সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বিতর্ক কেন?

২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের ১০০ বছরের পূর্তি। তার পূর্বে হঠাৎ করে শিক্ষক,  মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল কি না এ নিয়ে চলছে বাহাস। কেউ বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল আবার কেউ কেউ বলেন ছিল।
২০১৬ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বিষয়টি সত্য নয়। তিনি বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এটা কথিত কথা। এটা দলিলপত্রে কোথাও লেখা নেই। এটা হওয়ার কোন কারণও নেই। এটা লোকে বলে। আর বলতে বলতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
এরমধ্যে পদ্মা মেঘনা যমুনার অনেক পানি গড়িয়েছে। কখনো বিষয়টি এতোটা আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়নি।ইদানিং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত বিষয় ছিল বিশ্ব তালিকায় ঢাবির ক্রমাবনতি। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  নাম না থাকা। শিক্ষার গুনগত মানের চরম অবনতি। চরমদলীয়করণ, অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ। শিক্ষকদের দায়িত্ব জ্ঞানহীন মন্তব্য। বিরোধী মত ও দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর  প্রতি বৈরী আচরণ এবং দীর্ঘ আটাশ বছর পর বহু কাঙ্ক্ষিত বিতর্কিত ডাকসু নির্বাচন ইত্যাদি ছিল আলোচনার কেন্দবিন্দু  ।গত শুক্রবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ঢাবি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল না বলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেন।তিনি বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়। এটা কোনোদিনও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল না। এটা একটা বদনাম দিয়ে গেছে। যখন এটাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয় তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল ৫-৬ হাজার। আর শিক্ষক ছিল ৬৫-৬৬ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত  এক সেমিনারে উপাচার্য আরো বলেন, এটা কোনোদিন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল না। এটা হলো আমার প্রথম আবিষ্কার। আস্তে আস্তে আমরা অক্সফোর্ড হওয়ার চেষ্টা করছি।

তবে উপাচার্যের বক্তব্যের পর আজকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সন্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, " ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, সেজন্য বলছি। এখানে লেখাপড়ার একটা ঐতিহ্য ছিলো। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে একটা শ্রেণি অস্ত্র হাতে নিয়ে নেমে পড়ল। ৭৫’র পর আরও ব্যাপকভাবে এর প্রচলন দেখা যায়। গুলি-অস্ত্র-বোমার শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যেত না। সেশনজট গতানুগতিক ব্যাপার ছিলো, দুপুর ২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসই হতো না। আমরা সরকারে আসার পর ধীরেধীরে এসব অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছি।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল / আছে কি না? এ নিয়ে বিতর্ক করার চেয়ে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে আন্তরিক হওয়া বেশি জরুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড কি না তা জানি না।তবে এতটুকু বলতে পারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি ক্ষেত্রে  অক্সফোর্ড, কেম্ব্রিজ, হার্ভার্ডসহ বিশ্বের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও একধাপ এগিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই বিশেষ দিকটি হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ অবদান ছিল। যেখানে দেশের সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে বিশেষ অবদান রেখেছিল। বিশ্বের ইতিহাসে এটি বিরল ও নজিরবিহীন। এই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজের তুলনা নিজে। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাবির উপমা কিংবা তুলনা চলে না। ঢাবি এর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও মহিমায় চিরন্তন।এ জন্য ঢাবি কারো উপাধী কিংবা উপমার মুখাপেক্ষী নয়।
"প্রাথমিক বছরগুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকগণ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শিক্ষার উচ্চমান বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে এ প্রতিষ্ঠান ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে"।( বাংলা পিডিয়া)
উইকিপিডিয়াতে উল্লেখ আছে," ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়। "
কারো সঙ্গে কিছু বৈশিষ্ট্য মিলে গেলে তার সঙ্গে তুলনা করা হয় যেমন নজরুলকে বাংলার বায়রন বলা হয়। তেমনি কবি ফেরদৌসকে প্রাচ্যের হোমার বলা হয়। আবার প্রাচ্যের ভেনিস ব্যাংক, দক্ষিণের গ্রেট ব্রিটেন বলা হয় নিউজিল্যান্ডকে। এগুলো বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্যতার জন্য তুলনা করা হয় কিংবা উপমা দেওয়া হয়। তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে এর কিছু প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো কিংবা শিক্ষা পদ্ধতি ও সিলেবাসের মিলের কারণে  হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। সে বৈশিষ্ট্যের বর্তমান সাযুজ্যতা না থাকায় আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলতে এতো দ্বিধা দ্বন্দ্ব। পরিশেষে বলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর সঙে অক্সফোর্ডের তুলনা করে খুব একটা ফয়দা হাসিল করতে পারবো না।
বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলেই পরিচয়। জনৈক মনীষীর মতে, "অনুকরণ করার মধ্যে সৃষ্টি করার আনন্দ নেই। কিছু করে যদি আনন্দ পেতে চান। সুনাম অর্জন করতে চান। তবে নিজের মতো হোন"।ঢাবি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এটা কোন সার্টিফিকেট প্রাপ্ত অক্সফোর্ড নয়। এটা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত অক্সফোর্ড।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...