সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামোফোবিয়া ও ইমরান খানের বক্তব্য বিশ্লেষণ







মো. আবু রায়হান:২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দেওয়া বক্তব্যটি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।পঞ্চাশ মিনিটের দীর্ঘ এই বক্তব্যে তিনি চারটি মৌলিক বিষয় নিয়ে কথা বলে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, মানি লন্ডারিং, ইসলামোফোবিয়া ও কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। প্রসঙ্গক্রমে আরো অনেক বিষয় উঠে এসেছে তার বক্তব্যে।ইমরান খান সবচেয়ে বেশি কথা বলেছেন কাশ্মীর নিয়ে।এছাড়া বিজেপির অতীত বর্তমান, মোদীর আমেরিকায় ভিসা বাতিল, পাকিস্তান নিয়ে অপপ্রচার, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়েও তিনি কথা বলেছেন।
বিশ্বের এই ক্রান্তিলগ্নে ট্রাম্প, নেতানিয়াহু,বরিস জনসন,  মোদী ও রুহানীর মতো বিশ্ব নেতাদের ভিড়ে ইমরান খানের বক্তব্য ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচিত,  সমাদৃত ও দিকনির্দেশনামূলক। তার বক্তব্য যেমন ছিল তথ্যনির্ভর,  যুক্তিপূর্ণ তেমনি ছিল কিছু ক্ষেত্রে হাস্যরসাত্মক। তিনি কৌতুকের সুরে বলেন, ভারতের জঙ্গী বিমান বীরত্বপূর্ণভাবে পাকিস্তান সীমান্তে প্রবেশ করে দশটি বৃক্ষ হত্যা করে তখন মুহুর্মুহু করতালি শুরু হয়।ইমরানের বক্তব্যের তৃতীয় পয়েন্টটি ছিল ইসলামোফোবিয়া। এবার আসুন ইসলামোফোবিয়া সম্পর্কে কিছুটা ধারণা অর্জন করি। ইসলাম ও  ফোবিয়া শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে ইসলামোফোবিয়া (Islamophobia)একটি ইংরেজী শব্দ।যার অর্থ ইসলামভীতি,  ইসলামবিদ্বেষ, মুসলিম-বিরোধী মনোভাব ও ইসলামাতঙ্ক ইত্যাদি ।এটি anti-Muslim sentiment অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিন্দার্থে বা ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহূত একটি রাজনৈতিক শব্দ, যার অর্থ ইসলামকে ভয় করা। উইকিপিডিয়া মতে, 
Islamophobia is the fear, hatred of, or prejudice against the Islamic religion or Muslims.প্রকৃতপক্ষে ইসলামোফোবিয়া অর্থ হলো ইসলামের প্রতি ভীতি, ইসলামের অনুপম জীবনাদর্শকে ভয় পাওয়া বা ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলমানদের কাছ থেকে কোনো প্রকার ক্ষতি বা আঘাতের আশঙ্কা করা।ইসলামোফোবিয়ার কারণ হিসেবে অনেকে চরমপন্থী মুসলিমদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে দায়ী করলেও অনেকে ইসলাম ধর্মকেও এর জন্য দায়ী  করেন থাকেন। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিভিন্ন স্থানে চরমপন্থী মুসলিমদের সশস্ত্র কর্মকান্ড এবং পশ্চিমা ও ইউরোপীয় বিশ্বে মুসলিম অভিবাসী বেড়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন স্থানে শব্দটির ব্যবহার বেড়েছে।উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের শেষ ও নব্বই’র দশকের শুরুতে ইসলামোফোবিয়া পরিভাষাটির ব্যবহার শুরু হয়।ইসলামফোবিয়া পরিভাষার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয় ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসীদের হামলার পর। মার্কিন দার্শনিক নোয়াম চমস্কিও এমন ধারণায় পোষণ করেন।  ইসলামোফোবিয়ার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের মাঝে ইসলামভীতি জন্ম দেয়া। পশ্চিমাবিশ্বে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা, ইসলামী সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতেই মূলত ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা বা ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসলামের নামে যে হামলাগুলো হচ্ছে তা এর অন্তর্ভূক্ত। 
