সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশ -ভারত সীমান্তে হত্যাকান্ড ও কিছু কথা

 

বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের আজকাল  বসন্তকাল চলছে।কিন্তু বসন্তের লেশ নেই বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে। যে প্রেমিক যুগলের গানটি হতো পারতো বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তের জনগণের জন্য বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় করার।  
যেখানে সীমান্ত তোমার
সেখানে বসন্ত আমার
ভালোবাসা হৃদয়ে নিয়ে
আমি বারে বার আসি ফিরে
ডাকি তোমায় কাছে.
কিন্তু সীমান্তে এ চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। 
পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম সীমান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত। ৪১৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তে প্রতিনিয়ত ঘটছে গুলি করে বাংলাদেশের বেসামরিক মানুষ হত্যার মতো জঘন্যতম ঘটনা। এসব প্রাণনাশের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার বেসামরিক জনগণ। বর্তমান বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে তুঙ্গে বলে মনে করা হলেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। যখন ফেলানীকে বিএসএফ হত্যা করে কাঁটা তারে ঝুলে রাখে তখন ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের আগ্রাসী দিকটি বিশ্বমিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকদিন আগে রাজশাহীতে ভারতীয় তিন জেলের  বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ ও একজন বিএসএফ জাওয়ানের মৃত্যুতে সীমান্ত হত্যা নিয়ে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে যথেষ্ট সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেও ভারতের দাদাগিরি ও সীমান্তে বাংলাদেশী জনগণকে হত্যা এদেশের সাধারণ জনগণকে ভারত বিদ্বেষী করে তুলছে। ভারত সংঘাতপূর্ণ উত্তর পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানী জনগণকে হত্যা করার দুঃসাহস দেখাতে না পারলেও বাংলাদেশের সীমান্তে অবলীলায় মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে।ভারতের সঙ্গে নেপাল, চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত রয়েছে। ওইসব সীমান্তে মাসের পর মাস, দিনের পর দিন এধরনের হত্যার ঘটনা ঘটে না। নেপাল ও ভুটান সীমান্ত ভারতের  আছে এসএসবি (সশস্ত্র সীমা বল)।সেখানে ঘটে না সীমান্ত হত্যা। ভারত যদি বাংলাদেশকে বন্ধু রাষ্ট্র মনে করে তাহলে সীমান্তে বিএসএফ কেন?তবে এখানে একটি কথা হলো ভারত বন্ধু রাষ্ট্র হলেও যেহেতু বাংলাদেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ , তাই ভারত  বাংলাদেশকে মন থেকে বন্ধু রাষ্ট্র মনে করে না। এটা আমার কথা না। বিশেষজ্ঞদের অভিমত।যদিও ভারত মুখে মুখে বন্ধু রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়।এটি তাদের স্বার্থ উদ্ধারের একটি কূটকৌশল মাত্র।একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, ৩ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ১০২ বাংলাদেশি নিহত হলেও, ঠিক একই সময়ে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে ৪৬ পাকিস্তানী নিহত হয়৷ যাদের অধিকাংশই সামরিক এবং আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য৷ আর বাংলাদেশীরা সবাই ছিলেন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ৷ এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশকে বন্ধু বললেও শত্রু রাষ্ট্রের চেয়ে সীমান্তে বাজে আচরণ করছে ভারত। ভারতের বাংলাদেশ সীমান্ত সাধারণ বেসামরিক মানুষ হত্যার নেপথ্য যেসব কারণ মূল ভূমিকা পালন করে, 
প্রথমত :  বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি, ভারত তোষণ ও পোষণ নীতি।  
দ্বিতীয়ত:বাংলাদেশের সীমান্তে নিয়োগ দেয়া বিএসএফ সদস্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তারা অধিকাংশ বাংলা ভাষা বোঝেন না৷ কখনো কখনো পাকিস্তান সীমান্ত থেকে তাদের এনে বাংলাদেশ সীমান্তে দায়িত্ব দেয়া হয়৷ যাদের মধ্যে উগ্রতা আছে৷ লক্ষ্যনীয় যে, পাকিস্তান সীমান্তে দায়িত্ব পালনের সময়ও কিন্তু তারা এতটা উগ্রতা দেখায় না, যেটা বাংলাদেশ সীমান্তে তারা করে থাকে৷ তারা হয়তো সামরিক শক্তির সামর্থ্য বেশি বিবেচনা করে এমন পাশবিকতা দেখায়৷
