সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুসলিম নাম নিশানা মুছে ভারত হতে চায় হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র।



ভারতে চলছে চরম হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের উত্থানের যুগ। বিশেষ করে বর্তমান নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতা আসার পর সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর আক্রমণ ও জোর করে ধর্মান্তরিত করার প্রক্রিয়ায় বিষয়টি এখন বেশি আলোচনা হচ্ছে।দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে  পাক ভারত বিভক্ত হয়ে  যায়।এরপর ভারত সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য  ধারণ করে।কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার খোলসে ভারত  সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে বিভিন্ন সময়ে হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করেছে। এ হত্যাযজ্ঞের যাত্রা এখনো চলমান।বর্তমান ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা সমগ্র বিশ্বের নিরিখে তৃতীয় বৃহত্তম।ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পর সবচেয়ে বেশি মুসলমানদের বাস ভারতে। সেহিসেবে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম সংখ্যালঘু-মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্র। ভারতের হিন্দু ধর্মের পর দ্বিতীয় বহুল-প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের অনুসারীরা হচ্ছেন মুসলমানেরা।তাই জনসংখ্যার বিচারে ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা ঠিক হিন্দুদের পরেই। ভারতের জনসংখ্যার মোট ১৩.৪ শতাংশ মুসলমান। দেশের মুসলমান জনসংখ্যা ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ১৩৮,০০০,০০০ এবং ২০০৯ সালের প্রাককলন অনুসারে ১৬০,৯৪৫,০০০। এখন ভারত রাষ্ট্র  চূড়ান্তভাবে হিন্দুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যে ভারতকে মুসলমানেরা প্রায়  সাত'শ বছর শাসন করেছিল। সেই ভারতে মুসলমানেরা এখন সংখ্যালঘু ও নির্যাতিত।বর্তমানে ভারত জুড়ে মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে ফেলার চূড়ান্ত আয়োজন চলছে। এই প্রক্রিয়া ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পূর্বে অদৃশ্য ছিল। বাবরি মসজিদে উগ্র হিন্দুদের হামলার পর তা প্রকাশ্যে আসে। এখন গো রক্ষার নামে মুসলমানদের হত্যা এবং  ভয়ভীতি দেখিয়ে ভারত ছাড়া করা বিজেপি সরকারের রীতিমতো কর্মসুচী হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত এখন পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হতে চায়।  যে ভারতে হিন্দু ছাড়াও বৌদ্ধ খ্রিস্টানরা নাগরিকত্ব পাবে ও স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে  পারবে। কিন্তু মুসলমানেরা সেদেশে থাকতে পারবে না।পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু হিন্দুরা ইচ্ছে করলে যখন তখন ভারতের নাগরিকত্ব নিতে পারবে এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবে। এ লক্ষ্যে বিজেপি সরকার নতুন নাগরিক আইন করার কাজে হাত দিয়েছে। তাদের মডেল হবে ইহুদি ইসরায়েল রাষ্ট্রের মতো যেদেশে পৃথিবীর যেকোনো দেশের ইহুদিরা বিনাবাঁধায় প্রবেশ ও নাগরিকত্ব পেতে পারে। ভারত যে একমাত্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র  হতে চায় তার জন্য মোদীর বিজেপি সরকার কিছু  পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমত:মুসলিম শাসনামলে নির্মিত অবকাঠামো নিশ্চিহ্ন করে সেখানে হিন্দুদের মন্দির অবকাঠামো তৈরি।এই প্রক্রিয়ায় বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা হয়েছিল। 
এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয় যে স্থানটির নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করে দিতে। কোর্টের রায় অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের, এক-তৃতীয়াংশ হিন্দুদের এবং বাকি অংশ 'নির্মোহী আখারা' গোষ্ঠীর কাছে দেয়ার রায় দেয়। যেই অংশটি বিতর্কের কেন্দ্র, যেখানে মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল, তার নিয়ন্ত্রণ দেয়া হয় হিন্দুদের ।২০১০ সালের রায়ের বিরুদ্ধে হিন্দু ও মুসলিম উভয় পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে
 আপিল করে ফলে সুপ্রিম কোর্ট
হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে ।গত 
৯ নভেম্বর সে জায়গাটিতে মন্দির তৈরির পক্ষেই চূড়ান্ত রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। শুধু বাবরি মসজিদ কেন ভারতে কোনো মুসলিম স্থাপত্য ও মুসলিম আইডেন্টিটিই নিরাপদ নয়। কেননা ইতিহাসবিদ পিএন ওক ১৯৮৯ সালে প্রকাশ করা 'তাজমহল: দ্য ট্রু স্টোরি' বইতে তাজমহলকে 'তেজো মহল' বলে দাবি করেন।
বইতে তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে এটি ছিল আদতে একটি হিন্দু মন্দির এবং একজন রাজপুত শাসক এটি তৈরি করেন।মিস্টার ওক মনে করেন, সম্রাট শাহজাহান এটি দখল করে সেটিকে পরে তাজমহল নাম দিয়েছেন।২০১৭ সালে
একজন ভারতীয় এমপি ভিনয় কাটিয়ার
দাবি করে তাজমহল ছিল একটি হিন্দু মন্দির। ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির এই এমপি তাজমহলের নাম বদলে দেয়ার দাবি জানিয়েছিল সরকারের কাছে। তিনি বলেছিলেন  একজন হিন্দু শাসক তাজমহল তৈরি করেছেন।
ভারতের গণমাধ্যমে তার এই দাবি ব্যাপক প্রচার পায়। অনেক ডানপন্থী গোষ্ঠী তাঁর এই দাবি সমর্থন করে। তাহলে চরম হিন্দুত্ববাদীদের পরবর্তী টার্গেট কি তাজমহল? 
