সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না!

ধর্ষণের খবরে চারিদিকে ছড়াছড়ি। এটি যে নিছক গুজব বলে উড়িয়ে দেবেন সেই সুযোগ এখন নেই। ঘটনা চারিদিকে ঘটছে। চাউর হচেছ। পত্র পত্রিকা ফেসবুকের নিউজ ফিডে আসছে। একই সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় আসছে বলে এর সত্যতা নিয়ে সন্দিহান হবার অবকাশ নাই।  গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায় চলতি বছরের প্রথম সাড়ে তিন মাসে ৩৯৬ জন নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হঠাৎ করে বাঙালি সমাজে ধর্ষণের মত বিকৃত মানসিকতার এত বিস্তার লাভের  কারণ কি? এজন্য বিশাল গবেষণার প্রয়োজন নেই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী  মমতার মতো বলার প্রয়োজন নেই“ জনসংখ্যা বাড়ছে তাই ধর্ষণ বাড়ছে ”।কথাটা বড়ই অশালীন ও অশ্রাব্য। একজন নারী হয়ে সমস্যার গোড়ায় হাত না দিয়ে দায়িত্বশীল একজন ব্যক্তির  এরকম উদ্ভট কথা বলাটা কতটুকু সমীচীন? রাজনীতির কারণে কত লাগামহীন কথায় না তাদের বলতে হয়।তাই বলে এখানেও। হায়রে মানুষ ক্ষমতার জন্য আমরা কতটা অন্ধ হয়ে যাই। আজ  সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বেঁচে থাকলে শেখ সাদীর কবিতার এভাবেই  বঙ্গানুবাদ করতেন।
ধর্ষকের কাজ ধর্ষক করেছে
সম্ভ্রম কেড়েছে নারীর,
তা বলে ধর্ষকের বিচার করা
সভ্য সমাজে কু নজির।
রাজনীতিকদের মিথ্যা ওয়াদা প্রলোভন দেখিয়ে জনগণকে সন্তুষ্ট করতে হয়। মমতা ভাগ্যিস বাংলাদেশের নির্বাসিত বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের মতো বলেননি " হে নারী, কেউ যদি তোমাকে ধর্ষণ করতে আসে, তুমিও তাকে ধর্ষণ করে দাও। পুরুষদের দেখিয়ে দাও, ধর্ষণ শুধু তারা নয়, তোমরাও পারো "।একথা বলার সময় হয়তো উনি ভাবেননি নারীকে অবলাও বলে অনেকে। যদি শব্দটির ব্যবহার বর্তমানে নিষ্প্রভ।শক্তি সাহসে একজন নারী পুরুষের তুলনায় অতি কোমল। হাড় মাংসেও নারীর অবয়ব সৃ‌ষ্টিতেও স্রষ্টা দিয়েছেন কোমলতার পরশ। মনটা করেছেন অতিশয় মায়াবী। সুতরাং মানসিক শক্তি অর্জন করে একজন নারী ধর্ষকের লোভাতুর দৃষ্টি ও লাম্পট্য প্রবৃত্তি থেকে নিজেদের নিবৃত্ত করতে পারে। যেখানে পুরুষরা সংঘবদ্ধভাবে নারীর উপর নারকীয় তান্ডবলীলা চালাচ্ছে সেখানে একজন নারী অতিমাত্রায় অসহায় ও নিরুপায়। একজন নারীর দেহের যতটুকু বল আছে সেটুকু দিয়ে প্রতিরোধ করে ব্যর্থ হয়ে স্রষ্টার কাছে বিচার দেওয়া ছাড়া আর তাদের এদেশে যেন কিছুই করার থাকে না। যেদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি যুগযুগ ধরে চলে আসছে। সেদেশে কার কাছে তারা বিচার চাইবে?  আজ নুসরাতের ঘটনা নিয়ে তুলকালাম গোটা দেশ। নুসরাতের আগে পরে কি এমন ঘটনা আর এদেশে ঘটেনি? শতশত ঘটনা ঘটছে। আমরা একটি ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হয় বাকি ঘটনা গুলো চেপে রাখি কোনো অজানা ইশারায়। তনু হত্যা, সাগর রুনি হত্যাকান্ড  কি ঘটেনি?  সেসব হত্যাকান্ডের কি বিচার পেয়েছি? একটি ঘটনার যদি সুষ্ঠু বিচার হতো তাহলে অপরাধীরা এসব ঘটনা ঘটাতে সাহস পেত না। বাংলাদেশকে বলা হয় ভাটির দেশ,নিরব খনির দেশ, সোনালী আঁশের দেশ, নদী মাতৃকদেশ,
সাম্প্রতিক কালে যুক্ত হয়েছে ধর্ষণের জনপদ হিসেবে। শুধু আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতির অপেক্ষা। আজ দেশে নুনের চেয়ে যেন খুন সস্তা। নারী মর্যাদা যেন কচুর পাতার পানির মতো। রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতায় ফুটে উঠছে দেশের করুণ চিত্র। কালজয়ী সেই কবিতাটি যেন একালের ভয়াবহ ঘটনা অবলম্বনে রচিত।