তৃতীয়ত:  চোরাকারবারীরা লাঠি, পাথর, ধারালো অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত রক্ষাকারীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালায়। সীমান্ত রক্ষাকারীদের ওপর হামলা হলে অনাকাঙিক্ষত এই ঘটনা ঘটে বলে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী দাবী করে, যদিও এটি একটি অজুহাত মাত্র। 
চতুর্থত:বিএসএফ হত্যা করছে এবং তারা এর জন্য বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেনা৷ তাদের ইমপিউনিটি দেয়া হচ্ছে৷ তারা ট্রিগার হ্যাপি৷
ভারতে একটি কার্যকরী আদালত থাকলেও, সীমান্তের এসব অপরাধের ক্ষেত্রে বিএসএফ একইসাথে বিচারক, জুরি এবং ঘাতক হিসাবে কাজ করতে পারে। সুতরাং বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। ফেলানি হত্যাকান্ডের পর প্রহসনের বিচার তো সবারই জানা।
সীমান্তে চোরাচালান ও বাংলাদেশ থেকে কথিত অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিতর্কিত শ্যূট-অন-সাইট বা দেখামাত্র গুলি নীতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বহাল আছে, যার প্রেক্ষিতে বিএসএফ কারণে-অকারণে বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করতে পারে। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া, হাট-বাজারে বেচা বিক্রি , এবং কাজ খোঁজার জন্য অনেক মানুষ নিয়মিতভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়। এছাড়াও সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে কৃষি ক্ষেতে  কাজ কিংবা নদীর তীরে মাছ ধরার জন্যও অনেক মানুষকে সীমান্তপথ অতিক্রম করতে হয়।কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের নাগরিকদের নিয়মিত লাশ হতে হচ্ছে। 
২০০৮ সালে ভারত সরকার ও বিএসএফ বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করেছিল যে, সীমান্তে প্রাণঘাতী কোনও অস্ত্র ব্যবহার করবে না।২০১১ সালে বিএসএফ এবং বিজিবি পাচারকারী ও অবৈধপথে সীমান্ত পার হওয়া নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তি করে৷ ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কথা বলা হয় বার বার কিন্তু ভারত সরকার ও বিএসএফ এসব প্রতিশ্রুতি কখনোই রক্ষা করেনি। বরং তারা বাংলাদেশ সীমান্তে বেসামরিক মানুষ হত্যা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বিজিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে মারা গেছেন ৯৩৬ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে বিএসএফের হাতে ৭৬৭ জন ও ভারতীয়দের হাতে ১৬৯ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।বিজিবির তথ্য মতে, ২০০৯ সালে ৬৭ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন, ২০১১ সালে ৩৯ জন, ২০১২ সালে ৩৪ জন, ২০১৩ সালে ২৮ জন, ২০১৪ সালে ৪০ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন, ২০১৬ সালে ৩১ জন এবং ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ জন নিহত হয়েছেন।  ১১ জুলাই ২০১৯ একাদশ জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে বিএসএফের হাতে নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা ২৯৪জন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ২০০৯ সালে অন্তত ৬৬ জন, ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ ও ২০১২ সালে ২৪ জন করে মোট ৪৮ জন, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন ও ২০১৮ সালে ৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। 
বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ করে ভারতকে প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয় দিতে হবে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নয়। পারস্পরিক সমমর্যাদার ভিত্তিতে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। শেষ করি কবীর সুমনের সেই গান দিয়ে, 
শোনো বিএসএফ, শোনো হে ভারত
কাঁটাতারে গুনগুন
একটা দোয়েল বসেছে যেখানে
ফেলানী হয়েছে খুন।
 রাইফেল তাক করো হে রক্ষী
দোয়েলেরও ভিসা নেই
তোমার গুলিতে বাংলার পাখি 
কাঁটাতারে ঝুলবেই৷

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...