সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভন্ডামীর গল্প

 
ভন্ডামী নিয়ে দুকলম লেখার ইচ্ছে দীর্ঘদিনের। আমাদের চারপাশে ভন্ড, ভালোর মুখোশ পরা ভন্ড মানুষের অভাব নেই। এসব ভন্ড মানুষের মুখেই যখন ভন্ডামীর গালি শুনতে হয়, তখন বিষয়টি কেমন দাঁড়ায়? এযেন চোরের মায়ের বড় গলা। অভিধানে ভন্ডামীর কিছু সমার্থক শব্দ খুঁজে পেলাম যেমন - ছল, প্রবঞ্চনা, চাতুরী, চালাকি, ভাণ, ভাঁড়ামি ইত্যাদি। ভন্ডামীর স্থান ভেদে প্রকারভেদ আছে, ভন্ড রাজনীতিবীদের ভন্ডামী,কিছু দয়াল বাবা, কেবলা বাবার ভন্ডামীর কারণে এরা ভন্ড বাবা হিসেবে অভিহিত। এমনিভাবে নারী পুরুষের প্রণয়ের সুসম্পর্ক যখন অবিশ্বাস কিংবা ভুল বোঝাবুঝির কারণে অবসান হয়। তখন প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা হয়ে যায় ভন্ড। তবে ভন্ড শব্দটি আমার কাছে পুরুষ বাচক শব্দ বলে মনে হয়। কেননা কোনো নারীকে আজ অবধি ভন্ড বলে গালি দিতে শোনা যায়নি। নির্দোষ দোষী পুরুষ নীরবে ভন্ড শব্দটি গলাধঃকরণ করে চলছে। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।কারণ নারীরা বুঝি ভন্ডামী জানে না। পারলে একটু ছলনা করে এ আর এমন কি। কেউ নিরেট নিখাদ নয়। ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তবুও যত দোষ ঐ পুরুষ নামের নন্দ ঘোষের। আজ ভন্ডামী নিয়ে পুরোনো একটি গল্প শোনায় 
এক ভন্ড বাবা বাড়ী বাড়ী খয়রাতি করছিল। এমতাবস্থায় এক বাড়ীর গেটে দাঁড়িয়ে চোখ বুজে বলছিল ছেই ছেই ছেই ছেই। বাড়ীওয়ালা এসে বলল বাবা আশেপাশে তো কুকুর নেই আপনি কি তাড়ান? ভন্ড বাবা চিৎকার করে বলল ওরে নালায়েক তুই বুঝবি না, আমি দেখলাম,
মক্কা শরিফে কুকুর ঢুকতেছে। 
আমি ছেই ছেই বলে কুকুর তাড়িয়ে দিলাম।বাড়ীওয়াল ভাবলো লোকটা  কত বড়ই না বুজর্গ ব্যক্তি! এবার বাবা চিৎকার করে বলল, আমার খাবার কই? বাড়িওয়ালা এবার বাবার কেরামতি দেখার জন্য খাবার এনে দিল ।
বাবাকে প্লেটে করে ভাত দিল কিন্তু
কোন তরকারীর বাটি দিল না। বাবা
বসে আছে তরকারির অপেক্ষায়। 
বাবা এক সময় অধৈর্য 
জিজ্ঞেস করল, কিরে তরকারি দিস না কেন? 
তখন বাড়ীওয়ালা প্লেটের ভাত নেড়ে ভাতের ভেতর থেকে তরকারি বের করে বলল,
বাবা আপনি মক্কা শরিফে ছেই ছেই করে কুকুর
তাড়াইতে পারেন, অথচ ভাতের
ভেতরে তরকারি দেখতে পান না? এটি একটি ভন্ডামীর নমুনা মাত্র। কিন্তু কতজন কতভাবে ভন্ডামী করছে তার কোনো শেষ নেই। নিজের ভন্ডামী নিজে ধরতে পারে না।ধরতে পারলেও নীরব। কিন্তু অন্যকে ভন্ড বলে চরম সুখ অনুভব করে। পুলকিত হয়, পৈশাচিক তৃপ্তি পায়।এমনও উচ্চ শিক্ষিতা নারীকে দেখেছি,স্বামী সংসার আছে। অন্য অবিবাহিত ছেলেদের সঙ্গে পরকীয়া এবং প্রেমের রিলেশন করে কিছুদিন মজা মাস্তি করে ব্রেকাপ। এতদিন হয়তো সেই ছেলে তার সঙ্গে স্বপ্নের সংসার পাততে বিভোর ছিল কিন্তু মেয়েটির ভন্ডামীর কারণে তার সব তছনছ হয়ে যায়। উলটো মেয়েটি তাকে হুমকি ধামকি দেয়। এতদিনে যা স্বার্থ চরিতার্থ করার, করে ফেলে।অতঃপর  ছেলেকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে।পরে তাদের সম্পর্কটা হয় এই কৌতুকের মতো, 
ব্রেক আপের পর সাবেক প্রেমিকা মেসেজ পাঠিয়েছে: আমার নাম্বারটা তোমার কললিস্ট থেকে মুছে ফেলতে পার এবার। সাবেক 
প্রেমিক মনের কষ্টে রিপ্লাই দিল, আপনাকে তো চিনতে পারলাম না! কে বলছেন?