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের কথা বলি। সমতার কথা বলি। বেশ ভালো কথা। কিন্তু প্রতিনিয়ত এই বাংলা জনপদে যে অসংখ্য মা বোন শিশু সম্ভ্রমহারা হচ্ছেন তাদের কি হবে? আগে সম্পত্তি না নারীর দৌহিক সামাজিক নিরাপত্তা জরুরী। যেখানে বেঁচে থাকা। টিকে থাকাটায় নারীর জন্য চ্যালেঞ্জ সেখানে সম্পদ দিয়ে নারী কি করবে? বলতে পারেন নারী আর্থিকভাবে সাবল্মবী হলে নারী নির্যাতন অনেকাংশে কমবে। ঘটনা কিছুটা সত্য হলেও নারীর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাটা এ মুহূরতে বেশি প্রয়োজন । কারণ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে।তাদের আর্থিকভাবে স্বচছল করাও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর নারী নির্যাতন নিয়ে সরব হই। বিবৃতি দেয় প্রতিবাদ করি।আমি পাক বাহিনীর বর্বরতাকে খাটো করে দেখছি না।
সব নির্মমতায় প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ নিন্দাযোগ্য।সেটি পৃথিবীর যেখানেই হোক না কেন?  স্বাধীন দেশের নারী বৃদ্ধা শিশুর ওপর এই পৈশাচিক অনাচার অজাচার কি অপরাধ নয়?আমরা এজন্য তো স্বাধীনতা চাইনি? স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে খুন ধর্ষণ, লুটপাট চালানোর জন্য কি স্বাধীনতা চেয়েছি?তবে যারা এসব গর্হিত কাজ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধে জড়িত তারে সংখ্যায় নগণ্য। কিছু গোটা দেশে তৈরি করছে ভীতিকর পরিস্থিতি।আমরা চেয়েছি একটি মানবিক রাষ্ট্র। বাসযোগ্য। অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার রাষ্ট্র। কিন্তু আজ দেশে হচ্ছে কি? কোথায় সুশীল? কোথায় মুক্ত চিন্তার ধারক ও বাহকেরা? কোথায় সচেতন নাগরিক সমাজ?
তবে কেন আমরা নিরব?কেন রুখে দাঁড়াই না ধর্ষণের নামে এই ভয়াবহ সংক্রমকের বিরুদ্ধে? মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এ বিকৃত যৌন লালসা চরিতার্থকারীদের বিরুদ্ধে? কেন বিচারের বাণী আজ নিভৃতে কাঁদে? আপনার আমার নিশ্চুপ থাকাটায় আজ এ মহামারি বিস্তারে সহায়ক হচ্ছে। যদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নামধারী ধর্ষণের সেঞ্চুরিয়ানের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো। তাহলে ধর্ষিতার মিছিলে যুক্ত হতো না তনু নুসরাতসহ অসংখ্য ধর্ষিতা মা বোন।শিশু তরুণী বৃদ্ধা কেউ আজ রক্ষা পাচ্ছেন না। রাস্তা ঘাট অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলন্ত বাস সবখানেই নারীরা আজ অনিরাপদ। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান  অনুযায়ী ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়ার মোট ৩৪৫টি সংবাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩৫৬, যার মধ্যে মারা গেছে ২২ জন এবং আহত হয়েছে ৩৩৪জন। শিশুরা প্রতিবেশী, উত্যক্তকারী, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন বা অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে।সামাজিক নীতি-নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের অভাবে খুন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে।শেষ করি নবারুণ ভট্টাচার্যের কবিতা দিয়ে।
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না,
এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না
এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...