ফরাসি উপনিবেশিক শাসক Alain Quellien, (The Muslim Policy in West Africa, 1910)কে মনে করা হয় তিনিই সর্বপ্রথম একটি লিখিত দলিলে ইসলামফোবিয়া শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন।
আরেকজন উপনিবেশিক প্রশাসক Maurice Delafosse বলেছিলেন, উপনিবেশিক প্রশাসনের ভেতরে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণাবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এবং প্রশাসন নীতিগতভাবেই মুসলমানদের প্রতি ঘৃণাবাচক দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করতেন। ১৯৮৫ সালে প্যালেস্টাইনী বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক এডওয়ার্ড সাঈদ (২ নভেম্বর ১৯৩৫ – ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৩)এই শব্দটি ব্যবহার করেন তাঁর লেখায়। সম্ভবত তিনিই প্রথম একাডেমিক জার্নালে এই শব্দটি ব্যবহার করেন। জন্মগত ভাবে এডওয়ার্ড সাঈদ একজন আরব খ্রিস্টান, তিনি জন্মেছিলেন প্যালেস্টাইনে।
তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ডক্টরেট হন।  সারাটি জীবন তিনি কাটিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর পিতা একজন আমেরিকান সৈনিক ছিলেন এবং  আমেরিকার পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ।তবে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান রানিমেইড ট্রাস্ট ইসলামোফোবিয়া শব্দটির পুনর্জন্মদাতা।সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামোফোবিয়া বলতে আমরা যা বুঝি তাঁর সাথে আক্ষরিক অর্থে সংশ্লিষ্ট নয়। বরং বর্তমান সময়ের ইসলামোফোবিয়া ধারণাটিকে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে পরিচিত করে তোলে  রানিমেইড ট্রাস্ট।এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মুসলিম পুরুষদের তুলনায় মুসলিম নারীরা ইসলামোফোবিয়ার স্বীকার হচ্ছেন বেশি।যেমন ফ্রান্সে ১৯৮৪ সালে মুসলিম নারীদের জন্য কর্মস্থলে এবং প্রকাশ্য জনবহুল স্থানে হিজাব মস্তক আবরণী, ঘোমটা, নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়, যাকে অনেকেই ইসলামোফোবিয়ার ফলশ্রুতি হিসেবেই দেখে থাকেন।জাতিসংঘে  ইমরান খানের প্রদত্ত বক্তব্য ছিল এযাবৎ কালে ইসলামোফোবিয়া সম্বন্ধে সবচেয়ে পরিষ্কার ও যুক্তিনির্ভর বক্তব্য।যা আজ পর্যন্ত কেউ এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। ইসলামোফোবিয়া নিয়ে ইমরান খানের  বক্তব্যের অংশ বিশেষ। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন। পৃথিবীর সবকয়টি মহাদেশেই মুসলমানদের বসবাস। ৯/১১ এর পর থেকে আশঙ্কাজনকভাবে ইসলামফোবিয়ার ক্রমবৃদ্ধি ঘটে। এই বৃদ্ধিটা উদ্বেগজনকও বটে। শুধু উদ্বেগজনকই নয়, এটাই মূলত বিভাজন সৃষ্টি করেছে। বিস্ময়কর ব্যাপার, মুসলিম মহিলাদের সাধারণ হিজাব ( মাথার আবরণী)  পরাটাও আজ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে! সাধারণ হিজাবকেও অস্ত্রের মতোই দেখা হচ্ছে।কোনো দেশের কিছু ভদ্র মহিলা তাদের গায়ের পোশাক খুলে ফেলতে পারেন, তাই বলে কি আর কেউ পোশাক পরতে পারেন না! আর কেনই বা এমনটা হচ্ছে? কারণ কিছু পশ্চিমা নেতৃত্ব  ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন।