সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কাউকে না কাউকে দাঁড়াতে হবে

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত দেশের কাতারে যেতে স্বপ্নের জাল বুনছি।  সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হরিলুটের চিত্র আমাদের দারুণভাবে ব্যথিত করছে।
সাম্প্রতিককালে পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে ৬০০ টাকার বালিশ হয়ে যায় ৬ হাজার টাকা কোথাও ২৭ হাজার টাকা, ২ হাজার টাকার বালিশের কভার হয় ২৮ হাজার টাকা, ১ হাজার টাকার গাউন ৪৯ হাজার টাকা, ৩০০ টাকার হ্যান্ড গ্লোভস পয়ত্রিশ হাজার টাকা, ৩০০ টাকার রেক্সিন ৮৪ হাজার, একটা কেটলি তিন তলায় উঠাতে খরচ ৪ টাকার জায়গায়  ৪ হাজার টাকা, একটা পর্দা ৭০০ টাকার জায়গায় হয়ে যায় ৩৭ লাখ টাকা, ৪০ জনের চায়ের আপ্যায়ন ব্যয় চারশ টাকার জায়গায় হয়ে যায় ৪০ হাজার টাকা, পাঁচটটি চেয়ারের দাম ২৫ হাজার টাকার পরিবর্তে হয়ে যায় ১কোটি পঁচিশ লাখ টাকা, ১১ হাজার টাকার টেবিল হয়ে যায় ১১ লাখ টাকা, আবার কোথাও অস্তিত্বহীন যন্ত্রপাতির মূল্য হয়ে যায় শতশত কোটি টাকা।চারিদিকে এমন লুটপাটের ফিরিস্তি দেখেও আমরা নীরব। সুশীল সমাজ ও সচেতন নাগরিকদের মুখে কুলুপ এঁটে নীরবতা পালন সমাজে দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের উৎসাহিত করছে। সর্বত্র চলছে মারাঠা বর্গীদের মতো লুটতরাজ। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়ে যাচ্ছে নির্ভীক অকুতোভয় কিছু প্রাণ। এদের মধ্যে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
(বশেমুরবিপ্রবি) আইন বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া। শিল্পী নচিকেতার মতে জীবন কী?
"প্রতিবাদ প্রতিরোধে নামাই জীবন,
লক্ষ্যে পৌঁছে তবে থামাই জীবন,
স্বপ্নে বেচা কেনা করাই জীবন,
দেয়ালে ঠেকলে পিঠ লড়াই জীবন,
প্রতিদিন ঘরে ফিরে, অনেক হিসেব করে,
‘এ জীবন চাই না’, তা বলাই জীবন।"জিনিয়া যেন গানের কথার সঙ্গে মিলে যাওয়া অদম্য একজন সাহসী তরুণী। বলতে হয় জিনিয়া আসলেই একজন জিনিয়াস ও প্রতিবাদী মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি? শিরোনামে একটি লেখার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়। খোদ ভিসির রোষানলে তাকে পড়তে হয়েছে। হুমকি ধমকি তো ছিল উপর্যুপরি। তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছিল, কিন্তু দুর্নীতিবাজ ভিসির রক্ত রাঙানো চোখ উপেক্ষা করে জিনিয়া তার অবস্থানে ছিল অটল ও অবিচল। আজ জিনিয়া সত্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। তার লিখনী ও ব্জ্রকন্ঠ উচ্চারিত সত্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান ভিসির আরামের চেয়ারকে করেছে নড়বড়ে। পদত্যাগ না করার আস্ফালনকে করেছে চূর্ণবিচূর্ণ। দাম্ভিকতাকে করেছে পরাস্ত।ভিসি পরাভূত হয়ে লেজ গুটিয়ে রাতের অন্ধকারে পুলিশ প্রহরায় পালিয়েছেন ।এখন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাকে গ্রহন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। কেননা তার গায়ে দুর্নীতির দুর্গন্ধ, না জানি বাকৃবি তার ছোঁয়ায় আবার কলুষিত হয়। দুর্জন বিদ্যান হলেও সদা পরিত্যাজ্য।  দুর্নীতি মুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিতে রাজশাহী  বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বোহা চত্বরে আজ একাই হাতে প্লাকার্ড নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।তাঁর মতে,একটা জাতির শিক্ষা যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তারা কখনোই উঠে দাঁড়াতে পারবে না। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি দিয়ে ৭৩’র অধ্যাদেশে শিক্ষকদের জবাবদিহিতা রাখেন নি। কিন্তু আমাদের শিক্ষক সমাজ সেই মর্যাদা ধরে রাখতে পারেন নি। শিক্ষার শক্তিটা যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে যতই উন্নতি করি না কেন, কোন কিছুতেই আমরা আগাতে পারব না।
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসক ভিসি আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হচ্ছে অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক দুর্নীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে একাই মাঠে নেমে পড়ছেন। এতে বুঝা যায় এখনো জাতির বিবেক মরেনি। সচেতন, প্রতিশ্রুতিশীল কিছু মানুষ টিকে আছে বলে সমাজটা এখনো পুরোপুরি নষ্ট হয়নি।অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের
একটি সুন্দর কথা আছে," এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের কৃত কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না, যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করেনা তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে। ”
আজ আপনার আহবানে কিছু মানুষ সাড়া দেবে। কিছু মানুষ বিরোধিতা করবে তবে আলটিমেটলি সত্যের জয় সূচিত হবে। পরিশেষে রবি ঠাকুরের গানের সুরে সুরে বলতে হয়,
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে      
তবে একলা চলো রে।
একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো,      
একলা চলো রে॥
যদি কেউ কথা না কয়,  ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়—
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা
একলা বলো রে॥
যদি সবাই ফিরে যায়,  ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়—
তবে পথের কাঁটা
ও তুই  রক্তমাখা চরণতলে  একলা দলো রে॥

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...