দ্বিতীয়ত : ভয়ভীতি ও নির্যাতনের মাধ্যমে মুসলমানদের দেশছাড়া করা। নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ব-বাদী বিজেপি সরকারের সময়ে গরু জবাইকে কেন্দ্র করে বিভক্তি চরম আকার নিয়েছে। গরু বিক্রি এবং জবাইর ক্ষেত্রে কড়াকড়ির ফলে বিভ্রান্তি এবং উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠেছে।ভারতে উত্তেজিত জনতার হাতে সাম্প্রতিক সময়ে বহু মুসলমানকে হত্যার ঘটনা অনেককে নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। অনেক এলাকায় বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে হিন্দু জনতার হাতে মুসলিম নাগরিকের হত্যার ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের মুসলিম বিদ্বেষের ঘটনা বেড়েছে নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে।তৃতীয়ত: বিভিন্ন নাগরিক পঞ্জি ও আইনের মাধ্যমে মুসলমানদের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান পুশ ইন করা।যেমন আসামের বাঙালীরা এখন একটা মহাসঙ্কটের মুখোমুখি। এন আর সির মাধ্যমে ১৯ লক্ষ মানুষ, যাদের মধ্যে অধিকাংশ বাঙালী মুসলমান তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি এনআরসির মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানদের দেশ ছাড়া করার ঘোষণা দিয়েছে। যাদের বাংলাদেশের নাগরিক বলে চিহ্নিত করা হবে। বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। 
চতুর্থতঃ ভারতে ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্যের যেসব নাম আছে তা মুছে ফেলা বা নাম পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া। 
ভারত উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকে নাম পরিবর্তনের সংস্কৃতি চলে আসছে। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় স্থান ও নিদর্শনের নামকরণ ও নাম পরিবর্তন হয়ে আসছে। এরমধ্যে ধর্মের  কারণে নাম পরিবর্তন হয়েছে সবচেয়ে  বেশি। 
১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পা রেখেছিলেন আসামের করিমগঞ্জে। সেখানে একটি সভা করে তারপরে গিয়েছিলেন সিলেটে। শ্রীহট্ট বা সিলেট সফরকালে কাউকে সম্ভবত অটোগ্রাফ দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওই অঞ্চলের বর্ণনা দিতে লিখেছিলেন :
"মমতাবিহীন কালস্রোতে, বাঙলার রাষ্ট্রসীমা হোতে, নির্বাসিতা তুমি, সুন্দরী শ্রীভূমি।
এবছর সেই ঘটনার শতবার্ষিকী উৎযাপনের সময়ে দাবি উঠেছে, তিনি সিলেটকে যেহেতু  'শ্রীভূমি' বলে বর্ণনা করেছিলেন, তাই করিমগঞ্জের নতুন নাম হোক শ্রীভূমি।
দাবিটি  জানিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির একজন বিধায়ক তাই বিশ্লেষকদের অনেকেই এতে রাজনীতি দেখছেন। তারা বলছেন যেভাবে নানা শহরের ইসলামি নাম যেভাবে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে বদলানো হয়েছে, সেই একই ভাবনা এখানেও কাজ করছে।অবিভক্ত সিলেট জেলার মধ্যে শুধু করিমগঞ্জই দেশভাগের পরে ভারতে যুক্ত হয় -- তাই করিমগঞ্জের নাম পাল্টিয়ে রবীন্দ্রনাথের বর্ণনা অনুযায়ী শ্রীভূমি করার দাবি তুলছে বিজেপি। 
 গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর গত’ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকা ও স্থাপনার মুসলিম নাম বদলের যেন হিড়িক পড়েছে।নাম বদলে  হিন্দু নাম দেয়া হচ্ছে। বিজেপি ভারতের উত্তর প্রদেশের  এলাহাবাদের মুসলিম নাম পরিবর্তন করে প্রেয়াগরাজ নামকরণ করেছে । এলাহাবাদ উত্তর প্রদেশে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর। ১৬শ শতাব্দীতে দিল্লীর মুগল সম্রাটরা এই শহরের নাম রেখেছিলেন এলাহাবাদ।ঐতিহাসিক এই শহরেই জন্ম হয়েছিল ভারতের পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর। গত শতাব্দীতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক বৈঠক ও সংগ্রামের স্মৃতি বহন করে আছে এলাহাবাদ।  এভাবে ভারতে নাম বদলের সংস্কৃতির মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার শত শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যও নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।শুধু তাই নয় ভারতে মুসলিম নাম ‘আহমেদাবাদ’ পরিবর্তন করে করা হয়েছে  আমেদাবাদ। ভারতের আসাম রাজ্যের বাংলাভাষী বরাক উপত্যকা। হযরত শাহজালাল (রহ.) এর সঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার মধ্যে কোন একজন দরবেশ ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে সেখানকার দরগাকুনা নামক স্থানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এ কারণে, তাঁর স্মৃতিধন্য এলাকাটির নাম হয়েছিল দরগাকুনা। এলাকার ডাকঘরের নামও রাখা হয়েছে দরগাকুনা।দরগাকুনা নাম এখন ‘দুর্গাকুনা’। কাগজ-পত্রে বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ার পর স্থানীয় লোকজন যখন জায়গাটির নাম-বিকৃতির প্রতিবাদ করল, তখন বলা হলো, এটা ভুলে হয়ে গিয়েছে, সংশোধন করা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এখনো ভুলটি সংশোধন করা হয়নি বা সংশোধন করার কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি।
কয়েক বছর আগে উত্তর প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী মুঘলসরায় রেলস্টেশনের নাম পাল্টে রাখা হয় হিন্দু দীনদয়ালের নামে। মুসলিম শাসক আওরঙ্গজেব সড়কের নামও পরিবর্তন করা হয়েছে। ভারতের রাজস্থানে ৮টি গ্রামের মুসলিম নাম পরিবর্তন করে হিন্দু নাম দেয়া হয়েছে। রাজস্থান রাজ্যের বড়মে জেলার ‘মিয়া কা বড়া’ নামের একটি গ্রামের নাম বদল করে করা হয়েছে ‘মহেশপুর’। অন্যদিকে রাজ্যের অপর একটি গ্রাম ‘ইসমাইলপুর’ এর নাম বদল করে রাখা হয়েছে ‘পিচানবা খুর্দ’। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এমন আরও ৬টি গ্রামের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে রাজস্থান রাজ্যে। যেগুলোর অধিকাংশ ছিল মুসলিম নাম। ২০১৮  গ্রামগুলির মধ্যে ৮টি গ্রামের নাম পরিবর্তন আবেদন মঞ্জুর করে ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি  সরকার।ভারতের  আলীগড় জেলায় বিভিন্ন স্থানে ‘আলীগড়’ শব্দের স্থানে বর্তমানে লেখা হচ্ছে ‘হরিগড়’। মধ্যপ্রদেশের আজমগড়কে এখন লেখা হচ্ছে ‘আরইয়মগড়’। মির্যাপুরকে পরিবর্তন করে লেখা হচ্ছে ‘মীরজাপুর’। কারণ, হিন্দুদের ধারণা এ স্থানটিতে নাকি তাদের দেবী মীরজা বাস করতেন। লক্ষ্ণৌ শহরের বিখ্যাত  ‘বেগম হযরতমহল’ পার্ককে এখন বলা হচ্ছে উর্মিলা ভাটিকা। নাম পরিবর্তনের জন্য আরও নতুন নতুন দাবি উঠছে। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য রক্ষিত হয়, তেমন কোন স্মৃতি অবশিষ্ট থাকবে না।ভারত হবে চরমপন্থী হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি লালনের আঁতুড়ঘর ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...