতর্কিত রায় দিল। এই রায় ভারতের ২০ কোটি মুসলমানসহ বিশ্বের ১৮০ কোটি মুসলমানকে চরমভাবে মর্মাহত করেছে। ঘটিয়েছে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ।আমার ধারণা এই রায় যতটা না সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে, তার চেয়েও বেশি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও চরম হিন্দুত্ববাদীদের খুশি করতে কোর্ট এই রায় দিয়েছে। রায়টা দেখে অন্তত সে রকমই মনে হয়েছে।এমনিতেই ভারতে  মুসলমানরা তীব্র চাপের মধ্যে বসবাস করছেন। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ভারতে বাস করা মুসলমানদের আরও চাপের মধ্যে ফেলবে। ভারতের অন্য মসজিদের ওপর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দৃষ্টি পড়বে এবং তারা আরো উৎসাহিত হবে।একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন,  সেদিন যদি হিন্দুরা বাবরি মসজিদকে ধবংস না করতো তাহলে আজ এই সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট এমন আবেগী রায় দিতে  না। রায়টি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ মাত্র।সুপ্রিমকোর্টের রায়টি একটি মানুষকে হাড় হাড্ডি ভেঙ্গে আহত করে তার নামে উলটো মামলা দিয়ে তাকেই শাস্তি ভোগ করানোর মতো । এই রায়ে দেশটিতে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ ও পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্টে প্রভাব ফেলবে। ভারতে ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলমান। এই রায়ের মধ্যে দিয়ে কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার কথিত ধ্বজাধারী ভারতীয় রাষ্ট্রের চরম হিন্দুত্ববাদী চরিত্রের কুৎসিত রূপ ও ভন্ডামির  মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে । কোনো মুসলমান অমুসলিমদের উপাসনালয় গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করতে পারে না। ইসলামের বিধানও এটি নয়, ইসলাম এমন গর্হিত কাজকে স্বীকৃতি দেয় না।একটি সত্য ঘটনার আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। 
হযরত ওমর (রা.)এর শাসনামলে জেরুজালেম বিজয়ের পর  উমর (রাঃ) কে পবিত্র সমাধির গীর্জাসহ পুরো শহর ঘুরিয়ে দেখানো হয়। নামাজের সময় হলে বাইজেন্টাইন সরকারের প্রতিনিধি ও স্থানীয় খ্রিস্টান গীর্জার প্রধান
সোফ্রোনিয়াস তাঁকে গীর্জার ভেতর নামাজ আদায় করার আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু উমর (রা.) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, যদি তিনি সেখানে নামাজ আদায় করেন তাহলে পরবর্তীতে মুসলিমরা এই অজুহাত দেখিয়ে গীর্জাকে মসজিদে রূপান্তরিত করবে – যা খ্রিস্টান সমাজকে তাদের একটি পবিত্র স্থান থেকে বঞ্চিত করবে। বরং উমর (রা.) গীর্জার বাইরে নামাজ আদায় করেন যেখানে পরবর্তীতে একটি মসজিদ নির্মিত হয় যা “মসজিদে উমর” নামে পরিচিত। এখন আসি মূল প্রসঙ্গে, 
ষোড়শ শতাব্দীর ১৫২৮ সালে মুঘল সেনাপতি মীর বাকি ভারতের অযোধ্যায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। আবার এ-ও শোনা যায়, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের আগে এই মসজিদ ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান’ বলেও পরিচিত ছিল। কিন্তু কতিপয় হিন্দুদের মতে, হিন্দুধর্মের অন্যতম আরাধ্য দেবতা রাম নাকি সেখানে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। হিন্দুদের দাবি যে স্থানটিতে বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল তা রামের জন্মভূমি ছিল।রামমন্দির ভেঙ্গে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে মুসলমানরা বলছে, মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরির কোনো প্রমাণ নেই। যদিও আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট যে সেগুলো অনৈসলামিক। তবে এএসআই এ কথা বলেনি, যে তার নিচে মন্দিরই ছিল। প্রায় পাঁচ শতাব্দী ধরে মসজিদটিতে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষেরাই প্রার্থনা করেছে। ১৮২২ সালে প্রথমবারের মত ফৈজাবাদ আদালতের এক চাকরিজীবী দাবি করেন যে, মসজিদটি যে মন্দিরের জমির উপরে অবস্থিত। নির্মোহী আখড়া সংগঠন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ঐ জমির উপরে তাদের দাবি জানায়। ১৮৫৫ সালে ঐ ভূখণ্ডের দখল নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।  ১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন দুই ধর্মের উপাসনার জায়গা আলাদা করার উদ্দেশ্যে বেষ্টনী তৈরি করে। বেষ্টনীর ভেতরের চত্বর মুসলিমদের জন্য এবং বাইরের চত্বর হিন্দুদের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হয়।১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সবকিছু ঠিকমতোই  চলছিল। ১৯৪৯ সালে হিন্দু মহাসভার সদস্যদের মসজিদের অভ্যন্তরে রাম মূর্তি স্থাপন করে।রাম মূর্তি স্থাপনের পর হিন্দু- মুসলিম দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং তারা আইনের আশ্রয় নেয়। ইসলাম ধর্মে মসজিদে মূর্তি স্থাপনকে অপবিত্রতা হিসেবে গণ্য করা হয়। মসজিদটির চত্বরকে সরকার  বিতর্কিত জায়গা বলে ঘোষণা করে এবং মসজিদের দরজা বন্ধ করে দেয়।  আশির দশকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের (ভিএইচপি) তাদের রাজনৈতিক সহযোগী ভারতীয় জনতা পার্টিকে সাথে নিয়ে ঐ স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য প্রচারাভিযান চালায়। রাম মন্দির নির্মাণের জন্য কিছু শোভাযাত্রা ও মিছিল আয়োজন করেছিল। এসব শোভাযাত্রা ও মিছিলের মাঝে অন্তর্ভুক্ত ছিল রাম রথ যাত্রা, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানি।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভিএইচপি ও বিজেপি ঐ স্থানে দেড় লাখ করসেবককে নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রা চলাকালীন
অনুষ্ঠানে আদভানি, মুরলি মনোহর জোশি ও উমা ভারতীর মত বিজেপি নেতা ভাষণ দিয়েছিল। আদভানি ও জোশির বক্তব্য জনতাকে উন্মত্ত করে তুলেছিল। এ সময়ে উপস্থিত জনতা সহিংস হয়ে পড়ে। সহিংসতা প্রতিরোধে স্থাপনাটির চারদিকে পুলিশি বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছিল। দুপুরের দিকে এক যুবক বেষ্টনী অতিক্রম করে মসজিদটির ছাদে উঠে যায় এবং গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করে। এই ঘটনা ছিল সহিংসতার আগমনবার্তা। এরপর, উন্মত্ত জনতার সামনে পুলিশি বেষ্টনী বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। এরপর, উন্মত্ত জনতা কুঠার, হাতুড়ি এবং গাইতি দিয়ে মসজিদটি ভাঙ্গা শুরু করে। কয়েক ঘণ্টার মাঝে কাদা ও চুনাপাথর দ্বারা নির্মিত ইমারতটি মাটির সাথে মিশে যায়। 
এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং শিব সেনার সদস্যরা আলাদা আলাদা ভাবে ইমারতটি ধ্বংসের কয়েক মাস পূর্বেই ইমারতটি ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছিল। অযোধ্যায় মোগল আমলে তৈরি বাবরি মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পর  মুম্বাই, সুরাট, আহমেদাবাদ, কানপুর, দিল্লি ও ভোপালে হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে যে দাঙ্গায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলমান। বাংলাদেশেও সেসময় ১০ জনের মত নিহত হয়। ।পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট বাবরী মসজিদ যে স্থানে ছিল সেই ভূমি সম্পর্কিত রায় দেয়। এলাহবাদ হাইকোর্টের তিন জন বিচারক, বিচারপতি এস আর আলম, বিচারপতি ভানওয়ার সিং এবং বিচারপতি খেমকারণের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। তিনজন বিচারকের বেঞ্চ তাদের রায়ে ২.৭৭ বা ১.১২ হেক্টর ভূমি সমান তিনভাগে ভাগকরার রায় প্রদান করেন। যার এক অংশ পাবে হিন্দু মহাসভা রাম জন্মভূমিতে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য, দ্বিতীয় অংশ পাবে ইসলামিক সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং বাকি তৃতীয় অংশ পাবে নির্মোহী আখরা নামে একটি হিন্দু সংগঠন। এই স্থানে রামমন্দির ধ্বংস করে বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল এ বিষয়ে তিন জন বিচারকের দুজন একমত হয়েছিলেন।এই রায়ের বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালে অযোধ্যা জমি বিতর্কে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে বিতর্কিত স্থানে রাম মন্দির তৈরির অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। 