উগ্রবাদী ইসলাম (Radical Islam) আবার কী? ইসলাম তো একটাই। আর সেটা হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর ইসলাম। সেখানে আবার ইসলামফোবিয়া কেন? আমার জানতে ইচ্ছে করে, একজন আমেরিকান কীভাবে র‌্যাডিক্যাল মুসলিম ও মডারেট মুসলিম বলে মুসলমানদেরকে ভাগ করতে পারে! আমাদের ধর্মে মোটেই এসবের কোনও সম্পর্ক নেই। বিদেশ ভ্রমণের সময় আমরা ইসলামফোবিয়ার মুখোমুখি হয়েছি। ইসলামফোবিয়া ইউরোপীয় দেশগুলোতে মুসলমানদেরকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। আর এ পরিস্থিতি উগ্রবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।আমার বক্তব্য হলো, আমাদেরকে অবশ্যই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।মূলত নাইন ইলেভেনের পর র‌্যাডিক্যাল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। মুসলিম নেতৃবৃন্দ পশ্চিমা নেতাদের বারবার বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, র‌্যাডিক্যাল ইসলাম বলে আদৌ কিছু নেই।
সব সমাজেই কট্টরপন্থী রয়েছে। কিন্তু করুণা ও ন্যায়বিচার সব ধর্মের মূল কথা। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ ব্যাখ্যা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা মুসলিম বিশ্বকেও ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছি যে র‌্যাডিক্যাল ইসলাম বলে কিছু নেই। একসময় পাকিস্তানে আমরা ঝড়ের কবলে ছিলাম এবং আমাদের সরকার enlightened moderation নামে একটি স্লোগান তৈরি করেছিলেন।যেহেতু ৯/১১ হামলাকারীরা আত্মঘাতী ছিল, সঙ্গত কারণে আত্মঘাতী হামলা সম্পর্কেও একটু বলা দরকার। ৯/১১ ব্যাপারটি ছিল অনেকটা বেহেশতের কুমারীর মতো। ৯/১১ এর উদ্ভট ঘটনাটি ঘটেছিল আত্মঘাতী হামলার ইসলামিকরণের জন্যে। তামিল টাইগার আর জাপানের কামিকাজে বোমারু নিয়ে কারো কোনও মাথাব্যথা নেই। তারা যখন আত্মঘাতী হামলা করে, তখন আর কেউ ধর্মকে দোষে না। হ্যাঁ, এটাই সত্য যে, কোনও ধর্মই সহিংসতার শিক্ষা দেয় না।পশ্চিমাদের ইসলামফোবিয়ার কারণ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুসন্ধান আছে। আমি পশ্চিমের দেশগুলোতে দীর্ঘসময় কাটিয়েছি ক্রিকেট খেলে। পশ্চিমাদের মন-মানস কীভাবে কাজ করে, তা আমি ভালো করে জানি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হলো, ইসলামফোবিয়ার অন্যতম কারণ ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত সেই বই ( সালমান রুশদির দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বইটি)।যেখানে জঘন্য ভাষায় হযরত মোহাম্মদ (সা.)কে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয়েছিল।পশ্চিমারা আসল সমস্যা বুঝতে পারলো না। কেননা, ইসলাম সম্পর্কে তাদের গভীর অনুধাবন নেই। ইসলামের শান্তি-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল নয়। তাই ইসলাম তাদের কাছে একটি উগ্র, সাম্প্রদায়িক ও মারমুখো অসহিষ্ণু ধর্মের নাম।
দুই-তিন বছর পর পর কেউ একজন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেন আর আমরা মুসলমানরা আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে এর ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ করি। এ প্রতিবাদই আবার পশ্চিমাদের কাছে হয়ে ওঠে উগ্রবাদ, অসহিষ্ণুতা! এটাই মুসলমানদের কপাল!পশ্চিমের সবাই খারাপ অথবা সবাই ভালো এটা বলা যাবে না। খারাপের সংখ্যা নেহায়েত সামান্য। এই সামান্য সংখ্যক খারাপ লোকই মুসলমানদের উস্কে দেওয়ার জন্যে দায়ী। আমি তাদেরকেই দায়ী করবো।