এরপর মেয়েটি অন্য আরেকটি  ছেলেকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। অথচ এই মেয়ে ধর্মের কথা বলে, ফেসবুকের প্রোফাইলে ছবি পর্যন্ত দেয় না। নিজের নামে আইডি চালায় না। কত বড় ছলনময়ী। মিষ্টি কণ্ঠে কথা বলে ছেলে পটায়।অথচ সুরা আহযাবের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন। এতকিছু যে নারী জানে, সেকি কুরআনের এ আয়াত জানে না? অবশ্যই জানে কিন্তু তার অন্তরে ঢুকেছে চরম ব্যাধি। যেটি নিরাময় অযোগ্য। মুখে মধু অন্তরে বিষ।এসব মানুষের স্বার্থে যখন আঘাত লাগে তখন চেঁচিয়ে উঠে, তাদের চোখে ভালো মানুষ হয়ে যায় ভন্ড।ভন্ডামী গালিগালাজ হয়ে যায় তাদের কাছে ডাল ভাতের মতো।আজ আমাদের সমাজে চলছে ধর্ম নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, মন নিয়ে, ব্যবসা নিয়ে, চরিত্র নিয়ে চরম ভন্ডামী। ভন্ডরা ভালোর মুখোশে করছে নিত্য ভন্ডামী।সহজ সরল মানুষগুলো হচ্ছে এসব ভন্ডের নির্ভুল টার্গেট।আজ বাবা খুন করছে ছেলেকে। ছেলে খুন করছে বাবাকে। এরা কি প্রকৃত বাবা, সন্তান? কোনো মহিলা আবার মা সেজে করে ভন্ডামী। এসব গল্প কিন্তু আজগুবি নয়। সমাজে ঘটছে না এমনটা না। ঘটনার মিল খুঁজে না পেলেও গল্পের মতো কাছাকাছি ঘটনা অনেক ঘটছে। এখন যে গল্পটি বলবো তা নেট থেকে সংগ্রহ করা।একদিন রিয়াদ সাহেব মার্কেটে শপিং করছিল।তিনি পণ্য রাখার ট্রলি নিয়ে হাঁটছিল এবং জিনিস-পত্র দেখছিল। হঠাৎ সে খেয়াল করলো একটা মহিলা তাকে অনুসরণ করছে। দেখেও না দেখার ভান করে রিয়াদ সাহেব নিজের মত ঘুড়তে লাগলো।শপিং শেষে তিনি কাউন্টারে আসলেন টাকা দেয়ার জন্য। হঠাৎ ঐ মহিলাটি তার পাশে এসে দাঁড়ালো। মহিলাটি তাকে বলল,
মহিলাঃ ক্ষমা করবেন আমি আপনার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছি, আপনি দেখতে ঠিক আমার মৃত ছেলের মত। আপনাকে দেখে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমার ছেলে।
রিয়াদ সাহেবঃ ওহ!! আমি খুবই দুঃখিত।  আমি কি আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারি?
মহিলাঃ আমি এখন চলে যাচ্ছি, আপনি কি আমাকে আমার যাওয়ার সময় একবার “খোদা হাফেজ মা” বলে বিদায় দিতে পারবেন? আমার খুব ভাল লাগবে এটা ভেবে যে আমার ছেলে আমাকে বলছে।রিয়াদ সাহেবঃ জি অবশ্যই!
মহিলাটি মার্কেট থেকে বের হচ্ছে।রিয়াদ সাহেবঃ খোদা হাফেজ মা! 
এটা বলে রিয়াদ সাহেব তার কাউন্টারে রাখা জিনিস-পত্রের বিল দেখতে পেল লিখা আছে ২০,৫৬৭ টাকা। রিয়াদ সাহেবঃ এত বিল আসলো কিভাবে? আমি তো মাত্র ২টা ছোট জিনিস কিনেছি। এর দাম ৫০০ টাকার বেশি হবে না এটা আমি নিশ্চিত! সেলস্-ম্যানঃ আপনার মা বলে গেছেন উনার বিল আপনি পরিশোধ করবেন।
গল্পের মত ঘটনা তো অহরহ ঘটছে। মা সেজে বাবা সেজে, বউ সেজে কখনো বা প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা সেজে কেউ না কেউ তো ভন্ডামি করছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...