আজকে সুপ্রিমকোর্টেের রায়ে বাবরি মসজিদের স্থলে রাম মন্দির নির্মাণের রায় দিয়েছে। 
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বে  অন্য বিচারপতিরা হলেন  এস এ বোডবে, ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ ও এস আবদুল নাজির এর আপিল বেঞ্চ। একটানা চল্লিশ দিন শুনানির পর এ রায় দিল। সুপ্রিমকোর্টের আজকের চূড়ান্ত রায়ে বলা হয়েছে মুসলিমদের মসজিদ তৈরির  জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে অযোধ্যাতেই অন্য কোনও বিকল্প' স্থানে পাঁচ একর ভূমি। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে এ ভূমি দিতে হবে।এই মন্দির ও মসজিদ তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি ট্রাস্ট গঠনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।অযোধ্যার বাবরি মসজিদের ২.৭৭ একর জমিকে বিরোধের মূল কেন্দ্র বলে গণ্য করা হয়,আজকের রায়ে তার মালিকানা দেওয়া হয়েছে 'রামলালা বিরাজমান' বা হিন্দুদের ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের শিশুরূপের বিগ্রহকে। যার অর্থ সেখানে রামমন্দিরই তৈরি হবে। তবে বাবরি মসজিদ ধবংস যে পরিকল্পিত এবং সেখান রাম মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল না তা হলফ করে বলা যায়,
প্রথমতঃ ১৫২৮ সালে রাম মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরী হয়েছে বলে কথিত আছে। দীর্ঘদিন হিন্দুরা নিশ্চুপ ছিল তারা মুখ খুলেননি এ বিষয়ে। 
বাবরি মসজিদের জমির মালিকানার পক্ষে সব ধরনের প্রমাণ সুপ্রিমকোর্ট স্বীকার করেছে। অযোধ্যায় ১৫২৮ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে নিয়মিত নামাজ আদায়ের বিষয়টিও বিচারকরা স্বীকার করেছেন। হঠাৎ গত শতাব্দীর থেকে হিন্দুত্ববাদী ভাবধারা পুনর্জাগরণে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে এই ইস্যু সামনে আনা হয়। এতে বিজেপি ও চরম হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বেশ সুবিধা পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত:আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট যে সেগুলো অনৈসলামিক। তবে এএসআই এ কথা বলেনি, যে তার নিচে মন্দিরই ছিল। সুতরাং রাম মন্দির থাকা দিবাস্বপ্নের মতো।
তৃতীয়ত :অযোধ্যার বাবরী মসজিদ ধ্বংসের  ঘটনা  হিন্দুত্বকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনন্য সুযোগ হিসেবে কাজ করেছে।
চতুর্থত:১৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার মসজিদ ধ্বংসের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত উচ্চ আদালতের বিচারক মনমোহন সিং লিবারহানের নেতৃত্বে লিবারহান কমিশন গঠন করে। ১৬ বছরে ৩৯৯ বার বৈঠকের পর ২০০৯ সালের ৩০ জুন কমিশন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১,০২৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।প্রতিবেদন অনুসারে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের ঘটনা অপ্ররোচিত কিংবা অপরিকল্পিত ছিল না বলে প্রতিবেদন দেয়। 
পঞ্চমত: একটি প্রতিবেদটিতে আরো দাবি করা হয় যে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং শিব সেনার সদস্যরা আলাদা আলাদা ভাবে মসজিদটি ধ্বংসের কয়েক মাস পূর্বেই ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছিল।
আজকের ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের রায়  ন্যায়বিচার হতে পারে না।এই রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের খুশি করার এবং ন্যায় ভ্রষ্ট রায়। এটি মনে রাখা প্রয়োজন ইসলাম ধর্মে মসজিদ কখনও পরিবর্তন হতে পারে না। যেখানে একবার মসজিদ নির্মিত হয়, সে জায়গাটি মসজিদেরই থাকে। মসজিদ স্থানান্তরিত করার কোনো সুযোগ নেই।এই রায় হিন্দু মুসলমানদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই রায় বিশ্ব মুসলমানদের হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।যদিও মুসলমান নেতারা এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে খুব বেশি লাভ হবে না বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...