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.) ছিলেন একজন আদর্শ মানব, মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের তিনি বাস্তব নমুনা। আমরা কেবল তাঁর আদর্শে বেঁচে থাকতে চাই। রাসুল মদিনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যাকে বলে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।আমি ইসলাম সম্পর্কে এমন অদ্ভুত বিষয় শুনেছি, যা ইসলাম সম্পর্কে নির্ঘাত মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। ইসলাম নাকি নারীবিরোধী, সংখ্যালঘুবিরোধী। অথচ, মদিনা রাষ্ট্রই সর্বপ্রথম নারী, অসহায় ও বিধবার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। মদিনা রাষ্ট্র ঘোষণা করে ছিল, কালো-সাদা সকল মানুষ এক সমান।রাসূল (সা.) ঘোষণা করেছিলেন, সবচেয়ে ভালো কাজ হচ্ছে দাসকে মুক্ত করা। কারও দাস-দাসী থাকলে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মতো আচরণ করুন। রাসূলের এ ঘোষণার ফলে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটল। দাসরা রাজা হয়ে গেলেন। এমনকি দাসেরা মিসরে ও ভারতে মামলুক নামে দাস রাজবংশও প্রতিষ্ঠা করেছিল।  
সংখ্যালঘুসহ সকল ধর্মের ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষা করাও ইসলামি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে একজন সাধারণ ইহুদি নাগরিকের কাছে মামলায় হেরে গিয়েছিলেন।ইসলাম প্রতিষ্ঠিত নিরপেক্ষ আদালতে মুসলিম বিচারক মামলার রায় দেন ইহুদি নাগরিকের পক্ষে। এটাই ইসলাম। যেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোনও মুসলিম সম্প্রদায় যখন সংখ্যালঘুদের প্রতি অবিচার করেন, তখন সেটা আমাদের ধর্মের শিক্ষার বিরুদ্ধে যায়।
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের হৃদয়ে বাস করেন। যখন তাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয়, তখন আমাদের হৃদয়ে আঘাত লাগে। ব্যথা অনুভব করি। যে ব্যথা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একসময় মনের ব্যথা দেহে ভর করে। মুসলমানরা তখনই কেবল প্রতিবাদের ভাষায় প্রতিবাদ করেন।
আমি সবসময় এ বিষয় নিয়ে ভাবতাম যে, কখনও যদি আমার এমন পরিবেশে কথা বলার সুযোগ হয়, তখন আমি ইসলাম সম্পর্কে বিশ্বকে এ বার্তাটিই দেব।পশ্চিমা সমাজে হলোকাস্টকে অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। কেননা, এর অবমাননা ইহুদি সম্প্রদায়কে আঘাত করে। আমরা আমাদের নবীর ক্ষেত্রেও একই শ্রদ্ধার আবেদন করি। দয়াকরে আমাদের নবীকে কটাক্ষ করে আমাদের অনুভূতিতে আঘাত করবেন না। এটাই আমাদের অনুরোধ।
অনেকে ইমরান খানের বক্তব্যকে জাতিসংঘে প্রথম ওয়াজ মাহফিল বলেছেন। পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ডন শিরোনাম করেছে ‘জাতিসংঘে ইমরান খানের বক্তব্য ৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের মতোই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।সবদিক বিবেচনা করে ইমরান খানের বক্তব্যটি ছিল হৃদয়স্পর্শী এবং  কিছুটা হলেও তার বক্তব্য  পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা অবসানে ইতিবাচক বার্তা দেবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...