সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বুয়েটে কে এই বজ্রকণ্ঠী তরুণী ?


গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে চলছে অরাজকতা,  অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি। প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে দুর্নীতির আখড়ায়। এ বিষয়ে সরকারি ও ইউজিসির  তদন্ত চলছে। এসব খবর প্রতিনিয়ত আমরা পত্রিকা মারফত জানতে পারছি। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আইন বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়ার ফেসবুকে দেওয়া স্টাটাসকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় অনিয়মের গোঁমরফাঁস হয়ে পড়ে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? পত্রিকায় মন্তব্য প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য এই প্রশ্নটি ফেসবুকে লিখেছিলেন জিনিয়া। এতে ক্ষেপে যান ভিসি। তিনি ওই ছাত্রীকে শোনান কুরুচিপূর্ণ কথা। ফোনে ওই ছাত্রীকে ভিসি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তা তোর আব্বার কাছে শুনিস! গেছে কোনো দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে? এটা (ল ডিপার্টমেন্ট) আমি খুলছিলাম বলেই তো তোর চান্স হইছে, নইলে তুই রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলে-মেয়ে। তিন দিনের বাছুর তুই আবার জানতে চাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?এসব সুবচন হুমকি ধমকি শোনে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। এরপর ধীরে ধীরে থলের বিড়াল বের হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সেখানকার প্রতাপশালী ভিসি পদত্যাগে বাধ্য হন। যার আস্ফালন ও উদ্ধত আচরণ ছিল সীমাহীন।বিশ্ববিদ্যালয়ে  ভিসির পদত্যাগের দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। অবশেষে ভিসির রাতের অন্ধকারে পুলিশ পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলায়ন ছিল একজন পরাভূত সৈনিকের যুদ্ধেক্ষেত্র থেকে প্রস্থানের মতো। সেই জিনিয়ার ক্ষুরধার লেখনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য বের হয়ে আসে।  এখনো অনেক দুর্নীতির খবর বেরুচ্ছে।এদিকে বুয়েটে আবরারকে খুনের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভেতর যেন আরেকজন জিনিয়ার প্রতিচ্ছবি আমরা লক্ষ্য করছি। মেয়েটির নাম ধাম জানার চেষ্টা করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারলাম না। ওই তরুণীর এমন সাহসী পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করে তার বিষয়ে জানতে কৌতূহলী হয়েছেন অনেকেই। আন্দোলনের প্রথম সারিতে  অদম্য সাহসী ওই মেয়েটি পুলিশ ভিসির সামনে যেভাবে দাঁড়িয়ে আবরার হত্যাকান্ড নিয়ে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে তা সত্যিই মুগ্ধ হরার মতো। নারীকে অবলা সরলা  বিজ্ঞাপণ আর পণ্য সামগ্রীর মডেল হিসেবে দেখতেই তো আমরা বেশি অভ্যস্ত।ওই তরুণী ও জিনিয়া যেন তার ব্যতিক্রম।  প্রীতিলতা, ইলামিত্র, বেগম রোকেয়া, বেগম শামসুর নাহার মাহমুদ, সুফিয়া কামালের পথ ধরে এই প্রজন্মের জিনিয়া ও নাম না জানা বুয়েটের সেই তরুণীটিও যেন এগিয়ে যাচ্ছে তা নিশ্চিন্তে বলা যায়।তরুণীটির নাম জানা না থাকলেও ।ইতোমধ্যে তরুণীটি বুয়েটের  আন্দোলনে তরুণ তরুণীদের আইকনে পরিণত হয়েছে। এখন তো সে পুরাই ভাইরাল।সাংবাদিক, গণমাধ্যম কর্মী সবার সামনে সে যেন আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র । সোমবার থেকে চলা বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সামনের সারিতে বারবার দেখা গেছে ওই তরুণীকে।ভিসির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কথোপকথন চলার সময়ও এই তরুণী ছিলেন দীপ্ত উচ্চারণ আর  সুউচ্চ কণ্ঠে ।আবরার হত্যাকাণ্ডের ৩৬ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ওই তরুণীর প্রশ্নবাণ থেকে রক্ষা পাননি খোদ বুয়েট ভিসি।

ভিসিকে সামনাসামনি ওই তরুণী জিজ্ঞেস করে, আপনি কেমন ভিসি ক্যাম্পাসে আপনার ছাত্রের জানাজা হচ্ছে। কিন্তু আপনি উপস্থিত থাকেন না। শিক্ষার্থীরা ভিসিকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে থাকলেও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বুয়েট ভিসি।এরমধ্যে হইচই পড়ে গিয়েছে, কে এই তরুণী?গণমাধ্যম সবখানে  উচ্চস্বরে কেবল একজন বুয়েট ছাত্রীর শব্দ শোনা যায় সে হলো ওই তরুণী। ওই নির্ভীক তরুণী পুলিশের চোখে চোখ রেখে বলেছে, আঙ্গুল তুলে কেন কথা বলতেছেন আমাদের সাথে?শুধু কি তাই? বুয়েটের শেরে বাংলা হলে পুলিশ প্রবেশের পর শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে পুলিশকে হল থেকে বের করে দেয়। সেখানে ওই তরুণীর  সাহসী উচ্চারণ ছিল এমন, কার অনুমতি নিয়ে আপনারা আমাদের হলে প্রবেশ করেছেন? আন্দোলন চলাকালে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালককে ওই তরুণী প্রশ্ন করেছে, স্যার, আপনার ছাত্রদেরকে ধরে এনে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, আপনি কিসের ছাত্র কল্যাণ দেখেন?
যুগের প্রয়োজনে সময়ের সঙ্গে জিনিয়া ওই সব নাম না জানা তারুণ্যের আবির্ভাব ঘটে। সময় তাদেরকে করে সাহসী ও দৃঢ় প্রত্যয়ী। পিছুটান, দুর্বলতা, রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে এরা হয় জাতির উত্থানে কান্ডারি ও নেতৃত্বের আসনে সমাসীন। অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া জাতিকে দেয় আলোক ছটা, সঠিক পথের নিশানা। এসব অদম্য সাহসীদের নাম জানারও প্রয়োজন  হয় না। কিছু মানুষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান ও দীপ্ত উচ্চারণ, তার নতুন পরিচয় হয়ে ওঠে। সময় এসব আড়ালে থাকা অদম্য সাহসীকে নিজের প্রয়োজনে সামনে নিয়ে আসে। স্যালুট  ওইসব তরুণদের কর্মস্পৃহা ও সাহসকে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...