সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বশেমুরবিপ্রবি ভিসির বিভিন্ন সময়ের কিছু সুবচন

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) পদত্যাগী ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বিভিন্ন সময় মজাদার আবার কখনো উদ্ধতপূর্ণ কথন আর দুর্নীতির জন্য গত মাসে তিনি ছিলেন ব্যাপক আলোচনায়। জাতীয় পত্র পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউবে কখনো ফোনালাপে ভিসির ধমকের সুরে কথা ও প্রছন্ন হুমকি মিডিয়ায় সুনামির মতো আছড়ে পড়তো। ভিসির বিভিন্ন সময়ে চমকপ্রদ কিছু মন্তব্য নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
গত মাসের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ছয়জন শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্লাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বহিষ্কার করে ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। এরপরে শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবকদের উপাচার্যের কার্যালয়ে ডেকে এনে ভিসি নাসির অকথ্য ভাষায় কথা শোনায় এবং অপমান করে। সেই কথোপকথনের একটি অডিও কিছুদিন আগে ফাঁস হয়।
ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায় ভিসি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘জানোয়ারদের কথা শুনলে মরা মানুষ তাজা হয়ে যায়। তোদের বাপরা আর মায়েরা চালাক এই ইউনিভার্সিটি। আমি ছেড়ে দিয়ে চলে যাই। তোর চৌদ্দ পুরুষ ধরে স্বার্থক আমি কয়টা ছিট বাড়াইছি দেখে তোরা চান্স পাইছিস। কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে ভালো? কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে ভালো চলে।'
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? পত্রিকায় মন্তব্য প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য এই প্রশ্নটি ফেসবুকে লিখেছিলেন বশেমুরবিপ্রবির আইন বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া। এতে ক্ষেপে যান ভিসি। তিনি ওই ছাত্রীকে শোনান কুরুচিপূর্ণ কথা। ফোনে ওই ছাত্রীকে ভিসি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তা তোর আব্বার কাছে শুনিস! গেছে কোনো দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে? এটা (ল ডিপার্টমেন্ট) আমি খুলছিলাম বলেই তো তোর চান্স হইছে, নইলে তুই রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলে-মেয়ে। তিন দিনের বাছুর তুই আবার জানতে চাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?'

অধিকাংশ সময়ে ছাত্রীদের অপমান করে পদত্যাগী ভিসি নাসির কথা বলতেন। তারও কিছু প্রমাণ অডিওতে পাওয়া যায়। ক্লাসের মেধাবী শিক্ষার্থীকে তিনি বলছেন, ‘তুই মেধাবী, কে কি করলো না করলো তা নিয়ে তোর মাথা ব্যথা কেন? এই জানোয়ার তুই তো কাজের মেয়ে, তুই তো মেয়ে মানুষ, ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেললেই পারতিস।আমার এমনিতেই রাগ বেশি। তোদের দেখে আমার রাগ আরও বাড়তেছে।তোরা জন্ম নিছিস কাদের ঘরে? তোর বাপদের ভিসি বানা।'
বিশ্ববিদ্যালয়কে কিন্ডারগার্টেন বলায় এক শিক্ষার্থীকে ভিসি বলছেন, ‘এ জানোয়ার তোরে তো লাথি দিয়ে বের করে দিতে ইচ্ছা করছে। তোর আব্বার মনে হয় এটা কিন্ডারগার্টেন? তোর আব্বার থেকে ছোট করে দেখালে একটু খুশি হইস তাই না? লাথি দিয়ে তোরে ফেলে দিবো, এ জানোয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয় কিসের কিন্ডারগার্টেন? ভিসি ওর বাপের চেয়ে ছোট এজন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কিন্ডারগার্টেন বলছে।'
এরপর এক শিক্ষার্থীকে তিনি বলছেন, ‘তোর বাপ নাকি কলেজের শিক্ষক তারে বাপ বলে ডাকার ইচ্ছা করে তোর? তোর বাপরে বাপ বলে ডাকিস? পছন্দ হয়? তোর বাপের চেয়ে ভালো বাপ আছে না?’একজন অভিভাবককে ভিসি বলেন, ‘একটা বাজে ছেলের মা, আপনি কোন কথা বলবেন না।'
আমি এখানকার ভিসি কিন্তু আমার মূল সরকারি চাকরি তো ময়মনসিংহে, আমারে এই সরকার আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বানিয়ে দিবে, নয়তো বিদেশে পাঠিয়ে রাষ্ট্রদূত করে দিবে, নয়তো মন্ত্রী করে দিবে। আমারে তো আর সরকার মুদির দোকান দিয়ে বসিয়ে দিবে না। ভদ্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছি তো এজন্য তোরা কিছু ঠিক পাস না।’
প্রাচীন গ্রীসে সক্রেটিসের সময় থেকে আজকের এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনেক পেশা পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে, অনেক নতুন পেশার উদ্ভব হয়েছে, কিন্তু শিক্ষকতা টিকে আছে তার সম্মানের জায়গায়।কিন্তু কিছু শিক্ষকরূপী অমানুষ আর দুর্জনের কারণে এই মহৎ পেশাটি বারবার কলুষিত হয়েছে। যার ছিটেফোঁটা লাগে নিরীহ নিষ্কলুষ তামাম শিক্ষক সমাজের ওপর।
শিক্ষক হতে চাইলে  নিজেকে গড়তে হবে একজন আদর্শবান, মানবিক মানুষ হিসেবে।যেটির আজ বড্ড অভাব। যেকারণে বাংলাদেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মানুষ গড়ার কারিগরদের এহেন দুরবস্থা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...